সেই সংবিধান আর এই সংবিধান


’৭১-এর মুক্তি সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয়ের এগারো মাসের মাথায় গণপরিষদ কর্তৃক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয়। তারিখটি ছিল ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর। তাই প্রতি বছর এই তারিখে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান দিবসটি ‘সংবিধান দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে। ভারত উপমহাদেশ ভাগ হয় ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট। ভারত ১৯৬০ সালের ২৬ জানুয়ারি নতুন সংবিধান গ্রহণ করে। এই গণপরিষদ নতুন সংবিধানের অধীনে ’৫২ সালে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সংসদের দায়িত্ব পালন করে। পাকিস্তানে সংবিধান গৃহীত হয় ’৫৬ সালের ২৩ মার্চ। এই গণপরিষদ সংসদে রূপান্তরিত হয়। তবে পাকিস্তানে এই সংবিধানের অধীনে নির্বাচন হওয়ার সুযোগ হয়নি। ’৫৮ সালের ৭ অক্টোবর সংবিধান, সংসদ সব বাতিল করে সামরিক আইন জারি করা হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মির্জা সামরিক আইন জারি করেন। ২৭ অক্টোবর তিনি তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আইয়ুব খান মির্জাকে বিতাড়িত করে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন। পরের বছর ২৭ অক্টোবর আইয়ুব নিজেকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করেন। বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গণপরিষদ ভেঙে দেয়া হয় এবং ’৭৩-এর ৭ মার্চ প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অনেক আতেল বলে থাকেন যে, পাকিস্তান সরকারের অধীনে নির্বাচিত সদস্যদের তো বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। যারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করলেন তারা সংবিধান প্রণয়ন করতে পারবেন না এরকম উদ্ভট চিন্তা বিকৃত মানসিকতা থেকে উৎসারিত। তারা নিজেদের বেশি জ্ঞানী ভাবেন। ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলীকে (রা.) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, জ্ঞানী এবং মূর্খের মাঝে পার্থক্য কী? তিনি বলেছিলেন, জ্ঞানী মনে করেন যে তিনি কিছুই জানেন না, আর মূর্খ মনে করেন যে তিনি সব জানেন।

’৭২-এর সংবিধানের প্রস্তাবনার প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি।’ কথাগুলো অত্যন্ত স্বচ্ছ। মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা সংগ্রাম হলো জনযুদ্ধ। জনগণ চাইলে তবেই স্বাধীনতা যুদ্ধ হতে পারে। একজন ব্যক্তির বিশেষ করে মধ্যম পর্যায়ের একজন সরকারি কর্মকর্তার আবেদনে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হতে পারে, এর চেয়ে হাস্যকর আর কিছু হতে পারে না। স্বাধীনতা ঘোষণা করা আর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ তো এক হতে পারে না। বঙ্গবন্ধু ’৭১-এর ৭ মার্চ প্রথম উচ্চারণ করলেন স্বাধীনতার কথা। কেন? জনগণের নির্বাচিত নেতা হিসেবে তার মুখ থেকে জনগণ এটা প্রত্যাশা করছিলেন। স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে এতো সুস্পষ্ট বক্তব্য সংবিধানে থাকার পরও কেন যে ঘোষণা নিয়ে এতো বক্তব্য/বিতর্ক তা বোধগম্য নয়।

’৭২-এর সংবিধানে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছিল। ৫৬(৪)-এর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ‘মন্ত্রী পদে নিযুক্ত হইবার সময় কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য না থাকিলে যদি তিনি অনুরূপ নিয়োগের তারিখ হইতে ছয় মাসের মধ্যে সংসদ সদস্য নির্বাচিত না হন, তাহা হইলে তিনি মন্ত্রী থাকিবেন না।’ এটি সর্বজনীন। বিশ্বে বাংলাদেশ ছাড়া আর যেখানেই সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে এটা মেনে চলা হয়। একটি সাধারণ ক্লাবেও কোনো অসদস্য পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক হতে পারেন না। অন্য কারো জ্ঞান বা অন্য কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হলে তাকে উপদেষ্টা বা এ ধরনের কোনো পদে নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। আমাদের সংবিধানে পরিবর্তন এনে যখন রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার চালু করা হয়েছিল, তখন রাষ্ট্রপতির জগাখিচুড়ি মন্ত্রিসভায় সংসদ সদস্য, আমলা (সামরিক ও বেসামরিক), বিশেষজ্ঞ ও কথিত টেকনোক্র্যাট নেয়া হতো। এই পদ্ধতির সূচনাকারী অবশ্য পাকিস্তানের স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান। যদিও আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি কিন্তু আমাদের ঘাড় থেকে পাকিস্তানের প্রেতাত্মাকে পুরোপুরি সরাতে পারিনি। এমনকি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগও পাকিস্তানি মানসিকতা থেকে নিজেকে পুরোপুরি মুক্ত করতে পারেনি। কারণ অবশ্য কাকুল ও লাহোর সিনড্রম। সংসদীয় গণতন্ত্র পুনরায় চালু হওয়ার পর ২৪ বছর চলছে। বিতর্কিত সংসদ নিয়ে ছয়টি সংসদের নির্বাচন হলো। অথচ এতো বড় একটা অসামঞ্জস্য ও অনৈতিক বিধান রোধ করা হলো না।

’৭২-এর অর্থাৎ অসংশোধিত সংবিধানে চারটি মূল রাষ্ট্রীয় নীতি ছিল- জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। এ চারটি কথা সংবিধানে থাকায় বস্তুত কোনো কাজ হয়নি। বরঞ্চ এসবকে ঘিরে অনেক আলোচনা-সমালোচনা, সংশোধনী এবং পুনঃসংশোধনী হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতা কথাটার পরিবর্তে অসাম্প্রদায়িকতা বা এ ধরনের কিছু থাকলে ভালো হতো। কেননা ধর্মনিরপেক্ষতা কথাটা অতিদ্রুত ধর্মবিমুখতার দিকে ঠেলে দেয়া যায়। বঙ্গবন্ধু অবশ্য একাধিকবার বলেছেন যে, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। উপমহাদেশের বাইরের কথা বলতে পারবো না, উপমহাদেশের রাজনীতিতে ধর্মকে প্রচণ্ডভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হয়। এই সুযোগটা নেয়ার জন্য দুজন সামরিক শাসক সংশোধনী এনেছেন। একজন লাগিয়েছেন ‘আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস’, অপরজন ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে যোগ করে দিয়েছেন। পঞ্চদশ সংশোধনীর দ্বারা ধর্মনিরপেক্ষতা কথাটা পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রয়ে গেছে। সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে যদি এটা নিশ্চিত করা যায় কোনো নাগরিক ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ এসব কারণে কোনো বৈষম্যের শিকার হবেন না, সমান সুযোগ এবং অধিকার ভোগ করবেন, তাহলে যথেষ্ট। উপমহাদেশ ভাগ হয়েছিল ধর্মের ভিত্তিতে। অর্থাৎ দ্বিজাতিতত্ত্বে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ করেছে অসাম্প্রদায়িক আদর্শের ভিত্তিতে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। আইনের শাসনের দ্বারা এই অধিকারসমূহ নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয়তাবাদ কথাটা নিয়েও অনেক টানা-হেঁচড়া হয়েছে। আমরা বাঙালি। আমাদের জাতীয়তা বাঙালি। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি থেকে আলাদা করার জন্য জেনারেল জিয়ার আমলে আমরা বাংলাদেশী হয়ে গেলাম। মহাজোট সরকারের আমলে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বিষয়টি একটা মাঝামাঝি জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেয়া হলো।

গণপরিষদের মূল লক্ষ্য ছিল ‘সংসদীয় গণতন্ত্র’ যেখানে প্রধানমন্ত্রী সর্বেসর্বা। যে কারণে ৪৮(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের ৩ নং দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন। অর্থাৎ প্রধান বিচারপতির নিয়োগও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া হবে না। পরবর্তী সংশোধনের মাধ্যমে অবশ্য রাষ্ট্রপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ’৭২-এর সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদকে অগণতান্ত্রিক বলা হয়। এখানে বলা হয়েছে যে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তিনি যদি সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন তাহলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে। এই বিধান একজন ব্যক্তিকে দলের কাছে বিবেক বন্ধক দিতে বাধ্য করে। তবে তৎকালীন গণপরিষদ সদস্যদের চোখের সামনে ৫৬-৫৮ সালের রাজনৈতিক ডিগবাজির চিত্রটি ভেসে ছিল। ২৪ ঘণ্টার সরকার গঠন এবং পতন। উপরন্তু পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে মারামারি এবং ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলী সাহেবের মৃত্যু পশ্চিম পাকিস্তানের নেতাদের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে তৎপর হতে উৎসাহিত করে। জেনারেল আইয়ুব খান তো সামরিক আইন জারির জন্য অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করলেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে একটা লোকসঙ্গীত প্রায় সবার মুখে ফিরতো তার প্রথম দুলাইন হলো- ‘বৈঠা টান দাওরে ওরে ভোটার ভাই/ হক ভাসানীর নায়ে চইড়া সবার আগ যাই।’ নির্বাচনে তাই হলো। মুসলিম লীগ ৩০০ আসনের ভেতর মাত্র ৭/৮টি আসন পেয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে দুই প্রধান নেতা তো ঐক্য রাখলেন না। বরঞ্চ তাদের কার্যকলাপ রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলো। এটাই ছিল ৭০ অনুচ্ছেদের পটভূমি। ধর্মনিরপেক্ষতা কিংবা জাতীয়তাবাদ- এ নিয়ে এতো সূক্ষাতিসূক্ষ ব্যাখ্যার কোনো প্রয়োজন হয় না, যদি সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকার ভোগ নিশ্চিত করা যায়। সংবিধানে যেসব মৌলিক অধিকারের উল্লেখ রয়েছে সবই গুরুত্বপূর্ণ। তারপরও ২৭ অনুচ্ছেদকে সর্বোচ্চ আসনে বসাবো। ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী’। এটি হলো সকল মৌলিক অধিকার প্রবাহের উৎস।

