কিউবায় চট রপ্তানি করার অজুহাতে ১৯৭৪ সালের জুন মাসে আমেরিকা বাংলাদেশে গম পাঠানো বন্ধ করে দেয়। এরপর তারা নানা শর্তের বেড়াজালে বাংলাদেশকে আটকে ফেলার সুযোগ খুঁজতে থাকে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তাদের সুযোগ প্রাপ্তির প্রথম প্রতিবন্ধক।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু প্রত্যাবর্তন করেন স্বাধীন স্বদেশভূমিতে। তার এ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সাধারণভাবে দেশের সব মানুষের ভেতর বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সঞ্চার ঘটালেও ধূর্ত মতলববাজদের অনেকেরই তা মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
স্বাধীনতার সশস্ত্র সংগ্রাম চলাকালে ঘটনাক্রমে বা বিশেষ মতলব হাসিলের সচেতন উদ্দেশ্য নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সেজেছিল যারা, তাদের কাছে অসহ্য হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন এবং অবিসংবাদিত নেতারূপে তার সম্মান।
শুধু ঈর্ষাকাতরই হলো না, তারা হয়ে ওঠে হিংস্র। সেই হিংস্রতারই চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। তবে আমেরিকার মদদে বঙ্গবন্ধু নিহত হন, সেই ভূমিকাকে আড়ালে রেখে দিলে পুরো সত্যটি ঢাকা পড়ে যাবে।
প্রকৃত সত্য হলো, সশস্ত্র সংগ্রাম চলাকালেই এ শক্তি সপ্তম নৌ-বহর পাঠিয়ে দিয়ে আমাদের স্বাধীনতাকে বঙ্গোপসাগরে ডুবিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা করেছিল, সেই সাম্রাজ্যবাদীর মদদপুষ্ট অনেক মীরজাফরই মুক্তিযুদ্ধ শিবিরে অবস্থান করে।
স্বাধীন বাংলাদেশে এদের সম্মিলিত শক্তি সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে পরাজিত পাকিস্তানের প্রেতাত্মাকে দেশটির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে।
বঙ্গবন্ধু এ অপশক্তি সম্পর্কে অবশ্যই সচেতন ছিলেন, তাই দেশকে রক্ষার উপায়ও সন্ধান করেন। কিন্তু স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সৃষ্টি হয় অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির। সেসবের ছিদ্র পথেই, বিশেষ করে ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষকে কেন্দ্র করে আমেরিকা নাক গলানোর সুযোগ পেয়ে যায়। আর তাদের প্রথম প্রতিবন্ধকতা দূর হয় সপরিবারে নির্মমভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে।