বঙ্গবন্ধুকে ডাকতাম মুজিব ভাই বলে। তার সঙ্গে প্রথম পরিচয় ১৯৫৩ সালে পাবনাতে। তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগ সভাপতি জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীসহ তখন পাবনা গিয়েছিলেন জনসভা করতে। মুজিব ভাই ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা আবদুর রব বগা মিয়ার শালগাড়িয়ার বাড়িতে। আমি তখন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের পাবনা জেলা কমিটির সভাপতি। ছাত্র ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে গিয়ে তার এবং মওলানা সাহেবের কাছে দাবি জানাতে যে তারা যেমন উদ্যোগ নিয়ে মুসলিম লীগ বিরোধী সব অসাম্প্রদায়িক দল নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ মোর্”া গড়ে তোলেন যাতে ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করা সম্ভব হয়। ওই দিনই প্রথম পরিচয়। অতঃপর বহুবার তিনি পাবনা সফরে গেছেন এবং প্রায় প্রতিবারই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে- কথাবর্তা হয়েছে দেশের রাজনৈতিক করণীয় প্রভৃতি নিয়ে। যখন তিনি কারারুদ্ধ হতেন তখন আমিও গ্রেপ্তার হতাম তবে আমি পাবনা থেকে গ্রেপ্তার হয়ে দিন কয়েক পাবনা জেলে থাকার পর রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বদলি হয়ে যেতাম। কারণ দীর্ঘমেয়াদি জেল যাদের খাটতে হবে তাদের জেলা কারাগারে না রেখে নিকটস্থ কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখাই ছিল কারা কর্তৃপক্ষের নীতি। সে কারণে আমার ১৪/১৫ বছরের কর্মজীবনের বেশির ভাগ সময়ই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে কেটেছে রাজশাহী বিভাগের সব জেলার রাজবন্দিদের সঙ্গে একত্রে।
অপরদিকে বঙ্গবন্ধু ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হতেন এবং তার জেলজীবনের দীর্ঘ সময় কেটেছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। তাই কারা প্রকোষ্ঠে তার সুযোগটা অবশ্য অকল্পনীয়ভাবে জুটে গেল যখন আমি ল’ ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার জন্য রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বদলি হয়ে গেলাম ১৯৬৬ সালে। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ওই সময়টা অত্যন্ত ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ- বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ও সামরিক আইন প্রত্যাহার করে সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সমগ্র পাকিস্তানব্যাপী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে সোচ্চার। আগের বছর ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ- পাকিস্তান পরাজিত ও তাসখন্দ চুক্তির মাধ্যমে সতেরো দিনের মাথায় যুদ্ধের সমাপ্তি। ফলে পাকিস্তান সরকারের সামরিক শক্তি প্রশ্নবিদ্ধ এবং পূর্ব বাংলার নিরাপত্তা নিয়েও ওই সরকার তখন সমালোচনার সম্মুখীন। এই পরিস্থিতিতে আমাকে ওই যুদ্ধ লাগার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেপ্তার করা হয় ‘ভারতের দালাল’ হিসেবে চিহ্নিত করে। লাহোরে সরকার বিরোধী সর্বদলীয় সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু গেলেন এবং তার ছয় দফা কর্মসূচি পেশ করলেন।