সংবিধানে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে। এ সংক্রান্ত অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা নিয়ে কোনো জটিলতা দেখা যায়নি। তারপরও ১৯৯১ সাল থেকে যারা ক্ষমতায় এসেছেন, তারা কেউ আন্তরিকতার সঙ্গে এ নিয়ে কাজ করেননি। সামরিক শাসকদের কথা নাইবা বললাম। কোনো সরকারই জেলা পরিষদের নির্বাচন করার সাহস দেখাতে পারেননি। অতএব সংবিধানে থাকলেই যে সেটা ঠিকমতো কার্যকর করা হবে, এরকম নিশ্চয়তাও নেই। আসলে যেটি প্রয়োজন, তাহলো সাংবিধানিক পদে যারা আসেন তাদের দায়বদ্ধতার জ্ঞান। ভারতের নির্বাচন কমিশন দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছে। তাই সেখানে ছয় দশকের বেশি সময় ধরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। যারা যতো শিখরে থাকবেন, তাদের দায়বদ্ধতা ততো বেশি হতে হবে, বিবেক জাগ্রত থাকতে হবে।

ব্যাবিলনের শাসক হাম্মুরাবি’র (১৭৯২-১৭৫০ খ্রিস্ট পূর্ব) ‘কোড’ থেকে কয়েকটি লাইন তুলে ধরলাম।

‘অহঁস ধহফ ঊহষরষ হধসবফ সব ঃড় ঢ়ৎড়সড়ঃব ঃযব বিষভধৎব ড়ভ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব, সব ঐধসসঁৎধনর, ঃযব ফবাড়ঁঃ, মড়ফ-ভবধৎবহম ঢ়ৎরহপব, ঃড় পধঁংব লঁংঃরপব ঃড় ঢ়ৎবাধরষ রহ ঃযব ষধহফ, ঃড় ফবংঃৎড়ু ঃযব রিপশবফ ধহফ ঃযব বারষ, ঃযধঃ ঃযব ংঃৎড়হম সরমযঃ হড়ঃ ড়ঢ়ঢ়ৎবংং ঃযব বিধশ.’

প্রায় ৪ হাজার বছর আগে একজন শাসক যে কর্তব্য ও দায়িত্বের কথা বলেছেন, আজ একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে সেটুকু পেলে আমরা বর্তে যাবো। এখানে উল্লেখ্য, হাম্মুরাবি যে কোডের (আইনের) জন্য বহুল আলোচিত, যেখানে বিচার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে- ‘চোখের পরিবর্তে চোখ, দাঁতের পরিবর্তে দাঁত’, বর্তমান সভ্য জগতে এ ধরনের প্রতিহিংসামূলক বিচার মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু হাম্মুরাবি জনগণের মঙ্গলের কথা বলেছেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন, দুষ্কৃতকারীদের নির্মূল করার কথা বলেছেন, সবলের অত্যাচারের হাত থেকে দুর্বলকে রক্ষা করার কথা বলেছেন। এই সভ্য সমাজে এখনো এসবের অভাব রয়েছে যা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সুশাসনের প্রয়োজন।

৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ এবং তিন লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। যে মহান গণপরিষদ ’৭১-এর ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করে, সেই গণপরিষদই স্বল্প সময়ে সংবিধান প্রণয়ন করে যা ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গৃহীত হয় এবং সেই সঙ্গে নিজের পরিসমাপ্তি ঘটায়। সংবিধানের যাত্রাপথ মসৃণ হয়নি। এটি দুটো সামরিক শাসনের কবলে পড়েছিল। জাতির জনক এবং স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। ১০ এপ্রিল ’৭১-এ ঘোষিত নীতি-আদর্শকে উন্নীত রেখে যে সরকার সফলভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করে বিজয় অর্জন করলো তার প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং অপর দুজন জাতীয় নেতা এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামান- চার নেতাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয় ৩ নভেম্বর ’৭৫ অর্থাৎ সংবিধান দিবসের আগের দিন। আমরা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি সংবিধান প্রণয়নকারীদের। আমরা সংবিধান সমুন্নত রাখার জন্য নতুনভাবে শপথ নিতে চাই। ’৭২-এর মূল সংবিধানে ফিরে যাওয়া এখন সুদূর পরাহত। যা রয়েছে সেখান থেকে সেরাটা পেতে চায় জনগণ।

সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ : সাবেক ইপিসিএস ও কলাম লেখক।

SUMMARY

1803-1.png