স্বাধিকার অর্জনের সংগ্রামমুখর গৌরবদীপ্ত মার্চ মাস


মার্চ স্বাধীনতাকামী বাঙালির জীবনে স্বাধিকার অর্জনের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামমুখর গৌরবদীপ্ত মাস। মার্চ মুক্তিকামী জনগণের প্রাণের স্পন্দনে চেতনার বহ্নিশিখায় এক নবজাগরণ। মার্চ মাসে জন্মেছিলেন বাংলার অবিসংবাদিত সিংহপুরুষ শেখ মুজিবুর রহমান। ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে গণতন্ত্র ও বাঙালির আজন্ম লালিত অধিকার আদায়ের দাবিতে ৬ দফা, ১৯৭০-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় ও শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি, সামরিক জান্তার নিষ্পেষণ, হত্যা, নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতির ম্যান্ডেট নিয়ে একাত্তরের অগ্নিঝরা ৭ মার্চে রেসকোর্স ময়দানে বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

৭ মার্চের ভাষণের পরপরই শুরু হয়ে যায় স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের খণ্ড খণ্ড যুদ্ধ। যার যা আছে তাই নিয়ে বাংলার সর্বত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলল। আর পশ্চিমা নরপিশাচের দল শুরু করল হত্যাযজ্ঞ। অবশেষে ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পৃথিবীর সব মানবতাকে পদদলিত করে নিরীহ নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালির ওপর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী শুরু করে অপারেশন সার্চলাইট নামের পৃথিবীর সবচেয়ে নারকীয় বর্বরোচিত গণহত্যাযজ্ঞ। এটা ছিল স্মরণকালের পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত পরিকল্পিত গণহত্যা, যার মাধ্যমে তারা ১৯৭১-এর মার্চ ও এর পূর্ববর্তী সময়ে সংঘটিত বাঙালির আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছিল। সালের মার্চ মধ্যরাতে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার হওয়ার একটু আগে মার্চ রাত টার পর (অর্থাৎ মার্চের প্রথম প্রহরে) তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন যা ওয়্যারলেস বার্তার মাধ্যমে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় নেতাদের কাছে পৌঁছে যায়। ঘোষণাটি এরকম : ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান।

বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।’ এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাঙালি শুরু করে মরণপণ স্বাধীনতার সংগ্রাম। জেগে ওঠে বাঙালি জাতি। যুদ্ধ নয় মাস স্থায়ী হয়। নয় মাসের সেই রক্তঝরা সংগ্রামের আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি জাতির সেসব শ্রেষ্ঠ সন্তানকে যাদের আত্মত্যাগে আজকের বাংলাদেশ। সুদীর্ঘ নয় মাসের কঠোর সংগ্রামে বাংলার আপামর জনগণ ছিনিয়ে আনে ‘স্বাধীনতা’, আত্মত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অমূল্য সম্পদ- প্রিয় স্বাধীনতা, স্বাধীন পতাকা, স্বাধীন মানচিত্র। জাতি চিরকাল স্মরণ করবে অকুতোভয় বীরযোদ্ধাদের।

৩০ লাখ শহীদের আত্মদান, অপরিসীম ত্যাগ আর বীরত্বগাথা সমুন্নত রাখতে দেশপ্রেমের চেতনায় আত্মমর্যাদাশীল সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে আমাদের ইতিহাসের মহাসড়কের পথ ধরে নিজস্ব পথ তৈরি করে এগিয়ে যেতে হবে তবেই শাণিত হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং সোনালি সূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত হবে আমাদের এ প্রিয় স্বদেশ।

:: লেখক, ঢাকা।

SUMMARY

1685-1.png