‘৭৫ থেকে আজ পর্যন্ত জাতি দ্বিধাবিভক্ত রয়ে গেল’

‘৭৫ থেকে আজ পর্যন্ত জাতি দ্বিধাবিভক্ত রয়ে গেল’
একাত্তরে বাঙালি জাতির মধ্যে যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন আর খুঁজে পাননা মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশীদ৷ বিশেষ করে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বিভক্ত হয়ে গেছে জাতি৷ সেই বিভক্তি এখনো কাটেনি৷

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন সাবেক সেনা প্রধান লে. জেনারেল হারুন অর রশীদ৷ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন তিনি চাকুরি করেছেন সেনা বাহিনীতে৷ বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করারও অভিজ্ঞতা রয়েছে এই মুক্তিসেনার৷ একাত্তরের যুদ্ধের সময়কার বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘একাত্তরের স্মৃতি বলতে গেলে ২৬৬ দিনের স্মৃতি আমাদের মনে জাগ্রত আছে৷ তার মধ্যে বিশেষ একটা স্মৃতির কথা বলি৷ একাত্তরের আগস্ট মাসে আমরা একটা আক্রমণ করেছিলাম আখাউড়ার উত্তর-পূর্ব দিকে একটি চা বাগানে, কলাছড়া চা বাগান৷ সে আক্রমণে পাকিস্তানের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়, তারা হটে গেলেও অনেক গোলাবারুদ রেখে যায়, আটকও হয় কয়েক সেনা৷''

সেই যুদ্ধে একটি বিষয় বেশ নাড়া দিয়েছিল হারুন অর রশীদকে৷ তাঁর এক সহযোদ্ধার বুকে ও পেটে গুলি লেগেছেল৷ সেই যোদ্ধার শেষ ইচ্ছা ছিল, মৃত্যু হলে যেন বাংলার মাটিতেই কবর দেওয়া হয় তাঁকে৷ জনাব হারুন বলেন, ‘‘তাঁর পেটে এবং বুকে চারটি গুলি লেগেছিল৷ আমরা চেষ্টা করছিলাম, তাঁকে তারাতারি ভারতে পাঠিয়ে দিতে, চিকিৎসার জন্য৷ ছেলেটা বারবার বলছিল, আমাকে পাঠিয়েন না, আমি মারা যাই৷ তবুও আমরা যখন তাঁকে পাঠাচ্ছি, তখন ছেলেটা আমাকে বলল, আপনি আমার একটা অনুরোধ রাখবেন৷ আমি তখন রাজি হলে, ছেলেটি বলল, আমি জানি আমি কোথাও না কোথাও মারা যাবো৷ আমি মারা গেল যেন বাংলার মাটিতে আমাকে শায়িত করা হয়৷''

হারুন অর রশীদ বর্তমানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কাজ করছেন৷ সেক্টর কমান্ডার ফোরাম-এর সাধারণ সম্পাদক তিনি৷ স্বাধীনতার চল্লিশ বছর সম্পর্কে জনাব হারুন বলেন, ‘‘১৯৭১ ছিল বাঙালির একাত্বতার বছর৷ তখন সমগ্র জাতি যে একত্র হয়েছিল, এই যে একটা শক্তি, সেই শক্তিটা আমরা যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে হারিয়ে ফেলেছি৷ বিশেষ করে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরে যে শক্তিটার উত্থান হলো, সেই শক্তিটা পরাজিত শক্তিকে ক্ষমতায় আনে এবং যার জন্য জাতি দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে৷ দুঃখজনকভাবে বলতে হয়, সেই ৭৫ থেকে আজ পর্যন্ত জাতি দ্বিধাবিভক্ত রয়ে গেল৷''

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

SUMMARY

1636-1.jpg