শোকের মাস : হত্যার রাজনীতি


সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার আগেও ইতিহাসে অনেক রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। কবি, কথাশিল্পী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একটি বই লিখেছেন। নাম ‘বরণীয় মানুষ স্মরণীয় বিচার,’ এ বইতে যিশুখ্রিস্ট, সক্রেটিস এবং জোয়ান অব আর্কের মৃত্যুর ট্রাজিক বর্ণনা তুলে ধরেছেন। এই মৃত্যুগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে ঘটেনি। ভুল বুঝে সমকালীন শাসক, সাধারণ মানুষ ও বিচার ব্যবস্থা এই তিন মহান ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছিল। তাদের মতো মনীষীদের দোষী সাব্যস্ত করেছিল তখনকার রাষ্ট্র ও সমাজ। সনীল বলেন, ‘ক্ষমতা এবং সভ্যতার চূড়ান্ত শিখরে উঠেছিল যে রোম সাম্রাজ্য, দর্পে ঐশ্বর্যে তার প্রতিদ্ব›দ্বী ইতিহাসে আর দেখা যায় না। সেই রোমান সভ্যতার বর্বরতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন একজন শান্ত, সঙ্গীহীন মানুষ। ঐতিহাসিক গিবন বলেছেন, রোমের পতনের কারণ যিশুখ্রিস্ট। যদিও রোমান শাসক হত্যা করেছিল যিশুকে, নিতান্ত যুবা বয়সে, কিন্তু যিশুর রক্ত ছড়িয়ে পড়েছিল সারা দেশে জাগিয়ে তুলেছিল প্রতিবাদ, প্রতিরোধ এবং সহনশক্তি। শেষ পর্যন্ত পশু শক্তির বিরুদ্ধে সহনশক্তি জয় হলো।’

অর্থাৎ অন্যায়ভাবে এত বড় মহামানব হত্যার পরিণাম গোটা রোম সভ্যতার ধ্বংস ডেকে আনে। সুনীল বলেন, ‘যদিও যিশুর হত্যার জন্য রোমের শাসকবর্গ ঠিক দায়ী নয়। রোম সম্রাট যিশুখ্রিস্ট সম্বন্ধে অবহিত ছিলেন না, যিশুকে হত্যা করেছে তারই স্বজাতির ক্রোধ, ইহুদি পুরোহিতদের ঈর্ষা। জেরুসালেমে তখন রোমের একজন গভর্নর ছিল- পনটিয়াস পাইলেট। তার কাছে ইহুদিরা যিশুকে নিয়ে আসে বিচারের জন্য। পনটিয়াস যিশুকে হত্যা করার জোরালো কারণ খুঁজে পায়নি, সে অপেক্ষমাণ রক্ত তৃষিত জনতাকে প্রশ্ন করেছিল- তোমরা এই লোকটির মৃত্যুর পাপ ভোগ করবে? জিঘাংসু জনতা চিৎকার করে উঠেছিল, ‘ঐরং নষড়ড়ফ নব ড়হ ঁং ধহফ ড়হ ড়ঁৎ পযরষফৎবহ’- ওর রক্তপাতের দায়িত্ব আমরা বংশপরম্পরায় ভোগ করব।’

যদি বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে যিশু হত্যার তুলনা করি তাহলে দেখা যাবে বঙ্গবন্ধু হত্যায় নৃশংসতা ও বর্বরতার পরিমাণ ছিল অনেক বেশি। লন্ডন প্রবাসী, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেখক আবদুল মতিন ‘রোমের উত্থান ও পতন’ নামে একটি বই লিখেছেন। সেখানে যিশুখ্রিস্টের হত্যার হৃদয়বিদারক দৃশ্য তুলে ধরেছেন : ‘খ্রিস্টানদের ধর্ম গ্রন্থ বাইবেলে যিশুর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা সম্পর্কে যে বিবরণ দেয়া হয়েছে, তা অতি করুণ ও হৃদয়বিদারক। তাকে চাবুক মারার ঘটনা দিয়ে এই বিবরণ শুরু করা হয়। গল গোথার (এড়ষমড়ঃযধ) বধ্যভূমিতে নিয়ে যাওয়ার সময় রোমান সৈন্যরা তার গায়ে লাল রঙের একটি আলখাল্লা এবং মাথায় একটি কাঁটার মুকুট পরিয়ে দিয়ে তাকে ‘ইহুদিদের রাজা বলে পরিহাস করে।’ বিদ্রোহী কবি নজরুল তাই তার ‘দারিদ্র্য’ কবিতায় বলেন; ‘হে দারিদ্য, তুমি মোরে করেছো মহান। তুমি মোরে দানিয়েছো খ্রিস্টের সম্মান কণ্টক- মুকুট শোভা।’

আবদুল মতিন বলেন : ‘কাঠের তৈরি ক্রুশ বয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাকে সাহায্য করার জন্য জনৈক সাইমনকে অনুমতি দেয়া হয়। বধ্যভূমিতে বিবস্ত্র করে তার দুই হাতের তালু মধ্য দিয়ে পেরেক ঠুকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। ক্রুশের মাথার ওপর হিব্রু অথবা আরামিক এবং ল্যাটিন ও গ্রিক ভাষায় তার দণ্ডলাভের কারণ লেখা ছিল। তাতে লেখা হয়, তিনি নিজেকে ইহুদিদের রাজা বলে দাবি করেছিলেন। (পৃ. ৫২-৫৩)

এই নৃশংসতার তুলনা হয় না, কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে তিনটি পরিবার। ওই তিন পরিবারের কেউ খুনিদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। এর মধ্যে শিশু, সদ্য বিবাহিতা নারী ও অন্তঃসত্ত্বা রমণী আছে। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালকে তার সামনেই হত্যা করা হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে যিশু হত্যার সাদৃশ্য এখানে যে, তার বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়া হয়েছিল তিনি ইহুদিদের রাজা বলে দাবি করেছিলেন। আবদুল মতিন বলেন, ‘রোমান সম্রাট টাইবেরিয়াস সিজারের আমলে প্রায়-যুবক যিশু ইহুদি ধর্মগুরুদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে জুডিয়া এলাকায় ধর্ম প্রচার করতে শুরু করেন। তখন তার বয়স মাত্র ত্রিশ। তার মতবাদের মূল বক্তব্য ছিল- ভগবান স্নেহশীল পিতার মতো সবাইকে ভালোবাসেন। বিত্তবানদের স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করা খুব কঠিন হবে। ইহুদিরা বিশ্বাস করে তারা ভগবানের বিশেষ প্রিয় পাত্র। কিন্তু যিশু প্রচার করেন, কোনো জাতি ভগবানের বিশেষ প্রিয় পাত্র হতে পারে না।’

‘ক্রমেই তার ভক্ত সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তার ফলে ইহুদিরা রীতিমতো শঙ্কিত বোধ করে, রাজনৈতিক বিদ্রোহী হিসেবে রোমান আইন অনুযায়ী তাকে অপরাধী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।’ বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তাও তার ঈর্ষাপরায়ণ প্রতিপক্ষকে শঙ্কিত করে তুলেছিল। অপবাদ দিয়ে তার হত্যার পেক্ষপট তৈরি করা হয়েছিল। একদল বলেছিল তিনি শ্রেণিশত্রু, অন্য দল বলেছিল তিনি ইসলামের শত্রু। ভারতের দালাল। ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করে দিয়েছেন। তার পূর্ব পুরুষরা ছিলেন হিন্দু।

এটাই সত্য যে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা ভেবেছিল তাকে হত্যা না করে জনগণের রায় নিয়ে তাকে ক্ষমতা থেকে সরানো সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধুর ওপর খুনিদের আক্রোশের কারণ কী? যিশুখ্রিস্টের আদর্শ প্রচারের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতার উপকরণ ছিল। ইহুদিরা মনে করত ভগবান কেবল তাদেরই সম্পত্তি। সে ক্ষেত্রে যিশু বলেন, ভগবান কোনো জাতির কেনা সম্পত্তি নয়। তিনি সূর্যের মতো নিরপেক্ষ এই আদর্শ প্রচার তার মৃত্যুর মূল কারণ।

রাজনীতিতে ধমনিরপেক্ষতা প্রচার করা বঙ্গবন্ধুর মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি ও লক্ষ ছিল। যিশুর মতোই তিনি বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রের ভিত্তি বিশেষ কোনো ধর্ম হবে না, হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা।’ এ বক্তব্যই তার কাল হয়ে যায়। আবদুল মতিন বলেন, ‘১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে লাহোর থেকে ৮০ মাইল দূরবর্তী লায়ালপুরের সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত এক সামরিক আদালতে গোপন বিচারের পর বঙ্গবন্ধুকে প্রাণদণ্ড দেয়া হয়। এই দণ্ডদানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হত্যার সম্পর্ক বুঝতে হলে যে কথা জানা দরকার তা হলো যে রাষ্ট্রদ্রোহিতা অর্থাৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনার অপরাধে তাকে প্রাণদণ্ড দেয়া হয়। মি. জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বে যারা বিশ্বাস করে- তারা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুকে ইসলাম বিরোধী বলে সাব্যস্ত করে। এই অন্ধ বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে হত্যাকারীরা বাংলাদেশ বিরোধী পাক-মার্কিন চক্র এবং বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়াশীল মহলের সমর্থন ও সহায়তায় যড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে। ১৫ আগস্টের হৃদয়বিদারক হত্যাকাণ্ড এই ষড়যন্ত্রের ফলে।’

‘স্বঘোষিত হত্যাকারীরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কারণ ও তাদের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছে। বিদেশে প্রকাশিত পত্র-পত্রিকা ও গ্রন্থে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বহু তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে। হত্যাকারীরা দাবি করে, ইসলামকে অবমাননা করার জন্যই তাকে হত্যা করা হয়েছে।’ (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, কয়েকটি প্রাসঙ্গিক বিষয়- ১৫ই আগস্টের কালরাত্রি : হত্যাকারীদের উদ্দেশ্য, র‌্যাডিক্যাল এশিয়া পাবলিকেশন্স, ঢাকা- ১৯৯৩।)

সক্রেটিসের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর সাদৃশ্য এখানে যে সক্রেটিসও তার সমকক্ষদের প্রবল ঈর্ষার শিকার হয়েছিল। ‘সত্তর বছর বয়সে আথেন্সের সক্রেটিসকে বিচারকের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ ছিল তিনটি। দেশের প্রচলিত দেবতার প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন, নতুন নতুন দেবতার প্রবর্তন করার চেষ্টা এবং তৃতীয়টিই মারাত্মক, তিনি যুবকদের নৈতিক চরিত্র কলুষিত করে তাদের বিপথে চালিত করেছেন।’ (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়- বরণীয় মানুষ স্মরণীয় বিচার- সক্রেটিস, বিভাষ-২০১১)।

এই অভিযোগের মধ্যে ছিল হীনমন্যতা, প্রতিহিংসা আর অন্ধ বিশ্বাস। এই তিনটিরই শিকার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি ছিলেন তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতা। তিনি ছিলেন অনভিজাত, ধান্য পরিবারের মানুষ। কোনোদিক থেকে তার গায়ে আভিজাত্যের পোশাক ছিল না। তিনি ডক্টরেট ছিলেন না, ব্যারিস্টার ছিলেন না, পণ্ডিত ছিলেন না, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ছিলেন না। কিন্তু তার ছিল সাহস। যে সাহস টিপু সুলতানের ছিল। তার ছিল একনিষ্ঠতা, যা অন্য কারো মধ্যে ছিল না। রাজনীতিতে প্রায় সবাই ডিগবাজি খেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কখনো ডিগবাজি খাননি। তার লক্ষ্য ছিল স্থির। তার ছিল অনন্য সাধারণ সাংগঠনিক প্রতিভা। যা অন্য কোনো বাঙালির মধ্যে ছিল না। তিনি তার নিজস্ব প্রতিভা দিয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। তাই তিনি ধারালো ঈর্ষার শিকার হয়েছিলেন।

সক্রেটিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি দেবতা মানেন না, আর বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীনতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সক্রেটিস নকল পণ্ডিতদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘নিজেকে চেনো।’ বঙ্গবন্ধু রাজনীতিতে ব্যবহার করতেন অনাড়ম্বর মেঠো ভাষা, বলতেন জনগণের মনের কথা। কৃত্রিম পোশাকী বক্তৃতা তিনি দিতেন না। তাই তিনি সবাইকে ছাড়িয়ে জনপ্রিয় হয়েছিলেন; তার তুলনায় অন্যরা হয়ে পড়েছিলেন প্রমাণ সাইজ।

ফ্রান্সের অন্ধবিশ্বাসী জনগণ মহীয়সী নারী জোয়ান অব আর্ককে ডাইনি আখ্যা দিয়ে হত্যা করেছিল। তার বয়স ছিল মাত্র ১৮/১৯ বছর। তার বিচারকরা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পণ্ডিত, গির্জার ধর্মযাজক। জোয়ান অব আর্ক ছিলেন এক অশিক্ষিতা গ্রাম্য বালিকা মাত্র। জোয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ‘সে মোটেই ঈশ্বর আদিষ্টা নয়, সে মায়বিনী, ডাকিনি পিশাচসিদ্ধা। সে গির্জার কর্তৃত্ব মানে না। পুরুষের পোশাক পরা।’ (সুনীল- বরণীয় মানুষ স্মরণীয় বিচার, জোন অব আর্কের বিচার)।

‘জোনকে মায়াবিনী ভাবার কারণ আছে। যে কোনো প্রতিভাবান মানুষই মায়াবী ও অলৌকিক। জোনের কার্যকলাপ সত্যিই ব্যাখ্যার অতীত। কোনোরূপ যুদ্ধ পরিচালনার জ্ঞান তার ছিল না, নিতান্ত সাধারণ এক গ্রামী বালিকা। তবু কী করে নিপুণভাবে সৈন্য পরিচালনা করে অমন দুর্ধর্ষ ইরেজ বাহিনীকে পরাজিত করেছিল- ভাবতে অবাক লাগে।’ (ঐ)। ‘সে সময় ফ্রান্সে ধর্মচর্চা এবং ধর্মবিশ্বাস পরিচালনার কেন্দ্র প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় ছিল তখন খুব ইংরেজ সমর্থক। ইংরেজরা তাদের সৈন্যদের মনে জোর ফিরিয়ে আনার জন্য প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে, জোন একটি ডাকিনী, সে যে উপায়ে ফরাসিদের মধ্যে জাতীয়তার ভাব জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে তা অপবিত্র, অমঙ্গলজনক উপায়। এ জন্য তারা বিচারের জন্য সাহায্য নিয়েছিল প্যারিস বিশ্ববিদ্যালযের। প্রধার বিচারক ছিলেন বোভের বিশপ- যার অধীনস্ত অঞ্চলেই জোন বন্দি হন। ফরাসি দেশের গৌরব সেই বালিকাটির জঘন্য অন্যায় বিচার করেছিল বিশ্বাসঘাতক ফরাসিরাই। (ঐ)।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি ক্ষমাহীন ঈর্ষাপরায়ণ এক বাঘা বাম তাত্তি¡কের কাছে তো বঙ্গবন্ধু জোয়ান অব আর্কই। দেশ স্বাধীন করেছেন তিনি তার নিজস্ব লৌকিক প্রতিভা দিয়ে, মার্কসবাদ মুখস্থ কারে নয়। প্রতিভাবানদের মধ্যে অলৌকিক গুণ থাকে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে অলৌকিক প্রতিভা প্রকাশ ঘটেছিল। ফ্রান্সের জ্ঞানপাপীদের মতো বাংলাদেশের জ্ঞানপাপীরাও বঙ্গবন্ধু হত্যার যৌক্তিকতা প্রদান করতে কার্পণ্য করেননি। জোয়ান অব আর্কের বিচারকদের মতো বাংলাদেশের একদল বিচারকও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় দিতে বিব্রত হয়েছিলেন। জোয়ান অব আর্ক ধর্মের বড় শত্রু প্রতিপন্ন হয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুও তাই হয়েছিলেন।

সময়ের দুষ্কাল পেরিয়ে আজ যিশুখ্রিস্ট, সক্রেটিস, জোয়ান অব আর্ক সর্বোচ্চ সম্মানে অধিষ্ঠিত। বাঙালির ভালোবাসার মন্দির থেকে কেউ বঙ্গবন্ধুকে বিচ্যুত করতে পারেনি। থাকতেই পারে তার কিছু ভুল-ত্রুটি, তাতে তার চারিত্রিক মহিমার ঔজ্জ্বল্য ঢাকা পড়ে না।

মাহমুদুল বাসার : কলাম লেখক, গবেষক।

SUMMARY

1774-1.png