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী অপর দলগুলো ওই কর্মসূচির মধ্যে পাকিস্তান ভাঙার ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করলে বঙ্গবন্ধু ফেরত চলে এসে ঢাকায় পুনরায় ওই ছয়দফা কর্মসূচি জনগণের সামনে পেশ করেন। ইতোমধ্যে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ তাদের এগারো দফা কর্মসূচি পেশ করলে বঙ্গবন্ধু ওই কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানান। অতঃপর বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন আহমদ, ময়মনসিংহ থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন প্রথম সারির নেতা গ্রেপ্তার হন। বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রেখে অপরাপর নেতাদের বিভিন্ন জেলে বদলি করে দেয়া হয়। পাবনা থেকে এক বছরেরও বেশি আগে গ্রেপ্তার করে আমাকে রাখা হয়েছিল রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে আমি ল’ ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি পেলাম এবং কিছুদিনের মধ্যেই আমাকে সেখানে বদলি করে দেয়া হলো। যে সময়ের কথা বলছি, তখন রাজশাহী থেকে ট্রেনে ঢাকা যেতে প্রায় দেড় দিন সময় লেগে যেত। আগের দিন সকালে রাজশাহী থেকে রওনা হয়ে সারা দিন সারা রাত পার করে বেলা ১০-১১টার দিকে ঢাকার তৎকালীন ফুলবাড়িয়া স্টেশন থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে পৌঁছালাম। এলেন রাজবন্দিদের দায়িত্বে নিয়োজিত ডেপুটি জেলার। তিনি পূর্ব পরিচিত। কাগজপত্র রেডি করে সঙ্গে আসা পুলিশের এসকর্ট টিমকে বিদায় দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন জেনারেল ওয়ার্ডে সমমনা বন্দিদের সঙ্গে থাকতে চাই কিনা। আমি বললাম, যদি সম্ভব হয় আমাকে পরীক্ষা পর্যন্ত সেলে রাখুন। তার পরে জেনারেল ওয়ার্ডে যাব। এখন আমাকে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য নিরিবিলি পড়াশোনা করতে হবে। তার জন্য সেলই আমার ভালো হবে। ডেপুটি জেলার আমাকে সঙ্গে নিয়ে পুরাতন ২০ সেলে ঢুকিয়ে দিয়ে বললেন, প্রধান গেট পর্যন্ত আমি যেতে পারব কিন্তু তার বাইরে যাওয়া বা ওই গেট খোলা নিষিদ্ধ। কেন তা জিজ্ঞেস করিনি কারণ সেলটি যদিও সেকেলে তবুও দিব্যি নিরিবিলি পড়াশোনার জন্য ভালো। ডেপুটি জেলার চলে যাওয়ার পরে খাট, চেয়ার, টেবিল ঠিকঠাক করে স্নান করে খাটে বিশ্রাম নিতে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘণ্টাখানেক পরে পাহারাদার এসে ডেকে বলল, স্যার খাবার এসেছে খেয়ে ঘুমান। হাতমুখ ধুয়ে আহারাদি সেরে আবার ঘুম। কারণ রাতে ট্রেনে আদৌ ঘুমানো যায়নি। তার ওপর আবার গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরম। বিকেল ৫টার দিকে হেড ওয়ার্ডার এসে ঘুম থেকে ডেকে তুলে কাপড়-চোপড় পরে নিয়ে মেইন গেটের বাইরে যেতে বলায় প্রথমে বেশ খানিকটা থতমত পেয়ে গেলাম। তবুও জিজ্ঞেস করলাম হঠাৎ কি ডিএসবির ইন্টারভিউয়ের তলব? যা হোক তাড়াহুড়া করে মুখ-হাত ধুয়ে কাপড়-চোপড় পরে বাইরে বেরোতেই দেখি চোখে কালো ফ্রেমের চশমা পরে বিশালদেহী সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত এক হাতে চুরুট নিয়ে বঙ্গবন্ধু দাঁড়িয়ে। বিস্ময়ে হতবাক। তাকে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘক্ষণ আলিঙ্গন করলাম, বললাম- আপনি এই জেলে আছেন তা জানতাম- কিন্তু কোন ওয়ার্ডে তা জানা ছিল না। মুজিবভাই বললেন, এই তো আপনার জেলের ঠিক বিপরীতে এবং সামনাসামনি। তবে আজ থেকে আমার দু’জন সকালে একঘণ্টা এবং বিকেলে এক ঘণ্টা করে এক সঙ্গে হাঁটাহাঁটি করব-গল্পগুজব করব। কি রাজি তো? আমি এসেছি পরীক্ষা দিতে। পড়াশোনার সুবিধায় এই সেল নিজেই বেছে নিয়েছি। তবে সকাল-বিকেলে হাঁটতে তো কোনো অসুবিধাই নেই বরং জেল জীবনে এটি একটি অত্যন্ত আকাক্সিক্ষত কিন্তু দুর্লভ সুযোগ এটাকে হাতছাড়া করব কেন? সানন্দে রাজি। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ট্রেনে চলার পথে মানুষের এই ছয়দফা এগারো দফা আন্দোলন সম্পর্কে ও সরকার সম্পর্কে কেমন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করলাম? বললাম, যতটা অনুভব করতে পেরেছি তাতে শতভাগ মানুষই সামরিক শাসনবিরোধী এবং বাংলার স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে অনমনীয়। কিন্তু আপনার ওপর অসীম আস্থা থাকলেও আপনার আওয়ামী লীগের অবশিষ্ট নেতাকর্মীরা ভয়ে কাঁপছে এবং ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত নয়। তদুপরি একটি ক্ষুত্র অংশ ছয়দফার বিরুদ্ধে। তারা মনে করেন- এটা পাকিস্তান ভাঙার ষড়যন্ত্র, মুসলমানদের স্বার্থেরও অনুক‚ল নয়। অপর পক্ষে দ্বিতীয় বৃহৎ দল আমার ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি তখন রুশ-চীন কমিউনিস্ট পার্টির আদর্শগত দ্ব›েদ্বর ফলে আদর্শিক প্রশ্নে বিভক্তির সম্মুখীন। তবুও রুশপন্থী অংশ তখনো অবিভক্ত ওই দলের অভ্যন্তরে থেকেও ছয়দফা এগারো দফা আন্দোলনের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন ঘোষণা করে সংবাদপত্রে বিবৃতি দেন এবং সাধ্য মতো যৌথভাবে আন্দোলনে অংশও নেন। কিন্তু সংগঠনের অবধারিত শক্তিহ্রাসজনিত কারণে কোনো অংশই দেশবাসীর সক্রিয় সমর্থন পেতে পারছিলেন না আগের মতো। ফলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এক ধরনের শূন্যতার সৃষ্টি হওয়ায় হতাশাক্লিষ্ট হয়ে পড়েছিল মানুষ অন্তত সাময়িকভাবে। বঙ্গবন্ধুও বিষয়টি অনুভব করেন এবং তার সাধ্যানুযায়ী কারাভ্যন্তর থেকেই কর্মীদের উৎসাহিত করে আন্দোলনে জোরদারভাবে নামাতে চেষ্টা করবেন বলে জানালেন। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় বেড়ানোটা ছিল শুধুই হাঁটাহাঁটি নয়- সময়টা ব্যয়িত হতো সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তরিক মতবিনিময়ের। মুজিব ভাই ন্যাপের রুশপন্থী অংশের বিবৃতিকে স্বাগত জানালেন, বললেন, মওলানা সাহেব তো বাঙালি-অন্তঃপ্রাণ। তিনি কিভাবে ভিন্নপথে চলে গেলেন- এটা দুর্বোধ্য। আমি বললাম, আমার ধারণা তিনি যখন চীনে যান সেখানে মাও সে তুংয়ের সঙ্গে তার যথেষ্ট আলোচনা হয়। চীন-পাকিস্তান সম্পর্কের গভীরতার ফলে মাওয়ের পরামর্শে তিনি প্রভাবিত হন বলে আমার ধারণা। তবে চূড়ান্ত মুহ‚র্তে তিনি বাংলার দাবির পক্ষে অবশ্যই উপযুক্ত ভূমিকা নেবেন বলে এখনো বিশ্বাস রাখি। হঠাৎ একদিন মুজিব ভাই হাঁটতে হাঁটতে বললেন, ‘ছয়দফা-এগারো দফা আসলে আমার দফা নয়, আমার হলো আসলে এক দফা।’ হেসে বললাম, ‘কী? বাংলার স্বাধীনতা?’ তিনি সজোরে বললেন, ‘অবশ্যই এবং এটা হতেই হবে।’ আমি হঠাৎ বলে ফেললাম, ‘পারবেন না মুজিব ভাই’। তিনি বললেন, ‘কেন?’ উত্তরে বললাম, ‘আপনার কেবলা তো আমেরিকা। ওরা কি কখনো কোনো দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন দিয়েছে? মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা করবেই বাংলার মানুষের দাবিকে। মুজিব ভাই বললেন সহাস্যে, ‘হ্যাঁ আমেরিকা ভায়া ইন্ডিয়া।’ বললাম, ‘কথা একই। ভারতের প্রশাসনে দু’টি লবি একটি আমেরিকার অপরটি রাশিয়ার পক্ষে। আপনি সত্যিই স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করতে চান দ্রুত সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের নেতা সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করুন’। মুজিব ভাই বললেন, ‘দেখি তো’।
অতঃপর দেখলাম অপেক্ষারত আমার বাল্যবন্ধু সদ্য ব্যারিস্টারি পাস করা আমীর-উল ইসলাম। তিনি নিজে থেকেই এসেছেন দেখা করতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে। কুশলাদি জিজ্ঞেস করার পর বললেন, ‘রণেশ, যেই পত্রিকায় দেখলাম তুমি বদলি হয়ে ঢাকা জেলে এসেছ তখনই ভাবলাম তোমার আটকাদেশের বিরুদ্ধে রিট করব। তাই সঙ্গে আনা আটকাদেশ ও ওকালতনামায় তোমার সই চাই।’ এ কথা বলতেই মুজিব ভাই বলে উঠলেন, ‘আমীর-উল ওনার কেসটা ভালো করে করো। ওনাকে বাইরে বড়ই প্রয়োজন। ‘রিটের খরচার টাকা ফিসহ তোমার ভাবী দেবেন।’ বলেই ভাবীকে বললেন দু’একদিনের মধ্যে আমীর-উলকে টাকা দিতে। আমীর-উল তাড়াতাড়ি বললেন, ‘রণেশের রিট বাবদ আমি এক পয়সাও নেব না, ও আমার বাল্যবন্ধু সেই ১৯৫৪ সাল থেকে। অতঃপর আটকাদেশ ও ওকালতনামায় সই-স্বাক্ষর দিয়ে কথাবার্তা শেষে সেলে ফেরত গেলাম। রাতে দেখি ওয়ার্ডাররা নিয়ে এলো বিস্তর খাবার। ভাবী মুজিব ভাইকে যে খাবার দিয়ে গেছেন, মুজিব ভাই তারই একটি অংশ পাঠিয়েছেন আমাকে। পরে একদিন বাইরে হরতাল ডেকেছে আওয়ামী লীগ-শ্রমিকলীগ। ওই দিন আমার একটি বিষয়ে পরীক্ষা। হরতাল ন্যায়সঙ্গত দাবিতে। স্থির করলাম ওই দিনের পরীক্ষা দেব না, হরতালের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে স্বরাষ্ট্র সচিবের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বরাবর দরখান্ত লিখে হেড ওয়ার্ডারকে দিলাম অফিসে পৌঁছে দেয়ার জন্য। খানিক পরে দরখাস্ত হাতে ফিরে এলেন তিনি। এসে বললেন, শেখ সাহেব এই দরখাস্ত না দিয়ে আগামীকাল পরীক্ষা দিতে বলেছেন। আমি তা না মেনে দরখাস্ত দুটি অফিসে পৌঁছে দিতে বললাম। বিকেলে হাঁটার সময় মুজিব ভাই বললেন, ‘পরীক্ষা না দেয়াটা কিন্তু ঠিক হবে না। কারণ তার সঙ্গে ভবিষ্যৎ জীবন জড়িত।’ বললাম, মানুষ বাইরে হরতাল করবে। আপনার দলের ডাকা ন্যায়সঙ্গত হরতাল- ন্যাপ তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। আমি কী করে পরীক্ষা দিতে বসব? এটা আমার রাজনৈতিক শিক্ষাবহির্ভূত কাজ হবে।
পরদিন পরীক্ষা হলো না। হরতালের কারণে পরীক্ষা স্থগিত ঘোষিত হয়েছিল। অতঃপর পরীক্ষা শেষে জেনারেল ওয়ার্ডে চলে গেলাম। মুজিব ভাই থেকে গেলেন তার ওয়ার্ডে। তার বিরুদ্ধে চালু হলো আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। কিছুদিন পর পুনরায় আমাকে জেলে বদলি করে দেয়া হলেও মুজিব ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের কোনো সুযোগ থাকল না। অতঃপর ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। পুনরায় গ্রেপ্তার হলাম। মুক্তির পর এলো ১৯৭০-এর নির্বাচনের ব্যাপকতা। তা শেষ হলে, ঐতিহাসিক একাত্তর। আর সাক্ষাৎ নেই মুজিব ভাইয়ের সঙ্গে। এলো বাহাত্তর সাল। সম্ভবত ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু পাবনা এলেন। স্টেডিয়াম মাঠে আমরা তাকে সংবর্ধনা জানাতে লাইন করে দাঁড়িয়েছি। প্রথম সারিতে দলীয় নেতাদের সঙ্গে করমর্দন করতে করতে বঙ্গবন্ধুর নজর পড়ল তৃতীয় সারিতে দাঁড়ানো আমার প্রতি। ছুটে এসে কোলাকুলি করে বললেন, ‘কী, বলেছিলাম না স্বাধীন বাংলাদেশ হবেই।’ উত্তরে হেসে বললাম, ‘মুজিব ভাই, আপনার কেবলায় হয়নি আমার কেবলার সহযোগিতায় হয়েছে।’ পুনরায় কুলাকুলি। ওই আমাদের শেষ সাক্ষাৎ।
রণেশ মৈত্র : রাজনীতিক, সাংবাদিক, লেখক।