ফখরে আলম, যশোর
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর প্রতিবাদ জানান যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য আবুল ইসলাম। ৩০ আগস্ট যশোর ঈদগাহ ময়দানে তিনি বঙ্গবন্ধুর গায়েবানা জানাজার আয়োজন করেন। তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা আসাদুজ্জামান, পুরাতন কসবা এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা আব্দুর রাজ্জাক চিশতীসহ ৮-১০ জন ওই জানাজায় অংশ নেন। এরপর পুলিশ খুঁজতে থাকলে আবুল ইসলাম গাঢাকা দেন। একপর্যায়ে হেঁটে টুঙ্গিপাড়া গিয়ে বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত করেন। এ কারণে তাঁকে জেল খাটতে হয়েছে। নির্যাতনের শিকারও হতে হয়েছে।
ওই জানাজায় যশোর এমএম কলেজ ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘তখন আমি আইএ পরীক্ষা দিয়েছি। সকালে রেডিওতে শুনি, শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। এ খবর শুনে বাইরে বেরিয়ে দেখি পথঘাট জনমানবশূন্য; কারফিউ জারি হয়েছে। কয়েক নেতার সঙ্গে দেখা করি। কিন্তু কেউই প্রতিবাদ-প্রতিরোধের সাহস দেখাননি। ৩০ আগস্ট এমপি আবুল ইসলামের সঙ্গে দেখা হলে তিনি ঈদগাহ ময়দানে আসতে বলেন। সকাল ১০টা থেকে ১১টার দিকে আমরা কয়েকজন মিলিত হই। এরপর আব্দুর রাজ্জাক চিশতী সাহেব জানাজা পড়ান।’
আসাদুজ্জামান আরো বলেন, ‘পরের বছর ১৫ আগস্ট আমরা যশোর টাউন হলে বঙ্গবন্ধুর স্মরণে দোয়া মাহফিলের উদ্যোগ নিই। কিন্তু সাহস নিয়ে কেউ আসেনি। আমরা জিলাপি খাওয়ার লোক খুঁজে পাইনি।’
আবুল ইসলাম ২০০৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মারা গেছেন। তাঁর ছেলে মনিরুল ইসলাম মনির এখন যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরের আগস্টেই আমার বাবা সংসদ সদস্য হয়েও ছদ্মবেশ ধারণ করে হেঁটে টুঙ্গিপাড়া গিয়ে বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত করেন। বঙ্গবন্ধুর জানাজা পড়া আর কবর জিয়ারত করার কারণে পুলিশ তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে। তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার বিথারী সীমান্তে আটক হন। ক্ষমতায় তখন জিয়াউর রহমান। বাবাকে প্রথমে যশোর ক্যান্টনমেন্ট ও পরে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে তাঁর ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর ভক্তি একটুও কমাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর বাবা নিজে গরু পুষে প্রতিবছর বঙ্গবন্ধু, বেগম মুজিব, তিন ছেলে কামাল, জামাল ও রাসেলের নামে কোরবানি দিয়েছেন। তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধুর মতো তাঁকেও ‘৫৭০ সাবান’ দিয়ে গোসল করিয়ে কম দামি কাপড়ে দাফন করা হয়।’
বেনাপোলের বাহাদুরপুর গ্রামের গোলাম মোরশেদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে লেখাপড়া করতেন গোলাম মোরশেদের বড় ভাই আতিয়ার রহমান। ১৯৪৬ সালে কলকাতায় সোহরাওয়ার্দীর বাসভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা হয়। ১৯৫৩ সালে ঢাকা যুক্তফ্রন্টের অফিসে রাজনীতিসূত্রে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে গোলাম মোরশেদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয়, তখন গোলাম মোরশেদ যশোর শহরের খড়কিতে থাকতেন। তিনি ৩০ আগস্ট ভয়ভীতি অগ্রাহ্য করে টুঙ্গিপাড়া গিয়ে বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত শেষে তাঁর পায়ের কাছে একটি বকুল ফুলের চারা রোপণ করেন। পরের বছর আবার ১৫ আগস্ট টুঙ্গিপাড়া গেলে পুলিশ তাঁকে আটক করে। তাঁর ওপর চলে নির্যাতন। ২২ দিন জেল খাটার পর তিনি ফরিদপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান।