বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে আগস্ট নিষ্ঠুরতম মাস, শোকের মাস, রাষ্ট্রের অভিভাবক হারানোর মাস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সুবেহ সাদেক মুহূর্তে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সি আইয়ের এদেশীয় এজেন্ট বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণিত মীরজাফর খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে কর্মরত ও বহিষ্কৃত স্বল্পসংখ্যক জুনিয়র অফিসার ডাকাতের মতো বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাড়িতে প্রবেশ করে তাঁর ১০ বছরের নিষ্পাপ শিশুপুত্র রাসেলসহ পরিবারের সবাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ছোট মেয়ে শেখ রেহানা বিদেশে ছিলেন বলে প্রাণে বেঁচে গেছেন।
১৫ আগস্টের খুনিরা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে রাষ্ট্রের মৌলিক আদর্শগুলোকে ধ্বংস করতে উদ্যত হয়, যার রেশ এখনো চলছে। সেনাবাহিনী, রক্ষীবাহিনীসহ সব গোয়েন্দা সংস্থা রাষ্ট্রের অনুগত ছিল। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কেউ বিদ্রোহ করেননি। রাজপথে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মিছিলও বের হয়নি। স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। এতসব ইতিবাচক দিক থাকা সত্ত্বেও স্বল্পসংখ্যক নররূপী পশু বঙ্গবন্ধুকে কীভাবে হত্যা করতে সক্ষম হলো, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। নচেৎ নতুন প্রজন্মের কাছে অনেক সত্য অজানা থেকে যাবে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর খুনিরা তাঁর লাশের প্রতি চরম অবমাননা প্রদর্শন করে ধৃষ্টতার পরিচয় দিয়েছিল, যা ক্ষমার অযোগ্য। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই সেনাবাহিনীর তিন প্রধান খুনি মোশতাকের অবৈধ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। ডেপুটি চিফ জেনারেল জিয়াউর রহমানের কাছে প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর দুঃসংবাদ পৌঁছার পর তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করে স্বাভাবিকভাবে বললেন, ‘ঝড় যিধঃ, চৎবংরফবহঃ রং শরষষবফ, ঠরপব চৎবংরফবহঃ রং ধষরাব’. ডেপুটি চিফের এমন উক্তি বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত বিদ্বেষের মনোভাবই প্রকাশ পেয়েছে। এ ধরনের নিষ্ঠুর উক্তি থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, ডেপুটি চিফের অবস্থান কোন দিকে ছিল। খুনি কর্নেল রশীদ বিদেশি সংবাদ সংস্থার কাছে সাক্ষাৎকারে বলেছে, ‘ডেপুটি চিফ তাদের পরিকল্পনার কথা জানতেন’। খুনিরা জিয়ার সঙ্গে তাঁর বাসায় বৈঠকে তাদের পরিকল্পনার কথা ডেপুটি চিফকে জানিয়েছিল বলে রশীদ সংবাদ সংস্থার প্রতিনিধিকে জানান।
বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল সফিউল্লাকে প্রেসিডেন্টের বাসভবন আক্রমণের ঘটনা অবহিত করেন এবং ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু জেনারেল সফিউল্লাহ কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেননি। তিনি সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি ভীরু ও কাপুরুষের মতো বলেন, ‘ব্যর্থতা বললে বলতে পারেন, সেদিন জীবন দিতে পারিনি’। একজন সৈনিকের জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সেদিন যদি প্রধান সেনাপতি সাহসিকতার সঙ্গে খুনিদের প্রতিরোধ করতেন, তাহলে বঙ্গবন্ধুকে প্রাণে বাঁচানো সম্ভব না হলেও মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশকে রক্ষা করা যেত। এ ক্ষেত্রে জেনারেল সফিউল্লাহর মৃত্যু হলেও তা হতো ‘বীরউত্তম’ খেতাবপ্রাপ্ত একজন মুক্তিযুদ্ধের বীরের মতো মৃত্যু। ভারতের হিন্দু রাষ্ট্র পত্রিকার সম্পাদক এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের সদস্য নাথুরাম গডসে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করলেও ভারতের মৌলিক আদর্শ ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধ্বংস করতে পারেনি কিন্তু বঙ্গবন্ধুর খুনিরা বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকেও হত্যা করতে সক্ষম হয়। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সামরিক শক্তি যেমনি মোকাবেলা করতে পারেনি, ঠিক তেমনি রাজনৈতিক শক্তিও মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। রাজনৈতিক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সাহসী নেতা তাজউদ্দীন আহমদের পক্ষেই কেবল সম্ভব ছিল খুনিচক্রকে সফলভাবে মোকাবেলা করা। কিন্তু ওই সময় তিনি ছিলেন কার্যত রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন একজন সাধারণ মানুষের মতো। খন্দকার মোশতাক সুকৌশলে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে তাজউদ্দীনকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে ফজলুল হক মনির ভূমিকাও কম ছিল না।
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর রক্তাক্ত লাশ যখন ধানমন্ডির ৩২নং বাড়ির সিঁড়িতে অনাদরে-অবহেলায় পড়ে রয়েছিল, ঠিক সে সময় তাঁর কিছু সংখ্যক অকৃতজ্ঞ সহকর্মী বিশ্বাসঘাতক মোশতাকের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নেন। সেদিন মীরজাফর মোশতাক জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেন, ‘কিছু সংখ্যক সূর্যসৈনিক স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে পরিবর্তন এনেছে, আমাকে সূর্যরথের সারথী হয়ে আসতে হয়েছে’। ১৫ আগস্ট সকাল ৮টার আগেই খুনিচক্র তাজউদ্দীন আহমদসহ জাতীয় চার নেতাকে গৃহবন্দি করে ফেলে। পরে গ্রেপ্তার করে কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যায়। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেল কোডের সব নিয়ম-কানুন অমান্য করে গভীর রাতে খুনিরা মোশতাকের নির্দেশে জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। খন্দকার মোশতাক ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী পথে চলতে শুরু করে। রাজনীতির নানান নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ধারাকে আরো বেগবান করেন। তিনি রাষ্ট্রপতি সায়েমের কাছ থেকে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। জেনারেল জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান ‘জয়বাংলা’ বিসর্জন দিয়ে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ প্রবর্তন করেন। তিনি অগণতান্ত্রিকভাবে পবিত্র সংবিধান থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র বিসর্জন দিয়ে ধর্মের আবরণে সংবিধান ঢেকে দেন। রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে দালাল আইন বাতিল করে বিচারাধীন ১১ হাজার রাজাকার-আলবদরকে জেলখানা থেকে মুক্ত করেন। শাহ্ আজিজের মতো একজন ঘৃণিত রাজাকারকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করেন। এ ছাড়াও যুদ্ধাপরাধী আব্দুল আলীম, কুখ্যাত রাজাকার মাওলানা মান্নানকে তার অনুগত মন্ত্রিসভার সদস্য করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী অবস্থানকে সুদৃঢ় করেন। তিনি সংবিধান সংশোধন করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেন। জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়েই এদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে। বর্তমানে জঙ্গিবাদ নামের বিষবৃক্ষের কালোছায়া পুরো সমাজকে গ্রাস করে ফেলেছে। জিয়াউর রহমান, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা খুনিদের বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেন।
বিএনপি নেতারা প্রায়ই বলে থাকেন, বিএনপি একজন মুক্তিযোদ্ধার প্রতিষ্ঠিত দল। প্রশ্ন থাকে যে, একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জনকে বিসর্জন দেয়া আদৌ কি সম্ভব? তাই দেশবাসীর কাছে মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। রাজনীতির মঞ্চ থেকে জিয়াউর রহমানের মর্মান্তিকভাবে বিদায়ের পর, অভিনব কায়দায় জেনারেল এরশাদের রাজনীতির মঞ্চে আগমন ঘটে। তিনি সংবিধানে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ সংযোজন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে শেষ পেরেকটি ঠুকে দিয়েছেন। গ্রিক দার্শনিক প্লেটো বলেছেন, ‘রাষ্ট্রের ধর্ম নেই, মানুষের ধর্ম আছে’। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার এটাই ছিল ১৯৭২-এর সংবিধানের মূলনীতি। কিন্তু বাঙালি জাতি সে সংবিধান রক্ষা করতে পারেনি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘বিষফোঁড়া’ নামে পরিচিত জেনারেল এরশাদের রাষ্ট্রপতির পদ থেকে বিদায়ের মুহূর্তও সুখকর ছিল না।
বর্তমানে বিএনপি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এ দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ধারাকে সযতেœ লালন করে চলছেন। খালেদা জিয়া ২০০১ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে জামায়াতে ইসলামীর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই নেতাকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেন। স্বাধীনতাবিরোধী আলবদরের গাড়িতে উড়তে থাকে ৩০ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত লাল-সবুজের পতাকা। বাঙালি জাতির এরচেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কী হতে পারে? ১৯৯১ সাল থেকে খালেদা জিয়া ১৫ আগস্ট শোক দিবসে বিএনপি ঘরানার কিছুসংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে নিয়ে সাড়ম্বরে ঘটা করে কেক কেটে জন্মদিনের উৎসব পালন করে থাকেন। কয়েক দিন আগে বিএনপির ঘরানার বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী খালেদা জিয়াকে ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন না করে শোক দিবস পালন করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও খালেদা জিয়াকে অনুরূপ আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু খালেদা জিয়া এ আহ্বানে বিন্দুমাত্র সাড়া দেবেন বলে মনে হয় না। গত বছর জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত আলোচনা সভায় খালেদা জিয়া প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন, তিনি স্বাধীনতা চাননি, জিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন’। ইতিহাসের এ রকম জঘন্য মিথ্যাচার একজন জাতীয় নেত্রীর মুখে শোভা পায় না। তিনি সুযোগ পেলেই বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ করে অপমানিত করেন। জীবিত থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে তিনি কতটুকু স্নেহ ও সহানুভূতি পেয়েছেন তা দেশবাসী ভালো করেই জানেন। কেবল খালেদা জিয়া বেমালুম ভুলে গিয়ে মিথ্যাচার করে বঙ্গবন্ধুকে রাজনৈতিকভাবে আক্রমণ করেন। এ জন্যই বোধহয় বাংলা সাহিত্যের অভিধানে কৃতঘ্ন শব্দটি যুক্ত আছে।
