দিব্যদ্যুতি সরকার
বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিল ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। ১৭ মার্চ হলো চৈত্র মাস, চৈত্র মাসে হয় বসন্ত ঋতু। বসন্ত ঋতুতে বঙ্গবন্ধুর জন্ম। বাংলাদেশেরও জন্ম বসন্ত ঋতুতে। বসন্ত হলো সবচেয়ে সুন্দর ঋতু। বসন্তের ফুল সুন্দর, পাখির কলতান সুন্দর; বসন্তের মাঠ সুন্দর। বসন্তে গ্রামে গ্রামে শহরে শহরে ফুটে থাকে অসংখ্য ফুল। এই ফুলের ঋতুতে আমরা পেয়েছি বঙ্গবন্ধুকে, পেয়েছি বাংলাদেশকেও। এই বসন্তে রয়েছে ভাষা দিবস। আনন্দের কথা হলো, বাংলাদেশের শিশু দিবসও বসন্তে।
শিশুরা ফুলের মতো সুন্দর ও স্নিগ্ধ। ফুলের মতো রঙিন ও সুখী। তাঁদের জন্য বিশেষ একটি দিন হলো জাতীয় শিশু দিবস। শিশু দিবস পালিত হয় গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন বেছে নিয়ে। কোনো বিশেষ ঘটনা বা আনন্দের কোনো দিনকে শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়। মহান কোনো মানুষের জন্মদিনও শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এজন্য বাংলাদেশের শিশু দিবস ১৭ মার্চ। কারণ বাংলাদেশের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষটি এ দিন জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেই শ্রেষ্ঠ মানুষটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আমাদের জাতির জনক। ছেলেবেলায় তাঁর ডাকনাম ছিল খোকা।
পৃথিবীতে প্রথম শিশু দিবস পালিত হয় ১৯২০ সালের ২৩ এপ্রিল তুরস্কে। চমত্কার ব্যাপার হলো, ওই বছরই বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিল। অর্থাত্ পৃথিবীর এক প্রান্তে যখন পালিত হচ্ছে শিশু দিবস, অন্যপ্রান্তে বঙ্গবন্ধু তখন মায়ের কোলের ছোট্ট শিশু; বয়স মাত্র ৩৭ দিন! তখন কে জানত, সাঁইত্রিশ দিনের এই ছোট্ট শিশুই বড় হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দেবে! কিন্তু তাইই ঘটেছিল।
একেক দেশে একেক দিনে শিশু দিবস পালন করা হয়। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সব মাসেই শিশু দিবস রয়েছে। যেমন—ব্রাজিলে ১২ অক্টোবর শিশু দিবস পালন করা হয়। আবার চীনের শিশুরা শিশু দিবস পালন করে ৪ এপ্রিল তারিখে। বাহামা দ্বীপপুঞ্জের শিশুরা আবার শিশু দিবসের কোনো তারিখ ঠিক করেনি। তারা ঠিক করেছে বার। জানুয়ারি মাসের প্রথম শুক্রবার তাদের শিশু দিবস। থাইল্যান্ডের শিশুদের আবার শিশু দিবস হতে হবে শনিবারে। জানুয়ারির দ্বিতীয় শনিবার তাদের শিশু দিবস।
জুন মাসের ১ তারিখে পৃথিবীর অনেক দেশ শিশু দিবস পালন করে। ১ জুন হলো আন্তর্জাতিক শিশু দিবস। আবার ২০ নভেম্বর বিশ্ব শিশু দিবস। কিন্তু সব দেশের শিশুরা তা পালন করে না। কারণ, প্রত্যেক দেশের রয়েছে নিজস্ব শিশু দিবস। কোনো দেশের শিশু দিবস পড়েছে ফেব্রুয়ারিতে, আবার কোনো দেশের অক্টোবরে। ডিসেম্বর মাসেও শিশু দিবস আছে। ডিসেম্বরের শেষ শুক্রবার হলো ডোমিনিকার শিশু দিবস। শিশু দিবস সত্যিই খুব মজার। অন্য দিবসগুলো কিন্তু এমন নয়। যেমন—আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস শুধু ২১শে ফেব্রুয়ারিতেই হয়। কেউ ইচ্ছা করলে ফেব্রুয়ারি মাসের ২২ তারিখে এ দিবস নিয়ে যেতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষ ঠিক করেছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন হবে তাদের শিশু দিবস।
বঙ্গবন্ধু ছেলেবেলায় খুব দুরন্ত ছিলেন। বন্ধুদের সাথে তিনি স্কুলে যেতেন, ফুটবল খেলতেন, পুকুর আর নদীতে সাঁতার কাটতেন। বন্ধুদের সাথে তাঁর ছিল খুব ভাব। বন্ধুরা তাঁকে খুব ভালোবাসত। বড় হয়ে বঙ্গবন্ধুও শিশুদের খুব ভালোবাসতেন। শিশুদের সাথে তিনি গল্প করতেন, খেলা করতেন। শিশুরা তাঁকে জড়িয়ে ধরে গান গাইত। তিনি শিশুদের কোলে তুলে আদর করতেন। তখন তাঁকে মনে হতো তিনিও যেন একজন শিশু। সত্যিই তাই। ভালোবাসা আর স্নেহে তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে ‘মহান শিশু’।
বঙ্গবন্ধু ছোট্ট শিশু থেকে একদিন মহান মানুষ হয়েছিলেন। কারণ তিনি মানুষকে খুব ভালোবাসতেন। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। নেতা হিসেবে তিনি যেমন ছিলেন মহান, মানুষ হিসেবেও ছিলেন মহান ও উদার। তাঁর কাছে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলেই ছিল আপন। সবাই ছিল তাঁর কাছে সমান। তিনি আশা করতেন, ছোট ছোট শিশুরাও বড় হয়ে সবাইকে ভালোবাসবে। শিশুদের ভালোবাসায় এই বাংলাদেশ একদিন সোনার বাংলা হয়ে উঠবে। আর ভালোবাসার সেই বাংলাদেশে সবাই প্রাণভরে গাইবে, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’।
দিব্যদ্যুতি সরকার
বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিল ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। ১৭ মার্চ হলো চৈত্র মাস, চৈত্র মাসে হয় বসন্ত ঋতু। বসন্ত ঋতুতে বঙ্গবন্ধুর জন্ম। বাংলাদেশেরও জন্ম বসন্ত ঋতুতে। বসন্ত হলো সবচেয়ে সুন্...