সময়োপযোগী সাহসী ভূমিকার কারণে ষাটের দশকের মধ্যবর্তী সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর বিস্ময়কর উত্থান ও ব্যাপক জনগ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হয়। ১৯৬৬ সালে ৬-দফা দাবিনামা ঘোষণার মাধ্যমে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির ধারণাই বদলে দেন। তারপর একনিষ্ঠ সাধকের মতো তিনি প্রতিনিয়ত সরকারের আক্রোশ অবজ্ঞা করে জেলা থেকে জেলা-মহকুমা-থানাসমূহে ৬-দফা দাবিনামার পক্ষে জনসংযোগে আত্মনিবেদন করেন। তিনি ১৯৬৬ সালের ২০ মার্চ থেকে ৮ মে পর্যন্ত ৫০ দিনে ৩২টি জনসভায় ভাষণ প্রদান করেন। ফলে পাকিস্তানের স্বেচ্ছাচারি সরকার রাজনীতির খোলা-মাঠে বঙ্গবন্ধুর অবাধ বিচরণ অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টির কারণ হয়ে উঠতে পারে ভেবে তাঁকে রাজনীতিতে নিষ্ক্রীয় করে ফেলার অছিদ্র পরিকল্পনা আঁটে। তাঁকে বিভিন্ন জনসভা থেকে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার করা হতে থাকে। আদালত থেকেও তিনি যথারীতি জামিনলাভ করেন। পরবর্তী ১৯৬৬ সালের ৮ মে গ্রেফতার করা হয় এবং জেলবন্দি অবস্থায় ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি তাঁকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি করা হয়।
১৯৬৬ সালে ৮ মে গ্রেফতার হবার পূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অভাবিত বিচক্ষণতার সাথে দলকে সংঘবদ্ধ করেন এবং পরবর্তী প্রবল মুন্সিয়ানার সাথে নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষমদের দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে দল যেনো সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারে তার দিকনির্দেশনাও তিনি তাঁদের দিয়ে রেখেছিলেন। ফলে তাঁর গ্রেফতার পরবর্তীকালে ৬-দফার আন্দোলন মরে যায়নি। বিশেষ করে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন ও ন্যাপের একটি অংশের সহায়তায় ৬ দফার পক্ষে ৫০ হাজার লিফলেট ছাপিয়ে বিতরণ করেন। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধু ও অন্যান্য নেতার মুক্তির দাবিতে ১৯৬৬ সালের ৭ জুন পূর্ব পাকিন্তানে ধর্মঘট ও হরতাল আহ্বান করা হয়। আওয়ামী লীগ আহুত এ ধর্মঘট ও হরতাল পালনকালে মনু মিয়াসহ ১০ জন আন্দোলনকারী নিহত হন। এই হরতালকে কেন্দ্র করে আন্দোলন এতো তীব্র হয়ে ওঠে যে, সরকার অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে প্রবলভাবে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে। ফলে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সারির নেতাদেরও ঢালাও গ্রেফতার শুরু হয়। আবু আল সাইদ ‘আওয়ামী লীগের ইতিহাস’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘১৯৬৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই ৯, ৩, ৩০ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়’। কিন্তু সরকার ব্যাপকভাবে গ্রেফতার ও নির্যাতন আতঙ্ক ছড়িয়েও পরিস্থিতি অনুক‚লে নিতে পারেনি।
এমতাবস্থায় সরকার নতুন চক্রান্তের জাল হিশেবে ১৯৬৮ সালের ৬ জানুয়ারি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করে যে, সামরিক ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি চক্র আগরতলায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করে পাকিস্তানের অখণ্ডতা ধ্বংসের গোপন চক্রান্ত করায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা ঢাকাস্থ ভারতীয় ডেপুটি হাই কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আসছিল এবং পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল। আটক ব্যক্তিদের কয়েকজন ভারতীয় এলাকা সফর করে এবং লেঃ কর্নেল মিশ্র, মেজর মেনন প্রমুখ ভারতীয় সামরিক অফিসারের সঙ্গে তাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা করে।’
এই ঘটনার দুই সপ্তাহ পর ১৮ জানুয়ারি আকস্মিকভাবে আরেকটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুও ওই ষড়যন্ত্রে জড়িত বলে জানানো হয় এবং তাঁকে বিপক্ষে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র’ মামলার প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। এ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় : ‘পূর্ব পাকিন্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ভারত সমর্থিত ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার একটি অভিযোগে পাকিন্তান সিভিল সার্ভিস, সেনাবাহিনী এবং রাজনীতির সঙ্গে জড়িত মোট ৩৫ জনের মধ্যে শেখ মুজিবসহ ২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ তারপর ১৯৬৮ সালের ১৮ জুন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা শুনানি শুরু হয়। এ মামলায় ৩৩ জন বাঙালি আমলা, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে ভারতের সহযোগিতায় পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে তাঁদের আগেই গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র’ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। সে-জবানবন্দির একটি বলিষ্ঠ উক্তি হলো- ‘পূর্ব পাকিন্তানের ন্যায্য দাবি দাবাইয়া রাখার জন্য এই ষড়যন্ত্র মামলা।’
বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা ঘোষণা পরবর্তী-সময়ে তাঁকে ঘন ঘন গ্রেফতার এবং জেলবন্দি অবস্থায় ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র’ মামলার আসামি করার বিষয়টি যে চক্রান্তমূলক সে বিশ্বাস সমগ্র বাঙালির মনে বদ্ধমূল হয়। এ ঘটনা প্রবলভাবে পশ্চিম পাকিস্তান বিরোধী এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদী এক অভূতপূর্ব চেতনার স্ফূরণ ঘটায়। তাৎক্ষণিকভাবে এই মামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তারা ১৯ জানুয়ারি সারা দেশে ধর্মঘট আহ্বান করে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অভাবিত প্রতিবাদ জানানো হয়। আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক মহল থেকে গোপন বিচারালয়ে নয়, প্রকাশ্য বিচারালয়ে বঙ্গবন্ধুর বিচারের দাবি জানানো হয়।
বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরর ব্যাপকহারে গ্রেফতারের ফলে ৬ দফার আন্দোলনে সাময়িকভাবে ভাঁটা পড়ে। এ সময় বিরোধী রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর শূন্য স্থানটি দখলের জন্য ১৯৬৭ সালের ২ মে এনডিএফ নেতা আতাউর রহমান খানের বাসভবনে তাঁর উদ্যোগে কাউন্সিল মুসলিম লীগ, নিজামে ইসলাম, জামায়াতে ইসলাম, কৃষক শ্রমিক পার্টি ও এনপিএফ সমন্বয়ে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) গঠিত হয়। কিন্তু আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সেই রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত বদলে দেয়। ক্ষমতাকে স্থিত করতে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের প্রতিপক্ষকে নিঃশেষ করে দেবার পরিকল্পনা বিরোধী পক্ষকে ঐকবদ্ধ হতে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রদানের পরপরই পিডিএমভুক্ত পাঁচটি দল ও আওয়ামী লীগসহ অপর দুটি দল মিলে ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি (ডাক) গঠন করে। ডাকের সভাপতি মনোনিত হন পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নেতা নসরুল্লাহ খান। অন্য নেতারা ছিলেন এনডিএফর হামিদুল হক, নুরুল আমিন, মাহমুদ আলী, নিজামে ইসলামের পীর মোহসীনউদ্দিন, পিডিএমর আব্দুস সালাম খান, আওয়ামী লীগের সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামের গোলাম আযম, ন্যাপ (ওয়ালীর) অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। মওলানা ভাসানীর ন্যাপ ও ভুট্টোর পিপলস পার্টি ‘ডাক’-এ যোগ দেয়নি। ‘ডাক’ জনসাধারণের রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারে এবং চলমান রাজনীতিকে ব্যাপকতর করে তোলার জন্য ৮ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। এই আট দফার ৫ম দফায় বঙ্গবন্ধুসহ রাজনীতিবিদদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়।
‘ডাক’-এর রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলন জনমনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এ সময় নিষিদ্ধ ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দ তাদের ১৯৬৮ সালের কংগ্রেসে ছাত্রদের সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তৎকালীন ছাত্র রাজনীতি জাতীয় রাজনীতির লেজুড় ছিল না। তবে ছাত্র ইউনিয়নের মতিয়া ও মেনন গ্রুপের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টির ব্যাপক সমর্থক ছিলো। একই সময় আওয়ামী লীগ কাউন্সিল অধিবেশনে সমাজতন্ত্র পার্টির আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। ব্যাংক-বীমাসমূহের জাতীয়করণ এবং স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বনের নীতি গ্রহণ করে। ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের ম্যানিফেস্টুতে প্রগতিশীল ধারণার ব্যাপক সংযোগ ঘটানো আনা হয়। ফলে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনের পর ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন ‘ছাত্র সংগ্রাম কমিটি’ নামে একটি ঐক্য গড়ে তোলে। ‘ছাত্র সংগ্রাম কমিটি’র আহ্বায়ক ছিলেন তোফায়েল আহমদ। আইয়ুব বিরোধী চলমান অন্দোলনকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিতে ‘ছাত্র সংগ্রাম কমিটি’ বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা অন্তর্ভুক্ত করে ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলে। এই ১১ দফার শেষ দফায় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতারদের বিপক্ষে মামলা প্রত্যাহারসহ মুক্তি দাবি করা হয়।
