শোকাহত আগস্টে প্রথমেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি জানাই অকৃত্রিম শ্রদ্ধা। যাঁর জন্ম না হলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রেরই সৃষ্টি হতো না। সেই মহামানব জাতির জনককে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাঙালিরাই নির্মমভাবে হত্যা করেছে। শেখ কামাল, জামালকেও ওই কালরাত্রিতে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। যিনি সারাজীবন লড়াই-সংগ্রাম করে জেল-জুলুম, নির্যাতন সহ্য করে স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিলেন, দেশ স্বাধীন করলেন, তাঁকেই বাংলাদেশের মাটিতে নির্মমভাবে হত্যা করল। এমনকি তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি শিশু রাসেলও। জাতির পিতা ছিলেন অনেক বড় মাপের নেতা। উদার মানুষ। যারাই তাঁর কাছে যেত, তাকেই তিনি কাছে নিতেন, ¯েœহ করতেন, ভালোবাসতেন। স্বাধীনতা ও পরবর্তী ভূমিকার কারণে অনেকেই তার ¯েœহ পাওয়ার কথা ছিল না, এরপরেও উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই সবাইকে বুকে টেনেছেন। তাঁর বাসা ছিল সাধারণ লোকের বাসা। একজন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, জাতির জনক হয়েও তিনি সাধারণ বাড়িতেই থাকতেন। কারণ তিনি বিশ^াস করতেন, যে বাঙালির জন্য তিনি এতকিছু করেছেন, সেই বাঙালি তাঁকে হত্যা করতে পারে না। এই সরলতার সুযোগেই হয়তো কিলাররা বঙ্গবন্ধুর বাড়ি স্টাডি করে এবং ১৫ আগস্ট দ্রুত অ্যাকশনে চলে যায়। পাকিস্তানিরা যেখানে সাহস পায়নি বঙ্গবন্ধুকে আঘাত করতে, সেখানে বাঙালিরাই সেই কাপুরুষোচিত হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। আর ওই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর সহযোগী জাতীয় চার নেতাকেও নির্মমভাবে কারাগারে হত্যা করেছে।
যখনই আগস্ট আসে, তখনই বাঙালির প্রতিটি মানুষের মনে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জাগ্রত হয়। আগস্ট হচ্ছে আমাদের সবকিছু হারানোর মাস। ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার মাস। বঙ্গবন্ধু তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আর আমার পিতা শহীদ মনসুর আলী তখন প্রধানমন্ত্রী। তখন রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার। বিশ^স্ত সহকর্মী হিসেবে বঙ্গবন্ধু তাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেলেন। তখন আমি জাতীয় যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলাম। আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি ছিলেন তোফায়েল ভাই (বর্তমানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ)। আমার স্পষ্ট মনে আছে, ১৪ আগস্ট সন্ধ্যায় আমি এবং সুলতান শরীফসহ (যিনি এখন লন্ডন আওয়ামী লীগের নেতা) আরো কয়েকজন আমরা শেখ মণি ভাইয়ের (শেখ ফজলুল হক মণি) সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছি। ধানমন্ডি লেকের উল্টো দিকে তার বাসা। তিনি তখন বাসায় মাত্র আসছেন। খুব ক্লান্ত ছিলেন। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বললেন। কথা বলা শেষে তিনি বাসার ভেতরে চলে গেলেন। আমরাও চলে এলাম। আমি তখন থাকি আমার পিতার সঙ্গে হেয়ার রোডের বাসায়। (সাবেক ৩০ নম্বর হেয়ার রোড)। বর্তমানে সেটা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘সুগন্ধা’ হয়েছে। সেখানে দুটি ভবন ছিল। একটিতে আমরা থাকতাম। তার সামনের বাসায় থাকতেন জাতীয় নেতা শহীদ এইচ এম কামরুজ্জামান। পুরো এলাকা ছিল তখন মাঠ। মাঠের দুই পাশে দুটি বাড়ি। বাড়িগুলো অনেক পুরনো। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় সেটি হয়েছিল। সুন্দর একটা দোতলা বাড়ি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আমার আব্বা ওই বাসায় থাকতেন। মণি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার পর সবাই যার যার বাসায় চলে গেল। আমিও বাসায় ফিরলাম তখন রাত ১১টা কি ১২টা বাজে। আমার মা ও আমার স্ত্রী ছিল পাবনার বাসায়, গেছেন বেড়াতে। দোতলায় উঠে গেছি। তখন বাসায় আমি এবং আমার আব্বা, আমার বড় ভাইয়ের দুটো ছেলে, ভাবীসহ অন্যরা ছিল। আব্বা কাজ করে নিচতলাতেই ঘুমিয়ে পড়েছেন।
