স্বাধীনতা পূর্ণতা পেয়েছিল যেদিন


২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের মতো ১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতির জন্য একটি ঐতিহাসিক স্মরণীয় দিন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের এই দিনে তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায় প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। এমন স্মরণীয়-বরণীয় প্রত্যাবর্তন বিশ্ব ইতিহাসে খুব একটা দেখা যায় না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ লন্ডনের গার্ডিয়ান-এর সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়- ‘শেখ মুজিবের ঢাকা বিমানবন্দরে পা রাখা মাত্রই এই নতুন রাষ্ট্র একটি বাস্তব সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।’ ১১ জানুয়ারি দি টাইমস-এর সম্পাদকীয়তে বলা হয়- ‘বাস্তব সত্য হচ্ছে মুজিবের প্রত্যাবর্তনে পূর্ব পাকিস্তানের বিলুপ্তি ঘটেছে এবং পূর্ব বাংলা বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে।’

দীর্ঘ দুই যুগের আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশ। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬০-এর দশকে সামরিক আইনবিরোধী আন্দোলন, ’৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচন, ’৭১-এর মার্চের ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলনের পর ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্য নিয়েই আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিব ’৬৬ সালে ৬ দফা দাবি পেশ করেন। দূরদর্শী মুজিবের চিন্তা-ভাবনা ভুল ছিল না। তিন বছরের মাথায় এক দফায় রূপান্তরিত হয়েছিল ৬ দফা।

তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল ভিত্তি হচ্ছে ’৭০-এর নির্বাচন। ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে ১৬৯ (১৬২+মহিলা ৭) আসনের মধ্যে শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ পায় ১৬৭ (১৬০+৭) আসন। একইভাবে ১৭ ডিসেম্বরের পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮টি পায় মুজিবের আওয়ামী লীগ। ২টি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিব বিশ্ব ইতিহাসে একজন অতিশয় জনপ্রিয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। একাত্তরের ৩ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন পাকিস্তানের সামরিক প্রেসিডেন্ট জে. ইয়াহিয়া খান ১ মার্চ স্থগিত ঘোষণা করলে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয়। ৭ মার্চ রেসকোর্সের জনসভায় শেখ মুজিব প্রকারান্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাই ঘোষণা করেন।

মুজিবের নেতৃত্বে ২৫ দিনের অসহযোগ আন্দোলন নয়া ইতিহাস সৃষ্টি করে। পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক সরকার বলবৎ ও কার্যকর থাকা অবস্থায় অসহযোগ আন্দোলনের ২৫ দিন মূলত বিরোধী দলীয় নেতা শেখ মুজিবের নির্দেশেই পূর্ব বাংলা শাসিত হয়েছে। এভাবে বিরোধীদলীয় নেতার নির্দেশে কোনো দেশ প্রায় এক মাস পরিচালিত হওয়ার নজিরও বিশ্ব ইতিহাসে নেই। ’৭১-এর ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান সামরিক জান্তা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। ওই রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ’৭১-এর ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে জনগণের প্রতিনিধিরা স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। শত্রুর হাতে বন্দি থাকা সত্ত্বেও শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রপতি করেই যুদ্ধ পরিচালনার জন্য সরকার গঠন করতে হয়। একজন বন্দি নেতার নেতৃত্বে সরকার গঠন করা এবং সেই বন্দি নেতার নামে পরিচালিত একটি সশস্ত্র যুদ্ধে জয়ী হওয়ার ঘটনাও সমসাময়িক ইতিহসে বিরল। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

’৭১-এর ৩ ডিসেম্বর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়। ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে। শত্রুর হাতে বন্দি বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তখন কোথায়, তিনি কেমন আছেন, তা পাকিস্তান সরকার ছাড়া আর কারো জানা ছিল না। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয়ের পর বাংলার জনগণ নবীন রাষ্ট্রের জনককে দেখার জন্য উতলা হয়ে ওঠে। বিশ্ব জনমতও তখন মুজিবের পক্ষে। শুধু বাংলা নয়, সমগ্র বিশ্বে শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে। পরাজয়ের পর পাকিস্তানের সামরিক প্রেসিডেন্ট জে. ইয়াহিয়া খান পদচ্যুত হন। ২০ ডিসেম্বর ’৭১ জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছ থেকে রাজনীতিবিদ ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক- দুটি পদই ছিনিয়ে নেন। পূর্ব পাকিস্তান হাতছাড়া হওয়ার পর অবশিষ্ট পাকিস্তানকে রক্ষা করতে হলে ভুট্টোকে সবকিছু আবার নতুনভাবে সাজাতে হয়। ক্ষমতা গ্রহণের পরদিন ২১ ডিসেম্বর ’৭১ বিদেশি ক‚টনীতিক ও সাংবাদিকদের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভুট্টো বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানকে শিগগিরই মুক্তি দিয়ে গৃহবন্দি করে রাখা হবে।’ ওই সময় আমেরিকা, ব্রিটেন, ভারতসহ গণতান্ত্রিক দেশের পত্রপত্রিকা মুজিবের মুক্তির ব্যাপারে সোচ্চার হয়ে ওঠে।

পাকিস্তানি কারাগারে বন্দি বাঙালির মহান নেতা শেখ মুজিব তখনো জানতে পারেননি, ১৬ ডিসেম্বর তাঁর বাংলা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছে। শেখ মুজিবকে ২৫ মার্চ ধানমণ্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে ১ এপ্রিল পর্যন্ত সেনানিবাসে রাখা হয়। এরপর করাচি হয়ে মিয়াওয়ালী জেলে আটক রাখা হয় তাঁকে। আগস্টে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে শেখ মুজিবের বিচার শুরু হয়। বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো শেখ মুজিবকে। বিশ্ব জনমতের চাপে এবং অন্য একটি কারণে শেখ মুজিবের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেনি পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ আরো অনেক বিশ্ব নেতা শেখ মুজিবের বিচার প্রহসনের প্রতিবাদ জানিয়ে তাঁর জীবন রক্ষার দাবি জানান। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাঙালি নেতাকে হত্যা না করার বিশেষ কারণটি হলো- পাকিস্তানিরা জানত, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জনগণ মুজিবের ফাঁসির খবর জানলে সেখানে আটকে থাকা পাকিস্তানি সৈন্যদের একজনকেও বাঙালিরা জীবিত রাখবে না।’ শুধু এ চিন্তা ও আশঙ্কা থেকেই ওরা শেখ মুজিবকে হত্যা করতে সাহস পায়নি।

২৬ ডিসেম্বর মিয়াওয়ালী জেলখানা থেকে মুজিবকে সিহালা রেস্ট হাউসে আনা হয়। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ওই রেস্ট হাউসে গিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ২৭ ডিসেম্বর ড. কামাল হোসেনকে আনা হয় ওই রেস্ট হাউসে। পরে জানা গেছে, জেলে শেখ মুজিবের সেলের পাশে কবর খোঁড়া হয়েছিল। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে জেলের ডিআইজি শেখ আবদুর রশিদ শেখ মুজিবকে জেলখানা থেকে নিজ বাসস্থানে নিয়ে যান। ডিআইজির বাসভবন থেকেই ভুট্টোর নির্দেশে মুজিবকে রেস্ট হাউসে স্থানান্তর করা হয়। আসলে বাংলাদেশে আত্মসমর্পণ করা পাকিস্তানের ৯৩ হাজার সেনা অফিসার ও জোয়ানকে ফেরত নেয়ার তাগিদ থেকেই মুজিবকে দ্রুততার সঙ্গে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় ভুট্টো। ৩ জানুয়ারি ১৯৭২ করাচির নিশতার পার্কের জনসভায় ভুট্টো ঘোষণা করেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে নিঃশর্ত মুক্তিদান করা হবে।’ ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান ত্যাগ করার পূর্ব পর্যন্ত ভুট্টোর প্রাণপণ চেষ্টা ছিল শেখ মুজিবের কাছ থেকে একটি প্রতিশ্রæতি আদায় করা। সেই প্রতিশ্রæতিটি হলো- ‘বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি জোড়াতালির সম্পর্ক হলেও বজায় রাখা।’ কিন্তু ভুট্টোর শত আবেদন-নিবেদনে কাবু হননি মুজিব। শেখ মুজিবের এক কথা- ‘আগে আমাকে আমার জনগণের কাছে যেতে দাও। বাংলাদেশে না গিয়ে এ ব্যাপারে আমি কোনো কথাই বলতে পারব না।’

মুজিব নেতৃত্বের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে সংযত রাখা এবং মৃত্যুর মুখেও সিদ্ধান্তে অটল থাকা। পাকিস্তানি জান্তা শত প্রলোভন এবং ফাঁসির ভয় দেখিয়েও বন্দি জীবনের নয় মাসে শেখ মুজিবের কাছ থেকে কোনো কথা আদায় করতে পারেনি। জেলে আটক অবস্থায় প্রহরীদের সালামের জবাব দেয়া ছাড়া কোনো কথাই তিনি বলেননি ওই দুঃসহ বন্দি জীবনে। ৭ জানুয়ারি ১৯৭২ দিবাগত মধ্যরাতের পর শেখ মুজিবকে বহনকারী বিশেষ বিমানটি পিন্ডি ত্যাগ করে। সঙ্গে স্ত্রী ও কন্যাসহ ড. কামাল হোসেন।