স্বেচ্ছাচারিতা ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার ও বিচারের নামে হত্যা প্রক্রিয়া শুরুর কারণে ছাত্র-জনতা-শ্রমিক-মোটে-মজুরসহ সব পেশার মানুষ পাকিস্তান সরকারের বিপক্ষে জ্বলমান ছিল। সে বিক্ষুব্ধ প্রেক্ষাপটের ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ‘ছাত্র সংগ্রাম কমিটি’র ঢাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের স্বৈরশাসনের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একত্রিত হবার আহ্বান জানায়। সভা শেষে একটি বিরাট মিছিল সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পুলিশ, ইপিআর সে মিছিলে টিয়ারসেল ও লাঠিচার্জ করে। সে সংঘর্ষে বেলা ২টার দিকে ঢাকা সেন্টাল ল কলেজের ছাত্র ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতা এ এম আসাদুজ্জামান পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনায় পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ দুর্দমনীয় হয়ে ওঠে। এ রমক জটিল সময় ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোর বেলায় ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কারাবন্দি সার্জেন্ট জহুরুল হক ও ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হককে বিনা কারণে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সংবাদ প্রচার পেলে সমগ্র দেশ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ছাত্র ও স্থানীয় জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে ছাত্রদের সঙ্গে সেনাবাহিনী সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষ থামাতে ও ছাত্রদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সেখানে যান ড. জোহাসহ বেশকয়েকজন শিক্ষক। সেখানে সেনাবাহিনীর গুলিতে ডা. জোহা নিহত হন। এ ছাড়াও এ সময় অনেক ছাত্র-জনতার মৃত্যু হয়। ফলে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন নিয়ন্ত্রণহীন-প্রবলতর হয়ে ওঠে- গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। গণ-আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান ১৯৬৯ শালের ২২ ফেব্রুয়ারি ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ প্রত্যাহার করে নিতে এবং ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র’ মামলার অভিযুক্তদের মুক্তি দেয়া হয়।
৬৯-এর এই গণ-অভ্যুত্থানের মূল শক্তি ছিল ৬ দফা। ৬ দফার আন্দোলনকে প্রতিহত করতে গিয়েই প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান একের পর এক রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে প্রতিহত করতে গিয়ে নিজেই ক্ষমতার মসনদ থেকে ছিটকে পড়েন। কাজেই বলা যায়, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান আইয়ুব সরকারের গণবিরোধী ভূমিকার বিপক্ষে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল, ৬ দফার আন্দোলনের ফসল। ১৯৬৯ শালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র আসামিদের গণসংবর্ধনা প্রদান করে। সেই গণসংবর্ধনা সভায় শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধ’ু উপাধি প্রদান করা হয়। সেই থেকে তিনি আমাদের বঙ্গবন্ধু হলেন।
জেনারেল আইয়ুব খান ১৯৬৯ শালের ২৫ মার্চ সেনাপ্রধান ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে আত্মরক্ষা করেন। ক্ষমতাধিষ্ঠিত হয়ে জেনারেল ইয়াহিয়া খান পুনরায় পাকিন্তানে সামরিক শাসন জারি করেন। তিনি সামরিক আইনের সমালোচনা, শাসন-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ঘৃণা, বিদ্বেষ বা উত্তেজনা সৃষ্টি, জনমনে আতঙ্ক বা হতাশা সৃষ্টি এবং পাকিন্তানের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে বিদ্বেষ সৃষ্টি বা বিচ্ছিন্নতার চেষ্টার জন্যে বিভিন্ন নির্দিষ্টভাবে শান্তি ও শান্তির মেয়াদ নির্ধারণ করে দেন। কিন্তু ততদিনে পদ্মার পানি সিন্ধুর পানিকে ঘুলিয়ে দিয়েছে। তিনি পূর্ব পাকিস্তানে জেনারেল আইয়ুব খানের মতো একচ্ছত্র আধিপত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। এই পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে দেশের শান্তি-শৃংখলা প্রতিষ্ঠায় জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৬৯ সালের ২৮ নভেম্বর গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হন্তান্তরের প্রতিশ্রæতিও প্রদান করে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রত্যক্ষ ভোটে ১৯৭০ সালের ৫ অক্টোবর জাতীয় নির্বাচন এবং ২২ অক্টোবর প্রাদেশিক নির্বাচন ঘোষণা করেন।
হাসানুর রশীদ : লেখক ও গবেষক।