বেশ কয়েকদিন আগে একটি সুধী সমাবেশে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল যে, ছয়দফার প্রণেতা কে? বিভিন্ন মতবাদ ব্যক্ত করা হলো তবে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য আসেনি। এ সম্পর্কে আমজনতা হিসেবে আমার একটা সাদামাটা বক্তব্য রয়েছে। তবে সেটি পরে উপস্থাপন করব। তার আগে বলা প্রয়োজন যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে ছয়দফার অবস্থান কোথায়।
ছয়দফা সম্পর্কে বলা হয় বাঙালির মুক্তিসনদ বা মাগনা কার্টা। ১২১৫ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের মানুষ দেশের রাজা মি. জনের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু দাবি আদায় করে। তার ভেতর অন্যতম হলো যে মুক্ত মানুষকে আইনের পদ্ধতি অনুসরণ করা ছাড়া গ্রেপ্তার করা যাবে না। বাঙালি মুসলমানরা ১৯৪৬ সালে এই প্রত্যাশায় মুসলিম লীগকে একচেটিয়া ভোট দিয়েছিল যে, তাদের সার্বিক মুক্তি আসবে নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানে। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা প্রভু সেজে আমাদের ঘাড়ে চেপে বসলেন। প্রথমেই তারা আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির টুঁটি চেপে ধরলেন। যার ফলে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন। ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লাহোরে বঙ্গবন্ধু বাঙালির সার্বিক মুক্তি অর্জনের দাবিতে ছয়দফা উপস্থাপন করলেন। উল্লেখ্য, এই লাহোরে তখন থেকে ২৬ বছর আগে উপমহাদেশের মুসলমানদের পৃথক আবাসভূমির দাবি উপস্থাপন করা হয়েছিল। তখন পাকিস্তান নামে এক রাষ্ট্রের কথা বলা হয়। বলা হয়েছিল অধিক মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় একাধিক পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। পরে ছলচাতুরীর মাধ্যমে সংশোধনীর কথা বলে এক রাষ্ট্র পাকিস্তানের কথা বলা হয়। ছয়দফার প্রথম দফা হলো সব ক’টি প্রদেশ নিয়ে একটি শিথিল কনফেডারেশন গঠন করা হবে। প্রতিরক্ষা এবং পররাষ্ট্র ছাড়া বাকি সব বিষয় প্রদেশের এখতিয়ারে থাকবে। ভৌগোলিক অবস্থার কারণে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য সহজে বিনিময়যোগ্য পৃথক মুদ্রা চালু করা হবে। অথবা এক মুদ্রা থাকলে তার একটা হিসাব থাকবে কি পরিমাণ মুদ্রা পূর্ব পাকিস্তানে আগমন ও নির্গমন ঘটে। কেন্দ্রের কর আরোপ করার ক্ষমতা থাকবে না। এর ব্যয়ভারের জন্য প্রদেশগুলো আনুপাতিক হারে অর্থ প্রদান করবে। প্রত্যেকটি অঙ্গরাজ্য বিদেশের সঙ্গে স্বতন্ত্রভাবে বাণিজ্য করবে এবং অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রত্যেকটি অঙ্গরাজ্য নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব বাহিনী গঠন করবে। দফাগুলো ভালো করে পড়লে বোঝা যাবে যে এর ফলে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর শোষণ করার আর কোনো সুযোগ থাকবে না। এই ছয়দফা উপস্থাপনের পর বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ কিভাবে জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তা লিখতে গেলে আর একটি অধ্যয় রচনা করতে হবে। বাংলার মানুষ হৃদয় দিয়ে এই ছয়দফা গ্রহণ করে যার প্রমাণ তারা দিয়েছে ’৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে। প্রদত্ত ভোটের শতকরা ৭৫ ভাগ আওয়ামী লীগের বাক্সে দিয়েছিল। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য অধিবেশনকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করলে বাঙালিরা স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে রাস্তায় নেমে আসে এবং একদফার ঘোষণা দেন। অর্থাৎ বাংলার স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ভাষণ তো বাঙালির প্রত্যাশার প্রতিফলন। বাঙালির ছয়দফা বাস্তবায়নের জন্য ’৭০-এর নির্বাচনের ভোটের মাধ্যমে ম্যান্ডেট দিয়েছে। বিভিন্নভাবে জানা যায় যে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসকরা তাদের গোয়েন্দাদের মাধ্যমে এরকম প্রতিবেদন পেয়েছিল যে, নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের কোনো দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। অতএব তারা রাজনীতি তথা সরকার গঠন নিয়ে সেই খেলা খেলবে যা তারা ষাটের দশকে খেলেছিল। কিন্তু যখন দেখল যে তারা তাদের মৃত্যু পরোয়ানা অর্থাৎ ছয়দফা জারি হয়েছে তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেল। ভুট্টোর রাজনৈতিক সহকর্মী এক সময়ের মন্ত্রিসভার সদস্য ব্যারিস্টার রফি রাজা তার বইতে লিখেছেন যে ’৭০-এর নির্বাচনের পর ভুট্টোর রাজনৈতিক দল পিপিপি ছয়দফা বাস্তবায়িত হলে ফলাফল কি হবে, তার একটা হিসাব বের করেছে। এতে দেখা যায় যে ছয়দফা বাস্তবায়িত হলে পাকিস্তান একটি অত্যন্ত শিথিল কনফেডারেশন রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হবে। পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলকে তৎকালীন ৪ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক বোঝার ভেতর ৩ হাজার ৮শ কোটি টাকার বোঝা বইতে হবে। ৩ হাজার ১শ কোটি টাকার অভ্যন্তরীণ ঋণের পুরো বোঝাটা পশ্চিমের ঘাড়ে চাপাবে। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিচালনা খরচের মাত্র শতকরা ২৪ ভাগ বহন করবে পূর্ব পাকিস্তান যদিও তাদের জনসংখ্যা শতকরা ৫৬ ভাগ। এ ছাড়া অতীতের বঞ্চনার জন্য পূর্ব পাকিস্তানকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে পশ্চিমাঞ্চলের। এই তথ্যই ভুট্টোর দেহে জ্বালা ধরিয়ে দিল। তিনি বলতে শুরু করলেন এদিকে আমি আর ওদিকে তুমি। পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়ালো। এখন পশ্চিমের নেতারা চিন্তা করতে লাগল যে তাদের বিচ্ছিন্ন হতে হবে। অথবা বাঙালিকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। অতএব কথিত গণতান্ত্রিক নেতা ভুট্টো পাকিস্তান সামরিক জেনারেলদের কাঁধে সাওয়ার ছিলেন। রফি রাজা লিখেছেন যে ভুট্টো বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে অবমূল্যায়ন এবং পাকিস্তানের সামরিক শক্তিকে অতি মূল্যায়ন করেছেন। রাজা আরো লিখেছেন যে ভুট্টো ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি যে ভারত পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার সুযোগ এভাবে নেবে। এটি কেন বুঝতে পারলেন না মেধাবী জুলফিকার আলী ভুট্টো তা বোধগম্য নয়। ’৪৭ সালের দেশ বিভাগের প্রথম প্রহর থেকে পাকিস্তান এবং ভারত উভয়ে উভয়ের টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নবাদী নেতা ডা. ফিজো এবং লাল ডেংগাসহ সবার বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ তো পাকিস্তানের পাসপোর্টে এবং ঢাকার মাধ্যমে। বরঞ্চ তৎকালীন ভারতের প্রধান মন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দ্রিরা গান্ধী তো প্রায় নয়মাস বিশ্বের কাছে আহ্বান জানিয়েছিলেন যে বাঙালির অবিসংবাদিত নির্বাচিত নেতা শেখ মুজিবুরের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা হোক। ভুট্টো সেই যে পাকিস্তানের জেনারেলদের ঘাড়ে সওয়ার হলেন, জীবদ্দশায় আর নামাতে পারেননি। তাদের নিয়ে খেলতে গিয়ে তার নিজের জীবন দিতে হলো।
