আজিজুল ইসলাম ভূইয়া
তখন সুবেহ সাদেক, ঊষার দুয়ারে রাঙা প্রভাত ছুঁই ছুঁই করছে। আবেদিত আর আহ্বানে মুয়াজ্জিনের কণ্ঠের মূর্ছনায় ইথার তরঙ্গে ভেসে উঠল ‘আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউয়ুম’। এরপর হঠাৎ থমকে গেল পৃথিবী! ঊষার আকাশ ভেসে উঠল জাতির পিতার রক্ত দিয়েই। ’৭১-এর পর শ্যামল ছায়ার সবুজ বাংলা আবারো রক্তাক্ত হলো সেই পিতার রক্তে। ঘাতকদের মেশিনগানের গুলি— যেন বাংলার জমিনকে ছিন্নভিন্ন করে দিল! ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ির সিঁড়িতে নিষ্প্রাণ হয়ে বিধ্বস্ত হলো বাংলাদেশ- রক্তস্নাত হয়ে লুটিয়ে পড়ল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিথর দেহটি। বিস্ময়জাগানিয়া কলঙ্কের ভারে ইতিহাসের চাকা থমকে দাঁড়াল। কলঙ্কের সে দিন ছিল ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সাল।
ঘাতকদের হিংস্র থাবায় কলঙ্কিত হলো মানবতা আর সভ্যতা। নৃশংস এই ঘৃণ্য নির্মমতায় শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর আকাশ ছেয়ে গিয়েছিল শোকের মেঘে। এরপর শুরু হলো ইতিহাস বিকৃতির পালা, শুরু হলো ইতিহাসের চাকাকে উল্টো ঘুরানোর পালা। আত্মপ্রতারণার গিলাপ দিয়ে এ জাতিকে আপাদমস্তক মুড়িয়ে দেওয়া হলো। ছলচাতুরির কফিন দিয়ে দাফন করা হলো জাতির যা কিছু ঐতিহ্যের, যা কিছু গর্বের, যা কিছু অহংকারের- তাকে। নির্লজ্জ বেহায়াপনায় চরিত্র হননের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও তার সহযোদ্ধাদের নির্বাসনে পাঠানোর প্রচেষ্টা চালানো হলো। জাতির সিংহাসনে অভিষিক্ত করার আয়োজন চলল কিছু খলনায়ককে। তবে সবকিছুই নিষ্ফল হলো। ইতিহাসে মিথ্যার জায়গা হলো না। মিথ্যা দিয়ে ইতিহাস তৈরি করা যায় না। কালের পরিক্রমায় এসে আমরা অহংকারের সঙ্গে লক্ষ করেছি— শহীদ মিনার আর স্মৃতিসৌধ হয়ে বিশ কোটি বাঙালির হূদয়ে চির অম্লান হয়ে আছেন এ জাতির পিতা ও জাতীয় নেতারা। খলনায়কেরা নিক্ষিপ্ত হয়েছে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে।