ভাসানী-মুজিব সম্পর্ক এবং মোশতাক প্রসঙ্গ


শাহ আহমদ রেজা  

শুরুতেই বলে রাখি, আজকের নিবন্ধেও ‘মজলুম জননেতা’ মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং ‘বঙ্গবন্ধু’ শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত সম্পর্ককেন্দ্রিক আলোচনায় সমাপ্তি টানা সম্ভব হচ্ছে না। বাস্তবে এটা আসলে সম্ভব হওয়ার মতো বিষয়ও নয়। কারণ পাকিস্তান যুগে বিরোধী রাজনীতির সূচনা করা থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আহ্বান জানানো এবং বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করা পর্যন্ত সুদীর্ঘ সংগ্রামের প্রতিটি পর্যায়ে দুজনই থেকেছেন অগ্রবর্তী অবস্থানে। পৃথক দল করলেও আজকের বাংলাদেশ তথা পাকিস্তানের প্রদেশ পূর্ব বাংলা এবং বাঙালির বঞ্চনার বিরুদ্ধে ও অধিকার আদায়ের দাবিতে দুজনই বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার রায় ঘোষণার প্রাক্কালে প্রধান অভিযুক্ত শেখ মুজিব ফয়েজ আহমদ, আতাউস সামাদ প্রমুখ সাংবাদিকের মাধ্যমে ‘বুড়ারে’ অর্থাৎ মওলানা ভাসানীকে ‘খবর’ পাঠিয়েছিলেন। এর পরপরই ১৬ ফেব্রুয়ারি মওলানা ভাসানী পল্টন ময়দানের বিরাট জনসভায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ভেঙে শেখ মুজিবকে মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। মওলানা ভাসানীর হুমকি এবং ১১-দফা ভিত্তিক গণঅভ্যুত্থানের প্রচণ্ড চাপে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করতে এবং প্রধান অভিযুক্ত শেখ মুজিবসহ সব রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন (২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯)। মুক্তি পাওয়ার পর সেদিন সন্ধ্যায়ই শেখ মুজিব মওলানা ভাসানীর সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং একান্ত বৈঠক করেছিলেন।

আগেও  বলেছি, মওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবের সম্পর্ক সব সময় ছিল পিতা-পুত্রের মতো। স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বানমুখে তৎপর মওলানা ভাসানী ১৯৭০ সালের নির্বাচন বর্জন করায় ১৬৯টির মধ্যে ১৬৭টি আসনে জিতে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছিল আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচন থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা পর্যন্ত সময়কালে শেখ মুজিবের প্রতি মওলানা ভাসানীর ‘সমর্থন’ দেওয়ার এই কৌশলকে ‘রীতিমতো মাস্টার স্ট্রোক’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ থেকে অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার প্রতিবাদে আরো একবার স্বাধীনতা সংগ্রামের আহ্বানমুখে শেখ মুজিবের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মওলানা ভাসানী।

স্বাধীন বাংলাদেশে প্রকাশ্যে বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীকালে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবের সঙ্গে মওলানা ভাসানীর ব্যক্তিগত সম্পর্কে কোনো অবনতি ঘটেনি। রাষ্ট্রের যে কোনো সমস্যায় ও প্রয়োজনে উপদেশ ও পরামর্শ নেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু তার ‘পিতার মতো’ নেতার কাছে ছুটে যেতেন। কিন্তু পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে সব সময় শেখ মুজিব প্রকাশ্যে যাননি। প্রকাশ্যে যখন গেছেন, তখন সবার সামনে মওলানা ভাসানীকে জড়িয়ে ধরেছেন, তার বুকে নিজের মাথা রেখে দোয়া নিয়েছেন। সেসব ছবি ও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে দেশের দৈনিকগুলোতেও। কিন্তু সহজবোধ্য কারণে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হিসেবে শেখ মুজিব বেশি বার গেছেন গোপনীয়তার সঙ্গে। ভাসানী-মুজিবের এ ধরনের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গেই মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের একটি চমৎকার বর্ণনার উদ্ধৃতি দিয়েছি গত ১৫ আগস্ট সংখ্যার নিবন্ধে।

বিশেষ কারণে আজকের নিবন্ধে আরো দুটি ঘটনার কথা বলা হবে। পাঠকদের মনে পড়তে পারে, ১৫ আগস্ট সংখ্যার নিবন্ধে আমি লিখেছিলাম, রাষ্ট্রপতি হিসেবে শেখ মুজিব ১৯৭৫ সালের ৮ মার্চ প্রকাশ্যে সন্তোষে গিয়েছিলেন। কাগমারীতে ১৯৫৭ সালে মওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠিত মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজকে সরকারি কলেজে রূপান্তরের ঘোষণা দেওয়া ছিল ওই সফরের ঘোষিত উদ্দেশ্য। ৯ মার্চের দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু মওলানা ভাসানীর বুকে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে আছেন। অন্যদিকে মওলানা ভাসানী তাকে পরম আদরে ডান হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেছেন। দুজনের চারপাশে এবং পেছনে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে ছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমদ, টাঙ্গাইলের মন্ত্রী আবদুল মান্নান প্রমুখ। পিতা ও পুত্রের ওই মিলনের দৃশ্য দেখে সবাই উৎফুল্ল হয়েছিলেন। সবার মুখেই ছিল হাসি।

এরপর রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবকে নিয়ে মওলানা ভাসানী গিয়েছিলেন কাগমারী কলেজ প্রাঙ্গণে অবস্থিত দরবেশ হজরত শাহ জামান (র.)-এর মাজারের অভ্যন্তরে। মাজার জিয়ারতশেষে মওলানা ভাসানী তার স্নেহের মুজিবকে কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। তিনি এমনকি একথা পর্যন্ত বলেছিলেন, তাকে ‘সবংশে’ ধ্বংস অর্থাৎ হত্যা করা হতে পারে। মওলানা ভাসানী সম্পর্কে জানতেন বলেই রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব তার হুশিয়ারিকে যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে নিয়েছিলেন। সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিষয়টি নিয়ে যাতে কোনো রিপোর্ট না করা হয়। সেদিন মাজারে উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যে আমার পরিচিত দু’-একজন এখনো বিভিন্ন স্থানে কর্মরত, কেউ কেউ লিখবেনও বলেছিলেন। কিন্তু কেউ লিখেছেন বলে জানতে পারিনি। শুধু তা-ই নয়, তাদের মধ্যকার এক বিশিষ্টজন মাত্র কিছুদিন আগেই জাতীয় প্রেস ক্লাবে আমাকে বলেছেন, ওই ঘটনা সম্পর্কে কখনো লিখলেও আমি যেন তার নাম অন্তত না লিখি! অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম দফায় তো বটেই, এখনো ওই বিশিষ্টজন ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে চলেছেন। চাকরিও করেছেন একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে।

কাগমারী মাজারের এ ঘটনার উল্লেখ করার বিশেষ কারণ হলো, যেভাবে বা যেসব সূত্রের মাধ্যমেই হোক না কেন, মওলানা ভাসানী আগেই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন এবং সেজন্যই ‘নিজের ছেলের মতো’ মুজিবকে সতর্ক করেছিলেন। মাত্র পাঁচ মাস এক সপ্তাহের মাথায় হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। আমি এখনো বুঝতে পারি না, রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব সাংবাদিকদের কেন নিষেধ করেছিলেন এবং সাংবাদিকরাই বা কেন ওই অংশটুকু রিপোর্ট করেননি। মওলানা ভাসানীর আশংকার কথাটা প্রকাশিত হলে সাধারণ মানুষের মধ্যে যেমন বিস্তর আলোচনা হতো, ষড়যন্ত্রকারীরাও তেমনি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর আগে আরো দশবার চিন্তা না করে পারতেন না। জানাজানি হয়ে যাওয়ার কারণে হয়তো ১৫ আগস্টই ঘটত না।

এবার এত কথার আসল কারণ জানানো দরকার। আমরা জানি, শোকের মাস আগস্ট এলেই দেশে মুজিব-বন্দনার আড়ালে চাটুকারিতার এবং ইতিহাস বিকৃতির প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। এ ব্যাপারে রীতিমতো স্তম্ভিত করেছেন ‘ইতিহাসবিদ’ নামধারী চরম সুবিধাবাদী এক বিশেষজন। কিছুটা ঘুরিয়ে হলেও সুকৌশলে মুজিব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মওলানা ভাসানীকে জড়িত করতে চেয়েছেন তিনি। কোনো এক বেসরকারি টিভির এক টকশোতে বলে বসেছেন, মওলানা ভাসানী নাকি খন্দকার মোশতাকের সরকারকে সমর্থন জানিয়েছিলেন এবং হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ জানাননি! ওই বিশেষজন আরো বলেছেন, মুজিব হত্যাকাণ্ডের ‘দিনকয়েক পর’ প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমদ পিজি হাসপাতালে মওলানা ভাসানীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সাক্ষাৎ করার এ ঘটনাটিকেই খন্দকার মোশতাকের প্রতি মওলানা ভাসানীর সমর্থনের ‘প্রমাণ’ হিসেবে উপস্থিত করার চেষ্টা চালিয়েছেন ওই ‘ইতিহাসবিদ’।

তিনি আরো বলেছেন, ‘প্রধান প্রধান সকল দৈনিকে’ নাকি মওলানা ভাসানীর বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছিল! কথাটি শুনে যে কারো মনে হতে পারে যেন সে সময় দেশে এখনকার মতো অসংখ্য সংবাদপত্র ছিল এবং সেগুলোর মধ্যে ‘প্রধান প্রধান সকল দৈনিকে’ মওলানা ভাসানীর বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছিল! অন্যদিকে ঐতিহাসিক সত্য হলো, বাকশাল তথা একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার সময় মাত্র চারটি ছাড়া দেশের সকল দৈনিককে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সুতরাং ‘প্রধান প্রধান সকল দৈনিক’ বলাটা মোটেই সমীচীন নয়। কারণ দেশে তখন সব মিলিয়ে দৈনিকই ছিল মাত্র চারটি এবং চারটিই ছিল সরকারি মালিকানায়। ১৫ আগস্টের পরপর যখন বিবৃতিটি প্রকাশিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে, তখন সরকারি মালিকানাধীন দৈনিকের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠবে। শুধু তা-ই নয়, মওলানা ভাসানীর কথিত বিবৃতির কথা বলা হয়েছে ‘বিশ্বস্ত সূত্রের’ বরাত দিয়ে। সততা ও সদিচ্ছা থাকলে বিশেষ দৈনিকটি থেকে সরাসরিই বিবৃতিটি উদ্ধৃত করা সম্ভব ছিল এবং ইতিহাস গবেষণার দৃষ্টিকোণ থেকে সেটাই করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সহজবোধ্য কারণে দৈনিকটির নাম পর্যন্ত বলা হয়নি বরং আশ্রয় নেওয়া হয়েছে ‘বিশ্বস্ত সূত্রের’।

এত কথা বলার কারণ হচ্ছে, মওলানা ভাসানী কোনো সাধারণ নেতা ছিলেন না। প্রায় ৮০ বছরের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে তিনি নিজের দেশ এবং জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে পালন করেছেন প্রধান নেতার আপসহীন ভূমিকা। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলই কোনো না কোনোভাবে মওলানা ভাসানীর কাছে ঋণী। রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে গঠিত কলকাতাকেন্দ্রিক মুজিবনগর সরকারকে সংঘাত ও অনৈক্যের অশুভ পরিণতি থেকে রক্ষা করা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নেওয়াও ছিল মওলানা ভাসানীর প্রধান অবদান। তিনি ছিলেন মুজিবনগর সরকার গঠিত উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান।

সুতরাং মওলানা ভাসানী সম্পর্কে গুরুতর কোনো অভিযোগ উত্থাপনের আগে সবারই উচিত যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা। কিন্তু নামধারী ইতিহাসবিদ বলেছেন শোনা কথার ভিত্তিতে। প্রসঙ্গক্রমে খন্দকার মোশতাকের কথিত সাক্ষাতের বিষয়টিকে সামনে আনা দরকার। ‘দিনকয়েক পর’ নয়, পিজি হাসপাতালে মওলানা ভাসানীর সঙ্গে খন্দকার মোশতাক সাক্ষাৎ করেছিলেন ১৯৭৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর— ১৫ আগস্টের দীর্ঘ ৩৮ দিন পর। অথচ সে সময় দেড়-দু’ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা থেকে সন্তোষ তথা টাঙ্গাইল যাওয়া যেত। ঘটনা সত্য হলেও বিষয় হিসেবে এটা মোটেও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারেনি। কারণ পাকিস্তান যুগে এমন কোনো প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এবং প্রাদেশিক গভর্নরের নাম বলা যাবে না, যিনি কোনো না কোনো সময়ে মওলানা ভাসানীর সঙ্গে সাক্ষাৎ না করেছেন। অন্য সবাইকে পাশে রেখে শুধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রসঙ্গে এটুকু বলাই যথেষ্ট যে, রাজনৈতিক বিরোধিতা সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সব সমস্যায় তিনি মওলানা ভাসানীর কাছে ছুটে গেছেন। বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে মওলানা ভাসানীও শেখ মুজিবকে পরামর্শ দিয়েছেন। কখনো তিনি ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ প্রবাদকে গুরুত্ব দেননি। গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছে শেখ মুজিবের স্বার্থে। প্রেসিডেন্ট মোশতাককেও মওলানা ভাসানী একই জাতীয় স্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে সাক্ষাৎ করার সুযোগ দিয়ে থাকতে পারেন। তাই বলে তাকে সমর্থন দেওয়ার ‘প্রমাণ’ পাওয়া যায়নি। স্মরণ করা দরকার, স্নেহভাজন হলেও মওলানা ভাসানীর দিক থেকে খন্দকার মোশতাককে অগ্রাধিকার দেওয়ার কোনো কারণ ছিল না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সে সময় ভারতের হস্তক্ষেপের আশংকা অত্যন্ত দ্রুত বেড়ে চলছিল বলেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে মওলানা ভাসানী মোশতাক সরকারের বিরোধিতা করেননি। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, পরবর্তীকালে জাতীয় স্বার্থ এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের একই দৃষ্টিকোণ থেকে গৃহীত অবস্থানের কারণে জেনারেল জিয়াউর রহমানও মওলানা ভাসানীর কাছে গেছেন— যেমনটি যেতেন শেখ মুজিব, যেভাবে গিয়েছিলেন খন্দকার মোশতাক।

ঐতিহাসিক এ প্রেক্ষাপটের কারণেই শেখ মুজিবের প্রশ্নে মওলানা ভাসানীর অবস্থানকে বিতর্কিত করা অনুচিত। কারণ ভাসানী-মুজিবের সম্পর্ক প্রসঙ্গে যাদের সামান্যও ধারণা রয়েছে, তারা নিশ্চয়ই একবাক্যে স্বীকার করবেন, ‘নিজের ছেলের মতো’ প্রিয় শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডে মওলানা ভাসানী ভীষণভাবে ব্যথিত হয়েছিলেন। প্রসঙ্গক্রমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মন্তব্য স্মরণ করা দরকার। ১৯৯৭ সালের ১৭ নভেম্বর মওলানা ভাসানীর মৃত্যু দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবের মধ্যে ছিল ‘প্রগাঢ় ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্যটুকু থেকে নামধারী ইতিহাসবিদদের শিক্ষা নেওয়া এবং এর মর্মকথা অনুধাবন করা উচিত। তেমন জ্ঞান ও যোগ্যতা অবশ্য চাটুকারদের থাকে না!

লেখক : সাংবাদিক ও ইতিহাস গবেষক

SUMMARY

1547-1.png