বঙ্গবন্ধু গর্ব করে বলেছিলেন, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস, বাঙালির ইতিহাস। কথাটির মধ্যে একটুও বাড়তি কিছু নেই, নেই অতিরঞ্জন বা অতি কথন। কেননা পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, বাঙালির মুক্তিসনদ ছয় দফার আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, আইয়ুব খানের পতন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধুসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন এবং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সবকিছুতেই ভ্যানগার্ড হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রলীগ। স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীর আত্মাহুতি যুগ যুগ ধরে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে অনাগত প্রজন্মের কাছে প্রেরণার উৎস হয়ে। এমনকি পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক-বেসামরিক স্বৈরশাসকদের অত্যাচার-নির্যাতনে নিহত শত শত নেতাকর্মীর কথাও জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। যাদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্বজিত নন্দী, রাউফুন বসুনিয়া, সেলিম-দেলোয়ার প্রমুখ। আছে জামায়াত-শিবিরের হাতে নিহত ও আহতদের কথা। এক কথায় বলতে গেলে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সব প্রকার আন্দোলন-সংগ্রামেই ছাত্রলীগের গৌরবময় ও ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। যা অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেই।
সেই ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৮তম জাতীয় সম্মেলন হয়ে গেল গত ২৫ এবং ২৬ জুলাই। দুদিনব্যাপী এই সম্মেলনের প্রথমদিনে উদ্বোধন করেন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। দ্বিতীয় দিনে অনুষ্ঠিত হয় কাউন্সিল। যেখানে সারাদেশ থেকে আগত কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে আগামী বছরগুলোর জন্য সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্র। আর এটা করা হয়েছে শেখ হাসিনার নির্দেশে, যাতে সত্যিকার অর্থেই সারা দেশের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন ঘটে। তবে এই নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়েও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। যাদের মধ্যে মিডিয়ার পাশাপাশি ছাত্রলীগের অনেক প্রাক্তন ও বর্তমান নেতাকর্মীও রযেছেন। কোনো কোনো মিডিয়ায় তো ব্যবসায়ী বা মাফিয়া সিন্ডিকেটের আদলে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনেও নাকি একটি সিন্ডিকেট সক্রিয় বলে সংবাদ ছাপা হয়েছে। ছাত্রলীগের সম্মেলন নিয়ে পেশাদার ও অপেশাদার টকাররা টকশোগুলোতে বাজিমাত করারও চেষ্টা করেছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে ছাত্রলীগের সাম্প্রতিককালের অপকর্মগুলোকে তুলে ধরার মাধ্যমে। অতীতে যখন সমঝোতার ভিত্তিতে বা শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ঠিক করে দেয়া হতো অথবা অছাত্রদের নেতৃত্বে বহাল রাখা হতো তখনো মিডিয়াগুলোতে সমালোচনার ঝড় বয়ে যেতো। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে মিডিয়াগুলো যেন শাঁখের করাত। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বেলায়। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ভোটের পুনরায় সূচনা এবং ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটির বর্তমান বিতর্কিত কার্যক্রম বিষয়ে আলোকপাত করার আগে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সংগঠনটির অতীত ইতিহাসের দিকে একটু দৃষ্টি ফেরাতে চাই।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বর্তমানে ৬৮ বছর অতিক্রান্ত করছে। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী ও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের আগেই ছাত্রলীগের জন্ম। আমার বিবেচনায় ছাত্রলীগের এই সময়কালকে আমরা মূলত তিনটি পর্বে ভাগ করে নিতে পারি। প্রথম পর্ব উনপঞ্চাশ থেকে একাত্তর, দ্বিতীয় পর্ব বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর, তৃতীয় পর্ব পঁচাত্তর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত। তবে এর মধ্যে প্রথম পর্ব এবং তৃতীয় পর্ব-এর অর্ধেক কালকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জন্য একাধারে দুর্যোগ-দুঃসময় এবং সোনালী অধ্যায় বলেও আখ্যায়িত করা যায়। দুর্যোগ-দুঃসময় এ কারণে যে, উনপঞ্চাশ থেকে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর সব প্রকার নিপীড়ন-নির্যাতন উপেক্ষা করে, হাজার হাজার নেতাকর্মীর রক্ত ঝরিয়ে প্রথমে ভাষা আন্দোলন, তারপর স্বাধিকার আন্দোলন এবং সর্বশেষ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে সফল পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে ছাত্রলীগকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হয়েছে। আর সোনালি অধ্যায় এ কারণে যে ওই সময়কার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ভূমিকা এতই উজ্জ্বল যে, তা বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে একাকার হয়ে গিয়েছে। শুধু কি তাই, ওই সময়ের ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় কেন, যে কোনো পর্যায়ের নেতৃত্বের মেধা ও মনন নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ ছিল না, চাঁদাবাজি বা টেন্ডারবাজি তো স্বপ্নেও চিন্তা করতে পারতেন না। আর এখন? এরপর আসে দ্বিতীয় পর্ব, বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর সাল। যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্গঠন কাল। কিন্তু এ পর্বে এসে ছাত্রলীগ যেন খেই হারিয়ে ফেলে। একদিকে দলের মেধাবী ও প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার অধিকাংশ নেতাকর্মীর দল ত্যাগ করে ভিন্ন রাজনৈতিক দল গঠন এবং মূল অংশের থানা পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত কতিপয় নেতাকর্মীর দুর্নীতি, লাইসেন্স-পারমিটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া, রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার স্বপ্ন প্রথমবারের মতো ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে কালিমালিপ্ত করে। নেতৃত্বে দৈন্যদশা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে শফিউল আলম প্রধানের মতো একজন ঠাণ্ডা মাথার খুনি, প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তি ছাত্রলীগের মতো সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। যার বাবা মুসলিম লীগার গমির উদ্দিন প্রধান। মুক্তিযুদ্ধে যার বিতর্কিত ভূমিকা রয়েছে। এই শফিউল আলম প্রধানই ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে সম্ভবত চুয়াত্তর সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলে ছাত্রলীগের সাতজন নেতাকর্মীকে নিজ হাতে গুলি করে হত্যা করে এবং পরে বিচারে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় এবং পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমানের বদান্যতায় জেল থেকে ছাড়া পায়। যার প্রতিদান এখন সে দিচ্ছে ম্যাডাম জিয়ার সঙ্গে জোট বেঁধে। কেননা রতনে রতন চেনে। ওই সময় অনেকেই যেভাবে শফিউল আলম প্রধান সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন, সেভাবে আজো বঙ্গবন্ধু কন্যাকে অনেকেই নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করছেন বলেই আমার মতো অনেকের বিশ্বাস। ওই সময়কালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নৈতিক ও চারিত্রিক মান এতই নিম্ন স্তরে পৌঁছেছিল যে, ১৫ আগস্ট ইতিহাসের মর্মান্তিক ও জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলেও ছাত্রলীগের পক্ষে কোনো ধরনের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। আওয়ামী লীগের কথা আর নাইবা বললাম।
এরপরের পর্ব তৃতীয় পর্ব। পঁচাত্তর থেকে সমসাময়িককাল পর্যন্ত। এ পর্বকে ছাত্রলীগের পুনরুত্থান পর্ব এবং পচন পর্ব বলা যেতে পারে। পুনরুত্থান পর্ব হচ্ছে মূলত সত্তরের দশকের শেষ ভাগ থেকে শুরু করে ছিয়ানব্বই এবং পচন পর্ব হলো ছিয়ানব্বই থেকে সমসাময়িককাল। আর আমি নিজে হলাম পুনরুত্থান পর্বের একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষী ও সক্রিয় কুশীলব এবং পচন পর্বের একজন নীরব দর্শক। যদিও ছাত্রলীগের একজন অতি ক্ষুদে কর্মী হিসেবে দ্বিতীয় পর্ব অর্থাৎ স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ছাত্রলীগের কিছু কর্মকাণ্ড দেখার সুযোগ বা অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে।
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে যখন পিপিআরের মাধ্যমে সীমিত আকারে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু হয় তখন আমি হাইস্কুলের সিনিয়র ছাত্র। আমার চেয়ে যারা আরো সিনিয়র ছিলেন তাদের কেউ কেউ এসএসসি পাস করার পর আর লেখাপড়া করেননি বা উচ্চ শিক্ষার্থে শহরে চলে গেলে স্বাভাবিকভাবেই ছাত্রলীগ পুনর্গঠনের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে হয়। অনেক সময় থানা সদর থেকে জেলা সদরে গিয়েও সাংগঠনিক কাজে অংশ নিতে হয়েছে। সে সময় যারা থানা পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায় ছাত্রলীগ নামক সংগঠনটিকে পুনর্গঠনে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের চোখে-মুখে একটাই প্রত্যয় ছিল যেভাবই হোক বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকে। সামরিক জান্তার জেল-জুলুম-নিপীড়ন কোনোকিছুই আমাদের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। আমাদের মধ্যে ছিল প্রত্যয়-প্রত্যাশা। ছিল মেধা ও মননের চর্চা। ক্ষমতায় যাব আর টেন্ডারবাজি করব অথবা অস্ত্রবাজি করে মেধা ও মননের চর্চা না করেই কোনো নেতা বা পাতি নেতার আশীর্বাদ নিয়ে শট-কাট পথে নেতা হব সেটা কখনই আমাদের মধ্যে ছিল না। আমার তো মনে হয় না কখনো পকেটে একটি বেøডও বহন করেছি বলে। অথচ এখন রাজনীতিতে নাম লিখিয়েই নেতা হতে চায়, পিস্তল বা রিভলবার পকেটে নিয়ে ঘুরতে চায়। আজকাল ফেসবুকে প্রায়ই দেখা যায় নেতা বন্ধনা করে পোস্টার-স্ট্যাটাস।
এই যে পচন পর্ব তার শুরু কিন্তু ছিয়ানব্বই সালে দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। যা এখন ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। মেধা ও মননের জায়গা দখল করে নিচ্ছে বা নিয়েছে দুবৃত্তায়ন ও লোলুপতা। আজকাল সবাই না হলেও অধিকাংশই খুব দ্রুততম সময়ে নেতা হতে চায় এবং ক্ষমতাকে ব্যবহার করে আখের গুছিয়ে নিতে চায়। টেন্ডারবাজি আর সন্ত্রাস যেন ছাত্রলীগের নামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে। মেধা শূন্য হয়ে পড়ছে ছাত্র নেতৃত্ব যেখান থেকে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক নেতৃত্ব বের হয়ে আসার কথা। আর আশঙ্কার জায়গাটাও ওই জায়গায়। কেননা ছাত্রলীগ তথা ছাত্র সংগঠনগুলো থেকে যদি মেধাবী ও চরিত্রবান নেতৃত্ব তৈরি না হয় তাহলে তা যেমন দলের জন্য ক্ষতিকর তেমনি ক্ষতিকর দেশ ও জাতির জন্য। কেননা মেধাশূন্য নেতৃত্ব দিয়ে কখনই একটি দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নেয়া যাবে না। অন্যদিকে মড়ার উপর খাঁড়ার মতো নতুন আরেকটি উপসর্গ যুক্ত হয়েছে বা হচ্ছে শিবির আর ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের অনুপ্রবেশ। যা পুনরায় পঁচাত্তর-পূর্ব ঘটনাবলিকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। ছাত্রলীগে বা আওয়ামী লীগে এদের অনুপ্রবেশ যে চামড়া বাঁচানো বা গভীর ষড়যন্ত্রেরই অংশ, আদর্শিক কারণে নয় তা ক্ষমতার মোহে অন্ধ আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের নেতারা বুঝতে না পারলেও আমরা ভুক্তভোগীরা ঠিকই টের পাচ্ছি। আর টের পাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তাই তিনি ছাত্রলীগে যাতে মেধাবী ও নিয়মিত ছাত্ররা নেতৃত্বে আসতে পারে সে ব্যাপারে জোর দিয়েছেন। তার এই ইচ্ছার বাস্তবায়ন এবং প্রতিফলন ঘটানোর নিমিত্তেই তিনি এবার প্রত্যক্ষ ভোটে নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। শুধু তাই নয়, অতীতের মতো ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীদের তাদের নতুন নেতৃত্ব পেতে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়নি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই মূল নেতৃত্ব নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।
প্রত্যক্ষ ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচন ছাত্রলীগে নতুন নয়। নিকট-অতীতেও এরকম হয়েছে। যতটুকু মনে পড়ে সুলতান মনসুর যখন ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ছেড়ে চলে আসেন সে বছরও স্বচ্ছ ব্যালট বক্সে কাউন্সিলরদের ভোটে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছিল। এরপর আর এই প্রক্রিয়াটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়নি। এখন যেহেতু আবার শুরু করা হয়েছে, তাকে এগিয়ে নিতে যেতে হবে। শুধু কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নয়, তৃণমূল পর্যায় থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। পর্যায়ক্রমে উপজেলা, জেলা পর্যায়ে সম্পন্ন করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রতিটি পদে যাতে প্রত্যক্ষ ভোটে প্রভাবমুক্ত নেতৃত্ব বেরিয়ে আসতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। এখানেই শেষ নয়। ছাত্র রাজনীতি বিশেষ করে ছাত্রলীগের রাজনীতির পচন ঠেকাতে হলে মেধা ও মননের চর্চার ওপর জোর দিতে হবে। সংগঠনে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হবে। যারা ছাত্রলীগ তথা বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে লালন করে না তারা ছাত্রলীগের প্রাথমিক সদস্য হওয়ারও যোগ্যতা রাখে না। সুতরাং এ ব্যাপারে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। বছরের পর বছর ধরে ডাকসুসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোর ছাত্র সংসদের নির্বাচন কোনো এক অজানা কারণে বন্ধ হয়ে আছে। যা মেধাবী ও যোগ্য ছাত্র নেতৃত্ব বিকাশের অন্তরায়। সুতরাং এই অজানা কারণ দূরীভূত করে যাতে নিয়মিত ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সে ব্যাপারে জোড়ালো আওয়াজ তোলাও ছাত্রলীগের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে ছাত্রলীগকে তার পুরনো গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের ধারায় ফিরিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই। আর এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই শেষ ভরসা।
এ ক্ষেত্রে টকশোর টকার, সুশীল নাগরিক এবং মিডিয়ারও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আপনারা শুধু ছাত্রলীগের খারাপ কাজগুলোকেই দূরবীন দিয়ে খুঁজে এনে জনসমক্ষে তুলে ধরবেন আর এর পরিপ্রেক্ষিতে যে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগুলো নেয়া হয় তা তুলে ধরতে এত কুণ্ঠাবোধ করেন কেন? ছাত্রলীগ কি শুধুই টেন্ডারবাজি করে, ভালো কাজ কিছুই করে না? সিলেটের রাজনের ব্যাপারে কি স্থানীয় ছাত্রলীগ ভূমিকা পালন করেনি। তাই আলোচনা নয়, সমালোচনা করুন। আমাদের সবারই দায়িত্ব রয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটিকে তার গৌরবের ধারায় ফিরিয়ে আনা। তাহলে দেশ ও জাতি উপকৃতই হবে।
সুজাত মনসুর : কলাম লেখক ও রাজনীতিক।