শেখ মুজিবের পথেই মুক্তি


যখন এই লেখাটি পূর্ণ করছি তখন টিভির ব্রেকিং নিউজের খবর হচ্ছে- শাহজালাল বিমানবন্দরের গোল চত্বরের চেক পোস্টে আত্মঘাতী বোমা হামলায় হামলাকারী নিহত। নিবন্ধ লেখার সময়কালে এটিই সম্ভবত বাংলাদেশে সর্বশেষ আত্মঘাতী বোমা হামলা। খবরটি ২৪ মার্চ অনলাইনে যেভাবে প্রকাশিত হয় তা এ রকম- ‘রাজধানীতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গোলচত্বর এলাকায় পুলিশ বক্সের কাছে পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে হামলায় একজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাত পৌনে ৮টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিমানবন্দর জোনের সহকারী কমিশনার রুহুল আমিন বলেন, হামলাকারী ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এই হামলায় পুলিশের কোনো সদস্য বা অন্য কেউ হতাহত হননি।

বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়া বলেন, পুলিশ বক্সের বাইরে একটি বোমা হামলা হয়েছে। এতে হামলাকারী নিহত হয়েছেন। আর কারো হতাহতের খবর পাইনি। বিমানবন্দর থানার ওসির বরাত দিয়ে বাসস জানায়, অজ্ঞাত এক যুবক পুলিশের ওই তল্লাশিচৌকির সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা তাকে তল্লাশির জন্য থামতে বলেন। এ সময় ওই যুবক সামনে এগিয়ে গিয়ে নিজের শরীরে বেঁধে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। বোমার স্পিøন্টারে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। নিহত যুবকের বয়স আনুমানিক ২৮ থেকে ৩০ বছর। তার পরনে ছিল জিন্সের প্যান্ট ও টি-শার্ট।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই ঘটনার পর পর আশপাশের দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়। পুলিশ-র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য সেখানে মোতায়েন করা হয়। রাত ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে যা

ন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার তানজিনা আকতার বলেন, ওই হামলার পর পর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিমানবন্দর এলাকায় এপিবিএনের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক ইকবাল করিম বলেন, গত সপ্তাহে র‌্যাব সদর দপ্তরে হামলার পর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সেটা আরো বাড়ানো হয়েছে। বিমানবন্দরের প্রবেশমুখে আর্চওয়ে বসানো হচ্ছে।

এটি এই দেশের জঙ্গিবাদের নতুন উপসর্গ। সে জন্যই অতি নিকট অতীতের সঙ্গেও আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার দৃষ্টান্ত রয়েছে। কদিন আগের ঘটনা।

শুক্রবার ১৭ মার্চ ১৯১৭। সমগ্র বাঙালি জাতির অসাধারণ গৌরবের একটি দিন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন করার জন্য পুরো জাতি যখন উদ্বেলিত ছিল, যখন ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেয়া হয়েছে, যখন টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে ফুলের তোড়া শোভা পাচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন তখন খবর পাওয়া গেল, ঢাকার হাজি ক্যাম্পের পাশে আশকোনায় বেলা একটা দশ মিনিটে র‌্যাব সদর দপ্তরের নির্ধারিত জায়গায় ২৫ বছরের এক যুবক আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। যতটা জানা গেছে সেটি হলো, র‌্যাব সদর দপ্তরে বোমা বহনকারী নিজে দেয়াল টপকে র‌্যাবের এলাকায় প্রবেশ করে এবং র‌্যাবের সদস্যদের চ্যালেঞ্জের মুখে বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশ জানিয়েছে, বিমানবন্দরের ঘটনাটি আত্মঘাতী ছিল না। বোমা বহন করার সময় বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে পুলিশ মনে করে। আমার নিজের কাছে অবশ্য এমন ধারণা যে, পুলিশের চ্যালেঞ্জের মুখে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হতেও পারে, যেমনটি র‌্যাবের সদর দপ্তরের ক্ষেত্রে ঘটেছে। অন্যদিকে এটি মনে রাখা দরকার, হামলাকারীদের আচরণ যেমন একই রকম তেমনি তাদের বয়সও কাছাকাছি।

দুটি ঘটনার পরই বিশ্লেষকরা বোঝার চেষ্টা করছেন যে, এটি কাদের দ্বারা ঘটানো হয়েছে এবং আগে পিছে কে কোথায় কিভাবে যুক্ত রয়েছে। র‌্যাব সদর দপ্তরের ঘটনাটি সম্পর্কে কেউ কেউ মনে করছেন, পাকিস্তানি কায়দায় মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলা করার উদ্দেশ্য নিয়ে হামলাকারী ওজু করতে র‌্যাবের অফিসে ঢুকেছিল। দ্বিতীয় ঘটনাটির উদ্দেশ্য খুব সহজেই আন্দাজ করা যায় যে, বিমানবন্দর হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল। এর মানে হচ্ছে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের সম্প্রসারণে আমরা মসজিদ, জনবহুল এলাকা ও আত্মঘাতী এমন স্তরেই একবারেই পা দিলাম। নানা কারণে সর্বশেষ ঘটনা দুটি কতগুলো মৌলিক প্রশ্ন তুলে ধরেছে।

আমার জানা মতে, বাংলাদেশে এ ধরনের আত্মঘাতী বোমা হামলা তেমন প্রবল কোনো ঘটনা ছিল না। শেখ হাসিনা এবার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি-জামায়াত জোটের সহায়তায় প্রধানত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর জন্য সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটে। বিএনপি-জামায়াত জোট নিজেরাই সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী ছিল এবং বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর পথে চলতে পারছিল বলে তাদের কোনো সংকট ছিল না। কিন্তু শেখ হাসিনার সময়কালে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসের পাশাপাশি তাদের আমলে জন্ম নেয়া জেএমবি ও অন্যসব জঙ্গিবাদী সংগঠনের মাধ্যমে এসব ঘটনার পাশাপাশি ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে সন্ত্রাস ও হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে আসছে। এ ছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে বিদেশিদের ওপর হামলা এবং ব্লুগার-প্রকাশকদের হত্যার ঘটনা ঘটে। ধারণা করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে যে, এসব ঘটনার সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদী বা আইএসের জড়িত থাকার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। আমি নিজে নিশ্চিত ছিলাম যে, পাকিস্তান এসব জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত। পাকিস্তান একাত্তরে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য দেশীয় পাকিস্তানপন্থীদের সহায়তার জন্য আইএসআই এবং এমনকি খোদ তারেক রহমান এসব কাজের সঙ্গে যুক্ত তেমন অভিযোগ আমরা পেয়ে আসছি। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির বদলা নিতে বা ঠেকাতে এসব ঘটনা ঘটছে সেটি আমরা আরো নিশ্চিত হয়েছি যখন পাকিস্তান সরকার, সংসদ ও রাজনৈতিক দলগুলো যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বন করেছে। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে এটি বলতে পারি যে, পাকিস্তান বাংলাদেশবিরোধী সেই ভূমিকা থেকে এক চুলও সরে দাঁড়ায়নি। আমাদের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ যে, পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পেছনে সবচেয়ে সহায়ক শক্তি হচ্ছে আমাদের দেশীয় শক্তিও। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশে পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির বিকাশ ঘটানোর যে প্রয়াস জিয়াউর রহমান শুরু করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাকে আরো এক পা সামনে নেন। বাংলাদেশের জন্মের অঙ্গীকারকে মুছে ফেলার চেষ্টায় সংবিধানকে ছিন্ন ভিন্ন করা হয়। রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে সংবিধানের অংশ করে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রকে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানপন্থী রাষ্ট্রে পরিণত করার সব চেষ্টা করা হয়। এরই ফলশ্রæতিতে এমনকি শেখ হাসিনার শাসনকালেও হেফাজতের হুমকির কাছে নরম সুরে কথা বলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে একেবারে উপেক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।

১৭ ও ২৪ মার্চের ঘটনাটি দুটিকে আমি একটু ভিন্ন মাত্রার ঘটনা মনে করছি বেশ কটি কারণে। ১৭ মার্চের ঘটনার মাত্র এক দিন আগে সীতাকুণ্ডের ঘটনাটি বাদ দিলে অন্য কোনো আত্মঘাতী ঘটনার কথা সহজে স্মরণ করতে পারছি না। পরপর দুদিন দুটি আত্মঘাতী ঘটনা ঘটার ফলে বাংলাদেশের জন্য এসব যে একটি অশনিসংকেত সেটি নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। যারা সাম্প্রতিক ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণ করছেন তারা জানেন যে, জঙ্গিবাদের চূড়ান্ত সংকটের জায়গাটির নাম আত্মঘাতী হামলা। দুনিয়ার খবর যারা রাখেন তারা এটিও স্মরণ করতে পারবেন যে, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বহু দেশে এই আত্মঘাতী হামলা প্রচণ্ড আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ এই আতঙ্কের যতটা বাইরে ছিল সাম্প্রতিক ঘটনা থেকে মনে হচ্ছে সেই দূরত্বটা আর নেই। উদ্বেগের বিষয়, এর পরিণতি কি সেটি এখনই আন্দাজ করে বলা সম্ভব নয়। বিমানবন্দর পর্যন্ত বোমা বহন করে যদি সেটি ফাটানো যেত তবে তার পরিণতি কি হতো সেটি সহজেই অনুমেয়। এটিও পর্যবেক্ষণ করার মতো ঘটনা যে, ঘটনাটি ঘটেছে র‌্যাবের মতো একটি এলিট বাহিনীর একটি ঠিকানায়। এমন হতে পারে যে, ১৭ মার্চকে কেন্দ্র করে একটি বড় ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ছিল। র‌্যাব মেস ছাড়াও শহরের বা দেশের আরো বহু জায়গাতে হয়তো এ রকম আত্মঘাতী হামলা হতো। সীতাকুণ্ডের যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা নাকি এখন পর্যন্ত একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। সীতাকুণ্ডের ঘটনা, আশকোনার আগের ঘটনা, র‌্যাব সদর দপ্তরের ঘটনা, বিমানবন্দরের ঘটনা ও সিলেটসহ দেশের বহু স্থানে জঙ্গি অভিযানের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো একসঙ্গে যুক্ত থাকতেই পারে। জঙ্গি দমনে সরকারের অসাধারণ সক্ষমতার প্রেক্ষিতে পুলিশ-র‌্যাবকে আতঙ্কিত করার হীন প্রচেষ্টাও এর পেছনে থাকতে পারে। আমরা জানি সরকারকে আরো নানা প্রসঙ্গ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সরকারের ভেতরেও যে পাকিস্তানপন্থীরা আছে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। খুব সাম্প্রতিককালে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে তাকেও জঙ্গিবাদী ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। যে দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার ভিতকে ধ্বংস করে ধর্মভিত্তিক শিক্ষা শিশুদের জন্য প্রয়োগ করা যায় সেই দেশে এমন বোমা হামলা তো অতি স্বাভাবিক ঘটনা বলেই বিবেচিত হতে পারে। আত্মঘাতী বোমা হামলার চাইতে হেফাজতের দাবির প্রভাব সামান্যতম কম নয়। আমি মনে করি, আমরা এই মার্চ মাসে স্বাধীনতার ইশতেহার, এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণা বা ১৯৭২-এর সংবিধানের সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে রেখে এই রাষ্ট্রকে সামনে নেয়ার তথাকথিত চেষ্টা করছি।

বস্তুতপক্ষে আত্মঘাতী বোমা হামলা হোক, সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের কথাই বলি এই পথকে পাল্টে দেয়ার জন্য আদর্শিক লড়াইটা না করলে কোনোভাবেই বাংলাদেশ তার জন্মের ঠিকানায় থাকতে পারবে না। কিছুটা অপ্রিয় হলেও এ কথা সত্য যে, স্বাধীনতার স্বপক্ষের দাবিদার সবাই নিজেদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বা নীতিমালাকে সঠিকভাবে ধারণ করেন না। রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকেই সম্ভবত বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শ বা নীতিকে জানেনই না। এমনকি ধারণা করা হচ্ছে যে, রাজনীতিবিদদের মতে, ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করলে নির্বাচনে জেতা যাবে না? এটিও কি ভাবা হচ্ছে যে, স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি যদি ধর্মনিরপেক্ষতা মেনে চলে তবে একদল মানুষ পাকিস্তানপন্থী রাজনীতিকদের করায়ত্ত হয়ে যাবে?

আমাদের বোধহয় সময় হয়েছে বাংলাদেশের সামগ্রিক বিষয়গুলো মূল্যায়ন করার। আমি খুব স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সারা দুনিয়াতে জঙ্গিবাদী, সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাস থাকলেও বাংলাদেশের এই প্রসঙ্গটি তার জন্মের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে দেশের শতকরা ২৮ ভাগ লোক নৌকার বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল। তারা বাংলাদেশ নয় পাকিস্তানই চেয়েছিল। ১৯৭১ সালে এদেরই অংশবিশেষ সশস্ত্রভাবে পাকিস্তানের পক্ষে ও মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে লড়াই করেছে। এখন নৌকার বিপক্ষে ভোট শতকরা প্রায় ৩৮ ভাগ। এর অর্থটা হচ্ছে ৭৫ থেকে ৯১ এবং ২০০১-০৮ সময়কালে শতকরা ২৮ সংখ্যাটি ৩৮ হয়েছে। এটি আমাদের স্পষ্ট বুঝতে হবে যে, বাংলাদেশবিরোধীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই চলতে হবে। স্মরণ করুন তো, বঙ্গবন্ধু সেই মহামানব যিনি পাকিস্তান আমলে আওয়ামী মুসলিমকে আওয়ামী লীগে রূপান্তর করতে পেরেছিলেন। আসুন তার সেই অসাম্প্রদায়িক নীতিতে অটল থাকি। তিনি পাকিস্তান, চীন ও আমেরিকার বিপক্ষে নিরস্ত্র বাঙালিকে নিয়ে যুদ্ধে জিতেছিলেন। তিনি সবার ওপরে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে স্থাপন করেছিলেন। তিনি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তিনি সর্বস্তরে একমাত্র বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। সেই মহামানবের উত্তরসূরি হয়ে আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এমন কি রাষ্ট্রভাষাকে কেন বাদ দিতে হবে? আমরা কি এখন তার সেই নীতি ও আদর্শকে মেনে চলি? আমরা কি তার আদর্শ বাস্তবায়ন করি? কেন আমরা নিজেদের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি বা জীবনধারাকে হেফাজতের কাছে নত করাচ্ছি? কেন আমরা সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম প্রত্যাহার করতে পারি না? কেন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ধারণাকে বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারি না? কেন আমাদের রাষ্ট্রভাষা হারিয়ে যাচ্ছে? বঙ্গবন্ধু শিক্ষাকে কেবল একমুখী নয় প্রাথমিক শ্রেণি পর্যন্ত এক ভাষা বাংলার করেছিলেন। কেন আমাদের নানামুখী ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা চালু করতে হয়েছে? প্রচণ্ড ভয় হয়তো কাজ করে যে দেশটা আবার স্থিতিশীলতা হারিয়ে ফেলবে।

আসুন না বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হয়ে তার পথটাতেই চলি। আমি খুব অবাক হয়েছি এবার পাঠ্যপুস্তকের পরিবর্তন দেখে যে, নুরুল ইসলাম নাহিদের মতো একজন শিক্ষামন্ত্রী থাকার পরেও তার মন্ত্রণালয় হেফাজতের দাবি মেনে পাঠ্যবই তৈরি করেছে। এমনকি পাকিস্তান আমলে যে রকম সাম্প্রদায়িক পাঠ্যপুস্তক প্রণীত হয়নি তার চাইতেও জঘন্য পাঠ্যপুস্তক শিশুদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগের অবৈধ অঙ্গ সংগঠন ওলামা লীগও হেফাজতের মতোই কথা বলছে। তাদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত যদি স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে পালন করা হয় তবেই আত্মঘাতী বোমা হামলা বা জঙ্গিবাদী সন্ত্রাস থেকে আমরা বাঁচতে পারব।

আমরা পাকিস্তানপন্থীদের বিপক্ষে বহু ক্ষেত্রে বিজয়ী হয়েছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তার মাঝে সবচাইতে সেরা। তবে বঙ্গবন্ধুর সব আদর্শ যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে না পারি তবে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা যাবে না। সে জন্যই আমি অত্যন্ত স্পষ্ট করেই বলতে চাই, শেখ মুজিবের পথেই মুক্তি।

ঢাকা, ২৪ মার্চ ১৭

মোস্তাফা জব্বার : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও কলাম লেখক।

SUMMARY

1709-1.png