আমি যে রুমে ঘুমাই, খুব ভোর বেলায় একটা টেলিফোন এল। শহীদ জামিল নামে আমার এক বন্ধু ফোন করে। জামিল তখন পিআরও ছিল। থাকতো মোহাম্মদপুরে। সে ফোনে জিজ্ঞেস করল, প্রচণ্ড গোলাগুলি হচ্ছে, আপনি শব্দ শুনছেন কি না? জামিলের ফোন রাখার পর আমি বারান্দায় যাই। তখন আমার ভাই সেলিম গেট থেকে দৌড়ে আসছিল। সেলিম বলল যে, ক্যু হয়ে গেছে অর্থাৎ সামরিক অভ্যুত্থান হয়ে গেছে। এ কথা শুনে আমি আশ্চর্য হয়ে গিয়েছি, হতবাক! বলে কী এসব? এরপর আরেকটা টেলিফোন আসায় আব্বার ঘুম ভেঙে গেছে। তিনি উঠে গেছেন। এ কথা শুনে তিনিও স্তম্ভিত হয়ে গেছেন। আব্বা তার বেডরুমে লাল টেলিফোনে কথা বলছেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় ফোন করছিলেন। তখন তিনি একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী। আমার মনে আছে, সেনাবাহিনীর প্রধান কে এম সফিউল্লাহ ফোন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে তিনি টেলিফোনে চেষ্টা করেছেন কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে তিনি ফোনে পাননি। সম্ভবত বঙ্গবন্ধুর ফোনটা ডেড হয়ে গিয়েছিল। তারপর বিমানবাহিনীর প্রধানকে বলেছেন। আব্বা তাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, যে কোনোভাবে খবর দাও বঙ্গবন্ধু ফোন ধরছেন না কেন? সফিউল্লাহ বোধহয় কোনো উত্তর দেননি। তিনি খালি হ্যাঁ হ্যাঁ করছিলেন। বিমানবাহিনীর প্রধানকে আব্বা নিজে ফোন করেছেন। আব্বা টেলিফোনে বলছেন বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধার করতে হবে। প্রয়োজনে বিমানবাহিনীর জেট দিয়ে বোমা মেরে হলেও বন্ধ করতে হবে। দখল করতে হবে। একই সঙ্গে বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনী এবং রক্ষীবাহিনীকে নির্দেশ দিচ্ছেন। অনেকেই বলেন যে, কোনো নির্দেশ তারা পাননি। সেটা ঠিক না। আমার সামনেই আমার আব্বা এসব নির্দেশ দিচ্ছেন। আমি প্রত্যক্ষদর্শী। বঙ্গবন্ধুকে যখন পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি সবাইকে নির্দেশ দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধার করার জন্য। পুলিশের আইজিকে বলেছেন। একজন পলিটিক্যাল লিডার তো অস্ত্র হাতে নিয়ে নিজে নামতে পারেন না। এরাই তো ফোর্স। যারা প্রতিরোধ করবে। আব্বা টেলিফোন নিয়ে ব্যস্ত। ভোর হয়ে গেছে তখন। কিছুক্ষণ পরে এল ভয়ঙ্কর সংবাদ। অলরেডি রেডিওতে বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘোষণা হচ্ছিল। মেজর ডালিম বলছে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে।
আমরা দুই ঘণ্টা বাসায় ওয়েট করেছি। খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে। ওইদিকে ডালিম তো বারবার বলেই যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর। রাস্তায় আর্মির গাড়ি টহল দেয়ার খবর পেলাম এর মধ্যেই। কিন্তু আব্বার টেলিফোন করা কারো কাছ থেকে কোনো রেসপন্স আসছিল না। বাইরে কারফিউর মতো চলছিল। আমাদের বাড়িতে যে পুলিশের গার্ড ছিল, তারাও গেটটা বন্ধ করে রেখে দিয়েছে। আরো ঘণ্টাখানেক পরে আমি আব্বাকে বললাম আপনি রেডি হন। আপনাকে এভাবে রাখা নিরাপদ বলে মনে হচ্ছে না। কারণ যে কোনো সময় আপনাকে অ্যাটাক করতে পারে। বঙ্গবন্ধুকে যদি হত্যা করা হয়ে থাকে। আপনাকে তো অন্য জায়গায় স্থানান্তর করতে হবে। কারণ অলরেডি ডিক্লেয়ার হয়ে গেছে, খন্দকার মোশতাক বঙ্গভবন দখল করেছে এবং সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, রক্ষীবাহিনী সবাই আত্মসমর্পণ করেছে। রেডিওতে নিজের কানে শুনলাম, কাওয়ার্ডগুলো বঙ্গভবনে গিয়ে একে একে আত্মসমর্পণ করেছে। যাদের মধ্যে অস্ত্র আছে তারাই তখন কাপুরুষতার পরিচয় দিয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তিনিই তো