এবারে আসি মূল আলোচনায়। প্রথমে যখন ছয়দফার ঘোষণা এল তখন বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন বক্তব্য আসতে শুরু লাগল। বামপন্থী অনেক আতেল বললেন যে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ তৈরি করেছে। আবার কেউ বললেন যে ভারত এটির খসড়া প্রণেতা। আমরা জানি যে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে হক ভাসানী সোহরাওয়ার্দীর নির্বাচানে ইশতেহার হিসেবে ২১ দফা উপস্থাপিত করা হয়েছিল। সেই ইশতেহারের ১৯ নম্বর দফাটা হুবহু উপস্থাপন করা হলো ‘লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ববঙ্গের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন এবং দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রা ব্যতীত সব বিষয় পূর্ববঙ্গ সরকারের অধীনে আনয়ন। দেশরক্ষার ক্ষেত্রে স্থলবাহিনীর হেডকোয়ার্টার পশ্চিম পাকিস্তান এবং নৌবাহিনীর হেডকোয়ার্টার পূর্ব পাকিস্তানে স্থাপন এবং পূর্ব পাকিস্তানে অস্ত্র নির্মাণ কারখানা স্থাপনও আনসার বাহিনীকে সশস্ত্র বাহিনীতে পরিণত করা হবে’ বঙ্গ পিডিয়া ২ খণ্ড পৃ: ৭২ । এটি পড়লে বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না যে ছয়দফার মূল উৎস এই ১৯ নম্বর দফাটি। যুক্তফন্ট্রের ২১ দফার প্রণয়নকারী কে বা কারা তা আমি জানি না। সে সময় বঙ্গবন্ধু একেবারে তরুণ। বাঙালির গর্ব শেরে বাংলা ফজলুল হক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানীসহ অনেক খ্যাতিমান নেতা বেঁেচ ছিলেন। যারাই করেন না কেন, তাদের মাথায় লাহোর প্রস্তাবের একাধিক রাষ্ট্রের কথা ছিল। পরবর্তীতে পাকিস্তানের শাসক এবং তাদের দালালরা একে ঝষরঢ় ড়ভ ঢ়বহ বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। ব্রিটিশরা স্বায়ত্তশাসন দেয়ার পর তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার মুসলিম সংখ্যাধিক্য থাকায় সব কয়জন মুখ্যমন্ত্রী মুসলমান ছিলেন। সে সময় প্রাইম মিনিস্টার বলা হতো। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের যুক্তফন্ট্রের ভূমিধস বিজয় সংগঠিত হয়। বাংলার মানুষের প্রত্যাশা ছিল যে, হক, ভাসানী সোহরাওয়ার্দী এই ত্রয়ীর নেতৃত্বে বাঙালির অধিকার আদায় হবে। কিন্তু তা হলো না। তারা অন্তর্কলহে লিপ্ত হলেন। পশ্চিমাদের তো ষড়যন্ত্রের জাল তো বিছানা ছিল। এরা এতে পা দিলেন। ২১ দফা সিকেয় উঠল। পাকিস্তানের তৃতীয় গভর্নর জেনারেল বা বড়লাট ছিলেন সাবেক পাঞ্চাবি আমলা গোলাম মোহাম্মদ। তিনি অত্যন্ত কুটিল, চরম ষড়যন্ত্রকারী, নানা রোগে আক্রান্ত অন্ধ বিকলাঙ্গ এবং এক নাম্বারের লম্পট ছিলেন। অথচ এই লোকটি যখন ঢাকায় আসেন, তখন তার গলায় কে আগে মালা দেবেন, তা নিয়ে বর্ষীয়ান নেতা এ কে ফজলুল হক এবং আতাউর রহমান খানের ভেতর যে দৌড় প্রতিযোগিতা হয়েছিল তাতে সেদিন সমগ্র বাঙালি জাতির মাথা হেট হয়ে গিয়েছিল। আমাদের বরণীয় নেতাদের অন্তর্কলহের ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার বিষয়টিকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করছিলেন জেনারেল আইয়ুব খান যখন তিনি অবৈধভাবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেন। বঙ্গবন্ধু একমাত্র রাজনীতিক যিনি পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো আপোস রফা করেননি বা তাদের ফাঁদে পা রাখেননি। আমাদের বরেণ্য নেতাদের কেউ কেউ বলেছেন যে আইয়ুবকে ডিসস্টার্ব করা যাবে না। কেউ কেউ বলেছেন যে এখন দলীয় এজেন্ডা নিয়ে রাজনীতি করা যাবে না। আগে আইয়ুবের কাছ থেকে