স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং মুজিবনগর সরকার


১৯৭১-এর ১০ এপ্রিল এবং ১৭ এপ্রিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১০ তারিখে বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন এবং সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং পরবর্তীতে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। এ সম্পর্কে আলোচনা করার আগে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনা করতে হয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র জনতা, সর্বস্তরের মানুষ তাতে অংশ নিয়েছেন। বিশেষ গোষ্ঠী বা সংগঠনের বিশেষ কোনো ভূমিকা বা অবদান এতে নেই, তা যেভাবেই দাবি করা হোক না কেন? ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তিসনদ ছয়দফা উপস্থাপন করেন এবং এর সমর্থন আদায়ের জন্য বাংলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ছুটে বেড়ান। বাঙালিরা ভাষা আন্দোলনের ঘটনার মাধ্যমে বুঝেছিলেন যে তাদের স্বাধীনতা বা মুক্তি কোনোটাই হয়নি। তাদের সামনে বন্ধুর পথ। তারা ছয়দফাকে মনে করল মুক্তির দিশারী। তাইতো ’৭০ সালে বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ঘোষণা করলেন যে তিনি জনগণের কাছে ছয়দফা বাস্তবায়নে ম্যান্ডেট চাইছেন, জনগণ সেই ম্যান্ডেট দিলেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মোট প্রদত্ত ভোটের শতকরা ৭৫ ভাগ ভোট আওয়ামী লীগের বাক্সে পড়েছিল, পূর্ব পাকিস্তানের জন্য জাতীয় পরিষদের ১৬২টি আসনের ভেতর ১৬০টি আসন আওয়ামী লীগের দখলে আসে, এ ছাড়া মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ৭টি আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হন। সবারই প্রত্যাশা যে, তৎকালীন পাকিস্তানের বৃহত্তম সংসদীয় দল হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। এরপর ১৯৭১ সালের ১ মার্চ যখন পাকিস্তানের সামরিক সরকার ৩ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা দিল, সেদিন বাংলার জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন এবং স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে রাস্তায় নেমে এলেন। পাকিস্তান শব্দটা তাদের হৃদয় থেকে মুছে ফেলল। দফা হলো একটা তাহলো বাংলার স্বাধীনতা। এরপর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে সরাসরি না হলেও প্রথমবারের মতো স্বাধীনতা কথাটা উচ্চারণ করলেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে অসহযোগ আন্দোলন চলল।

