মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক নিয়ে জনমনে উত্কণ্ঠা


আসিফুর রহমান সাগর 
১৮ মার্চ ১৯৭১। মুজিব-ইয়াহিয়া পরবর্তী বৈঠকের কোনো সময় নির্ধারণ না হওয়ায় জনমনে উত্কণ্ঠার সৃষ্টি হয়। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত উত্সুক জনতা তাদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে ভিড় জমান। পহেলা মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনটি কেবল সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী যে জনগণ, তাদের পরিচালন কেন্দ্রেই পরিণত হয়নি, সেইসঙ্গে হয়ে ওঠে মুক্তিকামী মানুষের মিলনক্ষেত্রও।


সারাদিন ধরে মিছিলের পর মিছিল করে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়কের প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন জানাতে এলে বঙ্গবন্ধু সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে বারবার উঠে এসে শোভাযাত্রাকারীদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি বলেন, তোমরা চরম প্রস্তুতি নিয়ে ঘরে ঘরে সংগ্রামী দুর্গ গড়ে তোল। যদি তোমাদের ওপর আঘাত আসে তা প্রতিহত করে শত্রুর ওপর পাল্টা আঘাত হেনো। জনতাকে চূড়ান্ত লড়াইয়ে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, মুক্তি সংগ্রামের পতাকা আরো ওপরে তুলে ধরো। সাত কোটি শোষিত-বঞ্চিত বাঙালির সার্বিক মুক্তি না আসা পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাও।এদিনও বিপুল সংখ্যক দেশি-বিদেশি সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এসে সৌজন্য সাক্ষাত্কারে মিলিত হন। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আরো সৈন্য আনা হচ্ছে, সে সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু কিছু জানেন কিনা, সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার দেশের মাটিতে যা কিছু ঘটছে তার সব খবরই আমি রাখি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ওয়ালী ন্যাপ প্রধান ওয়ালী খান এক ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি গাউস বক্স বেজেঞ্জোও উপস্থিত ছিলেন।

সেদিন রাতে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়, আগামীকাল সকাল এগারোটায় প্রেসিডেন্ট ভবনে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ও আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের মধ্যে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট সম্পর্কে তৃতীয় দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

সেনাবাহিনীর সদস্যরা তেজগাঁও ও মহাখালীতে শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। এতে মানুষের মনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এদিকে, চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক গুলিবর্ষণ ও অন্যান্য ঘটনা সম্পর্কে সরেজমিন তদন্তের জন্য বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যায়।

আরও পড়ুন: ভারতে পোশাক রফতানি বাড়ানোর সম্ভাবনা দেখছে বাংলাদেশ

এদিকে, করাচিতে ভুট্টো বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান শাসনতান্ত্রিক প্রশ্নে আলোচনার জন্য যে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। ঢাকা যাওয়ার ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের কাছে চাওয়া কয়েকটি বিষয়ের ব্যাখ্যা না পাওয়ায় তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

SUMMARY

178-1.jpg