‘‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত,
বঙ্গবন্ধু মরে নাই।
যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো,
বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই।
তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা,
আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা।’’
এ শুধু গান নয়, বাংলার কোটি মানুষের হৃদয়ে গভীর থেকে উথলে উঠা অমলিন ভালোবাসার সুর। তারা আজও বিশ্বাস করতে পারে না ঘাতকের বুলেট ক্ষত-বিক্ষত করেছে জাতির পিতার বুক। ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর বাড়ির সিঁড়িতে পড়ে আছে জাতির পিতার নিষ্প্রাণ দেহ।
পঁচাত্তরের সেই ১৫ আগস্ট বাস্তব আর শোকের সমুদ্র হয়ে বারবার ফিরে আসে বাঙালী জাতির জীবনে। ওই কালো রাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য সপরিবারে হত্যা করে।
শুধু তাই নয়, সেই খুনিদের হাত থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি ও সুকান্ত, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন।
আমরা জানি, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে খুনিরা চেয়েছিল চিরতরে বাংলাদেশ ও বাঙালীর হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে। শুধু তাই নয়, ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে পৃথিবীর জঘন্যতম এ হত্যাকাণ্ডের বিচার সুদীর্ঘ বছর আটকে রেখেছিল খুনিচক্র। খন্দকার মোস্তাক অার জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত খুনিদের চাকরি দিয়ে, নিরাপত্তা দিয়ে যুগের পর যুগ পৃষ্ঠপোষকতা করে গেছে। যদিও শেষ পর্যন্ত তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। বিচারের মুখোমুখি হয়ে শাস্তিও পেতে হয়েছে।
খুনিদের লক্ষ্য পূরণ হয়নি। জাতির পিতাকে বাংলার মানুষের হৃদয় থেকে মুছে দিতে পারেনি কেউ। বঙ্গবন্ধু অাজ আপন মহিমায় প্রকাশিত। এ দেশের মানুষ কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নস্যাৎ করতে দেয়নি। এমন কি যে চক্রটি বাংলাদেশে পাকিস্তানি ভাবধারা ফিরিয়ে নেয়ার নীলনকশা করেছিল; তাদেরকেও আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে।
জাতির পিতাকে হারানোর ৪৩তম বার্ষিকীতে এসে একটা বিষয় পরিস্কার; তিনি যে সুন্দর দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তা এখনো পরিপূর্ণতা পায়নি। এটা ঠিক তার সেই স্বপ্ন বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধীরা নানাভাবে তা হতে দেয়নি। তবে জাতি আশা হারায়নি। একদিন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূরণ করবে নতুন প্রজন্ম; তাতে আমরাও আশাবাদী।