সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্ব ও আগামীর বাংলাদেশ


১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যে শিশুটি জন্ম নিয়েছিল বিখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়া ও শেখ হাসিনার সংসারে, বাংলাদেশের সমবয়সী সে তরুণই আজ লাখো কোটি তরুণের স্বপ্নের ক্যারাভ্যান, তারুণ্যের জয়রথ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে যুগোপযুগী কিন্তু বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো সামান্য উচ্চাভিলাষী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তার স্বপ্নদ্রষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পুত্র। ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের একক নেতা বা ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক প্রশাসন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা, ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার এই বিশ্বনেতা মেধা এবং মননে বিশ্ববাসীর কাছে এক অন্যতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এর সুবাদে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম সজীব ওয়াজেদ জয়কে ২৫০ বিশ্ব ইয়ং নেতার একজন হিসেবে নির্বাচিত করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে তার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে যার মধ্যে আছে মোবাইল ফোন গ্রাহক, ইন্টারনেট গ্রাহক, অনলাইনে বিভিন্ন সরকারি সেবা প্রাপ্তি, মোবাইল ব্যাংকিং এবং প্রযুক্তি খাত থেকে রপ্তানি আয়। সজীব ওয়াজেদ জয়ের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে ইতোমধ্যেই সিলিকন ভ্যালির বিনিয়োগ এসেছে বাংলাদেশে। এমনকি সর্বশেষ আমরা দেখেছি মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট যার পুরোটাই এসেছে এই মানুষটির হাত ধরে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র হওয়ার সুবাদে পরিবার থেকেই পেয়েছেন রাজনৈতিক শিক্ষা। এর ফলে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো নি¤œ আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পেরেছেন তিনি। বাংলাদেশ এখন ২০২১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে শামিল হতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আর এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সজীব ওয়াজেদ জয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিপ্লব। তিনি পাঁচ ধাপে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

প্রথমত, ই-গভার্ন্যান্স পদ্ধতি চালু করা। এ প্রক্রিয়ায় সরকারের সব কাজকর্ম ডিজিটালাইজড করা হবে। এতে সরকারের কাজকর্ম স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হবে। সজীব ওয়াজেদ জয় গত বছরের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ২৫ হাজার ওয়েবসাইট নিয়ে তৈরি ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ উদ্বোধন করেন। জনগণের তথ্য ও সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং উদ্ভাবনী ও জনমুখী প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঐকান্তিক আগ্রহে চালু হয় ওই জাতীয় তথ্য বাতায়ন। এই তথ্য বাতায়ন থেকে দেশের জনগণ কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন, পর্যটন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক তথ্য পাচ্ছেন। তা ছাড়া দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন আনতে বাংলাদেশ টেলি কমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড বিটিসিএলের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৬টি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন জয়। আউট সোর্সিংয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক কাজ করা সম্ভব হবে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) নামের প্রকল্পটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে।

দ্বিতীয় পর্যায় হচ্ছে, স্কুল-কলেজে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা। এ প্রক্রিয়ায় পাঠ্যসূচিতে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে আইটি শিক্ষা প্রাইমারি লেভেল থেকে শুরু করার উদ্যোগ ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে। প্রাইমারি লেভেলে লেখা শেখানো বা হোমওয়ার্কগুলো ট্যাবের (ট্যাবলেট পিসি) মাধ্যমে করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কারণ শিশুরা এগুলো খুব দ্রুত শেখে। স্বল্পমূল্যে ট্যাবলেট ও কম্পিউটার দেশে তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে যেন আমাদের সাধ্যের মধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষায় আমরা এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি।

তৃতীয় পর্যায় হচ্ছে, তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিল্পকারখানা গড়ে তোলা। ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে ডাটা সেন্টার ইন্ডাস্ট্রি বর্তমানে এখানে ব্যাপক হারে বিকাশমান। তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিল্পকারখানা গড়ার ক্ষেত্রে যে ভিশন হাতে নিয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয় তা নিঃসন্দেহে এক অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপনে ভূমিকা রাখবে।

চতুর্থত, আইটি পার্ক গড়ে তোলা। দেশের প্রতিটি জেলায় আইটি পার্ক গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিকল্পনা মোতাবেক ইতোমধ্যে দেশের ১২টি জেলায় আইটি পার্ক নির্মাণাধীন। যশোরে আইটি পার্ক স্থাপন করা হয়েছে, গাজীপুরের কাজ চলমান। প্রায় তিন লাখ লোকের কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখবে এই আইটি পার্ক। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ আইটি সেক্টরের উন্নয়ন এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি বিভাগ ও জেলায় হাইটেক পার্ক স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছে।

পঞ্চম পর্যায়ে, ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা। সজীব ওয়াজেদ জয় এ সব প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে তত্ত্বাবধান করছেন। আজ এসব শুধু কথার কথা নয়। তথ্যপ্রযুক্তিবিদ জয়ের তত্ত্বাবধানে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে সরকারের নানা কাজেও। তার পরামর্শেই ইন্টারনেট সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদের অপটিক্যাল ফাইবার ফোন নেটওয়ার্ক স্থাপন করার কাজ শুরু হয়েছে। পোস্ট-ই-সেন্টার রুরাল কমিউনিটি ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর গ্রামীণ ডাকঘর নির্মাণ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হতে চলেছে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক টেরেস্ট্রিরিয়াল ক্যাবলের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। ফলে গ্রাহকরা নিরবচ্ছিন্নভাবে ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করতে পারছেন। এর মধ্যেই ৫৬টি জেলা ফাইবার অপটিক সংযোগের আওতায় এসেছে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রেখে ব্যান্ডউইডথের দামও কমানো হচ্ছে। প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থেকে টেকসই আর্থসামাজিক উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। তাই বর্তমান সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। গত সাড়ে সাত বছরে ব্যাংকিংসহ সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, সেবা প্রদান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি- প্রতিটি ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ নিশ্চিত করা হয়েছে। সব বয়সী জনগণ এই প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে। প্রতিটি ইউনিয়নে ইন্টারনেট সার্ভিস ও তথ্য সেবাকেন্দ্র চালু আছে। এগুলো থেকে প্রতি মাসে ৪০ লাখ গ্রামীণ মানুষ ই-সেবা নিচ্ছেন। ইন্টারনেটের গতি বাড়ানো ও ব্যয় কমানো হয়েছে। ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা সাত গুণ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় চার কোটিতে উন্নীত হয়েছে। ১৫ কোটি মোবাইল সিম বাংলাদেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। থ্রিজি মোবাইল ফোন চালু হয়েছে। গ্রাহকরা ভিডিও কল করাসহ উন্নত ডিজিটাল সেবা পাচ্ছে। মোবাইল ফোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আখচাষিদের আখ সরবরাহ ও বিল প্রাপ্তি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিল পরিশোধ, রেলওয়ে টিকেট ক্রয়, বিদেশ থেকে রেমিটেন্স আনয়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিবন্ধন, মোবাইল মানি অর্ডার, বিভিন্ন সেবার ডেটলাইন অবহিতকরণ ইত্যাদি সেবা চালু করা হয়েছে। সরকারি দপ্তরের ই-মেইলের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান, অনলাইন আয়কর রিটার্ন দাখিল, অনলাইন ট্যাক্স ক্যালকুলেটর ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

তরুণ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। দেশ গঠনে তরুণদের মতামত, পরামর্শ শুনতে তিনিই প্রথম তরুণদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসেন। তাদের কথা শুনে সেই অনুযায়ী দেশ গঠনের পথে পা বাড়ান। আবার তরুণরাও প্রথমবারের মতো দেশের শীর্ষ কোনো ব্যক্তির সঙ্গে এভাবে আলোচনার সুযোগ পান। সজীব ওয়াজেদ জয় তরুণদের বোঝাতে শুরু করেন যে রাজনীতি কোনো একক ব্যক্তি কিংবা দলের জন্য নয়, রাজনীতি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্যই। তরুণদের সঙ্গে তার প্রথম কোনো আলোচনা সভা হয় যখন তিনি ‘সুচিন্তা’ নামের সংগঠনের মাধ্যমে সরাসরি তরুণদের কাছে উপস্থাপিত হন। পলিসি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) চেয়ারম্যান হিসেবে তরুণদের দেশ পরিচালনায় সম্পৃক্ত করতে তিনি বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেন যার মধ্যে আছে ‘লেটস টক’ এবং ‘পলিসি ক্যাফে’। এ ছাড়া তিনি তরুণ উদ্যোক্তা ও নেতৃত্বকে একসঙ্গে যুক্ত করার পাশাপাশি প্রশিক্ষিত করতে তরুণদের বৃহত্তম প্লাটফর্ম ‘ইয়াং বাংলার’ সূচনা করেন।

তারুণ্যের প্রিয় নেতৃত্ব সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিনে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বাঙালি তরুণদের মতো আমারও স্বপ্ন ও প্রত্যাশা- তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাশীল সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। সজীব ওয়াজেদ জয়ের সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও দিকনির্দেশনাকে আগামী নির্বাচনেই কাজে লাগানো হোক। আমরা বিশ্বাস করি, একজন মাহাথির মোহাম্মদ যেমন বদলে দিয়েছেন পুরো মালয়েশিয়াকে ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা ‘ডটার অব পিস’খ্যাত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার পুত্রও একদিন তাঁর শিক্ষা, মেধা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে বদলে দেবেন বাংলাদেশকে।

নবেন্দু সাহা জয় : তরুণ রাজনীতিক এবং সমাজকর্মী।

SUMMARY

1669-1.jpg