আওয়ামী লীগ : পথচলার ৬৯ বছর


বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকেই মোটামুটি দেশের পুরনো রাজনৈতিক দল বলে বিবেচনা করা হয়। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেন থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল যে রাজনৈতিক দলের, ২০১৮ সালের ২৩ জুন সে দলটি ৬৯ বছর অতিক্রম করে ৭০ বছরে পা দিল। দীর্ঘ সময়। দীর্ঘ পথপরিক্রমা। জন্মলগ্নে নাম ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নামেই পরিচিতি অর্জন। মুসলিম লীগ এবং কমিউনিস্ট পার্টি অবশ্য আওয়ামী লীগের আগেই জন্ম নিয়েছিল। কিন্তু তখন দেশ ভাগ হয়নি। তাই মুসলিম লীগ ও কমিউনিস্ট পার্টিকে এই ভূখণ্ডে (বর্তমান বাংলাদেশে) জন্ম নেয়া দল বলে মনে করা হয় না। আওয়ামী লীগকে যেমন ‘দেশীয়’ দল মনে করা হয়, ওই দল দুটিকে তেমন নয়। তাই এখানে গড়ে বেড়ে উঠেও ওই দুটি দল কেমন বিদেশি বা বাইরের হিসেবেই থেকে গেছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে একাত্ম না হয়ে বিচ্ছিন্ন রয়ে গেছে। তাই বয়সে সিনিয়র হলেও রাজনীতিতে এই দল দুটি আওয়ামী লীগকে পেছনে ফেলতে পারেনি। বরং তারা নিজেরা কেবলই পিছু হটেছে। জায়গা ছেড়ে দিয়েছে। এর মধ্যে মুসলিম লীগ বয়সের ভারে এবং ভুল রাজনৈতিক পথ অনুসরণের কারণে এখন একেবারেই চলৎশক্তিহীন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবিদার মুসলিম লীগ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ভূমিকা নিয়ে এক ঐতিহাসিক ভুল করে তাদের দলীয় অস্তিত্বের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দিয়েছে। মুসলিম লীগ নামে সাইনবোর্ড সর্বস্ব দল এখনো আছে, কিন্তু মানুষ তার কোনো খোঁজখবর রাখে না। মানুষের মধ্যে তার কোনো প্রভাব নেই। ইতিহাসের উপাদান না হয়ে আবর্জনায় পরিণত হয়েছে মুসলিম লীগ।

কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। এটা ঠিক, কমিউনিস্ট পার্টির জন্ম হয়েছে বিদেশি প্রভাবে। ১৯১৭ সালে মহামতি লেনিনের নেতৃত্বে রুশ বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর মূলত তার অভিঘাতেই ভারত তথা বাংলায় কমিউনিস্ট মতবাদ এবং কমিউনিস্ট পার্টি শিকড় গাড়ে। ধনী-গরিবের বৈষম্যহীন একটি সমতাভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই কমিউনিস্টদের লক্ষ্য। কমিউনিস্টরা দেশপ্রেমিক, আত্মত্যাগী, জেল-জুলুম সহ্য করাসহ সব রকম প্রতিক‚লতা মোকাবেলায় পারদর্শী হলেও কমিউনিস্ট পার্টি কখনো মূলধারার রাজনীতিতে জনপ্রিয় দল হয়ে উঠতে পারেনি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর কমিউনিস্ট পার্টি প্রগতিশীলতা এবং গণতন্ত্রের লক্ষ্যে রাজনীতি করে মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে এক ধরনের সংযোগ গড়ে তুলে জনবিচ্ছিন্নতা কাটানোর চেষ্টা করেছিল।