১৯৭১-এর ১৯ মার্চ জয়দেবপুরে নিরস্ত্র জনগণ কর্তৃক সশস্ত্র পাকি বাহিনীকে প্রতিরোধ করে প্রমাণ করল যে বাংলার মানুষ স্বাধীনতার জন্য মুক্তির জন্য শতভাগ প্রস্তুত। জয়দেবপুর চৌরাস্তার মোড়ে স্থাপিত স্মৃতিসৌধ স্মরণ করিয়ে দেয় সে সব শহীদকে। ২৫ মার্চের শেষ প্রহরে পাকবাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করে এবং ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। স্বাধীনতার ঘোষণা তিনিই দিতে পারেন যিনি জনগণের অবিসংবাদিত নেতা এবং সে কারণেই জনগণ স্বাধীনতা অর্জনের দায়িত্ব বঙ্গবন্ধুর ওপর অর্পণ করেছে। বাংলার জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে যে তাদের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক মুক্তির মহান দায়িত্ব তার। দ্বিতীয়ত অসহযোগ আন্দোলনে তার আহ্বান শতভাগ সমর্থন জানিয়ে প্রমাণ করলেন যে তারা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রয়েছেন। স্বাধীনতা মঞ্চ যাত্রা মঞ্চ নয় যে কেউ উঠে অভিনয় করবেন। ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে গোটা বাংলাদেশে প্রতিরোধ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুকে পাকবাহিনী গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। এখানে অনেকে বলেন যে বঙ্গবন্ধুর ভারতে পালিয়ে যেতে হতো। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রথমে এরকম কথা আমরা আমজনতা ভাবতাম। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে জাতিসংঘের ঘটনা বলি দেখে এখন আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে বঙ্গবন্ধু এ কাজটি করলে ৩/৪ সপ্তাহের ভেতর আমাদের লড়াই শেষ হতো। আমরা স্বাধীনতাকামীরা প্রায় নিশ্চিহ্ন হতাম। আবার কতদিন পর বাঙালির উত্থান হতো তা অনাগত ভবিষ্যৎ বলতে পারত। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ভারতের সাহায্য-সহযোগিতা এবং আমাদের জনগণের অদম্য সাহসিকতায় যখন আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনল। ভারত পাকিস্তান লড়াই থামাতে, সেখানে বাংলাদেশ নেই। এই প্রস্তাবের পক্ষে ১১৬ ভোট এবং বিপক্ষে মাত্র ১১ ভোট। এই প্রস্তাব পাস হয়ে কার্যকর হলে আমাদের অবস্থা কী হতো তা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন হয় না। সোভিয়েত ভেটো একে নস্যাৎ করে দেয়। অর্থাৎ ৯ মাস ধরে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যে নির্যাতন হলো, কিন্তু বিশ্বে এর কোনো প্রভাব পড়ল না। তখনো তারা একে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার মনে করছে। উল্লেখ্য, একটি মুসলিম রাষ্ট্র ও আমাদের পক্ষে ভোট দেয়নি। বঙ্গবন্ধু ভারতে আশ্রয় নিলে এ কথা জাতিসংঘ পাকাপোক্ত করতে পারত যে, বঙ্গবন্ধু বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা এবং তিনি পাকিস্তানের চিরশত্রু ভারতের সঙ্গে চক্রান্ত করে পাকিস্তান ভাঙতে চাচ্ছেন। আর তখন ভারত বা সোভিয়েত ইউনিয়নের কিছুই করার থাকত না। ইন্দোনেশিয়ায় যেমন কমিউনিস্ট নিধনের নামে লাখ লাখ মানুষ হত্যা করা হয়েছে। বিশ্বের কোনো মহল থেকে প্রতিবাদ আসেনি। এমনকি গনচীনের পরোক্ষ ভূমিকার জন্য এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সেই চীনও উচ্চবাচ্য করেনি। বাংলাদেশেও বিচ্ছিন্নতাবাদী নিধন নামে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই কোটি লোক হত্যা করা হতো।

২৬ মার্চ ১৯৭১-এ জনগণ প্রতিরোধ করা শুরু করল। কিন্তু তাদের প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা। সেই নির্দেশনা দেয়ার একমাত্র অধিকার জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের। অনেক মাতবর গজিয়ে উঠেছিল। এ রকম ঘটনা চিরকাল ঘটে থাকে। ব্যক্তিগত অভিলাষ পূরণের জন্য এরকম পাতি নেতাদের আবির্ভাব ঘটে থাকে। যাহোক বাংলাদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সাফল্যের সঙ্গে এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করে। তারা একত্রিত হয়ে ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র তৈরি করেন এবং বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করেন। অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে যে, কিছু তরুণ নেতৃত্ব নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিপন্থী ছিলেন। তারা মনে করতেন যে তথাকথিত বিপ্লবী পরিষদ গঠন করে বাংলাদেশ স্বাধীন করা যেত। ইতিহাস তা বলে না। এখানে আরো বলা প্রয়োজন স্বাধীনতা অর্জনের পর পরই এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতৃত্বকে যেভাবে বিভাজনের রাজনীতিতে লিপ্ত হতে দেখেছি তাতেই প্রমাণ করে যে, তথাকথিত বিপ্লবী পরিষদ গঠন করলে কি করুণ পরিণতি হতো। এ ছাড়া আরো একটি কথা বলা প্রয়োজন যে অনেক নেতা মুক্তিযুদ্ধে যে অবদান রেখেছেন পরবর্তীতে তাদের চাহিদা তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল। যার ফলে সামগ্রিকভাবে আমাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

