১৬ আগস্টের পত্রিকায় যা ছাপা হয়


১৬ আগস্ট প্রকাশিত ইত্তেফাক পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠাআজ ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। ইতিহাসের নৃশংস ও মর্মস্পর্শী একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদতবার্ষিকী।
১৯৭৫ সালের এই দিনে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। এর মধ্য দিয়ে বাঙালির ইতিহাসে এক কালিমালিপ্ত অধ্যায় রচিত হয়।

এদিকে বাঙালির ইতিহাসে কলঙ্কজনক ওই দিনটিকে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম কীভাবে দেখেছে? কী ছিল ওইদিনের পত্রিকায়?

কষ্টের বিষয়-জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার খবরটি পরদিন দৈনিক ইত্তেফাক প্রধান শিরোনামে আনেনি। প্রায় একই চিত্র ছিল বাংলাদেশের অন্য সংবাদপত্রগুলোতেও।

১৯৭৫ সালের ১৬ অাগস্ট ওই সময়কার সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিক ইত্তেফাকের ৬ কলামের শিরোনাম ছিল-খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনীর শাসনক্ষমতা গ্রহণ।

এই প্রতিবেদনের সূচনাতেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের খবর ছাপিয়ে খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণই প্রাধান্য পেয়েছিল।

সংবাদপত্রটির প্রতিবেদনের শুরুটা হয়েছিল এভাবে, রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী বৃহত্তর স্বার্থে গতকাল প্রত্যুষে সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে ক্ষমতাচ্যুত করিয়া দেশের শাসনভার গ্রহণ করিয়াছেন।শাসনভার গ্রহণকালে সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান স্বীয় বাসভবনে নিহত হইয়াছেন।

ছয় কলামের এই সংবাদটির পাশেই দৈনিক ইত্তেফাক দুই কলামে ‘ঐতিহাসিক’ নবযাত্রা’ নামে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। ওই সময় পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী; বার্তা সম্পাদক ছিলেন আসাফউদ্দৌলা রেজা।

তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সম্পাদিত দৈনিক ইত্তেফাককে স্বাধীনতার আগে আওয়ামী লীগের মুখপত্র হিসেবেই মনে করতেন পাঠকরা।

১৬ অাগস্টের ইত্তেফাকে প্রথম পাতায় আরও কয়েকটি খবরের শিরোনাম ছিল, ‘উপরাষ্ট্রপতি, ১০ জন মন্ত্রী ও ৬ জন প্রতিমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ’, ‘অচল নোটের ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত ফেরত’, ‘জাতির বৃহত্তর স্বার্থে শাসনভার গ্রহণ’, ‘যুক্তরাষ্ট্র স্বাভাবিক কূটনৈতিক কাজকর্ম চালাইয়া যাইবে’, ‘জনসাধারণের স্বস্তির নিঃশ্বাস’, ‘বিভিন্ন মহলের অভিনন্দন’, ‘বিদেশি দূতাবাসের মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকিবে’, ‘বি এ সিদ্দিকী রেডক্রসের চেয়ারম্যান’ ইত্যাদি।

১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধন এনে বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর ইত্তেফাকসহ চারটি দৈনিক পত্রিকাই তখন প্রকাশ হচ্ছিল।

এহতেশাম হায়দার চৌধুরী সম্পাদিত ১৬ অাগস্টের দৈনিক বাংলার আট কলামের শিরোনাম ছিল-‘খোন্দকার মুশতাক নয়া রাষ্ট্রপতি’। প্রধান এই শিরোনামের শোল্ডারে লেখা হয়েছে, শেখ মুজিব নিহত: সামরিক আইন ও সান্ধ্য আইন জারি: সশস্ত্র বাহিনীসমূহের আনুগত্য প্রকাশ।  প্রথম পৃষ্ঠাতেই ‘ঐতিহাসিক পদক্ষেপ’ নামে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়।

শীর্ষ দৈনিকটির প্রথম পাতার অন্যান্য সংবাদের শিরোনাম ছিল, ‘দুর্নীতির সঙ্গে আপোস নেই’, ‘জোটনিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করা হবে: রাষ্ট্রপতি’, ‘দশজন মন্ত্রী ও ছয়জন প্রতিমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ’, ‘নয়া সরকারের সাথে যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে’, ‘অচল শতকী নোটের ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্য ফেরত দেয়া হবে’, ‘পাকিস্তানের স্বীকৃতি দানের সিদ্ধান্ত’। ইত্তেফাকের মতোই দৈনিক বাংলাতেও প্রধান সংবাদের সঙ্গে মোশতাকের শপথের ছবি ছাপা হয়েছিল।

দ্য বাংলাদেশ টাইমসের আট কলামের প্রধান শিরোনাম ছিল, ‘মুসতাক অ্যাসিউমস প্রেসিডেন্সি’। এই শিরোনামের শোল্ডারে লেখা ছিল, ‘মার্শাল ল প্রক্লেইমড ইন দ্য কান্ট্রি: মুজিব কিলড’।

মূল শিরোনামের নিচে পত্রিকাটির প্রথম কলামে ‘আওয়ার কমেন্টস’ নাম দিয়ে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছিল; যার শিরোনাম ছিল, ‘অন দ্য থ্রেসহোল্ড অব দ্য নিউ এরা’।

আব্দুল গনি হাজারি সম্পাদিত পত্রিকাটির প্রথম পাতার অন্যান্য শিরোনামগুলো ছিল, ‘পিপল থ্যাঙ্ক আর্মড ফোর্সেস’, ‘মুজিবস পিকচার রিমুভড’, ‘ইউএস রেডি ফর নরমাল টাই’, “ভাইস প্রেসিডেন্ট, টেন মিনিস্টার, সিক্স স্টেট মিনিস্টার সোয়ার্ন ইন’, ‘ভ্যালুজ হ্যাভ টু বি রিহ্যাবিলিটেটেড’, ‘হেল্প মেক বাংলাদেশ এ প্রসপরাস কান্ট্রি’। প্রধান খবরে সঙ্গে মোশতাকের শপথের ছবি ছাপা হয়েছিল।

ওবায়দুল হক সম্পাদিত সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ অবজারভারের ১৬ অাগস্টের প্রধান শিরোনাম ছিল-‘মুশতাক বিকামস প্রেসিডেন্ট’। শিরোনামের শোল্ডার ছিল-‘আর্মড ফোর্সেস টেক ওভার: মার্শাল ল প্রোক্লেইমড: কারফিউ ইমপোজড’। কিকারে লেখা ছিল, ‘মুজিব কিলড: সিচুয়েশন রিমেইনস কাম’। আট কলামের প্রধান শিরোনামের সঙ্গে মোশতাকের শপথের ছবি ছিল।

প্রধান সংবাদের নিচে ‘হিস্টরিক্যাল নেসেসিটি’ শিরোনামে সম্পাদকীয়। তার পাশের দুটি সংবাদের শিরোনাম, ‘স্পেশাল প্রেয়ার্স’, ‘মুশতাক কলস ফর কো-অপারেশন’।

পত্রিকাটির প্রথম পাতার অন্য শিরোনামগুলো ছিল, ‘পিপল হেইল টেক-ওভার’, ‘পাকিস্তান অ্যাকর্ডস রেকগনিশন’, ‘ইনভায়োবিলিটি অব ফরেন মিশনস অ্যাশিউরড’, ‘জাস্টিস মাস্ট বি এসটাব্লিশড: প্রেসিডেন্ট, ওয়ার্ক হার্ড টু ইমপ্রুভ কনডিশন কুইকলি’, ‘ইউএস রেডি টু কনডাক্ট নরম্যাল ডিপ্লোম্যাটিক বিজনেস’, ‘কারফিউ রিল্যাক্সড ফর জুম্মা প্রেয়ার্স’।

SUMMARY

1608-1.jpg