গত শতকের পঞ্চাশ, ষাট ও সত্তরের দশকে বিশ্বজুড়ে সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির ধারা প্রবল হয়ে ওঠায় বাংলাদেশেও কমিউনিস্ট পার্টির শক্তি এবং প্রভাব বাড়ছিল। রুশপন্থি বলে পরিচিত কমিউনিস্ট পার্ট বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মৈত্রীনীতি নিয়ে বেশ কার্যকর রাজনৈতিক শক্তিরূপে আবির্ভূত হচ্ছিল। কমিউনিস্ট পার্টির নাম বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি উচ্চারিত হচ্ছিল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা সমাজতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিও হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে। তারপর রাজনৈতিক মত ও পথ নিয়ে বিতর্ক এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্বের নীতি নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিবির অবস্থা এখন ‘পথভোলা এক পথিকের’ মতো! সিপিবি আর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদের প্রাসঙ্গিক বলে উপস্থাপন করতে পারবে- এটা আর কারো বিবেচনা বা বিশ্বাসের মধ্য আছে বলে মনে হয় না।

অন্যদিকে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগ যেনন জনগণের দল হয়ে উঠেছে, তেমনি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দলের নীতি-কৌশলে পরিবর্তন এনে দলের শক্তি, গতি, জনসমর্থন সবই ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বয়স বেড়েছে কিন্তু তারুণ্যের গতিময়তায় ভাটা পড়েনি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগকে নানা রকম রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সংকট মোকাবেলা করতে হয়েছে। চলার পথ সব সময় মসৃণ ছিল না। বাধা-বিপত্তি কাটিয়েই পথ করে নিতে হয়েছে। দলের প্রতিষ্ঠাতা সিনিয়র নেতাদের মধ্যে চিন্তা ও আদর্শিক অবস্থানে ভিন্নতা ছিল। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি মূল্যায়নেও ছিল মতপার্থক্য। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল ক্ষমতার মোহ, সুবিধাবাদ ইত্যাদি।

প্রতিষ্ঠার কয়েক বছরের মধ্যেই দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে ভিন্ন মতাদর্শের একটি দল গড়ে তোলেন। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বা ন্যাপ গঠন আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ বলেও কারো কারো কাছে মনে হয়েছিল। মওলানা ভাসানীর মতো জাঁদরেল ও জনপ্রিয় নেতা দলত্যাগ করার পর অনেকেই ভেবেছিলেন আওয়ামী লীগ শেষ, এই দল আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। তারপর দলের আরেক কাণ্ডারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু দলের জন্য এক বড় আঘাত। এর সঙ্গে ছিল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চরম নির্যাতনমূলক বৈরী মনোভাব। যারাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির পতাকা নিয়ে সামনে আসতে চেয়েছেন তাদের ভাগ্যেই অবধারিতভাবে বরাদ্দ ছিল জেল-জুলুম-নির্যাতন। সব প্রতিক‚লতা মোকাবেলা করে ততদিনে বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে উদিত হয়েছে নতুন তারা, যার জন্যই বুঝি অপেক্ষায় ছিল মানুষ, রাজনীতি এবং দেশ। তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে উঠে আসা শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিবই যে বাংলাদেশের রাজনীতির প্রাণপুরুষ হয়ে উঠবেন, তিনিই যে হবেন ইতিহাসের মহানায়ক, তিনি যে এ দেশের রাজনীতিতে তৈরি করবেন নতুন ইতিহাস সেটা তার সমকালের রাজনীতির অনেকে বুঝতে পারেননি, আবার কেউ কেউ পেরেছিলেন। যারা পেরেছিলেন তারা শেখ মুজিবের সঙ্গী হয়েছেন, তার সহযাত্রী হয়েছেন। এই বিশ্বস্ত অনুগামীরা যখন শেখ মুজিবের হাতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তুলে দেন তখনই কার্যত শুরু হয় আওয়ামী লীগের নতুন প্রাণস্পন্দন। শেখ মুজিবের হাত ধরেই আওয়ামী লীগ আসলে আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে বাঙালির আপন দল, যে দলের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ।

শেখ মুজিব, দেশের মানুষ ভালোবেসে যাকে বঙ্গবন্ধু বলে সম্বোধিত করেছে, তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ দক্ষ সংগঠক এবং একই সঙ্গ একজন সাহসী মানুষ। তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা তুলনাহীন। তাকে রাজনীতির কবি হিসেবে দেখেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার রাজনৈতিক চিন্তা ও পরিকল্পনা আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই দেশের মানুষের কাছে নিয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই তিনি দেশের মানুষকে ধাপে ধাপে প্রস্তুত করেছেন। প্রথমে মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াই, তারপর পর্যায়ক্রমে গণতন্ত্র, স্বায়ত্তশাসন, ছয় দফা, সামরিক শাসনের অবসান, অবাধ নির্বাচন, স্বাধিকার এবং স্বাধীনতা- এই যে ধারাবাহিক পথচলা, তার পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা তৈরি ও বাস্তবায়ন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিব এবং আওয়ামী লীগের নাম তাই একাকার হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ থেকে শেখ মুজিবকে যেমন আলাদা করা যাবে না, শেখ মুজিবকেও আওয়ামী লীগ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ যেমন আওয়ামী লীগের ইতিহাসে উজ্জ্বলতম ঘটনা, তেমনি ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনাও আওয়ামী লীগের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ট্র্যাজিক ঘটনা। এত বড় আঘাত, এত বড় ক্ষতি আওয়ামী লীগ সামলে উঠতে পারবে, আওয়ামী লীগ আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে- এটা তখন অনেকের কাছেই ছিল কষ্টকল্পনার বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশের নাভিমূলে রোপিত আছে আওয়ামী লীগের নাড়ি। তাই এই দল কোনো কিছুতেই মাথা নোয়ানোর নয়। পঁচাত্তর-পরবর্তী শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগকে ভাঙার, হীনবল করার ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত কম করেনি। ফল হয়েছে বিপরীত। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করায় এটা আবার প্রমাণ হয়েছে যে ইতিহাসের সম্মুখযাত্রা কেউ সাময়িক বাধাগ্রস্ত করতে সফল হলেও স্থায়ীভাবে সেটা পারে না। টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ এখন রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। শেখ হাসিনার সরকারের অনেক সাফল্য আছে। অনেক উন্নতি-অগ্রগতি যেমন দৃশ্যমান, বাংলাদেশ যেমন এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনি আবার দেশে কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাও ঘটছে, যা আওয়ামী লীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে যতটা প্রশংসিত হচ্ছেন, তার উদ্যম-উদ্যোগ, তার পরিশ্রম-নিষ্ঠা যেমন সবার নজর কাড়ছে, তার সরকার, মন্ত্রিপরিষদ সেভাবে মানুষের দৃষ্টি কাড়তে পারছে না।

ঘুষ-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি বাড়ছে। আয় বৈষম্য বাড়তে বাড়তে সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের একশ্রেণির নেতা-কর্মী-মন্ত্রী-এমপির ঘুষ-দুর্নীতি-ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নেতিবাচক কর্মকাণ্ড এতটাই বেড়েছে যে, অনেকের মনেই প্রশ্ন, এই কি সেই আওয়ামী লীগ? এই আওয়ামী লীগই কি বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া? এই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই কি এ দেশের মানুষ নানা ধরনের আন্দোলন-সংগ্রামে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছে?

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ৩৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত একজন ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন, যাতে আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থা দেখে তার ক্ষোভ ও হতাশার প্রকাশ ঘটেছে। খোন্দকার শরীফ নামের এই আওয়ামী লীগ কর্মী লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনাকে বাদ দিলে আসলে দেশে আওয়ামী লীগ বলে কিছু নেই। আছে সরকারি দলের ব্যাপক আগ্রাসন। তার নিচে সবার আগে আওয়ামী লীগই চাপা পড়েছে। বলা হচ্ছে ভালো নেতাকর্মীনির্ভর দল তৈরির কথা। কিন্তু বস্তুত আলী বাবা চল্লিশ চোরের মতো অসংখ্য ডাকাত দলে কবলিত বর্তমান আওয়ামী লীগ আওয়ামের ধারেকাছেও নেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বাগাড়ম্বর ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। ইতিহাস কিন্তু ক্ষমা করবে না’।

সন্দেহ নেই প্রতিক্রিয়াটি যথেষ্ট তীব্র এবং ঝাঁঝাল তবে অসত্য নয়। আওয়ামী লীগ এখন সরকারে হারিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগকে এখন আর আলাদা করে দেখা যায় না, চেনা যায় না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দলের সরকার ক্ষমতায় থাকে এবং দল হয় সরকারের নিয়ন্ত্রক। দল নীতিনির্ধারণ করে, সরকার সেটা বাস্তবায়ন করে। সরকার দল চালায় না, দল সরকার চালায়। কিন্তু বাংলাদেশে তার উল্টোটা ঘটতে দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী নামের দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামে পোড়খাওয়া অভিজ্ঞ একটি দল কীভাবে কিছু ‘দুর্বৃত্তের’ কবলে পড়ল- এ জিজ্ঞাসা এখন অনেকের। এই অবস্থা থেকে আওয়ামী লীগকে রক্ষা করতে হবে। আওয়ামী লীগের ইতিহাস যেহেতু কার্যত বাংলাদেশের ইতিহাস, তাই আওয়ামী লীগকে তার ঐতিহ্যের ধারায় ফিরিয়ে আনতেই হবে। মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে খারাপ অবস্থায় পড়লে, আওয়ামী লীগের চালিকাশক্তি খারাপ মানুষরা হলে দেশ ও দেশের মানুষ ভালো থাকতে পারে না।

বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে দলীয় কর্মীদের আত্মশুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। দল ক্ষমতায় থাকলে দলে আবর্জনা ঢুকে পড়ার সুযোগ তৈরি হয়। সুযোগ-সন্ধানী মোসাহেবদের দৌরাত্ম্য বাড়ে। ত্যাগী-নির্লোভ কর্মীরা হারিয়ে যায় বা দূরে চলে যায়। তাই বঙ্গবন্ধু তখন আত্মশুদ্ধির কথা বলেছিলেন। এখন আওয়ামী লীগ টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় আছে। টানা ক্ষমতায় থাকার মেয়াদ আরো বাড়াতে চায় দলটি। একটু সজাগ হলে, একটু সতর্ক হলে সেটা কোনো অসম্ভব কাজ নয়। দল ও সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ হাসিনা, যিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা এবং তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বগুণ এখন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। তার যোগ্য নেতৃত্বে সম্ভাবনাময় এক নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি এখন বিশ্ববাসী সম্ভ্রমের সঙ্গে লক্ষ করছে। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে তিনি যাতে কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়েন।

শেখ হাসিনা যেন একা না হয়ে পড়েন, সেজন্য তার রাজনৈতিক ক্ষমতার মূল শক্তি আওয়ামী লীগের মধ্যে এখন একটি পুনর্জাগরণ দরকার। দলের মধ্যে একটি পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো দরকার। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দুর্বলতার শক্তিতে বলীয়ান না হয়ে আওয়ামী লীগকে আত্মশক্তিতে বলবান হয়ে উঠতে হবে। আওয়ামী লীগকে হতে হবে বাঙালি জাতির স্বপ্নের সমান বড়। সংগ্রাম ও অর্জনের গৌরবময় ৬৯ বছর অতিক্রম করার এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের কাছে এটাই প্রত্যাশা যে, দলটিকে যেন অতীত সঞ্চয় ভেঙে খেতে না হয়। নতুন নতুন অর্জনে-সাফল্যে আওয়ামী লীগের ভাণ্ডার যেন উপচে ওঠে। সাধারণ মানুষের কাছে নিন্দিত নয়, নন্দিত আওয়ামী লীগই আমাদের কাম্য।

বিভুরঞ্জন সরকার : কলাম লেখক।

SUMMARY

1667-1.png