যাহোক এই ঘোষণাপত্রে প্রথমে উল্লেখ করা হয় যে তৎকালীন পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়ন করার জন্য একটি সাধারণ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক জান্তা সে পথে না গিয়ে বাংলার মানুষের ন্যায্য অধিকার হরণ করার উদ্দেশ্যে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা শুরু করে। এই ঘোষণাপত্রে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নিজেদের গণপরিষদে রূপান্তরিত করেন যা নিয়মনীতি এবং রাষ্ট্র বিজ্ঞানের বিধানসম্মত। এই গণপরিষদ একটি দেশের সংসদ বা পার্লামেন্টের মতো সার্বভৌম। অতএব এ গণপরিষদ বঙ্গবন্ধুর দেয়া স্বাধীনতার ঘোষণাকে অনুমোদন দেয়। আগেই উল্লেখ করছি যে, বঙ্গবন্ধু একমাত্র যথাযথ ব্যক্তি স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়ার অধিকার যার রয়েছে। আর কারো আগমনের কথা হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাকে শুধু অনুমোদনই নয় তাকে স্বাধীন বাংলার রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ এক এবং অভিন্ন সত্তা। নবগঠিত গণপরিষদ তা যথাযথভাবে উপলব্ধি করে। একই সঙ্গে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেয়া হয়। বলা হয়, যে রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতে উপরাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী নিয়োগ দেয়ার দায়িত্বসহ সব কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। শিরোনামে বলেছি যে, এই সংবিধান বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সংবিধান প্রণয়নের দিশারী। কেন তা ব্যাখ্যা করে বলছি। ঘোষণাপত্রের তিনটি শব্দ বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। বলা হয়েছে যে বাংলাদেশের জনগণের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই ঘোষণাপত্র তথা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ। এখানে সাম্য বলতে সব নাগরিকের ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সমান অধিকার থাকবে। কোনো বৈষম্য থাকবে না। অতএব, অসা¤প্রদায়িক রাষ্ট্রের কথা চলে আসে। আইনের চোখে সবাই সমান এ কথাও এসে যায়। আর মানবিক মর্যাদা বলতে দলমতনির্বিশেষে সব মানুষের মর্যাদা অক্ষুণœ থাকবে। বিচারবহির্ভূতভাবে কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। প্রত্যেকটি নাগরিক একজন স্বাধীন মানুষ হিসেবে মর্যাদা ভোগ করবেন। ক্ষমতা বা পদ দিয়ে নয়। আর সামাজিক সুবিচার বলতে সব প্রকার অর্থনৈতিক শোষণমুক্ত সমাজকে বুঝায়। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি যে, এই তিনটি শব্দ অনেক অর্থ বহন করে। পরবর্তীতে যা বিষদভাবে সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়েছে। আর একটি কথা বলা প্রয়োজন। এই ঘোষণাপত্রে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে পাকিস্তানিরা গণহত্যা সংঘটিত করেছে। আর এই ঘোষণাপত্র এখন সংবিধানের অংশ। অতএব বাংলাদেশের সরকারকে ঘোষণা দিতে হবে না যে পাকিস্তান গণহত্যা করেছে। এটি আমাদের সংবিধানে স্বীকৃত। এখন প্রয়োজন ২৫ মার্চকে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা। তারপর আন্তর্জাতিক মহলে ক‚টনৈতিক তৎপরতা চালানো আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে স্বীকৃত পাওয়ার জন্য।

