আসিফুর রহমান সাগর
৯ মার্চ। রক্তঝরা মার্চের এ দিনগুলোতে পূর্ব বাংলার প্রতিটি মানুষ তখন স্বাধিকারের প্রশ্নে একজোট। স্বাধীনতাকে ঘিরে কোনো জাতি যখন এমনি করে একটি বিন্দুতে মিলিত হয় তখন আর কোনো শক্তিই তার জন্য বাধা নয়। ১৯৭১ সালের এ দিনে ঢাকা মহানগরী ছিল মিছিল ও সমাবেশে উত্তাল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সর্বাত্মক অসহযোগে সমগ্র প্রশাসন ছিল স্থবির। স্বাধিকার আন্দোলনের কর্মসূচি অনুযায়ী সচিবালয়, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস, হাইকোর্ট, জেলা কোর্টসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে হরতাল পালিত হয়।
ইতিহাসের এ দিনে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মধ্যে সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বিকালে পল্টন ময়দানের জনসভায় তুমুল করতালির মধ্যে মওলানা ভাসানী বলেন : প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকেও তাই বলি, অনেক হয়েছে, আর নয়। তিক্ততা বাড়াইয়া আর লাভ নাই। লা কুম দ্বীনুকুম ওয়ালইয়া দ্বীন, অর্থাত্ ‘তোমার ধর্ম তোমার, আমার ধর্ম আমার’— এ নিয়মে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করিয়া লও। তিনি আরও বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ মতো আগামী ২৫ তারিখের মধ্যে কোনো কিছু না করা হলে আমি মুজিবের সঙ্গে মিলে ১৯৫২ সালের মতো তুমুল আন্দোলন শুরু করবো। তিনি বলেন, খামাখা কেউ মুজিবকে অবিশ্বাস করিবেন না। মুজিবকে আমি ভালো করিয়া চিনি।
আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ঘোষিত আন্দোলনের কর্মসূচি অনুযায়ী সচিবালয়সহ সারাদেশে সকল সরকারি ও আধাসরকারি অফিস, হাইকোর্ট, জেলাকোর্ট প্রভৃতিতে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। বঙ্গবন্ধু যেসব সরকারি অফিস খুলে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন কেবল সেসব অফিস চালু থাকে।
জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট প্রয়োজনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে জাতিসংঘের স্টাফ ও তাদের পরিবারবর্গকে প্রত্যাহারের জন্য ঢাকাস্থ জাতিসংঘের উপ-আবাসিক প্রতিনিধিকে নির্দেশ দেন। জাপানের পররাষ্ট্র দফতর পূর্ববঙ্গে অবস্থিত তার দেশের নাগরিকদেরও প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। পশ্চিম জার্মান সরকার তার দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সামরিক বিমান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত রাজনৈতিক প্রস্তাবে ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগ ও ডাকসুর নেতৃত্বে গঠিত ‘স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ’-এর ছাত্রসভায় গৃহীত ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন হয়।
এদিন সামরিক কর্তৃপক্ষ রাত ৯টা থেকে রাজশাহী শহরে ৮ ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারি করেন। রাজশাহীতে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিদিন নৈশ কারফিউ জারির পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, সেনাবাহিনীকে ছাউনিতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে ঘোষণার পর রাজশাহীতে হঠাত্ সান্ধ্য আইন জারির কারণ বোধগম্য নয়। বিবৃতিতে অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।