গণতন্ত্র উদ্ধার করা হোক। অবশ্য আগে গণতন্ত্র উদ্ধারের ঘোষণাটি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী দিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বে এনডিএফ গঠিত হয়। ১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর বৈরুতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মারা যান। বঙ্গবন্ধু মনে করলেন যে এখন আর এ ধরনের রাজনীতির প্রয়োজন নেই। সরাসরি দলীয় এজেন্ডা নিয়ে আসতে হবে। কেননা বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ে অষ্ট প্রহর বাঙালির মুক্তির চিন্তা। তিনি বাঙালির মুক্তির মূলমন্ত্র পেয়েছিলেন ১৯ নম্বর দফায় যার উল্লেখ আগেই করছি। ১৯ নম্বর দফার মুদ্রা কেন্দ্রের হাতে থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এটি গ্রহণ করা সম্ভব নয়। সে জন্য তিনি পৃথক মুদ্রার কথা বলেছেন। ছয়দফা বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ে লালিত। হয়তো কিছু ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের জন্য করো কারো সঙ্গে পরামর্শ করে থাকতে পারেন। এটি বাস্তবায়ন করার জন্য যখন যে পরামর্শ করার দরকার, তখন সেই পরামর্শ নিয়েছেন। যেমন ১৯৬৬ সালের আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সভায় নিজেই সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করলেন এবং তাজউদ্দিন আহম্মেদকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করলেন। এটি যে কত বড় প্রজ্ঞার তা পরবর্তী কার্যকলাপে প্রমাণিত হয়েছে। জনাব তাজউদ্দিন আহম্মেদ যদি দলের সাধারণ সম্পাদক না থাকতেন, তাহলে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তার হওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কতটা বলিষ্ঠ থাকত, সে ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ আছে। বঙ্গবন্ধু তার বিশ্বস্ত স্থানে রেখেছিলেন জনাব তাজউদ্দিন ছাড়া সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মুনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, ড. কামাল হোসেন এবং খন্দাকার মোশতাক আহম্মেদ। যিশুখ্রিস্টের সঙ্গীদের ভেতর বিশ্বাসঘাতক ছিলেন জুডাস আর বঙ্গবন্ধুর এখানে ছিল খন্দকার মোশতাক। যাহোক ছয়দফার প্রণেতা হিসেবে আর কাউকে সন্ধান করার প্রয়োজন নেই। অনেক খলনায়ক এসে হাজির হবে। ছয়দফার মূল বাণী তিনি ২১ দফার ১৯ নম্বর দফা থেকে গ্রহণ করেছেন। উল্লেখ্য, এই দফাটি অত্যন্ত স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তির জন্য যে পথ খুঁজছিলেন এটি তা দিশারী হিসেবে কাজ করেছে। পাকিস্তান সৃষ্টির প্রাথমিক অবস্থান থেকেই তিনি বুঝেছিলেন পশ্চিমাদের সঙ্গে একত্রে থাকা যাবে না। আমরা তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ে এটাই বুঝেছি যে তিনি যা বিশ্বাস করেন তা অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করেন। তার আত্মজীবনী পড়ে এটাও জানা গেছে যে, তিনি তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সব রকমের কষ্ট করতে সদা প্রস্তুত। তিনি একদিকে যেমন সম্পূর্ণ অসা¤প্রদায়িক অপরদিকে তিনি কোনো হিন্দু জোদ্দার বা জমিদারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে এতটুকু ইতস্তত করেননি। তার স্বভাব চারিত্রিক দৃঢ়তা, নিষ্ঠা এবং আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে তার ইপ্সিত লক্ষ্যে অগ্রসর হয়েছেন। তার পরের ইতিহাস তো আমাদের সবার জানা।
সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ : সাবেক ইপিসিএস ও কলাম লেখক।