সদ্য স্বাধীন দেশের জনক শেখ মুজিব ওই সময় বিশ্ব নেতা। ৮ জানুয়ারি সকাল ৭টায় বিবিসির ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে প্রচারিত খবরে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বিমানযোগে লন্ডন আসছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানটি লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।’ সকাল ৮টার মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে ব্রিটিশ সরকারের সম্মানিত অতিথি হিসেবে লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ক্যারিজেস হোটেলে নিয়ে আসা হয়। অল্প সময়ের মধ্যে ব্রিটিশ লেবার পার্টির নেতা (পরে প্রধানমন্ত্রী) হ্যারল্ড উইলসন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে এসে ‘গুড মর্নিং মি. প্রেসিডেন্ট’ বলে সম্ভাষণ জানান। দুপুরের দিকে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এক মুহ‚র্তের জন্য আমি বাংলাদেশের কথা ভুলিনি। আমি জানতাম, ওরা আমাকে হত্যা করবে। আমি আপনাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাব না, কিন্তু আমার জনগণ মুক্তি অর্জন করবে- এ ব্যাপারে আমার মনে কোনো সন্দেহ ছিল না।’

বঙ্গবন্ধু যখন লন্ডনে পৌঁছেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ ছিলেন লন্ডনের বাইরে। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করে প্রধানমন্ত্রী হিথ ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ছুটে আসেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর রুপালি কমেট বিমানে চড়ে ১০ জানুয়ারি সকাল ৮টায় দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে নামলে রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, মন্ত্রিসভার সদস্যবর্গ বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও সে দেশের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমার এই যাত্রা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টায় আপনারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, করেছেন বীরোচিত আত্মত্যাগ।’ ব্রিটিশ কমেটেই বঙ্গবন্ধু স্বদেশে ফিরেন। ১০ জানুয়ারি ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে দশ লাখ মানুষ জাতির জনককে সংবর্ধনা জানায়। এই ময়দানেই প্রায় দশ মাস আগে (৭ মার্চ ১৯৭১) তিনি বাংলার মানুষকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ৯ মাসের সশস্ত্রযুদ্ধে প্রবল প্রতাপশালী পাকিস্তানি শত্রুর বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ প্রাণপণ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। বঙ্গবন্ধু ’৭১ সালে শত্রুর কারাগারে বন্দি থাকলেও মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর নামেই যুদ্ধ করেছেন এবং হাসতে হাসতে জয় বাংলা বলে জীবন দিয়েছেন। অনুপস্থিত সেনাপতির এমন সেনাপতিত্ব ইতিহাসে আরেকটি নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত।

১৯৭২-এর ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুজিবের মুক্তি, লন্ডনে একদিন অবস্থান শেষে দিল্লি হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ১০ জানুয়ারি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককালে শেখ মুজিব এই প্রতিশ্রæতিও আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, তিনি যখন চাইবেন, ভারতীয় সৈন্য তখনই বাংলাদেশ থেকে চলে যাবে। শেখ পর্যন্ত তাই হয়। বঙ্গবন্ধু ওই সময় স্বদেশে আসতে না পারলে এত তাড়াতাড়ি ভারতীয় সৈন্য চলে যাওয়ার পরিস্থিতি হয়তো সৃষ্টি হতো না। একজন ঐতিহাসিক যথার্থই বলেছেন, ‘অতিশয় দ্রুততার সঙ্গে সহায়তাকারী ভারতীয় সৈন্য স্বাধীন দেশ থেকে বিদায় করে দিয়ে শেখ মুজিব বাংলাদেশকে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন করেছেন।’

সবকিছু মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল সত্যিকার অর্থেই একটি ইতিহাস সৃষ্টিকারী বিরল ঘটনা। ইতিহাসের মহানায়ক নবজাত রাষ্ট্রের জনকের আগমন- বাংলার অপূর্ণ স্বাধীনতাকে সেদিন পূর্ণতা দিয়েছিল।

মোহাম্মদ শাহজাহান : সম্পাদক, সাপ্তাহিক বাংলাবার্তা।

SUMMARY

1798-1.png