১০ এপ্রিলের ঘোষণাপত্রটি আকারে ছোট কিন্তু এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। প্রখ্যাত আইনবিদ এবং এক সময়ের বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম এই ঘোষণাপত্রের একক রচয়িতা। এখানে উল্লেখ্য যে, তিনি বাংলাদেশ সংবিধানেরও অন্যতম প্রণেতা। ইতোমধ্যে ঘোষণাপত্রে প্রদান করা ক্ষমতা অনুযায়ী অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম জনাব তাজউদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রী এবং সর্বজনাব এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামান এবং খন্দকার মোশতাক আহম্মেদকে মন্ত্রী নিয়োগ করেন। তারা সবাই ১৭ এপ্রিল মুক্তাঞ্চল মুজিবনগর নামে অভিহিত স্থানে বিশ্বের বিভিন্ন সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে শপথ গ্রহণ করেন। আমরা জানি যে একটি রাষ্ট্রের চারটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী, সরকার এবং সার্বভৌমত্ব। এই সরকার গঠনের ফলে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণ হলো। সরকার গঠিত হলো এখন এই সরকারের দায়িত্ব হানাদার পাকিস্তান বাহিনীকে হটিয়ে দিয়ে সার্বভৌমত্ব উদ্ধার করা। যে কাজটি প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ সরকার, গণপরিষদ এবং বাংলার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। অবশ্য খন্দকার মোশতাক যিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তিনি পাকিস্তানিদের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করতে চেয়েছিলেন। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ এই অবস্থায় তাকে অপসারণ করা ঠিক হবে না তা বুঝেছিলেন। তাই তিনি মুশতাককে নিষ্ক্রিয় করে রাখেন। অনেকে মুজিবনগর সরকারকে অস্থায়ী অথবা প্রবাসী অথবা বিপ্লবী সরকার বলে আখ্যায়িত করতে চান। এর কোনোটাই ঠিক নয়। বাংলাদেশের প্রথম গণপরিষদের অনুমোদনকৃত বাংলাদেশ সরকারের যাত্রা শুরু হয়। পাকবাহিনী ভারত বাংলাদেশ যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এই সরকার ঢাকায় এসে দায়িত্ব গ্রহণ করে। সেই সরকারই চলছে তবে ব্যক্তি বা দলের পরিবর্তন হয় ভোটের মাধ্যমে সেটাই ঘটে চলেছে। রাষ্ট্র যতদিন থাকে সরকারও ততদিন থাকে। অস্থায়ী বলে কিছু নেই। সরকার একটি চলমান প্রতিষ্ঠান। এর কোনো অবসান হওয়ার সুযোগ নেই।

নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের আবেদন যে, আপনাদের সব সময় সতর্ক থাকার প্রয়োজন যেন পাকিস্তানের দালাল এবং চররা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র বানিয়ে না ফেলে। আপনারা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছেন। বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, পেশাজীবী, খেলোয়াড়, ব্যবসায়ী যেভাবে খুশি বিকশিত করার অপার সুযোগ আপনাদের। পাকিস্তানিরা কিভাবে আমাদের দাবিয়ে রেখেছিল, তা বলতে গেলে লম্বা ফিরিস্তি হয়ে যায়। এক নিবন্ধের মাধ্যমে এর উল্লেখ করে শেষ করা যাবে না। আমি শুধু বর্তমান ঘটনার আলোকে একটা দৃষ্টান্ত দিতে চাই। স¤প্রতি যে ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হলো, সেখানে ভুল আম্পেয়ারিংয়ের জন্য সম্ভবত আমরা সেমিফাইনাল খেলা থেকে বঞ্চিত হলাম। কিন্তু তার থেকে বড় একটা পাওনা আমরা পেয়েছি। এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সবার থেকে সুশৃঙ্খল দল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ওভার প্রতি ওয়াইড এবং নো বলের সংখ্যা সব থেকে কম। বিশ্বের সব কটি সেরা দল কোনো না কোনো সময় বাংলাদেশের কাছে পরাজিত হয়েছে। এই হলো আমাদের ক্রিকেট প্রতিভা। অথচ পাকিস্তানের ২৪ বছরের ইতিহাসে একজন বাঙালিকেও ক্রিকেট খেলার সুযোগ দেয়া হয়নি। অতএব আপনারা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন যে, পাকিস্তানিরা আমাদের উপনিবেশিক নাগরিক ছাড়া আর কিছুই ভাবত না।

সৈয়দ মাহবুবুর রশীদ : সাবেক ইপিসিএস, কলামিস্ট।

SUMMARY

1781-1.jpg