২৩ জুন ও আওয়ামী লীগের আত্মপ্রকাশ


উপমহাদেশের মুসলমানদের স্বতন্ত্র আবাসভূমির দাবির প্রবল সমর্থক মুসলিম লীগের বিক্ষুব্ধ নেতারা কেন পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরই ভিন্ন একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্যতা এবং তার ফলে স্বাধীন বংলাদেশের অভ্যুদয়। মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের নেতাদের এবং সে সময়ের তরুণ শেখ মুজিবুর রহমানের সামনে যেমন আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে পৃথক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা ব্যতীত, ভিন্ন কোনো পথ খোলা ছিল না। একইভাবে ধর্মের নামে পাকিস্তানের স্বৈরশাসকরা বাঙালিদের ওপর যে শাসন-শোষণ, অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার করছিল তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু ‘মুক্তি ও স্বাধীনতার’ আহ্বান জানিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ এবং এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল।

পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার মাত্র ছয় মাস পরে করাচিতে ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখে কন্সটিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলির সভা হয়েছিল। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন ‘মুসলিম লীগ নেতারা উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষপাতী। পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ লীগ সদস্যেরও সেই মত। কুমিল্লার কংগ্রেস সদস্য বাবু ধীরেন্দ্রনাধ দত্ত দাবি করলেন বাংলা ভাষাকেও রাষ্ট্রভাষা করা হোক। কারণ, পাকিস্তানের সংখ্যাগুরুর ভাষা হলো বাংলা। মুসলিম লীগ সদস্যরা কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না। আমরা দেখলাম, বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার।’ (পৃ.২১) ভাষা আন্দোলনকে সংগঠিত করে এগিয়ে নেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু নিরলস কাজ করেছেন এবং কারা নির্যাতন ভোগ করেছেন। আওয়ামী মুসলিম লীগ সংগঠিত ও প্রতিষ্ঠার আগেই বঙ্গবন্ধু নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার জন্য বাঙালিদের সংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন।

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তাদের প্রত্যেকের মনেই মুসলিম লীগ দল এবং সেই দলের সরকারের প্রতি ছিল তীব্র ক্ষোভ। যেহেতু তারা একই সঙ্গে মুসলিম লীগ করতেন তাই ঠিক তখন (আওয়ামী মুসলিম লীগ) প্রতিষ্ঠাতাদের ‘প্রায় সবাই’ হয়তো এ ধরনের চিন্তাও করে থাকবেন যে ‘নিজেদের মধ্যে (!?)’ ভুল বোঝাবুঝি এক সময় অবসান হয়ে যাবে! কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী দিচ্ছে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই এই চিন্তা করতেন যে পাকিস্তানের মধ্যে থেকে (পূর্ব) বাঙালিদের মুক্তি হবে না। তিনি (পূর্ব) বাঙালিদের অধিকার নিয়ে এবং এভাবে নিজেদের জন্য স্বাধীন আবাসভূমির চিন্তা করতেন। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ করেছিলেন উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমির চিন্তা। অপরদিকে (পূর্ব) বাঙালিদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমির চিন্তা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আসলে কোনো ঐতিহাসিক ঘটনা পুরোপুরিভাবে উপলব্ধি করতে হলে সেই ঘটনার যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁর চিন্তা এবং সেই ঐতিহাসিক ঘটনাটি একসঙ্গে অনুধাবনের চেষ্টা করতে হয়। বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে আমরা ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট, এই দলটির প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব এবং তাঁর চিন্তা ও কর্ম প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করছি। তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থ দুটি থেকে, মিলসের ধারণা অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধুর ‘মনের গুণ’ বা ‘কোয়ালিটি অব মাইন্ড’ সম্পর্কে ধারণা নেয়া যেতে পারে।

পাকিস্তান সৃষ্টির আগেই তৎকালীন বেঙ্গল মুসলিম লীগের মধ্যে দুটি উপদল ছিল। এর একটির নেতৃত্বে ছিলেন খাজা নাজিমউদ্দিন অপরটির নেতৃত্বে ছিলেন এইচ এস সোহরাওয়ার্দী। এই দুটি উপদলের মধ্যে কিছু মৌলিক বিষয়ে ভিন্নমত ছিল। পরবর্তীকালে এই দুটি গোষ্ঠীর একটি দক্ষিণপন্থী অপরটি প্রগতিশীল গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। বলাবাহুল্য, সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন অংশটি প্রগতিশীল এবং খাজা নাজিমউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীটি দক্ষিণপন্থী হিসেবে গণ্য হতো। ঠিক দেশভাগের আগ মুহ‚র্তে বেঙ্গল মুসলিম লীগের মধ্যে সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে প্রগতিশীলদের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে দক্ষিণপন্থী অংশটি বরাবরের মতো মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে আসছিল। এ সময় জিন্নাহ ছিলেন নিখিল ভারত মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট। বেঙ্গল মুসলিম লীগের মধ্যে খাজা নাজিমউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন দক্ষিণপন্থী অংশের প্রতি জিন্নাহর পৃষ্ঠপোষকতা ও সমর্থন প্রকাশ পায় ১৯৪৭ সালের ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। এই নির্বাচনে জিন্নাহর সমর্থনপুষ্ট খাজা নাজিমউদ্দিন মুসলিম লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই নির্বাচনে মুসলিম লীগ দক্ষিণপন্থীদের নেতা খাজা নাজিমউদ্দিনের কাছে প্রগতিশীল গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে খ্যাত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ৩৬ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বলছেন, ‘এদিকে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান মুসলিম লীগকে তাদের হাতের মুঠায় নেবার জন্য এক নতুন পন্থা অবলম্বন করলেন।’(পৃ.৯০)

মুসলিম লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির এই নির্বাচনে জয়লাভের ফলে খাজা নাজিমউদ্দিন শুধু পূর্ববাংলার প্রথম চিফ মিনিস্টার হননি, তিনি দলীয় সংগঠনের ওপর ফলপ্রসূ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছিলেন। নেতৃত্বের প্রতিদ্ব›িদ্বতায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পরাজিত হওয়া বেশকিছু অনিবার্য পরিণতির জন্ম দিয়েছিল। মুসলিম লীগের প্রগতিশীল গোষ্ঠীর সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে গভীর হতাশার উপলব্ধি এবং মনোবলহীনতার অনুভূতি সাধারণভাবে পরিস্ফুটিত হচ্ছিল। এম ভাস্করণ নায়ার (১৯৯০) তাঁর ‘পলিটিক্স ইন বাংলাদেশ : অ্যা স্টাডি অব আওয়ামী লীগ (১৯৪৯-১৯৫৮)’ গ্রন্থে বলছেন, ‘ঐধফ ঝঁযৎধধিৎফু ড়িহ ঃযব বষবপঃরড়হ, ঢ়বৎযধঢ়ং ঃযব ঢ়ড়ষরঃরপং ড়ভ ঊধংঃ ইবহমধষ ড়িঁষফ যধাব ঃধশবহ ফরভভবৎবহঃ ঃঁৎহ ধহফ ঊধংঃ চধশরংঃধহ অধিসর গঁংষরস খবধমঁব সরমযঃ হড়ঃ যধাব নববহ ভড়ৎসবফ.’(ঢ়.৫০) অর্থাৎ সোহরাওয়ার্দী যদি (মুসলিম লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির) নির্বাচনে পরাজিত না হতেন তাহলে পূর্ব বাংলার রাজনীতি ভিন্ন দিকে মোড় নিত এবং পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হতো না।

এরপর পাকিস্তান মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্টের পদ থেকে জিন্নাহ পদত্যাগ করেন এবং চৌধুরী খালিকুজ্জামানকে দলের প্রধান সংগঠক হিসেবে নির্বাচিত করেন। প্রধান সংগঠক হিসেবে চৌধুরী খালিকুজ্জামান তখন পূর্ব পাকিস্তানে তার প্রতিনিধি হিসেবে মওলানা আকরাম খাঁকে মনোনীত করেন। মওলানা আকরাম খাঁর মনোনয়ন পূর্ব বাংলার দলীয় সংগঠনের মধ্যে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। মুসলিম লীগ নেতাদের একটি অংশ, যারা প্রধানত দলের প্রগতিশীল ধারার অনুসারী ছিলেন, মওলানা আকরাম খাঁর মনোনয়নের বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপন করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বলছেন, ‘চৌধুরী খালিকুজ্জামান সাহেব পাকিস্তান মুসলিম লীগ ও পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ ভেঙ্গে দিয়ে একটা এডহক কমিটি গঠন করলেন। পাকিস্তানের অন্য কোনো প্রদেশের মুসলিম লীগ কমিটি এ সময় তিনি ভাঙ্গেন নাই। একমাত্র বাংলাদেশে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের সমর্থক বেশি। তাই নতুন করে লীগ গঠন করতে হবে নাজিমুদ্দীন সাহেবের সমর্থকদের নিয়ে। মওলানা আকরাম খাঁ সাহেবকে চিফ অর্গানাইজার করলেন। আমরা একশত বারজন কাউন্সিল সদস্যের দস্তখত নিয়ে একটা রিক্যুইজিশন সভা আহ্বান করার দাবি করলাম।… আমি ঘুরে ঘুরে দস্তখত জোগাড় করলাম। দু’একটা জেলায়ও আমাকে যেতে হয়েছিল।’ রিক্যুইজিশন সভার নোটিশটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে মওলানা আকরাম খাঁ সাহেবের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। পরের দিন যথারীতি এই চিঠিটি আজাদ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। এই সঙ্গে ছিল মওলানা আকরাম খাঁর একটি বিবৃতি। এতে তিনি বলেছিলেন যে, ‘পুরানা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। এখন তিনি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের এডহক কমিটির সভাপতি। অর্থাৎ আমরা কেউই আর মুসলিম লীগ কাউন্সিলের সভ্য নই। এভাবে মুসলিম লীগ থেকেও আমরা বিতাড়িত হলাম। অনেকেই চুপ করে গেল, আমরা রাজি হলাম না। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে দেখব।’ (পৃ.৯১)

সংগঠনের নির্দেশক হিসেবে না থেকে সরকারের নেতা হিসেবে জিন্নাহর থাকার কারণে দলে যথারীতি একটি শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগের নতুন দলীয় নেতৃত্ব, যা ছিল মূলত প্রধান সংগঠক চৌধুরী খালিকুজ্জামানের নিয়ন্ত্রণে মওলানা আকরাম খাঁ কর্তৃক পরিচালিত, সংগঠনের জন্য কোনো ইতিবাচক দিকনির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেবের ওপর পাকিস্তান মুসলিম লীগ সরকারের আরো অনেক অপমান ও অত্যাচারের কথা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে জানা যায়। ১৯৪৮ সালেরই আর একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কায়েম রাখার লক্ষ্যে প্রথম টাঙ্গাইলে একটি সভা করার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। টাঙ্গাইলে যাওয়ার জন্য সোহরাওয়ার্দী সাহেব বাদামতলী ঘাট থেকে জাহাজে উঠেছিলেন সঙ্গে ছিলেন মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু। দুই ঘণ্টা জাহাজে বসে থাকার পরেও যখন জাহাজ ছাড়ছিল না তখন জানা গেল, ‘সরকার হুকুম দিয়েছে জাহাজ না ছাড়তে। রাত আটটায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও ডিআইজি পুলিশ শহীদ সাহেবের হাতে একটা কাগজ দিলেন, তাতে লেখা, তিনি ঢাকা ত্যাগ করতে পারবেন না। তবে যদি কলকাতা ফিরে যান, সরকারের আপত্তি নাই। শহীদ সাহেব জাহাজ ছেড়ে নেমে আসলেন, আমিও তাঁর মালপত্র নিয়ে সাথে সাথে এলাম। কোথায় থাকবেন? আর কেইবা জায়গা দেবেন? কোনো হোটেলও নাই। …পাকিস্তান সত্যিকারের যিনি সৃষ্টি করেছিলেন, সেই লোকের থাকার জায়গা হলো না।’ (পৃ. ১০৮) পরে অবশ্য বেগম নূরজাহানের বাড়িতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেবের থাকার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছিল এবং সেখানে তিনি দুইদিন ছিলেন। দুইদিন পরে কলকাতার উদ্দেশ্যে নারায়ণগঞ্জে সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে জাহাজে তুলে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু নিজেও তাঁর সঙ্গে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু সোহরাওয়ার্দী সাহেব বলেছিলেন, ‘দরকার নাই। আর লোকজনও আছে আমার অসুবিধা হবে না।… তোমার উপরও অত্যাচার আসছে। এরা পাগল হয়ে গেছে। শাসন যদি এইভাবে চলে বলা যায় না, কি হবে!’ (পৃ.১০৮-১০৯)

এরপর ১৯৪৯ সালের ২৬ এপ্রিল টাঙ্গাইল (নাগরপুর, মীর্জাপুর ও বাঁশাইল) উপনির্বাচনে শামসুল হক সাহেবের কাছে মুসলিম লীগ প্রার্থী খুররম খান পন্নী পরাজিত হন। এটি ছিল পাকিস্তানে মুসলিম লীগের প্রথম পরাজয়। এরপরে ওই বছরই অর্থাৎ ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ‘…কোথায়ও হল বা জায়গা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত হুমায়ুন সাহেবের রোজ গার্ডেন বাড়িতে (পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের) সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছিল’। এই সম্মেলনের সময়ও বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বলছেন, “সকলেই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন; তার নাম দেওয়া হলো, ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, জনাব শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং আমাকে করা হলো জয়েন্ট সেক্রেটারি। খবরের কাগজে দেখলাম, আমার নামের পাশে লেখা ‘নিরাপত্তা বন্দি’।” (পৃ.১২১) কারাগারে বসেই বঙ্গবন্ধু তখন বলছেন, ‘সাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠানের দরকার নেই। একটা অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক সংগঠন হবে, যার একটি সুষ্ঠু ম্যানিফেস্টো থাকবে। ভাবলাম, সময় এখনও আসে নাই, তাই যারা বাইরে আছেন তারা চিন্তাভাবনা করেই করেছেন।’ (পৃ.১২১) বঙ্গবন্ধুর এই চিন্তা অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ ১৯৫৫ সালের ২১-২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশেষ অধিবেশনে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ নামে আত্মপ্রকাশ করে।

প্রফেসর ড. অরুণ কুমার গোস্বামী : চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ও পরিচালক, সাউথ এশিয়ান স্টাডি সার্কেল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

SUMMARY

1704-1.png