বাংলাদেশ ছাত্রলীগ : গৌরবের ৭০ বছর


আজ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম, দেশের অন্যতম প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী ও অধিকার আদায়ের রক্ষায় নিবেদিত সংগঠন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘শিক্ষা শান্তি প্রগতি’ মানবীয় ¯েøাগান দিয়ে গঠন করেন ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি। সংগঠনটি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠনের এক বছর আগেই গঠন করেন বঙ্গবন্ধু। প্রজ্ঞাবান এই নেতা জানতেন, অক্ষয় ও মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হলে ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আর ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজই পারে মানবীয় দেশ গড়ে তুলতে। আর তাই বিশ্ববাসী দেখেছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা বাস্তবায়ন ও ১১ দফা দাবি প্রণয়ন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরাই ছিল অগ্রবর্তী সৈনিক। জীবন দিয়েছে মানব অধিকারের তরে। রক্ষা করেছে বাঙালি জাতির সম্মান ও অধিকার।

জাতির পিতার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সাম্য-সমতা, অসাম্প্রদায়িক স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের জন্য অতীতে এ ছাত্র সংগঠন অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। একাত্তরে বঙ্গবন্ধু যখন মহান মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন তখন জীবন বিপন্ন হতে পারে জেনেও ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ¯েøাগান দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই সর্বাগ্রে রাজপথে বেরিয়ে আসেন। বাংলাদেশকে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে এ ছাত্র সংগঠনটির ১৭ হাজার নেতাকর্মী বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন। সুতরাং বুকের তাজা রক্ত দিয়ে কেনা যে বাংলাদেশের মানচিত্র তার বড় একটি অংশের দাবিদার এই ছাত্র সংগঠনটি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু বিপথগামী সেনা সদস্য জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে নেমে সর্বপ্রথম প্রতিবাদী মিছিল করেছে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসমত কাদির গামাসহ তৎকালীন নেতারা। পঁচাত্তর-পরবর্তী মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হওয়া বাংলাদেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আত্মদানের এই মিছিল কেবল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। কিন্তু থেমে থাকেনি প্রতিরোধ। ১৯৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশে হত্যা ও ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি, গণতন্ত্রের মানসকন্যা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রতিটি সংগ্রামেই তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এক এগারোর পরবর্তী চাপিয়ে দেয়া অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে থাকেন, বাংলাদেশের ইতিহাস মানেই ছাত্রলীগের ইতিহাস। যা বঙ্গবন্ধুও বলে গেছেন বারংবার। গণতান্ত্রিক ইতিহাসে অবৈধ উপায়ে ক্ষমতা দখলদারী স্বৈরশাসকদের হঠাতেও এই ছাত্র সংগঠন জলপাই রঙের পোশাকের সামরিক জান্তাদের শক্ত হাতে জবাব দিয়েছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গৌরব উজ্জ্বল ঐতিহ্য রয়েছে এ ছাত্র সংগঠনের। থাকবেই বা না কেন? শান্তিকামী বিশ্বের অগ্রবর্তী সৈনিক বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এ ছাত্র সংগঠন। কারণ এ দেশ জানে, মহৎ, সৎ এবং পরমতসহিষ্ণু হৃদয়ের উদ্দেশ্যই থাকে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানবতার কল্যাণ। এ বৃহৎ কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করতেও দরকার হয় অগণিত নিবেদিত কর্মীর। শুধু কর্মী হলেই চলে না এদের সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে হয়, দেখাতে হয় সঠিক পথ। ছাত্রলীগের সৃষ্টিকাল থেকে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে তাদের এ মহান দায়িত্ব সম্পাদন করেছেন। হয়েছেন বাংলার ইতিহাসের নায়ক।

ছাত্রলীগ মানবতার কল্যাণে শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে দেশের ৫০ লক্ষাধিক ছাত্রের নিয়ম শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে কাজ করে যাচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই ছাত্র সংগঠন অসহায় দুস্থদের পাশে বারবার দাঁড়িয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শুধু আওয়ামী চেতনা থেকে মানবতার চেতনার পথে পথে শান্তি আর মুক্তির বার্তা দিয়ে যাচ্ছে নিরন্তর। মানবতার ডাকে এই ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা নিজের রক্ত দিতে সর্বদা প্রস্তুত থাকে; সেই দৃশ্য একাধিকবার দেখেছে শান্তিকামী বিশ্ব। ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসের সময় হাজার হাজার ব্যাগ রক্ত দিয়েছে এ মানবীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শুধু রক্ত দিয়েই মানবসৃষ্ট দুর্যোগের সময় ক্ষান্ত থাকেনি এ ছাত্র সংগঠন। তারা অসহায় দুস্থ মানুষের পেটে অন্ন এবং বস্ত্রহীনে বস্ত্র তুলে দেয়ার একাধিকবার বিরল নজির স্থাপন করেছে।

২০১৫ সালের এপ্রিলে নেপাল যখন ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয় ছাত্রলীগের তখনকার মানবীয় দায়িত্ব পালনের কথা ভুলে যাওয়ার নয়। নেপালবাসীর চরম দুর্দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। তখন প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে নেপালবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ মৃত্যুপুরী নেপালবাসীর জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে ঘুরে তহবিল সংগ্রহ করেছে।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংকটে শেখ হাসিনার নির্দেশনা ও মানবতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ছাত্রলীগ জীবন সংকটাপন্ন রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কক্সবাজার জেলার উখিয়ায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গঠিত মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে তিন মাসের বেশি সময় রোহিঙ্গাদের মাঝে টানা চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ সামগ্রী সরবরাহ করে যাচ্ছে। যা একটি ছাত্র সংগঠনের জন্য বড়ই গর্বের বিষয়। এভাবেই বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নিজ মহিমায় ভাস্বর হয়ে থাকবে, দীপ্তি ছড়াবে যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল
সাধারণ সম্পাদক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

SUMMARY

1686-1.png