যদি কেউ নিজেকে বাঙালি বলে দাবি করেন, বাংলাদেশকে নিজের আপন ঠিকানা বলে মনে করেন তা হলে বঙ্গবন্ধুকে অবশ্যই জাতির জনক হিসেবে মেনে নিতে হবে। যারা পাকিস্তানি ভাবাদর্শে বিশ্বাসী তারাই শুধু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করে। ভারতে মহাত্মা গান্ধীকে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে জাতির জনক হিসেবে শ্রদ্ধা করেন। পাকিস্তানে জিন্নাহকে সে দেশের আপামর জনগণ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশে। জাতির প্রতি সীমাহীন ত্যাগ থাকা সত্ত্বেও সব দল বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে না। বাঙালির চিরাচরিত মানসিক দীনতা দেখেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন,
‘সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী,
রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি’।
মহাকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যাঁরা মানবের মুক্তির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন যেমন- যিশু, সক্রেটিস, জোয়ান অব আর্ক, লিংকন, গান্ধী, মার্টিন লুথার কিং এদেরই নামের তালিকায় আরেকটি উজ্জ্বল নাম যুক্ত হলো ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বঙ্গবন্ধুকে সংবিধানের পাতায় আবদ্ধ না রেখে জনগণের মনের মণিকোঠায় রাখতে হবে। ১৯৭২ সালের সংবিধানের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে শুধু বঙ্গবন্ধু উপাধিটি ছিল। এ উপাধিটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর প্রতি মানুষের ভালোবাসার দান। পঁচাত্তরের পর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নিন্দনীয় আশোভন বেপরোয়া ও বিদ্বেষমূলক বিতর্ক হয়েছে। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য আবারো প্রমাণ করে যে, সে ধারা এখনো অব্যাহত আছে।
বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে বেঁচে নেই। ঘাতকের বুলেট তাঁর জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিয়েছে। মানুষের মৃত্যু আছে। কিন্তু আদর্শের মৃত্যু নেই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে এ জাতি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এক সময় তলাবিহীন ঝুঁড়ি বলে এ দেশকে ব্যঙ্গ করা হতো, এখন বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছেছে। জঙ্গিবাদকে ও আমরা সফলভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হচ্ছি।
বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন দুঃখী মানুষের মুখে যদি হাসি ফোটানো যায় তা হলে এই মহান নেতার প্রতি আমাদের যথার্থ শ্রদ্ধা নিবেদন হবে।
বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতীয় সম্পদ। তাঁকে সংবিধানের পাতায় কিংবা রাজনৈতিক দলের বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ রাখা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বঙ্গবন্ধু মুজিবকে সর্বজনীন করার পথে এটা সবচেয়ে বড় বাধা। বঙ্গবন্ধুকে দলীয় বৃত্ত থেকে মুক্ত করে আনা, প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর বিশাল কর্মযজ্ঞের ইতিহাস তুলে ধরা দরকার। এ ব্যাপারে দলনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবীরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন। সর্বদলীয়ভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালনের উদ্যোগ নিতে হবে। আওয়ামী লীগের এক শ্রেণির নেতাকর্মী দুর্নীতি, লুটপাট, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত আছেন। আবার তারাই ব্যক্তিস্বার্থে বঙ্গবন্ধুকে ঢাল হিসেবে লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ডে তার ছবি ব্যবহার করছেন। কারো ব্যক্তি কিংবা রাজনৈতিক স্বার্থে বঙ্গবন্ধুকে ব্যবহার করা যাবে না। তবেই বঙ্গবন্ধুর সর্বজনীন হওয়ার পথ প্রশস্ত হবে। যতদিন বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকবে ততদিন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু মুজিব বাঙালি জাতির হৃদয়ে চির ভাস্বর হয়ে থাববেন। কোনো অপশক্তি তাঁর অ¤øান স্মৃতিকে মুছে ফেলতে পারবে না।
রবীন্দ্র কুমার বক্সী : শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী।