১৭ মিনিটের গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ


ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বাংলাদেশকে বিশে^র অন্যতম সবচেয়ে সফল দেশ বলে মন্তব্য করেছেন। বহু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আজ বাংলাদেশ বিশে^র উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জীবনমান উন্নয়ন, শিক্ষার প্রসার, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ দেশ আজ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় শামিল হয়েছে। যারা একদিন এ দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে উপহাস করেছিল তারাও দেশের অগ্রগতিকে স্বীকার করে নিয়েছে। যারা ভেবেছিল এ দেশের প্রাণপুরুষকে কাপুরুষের মতো হত্যা করে এ অগ্রযাত্রাকে রোধ করা যাবে তারাও আজ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কিন্তু তারা বুঝতেই পারেনি স্বপ্নকে অস্ত্র দিয়ে মেরে ফেলা সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধুর দেখা স্বপ্ন তিনি এ দেশের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন। তার স্বপ্ন এখন দেশের কোটি কোটি মানুষের চোখে। সেই স্বপ্ন সোনার বাংলার স্বপ্ন। গণমানুষের স্বপ্নকে কি স্তব্ধ করা যায়?

বিশে^র যত পরাধীন জাতি স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে তাদের সেই স্বাধীনতার সপক্ষে কোনো একজনের বিশেষ অবদান থাকে। যার নেতৃত্বে সে দেশের মানুষ মুক্তিকামী হয়ে শত্রুর মোকাবেলা করে। এ দেশের জন্ম, জন্ম পূর্ববতী ইতিহাস এবং সেই ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে মিশে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। যে মানুষটি না থাকলে এ দেশ পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে মোকাবেলা করার মতো সাহস পেত না, স্বপ্ন দেখত না একটি নতুন পতাকার। এ দেশের মুক্তিকামী মানুষকে তিনি দেখিয়েছিলেন স্বাধীনতার স্বপ্ন। বিশে^র বড় বড় নেতারা বঙ্গবন্ধুর সাহসিকতা, দৃঢ় নেতৃত্ব এবং দেশপ্রেমের প্রশংসা করেছেন। একটি নতুন পতাকা আর সার্ভভৌমত্বের স্বপ্ন। মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানিদের নির্মম অত্যাচার আর শোষণের হাত থেকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জন্য এ দেশের মানুষের জন্য পাকিস্তানের কারাগারে নির্মম নির্যাতন সহ্য করেছেন। পাকিস্তানের কারাগারে প্রতিটি মুহূর্তে তাকে মৃত্যুর প্রহর গুনতে হয়েছে। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে যখন লাখ লাখ বাঙালি রণাঙ্গনে যুদ্ধরত, ঘর ছেড়ে দামাল ছেলের দল যুদ্ধের ময়দানে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারের অন্ধকারে বন্দি হয়ে নির্যাতন সহ্য করছেন। তার চোখে তখন স্বাধীন বাংলাদশের স্বপ্ন। তার বুকে তখন এ দেশের মানুষের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও বিশ^াস। তিনি বিশ^াস করতেন এ দেশ স্বাধীন হবেই। তিনি বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা, বাঙালি জাতির প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যার অবদানের কারণে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হয় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। বর্বরতার জঘন্যতম চিহ্ন রেখে আত্মসমর্পণ করে পাক হানাদার বাহিনী। কিন্তু দেশ স্বাধীন হলেও সেই স্বাধীন দেশে তখনো অনুপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ২৫ মার্চ রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সদ্য জন্ম নেয়া দেশে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতি যেন স্বাধীনতারই অসম্পূর্ণতা ছিল। বাংলার প্রতিটি মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল তাদের প্রিয় মানুষ কবে দেশে ফিরবে। অবশেষে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ বাংলার মানুষের স্বাধীনতার উদযাপনের পরিপূর্ণ একটি দিন।

স্বাধীন দেশের মানুষ তখন অপেক্ষায় তাদের প্রিয় মানুষটির প্রতীক্ষায়। ২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে নির্যাতন ও নৃশংসতা সহ্য করার পর যখন তিনি দেশের মাটিতে পা রাখেন তখন এ এক অন্য বাংলাদেশে। পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন ও ভারত হয়ে তিনি দেশের মাটিতে ফেরেন। তার ফেরার দিন সকাল থেকেই তার আগমনের রাস্তা তেজগাঁও বিমানবন্দরের দুপাশে সারিবদ্ধ মানুষ দাঁড়িয়ে তাদের প্রাণের মানুষকে দেশের মাটিতে বরণ করে নিতে। তাদের কণ্ঠে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে অপেক্ষমাণ জনসমুদ্র পেরিয়ে রেসকোর্স ময়দানে পৌঁছাতে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। সেই রেসকোর্সে তখন লোকে লোকারণ্য। সেখানে অপেক্ষমাণ সবাই তাদের ভালোবাসার মানুষটিকে দেখতে, তার মুখ থেকে দুটি কথা শোনার জন্য ছিল উদগ্রীব। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা রেসকোর্স ময়দানে পৌঁছে প্রায় ১৭ মিনিট গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন জাতির উদ্দেশে। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। তার ভাষণে উঠে আসে বাংলাদেশের আদর্শগত ভিত্তি কী হবে, রাষ্ট্র কাঠামো কী ধরনের হবে, যারা দেশের সঙ্গে বেইমানি করে পাকিস্তানকে সহযোগিতা করেছে তাদের কী হবে এসব বিষয়সহ বহুবিধ দিকনির্দেশনা ছিল তার সেই ভাষণে।

অলোক আচার্য

সাংবাদিক ও লেখক, পাবনা।

SUMMARY

1653-1.png