নির্দেশ দেবেন এবং তিনিই নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তো আর অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামতে পারেন না। কিন্তু যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা সম্পূর্ণ দায়িত্বহীনতা ও কাপুরুষতার পরিচয় দিয়েছেন। ১৫ আগস্টের ট্র্যাজেডিতে বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে পারিনি আমরা কিন্তু কিলারদের আমরা ধরতে পারতাম। এটা আমরা পারিনি। যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। যা হোক, ১৫ আগস্ট আমি আব্বার সঙ্গে কাটিয়েছি আত্মগোপন অবস্থায়। তখন সারা শহরে কারফিউয়ের মতো অবস্থা। শুনেছি হত্যাকারীরা উল্লাস করছিল শহরের বিভিন্ন জায়গায়। বিশ^াসঘাতকতার একটা কলঙ্কিত ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল সেদিন। এরপর আমার আব্বাকে গ্রেপ্তার করা হলো। তাকে মোশতাকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তিনি মোশতাকের মুখের ওপর বলেছিলেন, তুমি কিলার। আমি তোমার সঙ্গে হাত মেলাব না। তখন আমার জীবনটাও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আমি তখন আত্মগোপনে চলে যাই। এরপর দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলাম। ওই সময় আমি দেশে থাকলে তারা আমাকেও হত্যা করত।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর চার জাতীয় নেতা চরম বিপদের মধ্যেও বঙ্গবন্ধু এবং জাতির সঙ্গে বেইমানি করেননি। তারা খুনি মোশতাক-জিয়া চক্রের সঙ্গে আত্মসমর্পণ করেননি। মোশতাকের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করায় কারাগারে তাদের নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে। এ জন্য তারা ইতিহাসে অমর। তাদের গ্রেপ্তার করার পর যে তিন মাস তারা কারাগারে বন্দি ছিলেন, ওই তিন মাসে মোশতাক তাদের দলে ফেরাতে নানা চেষ্টা করেছিল। তারা বঙ্গবন্ধুর খুনির সঙ্গে আপস করেননি। জাতীয় চার নেতার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ছিল, যেভাবেই হোক কোনোদিন সুযোগ পেলে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ তারা নেবেন। এসব কিন্তু তাদের কথাবার্তা আচার-আচরণে প্রকাশ পেত। এটা যেভাবেই হোক মোশতাক-জিয়া জানতে পেরেছে। তখন তারা আশঙ্কা করে, চার নেতা বেঁচে থাকলে বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ তারা নেবেন এবং তাকে ক্ষমতাচ্যুত করবেন। শুধু এই কারণেই জাতীয় চার নেতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। আমি আমার পিতার লাশও দেখতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি, পিতাকে হারিয়েছি, পিতৃসম তিন জাতীয় বীরকে হারিয়েছি- এই কষ্ট আমার জীবনে যেমন সত্য, তেমনি ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে হিসেবে আমি গর্বিত, যে আমার বাবা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সঙ্গে আপস করেননি। আমি কোনো বেইমানের সন্তান নই, আমি শহীদের সন্তান।
প্রতি বছর আগস্ট এলেই আমাদের কষ্ট অশ্রæ হয়ে ঝরে। আমরা এখনো বঙ্গবন্ধুর বাকি খুনিদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করতে পারিনি। যারা আজকে উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কথা বলে ও মানবতার কথা বলে সেসব রাষ্ট্রের কাছে আমার প্রশ্ন, যারা বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারের রায়ে যাদের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে, সেই ভয়ঙ্কর খুনিদের যারা আশ্রয় দিয়েছেন তাদের নিয়ে আপনারা এত চুপ কেন? তারা যখন মানবতার কথা বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলেন, তখন আমি তাদের জিজ্ঞাসা করি, যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, শিশু রাসেলকে হত্যা করেছে, ৪ নেতাকে হত্যা করেছে, তারা কীভাবে উচ্চতর আদালত কর্তৃক দণ্ডিত হয়ে কানাডা, আমেরিকায় থাকে? ওইসব রাষ্ট্র কেন এই খুনিদের ফেরত দিচ্ছে না? তারা যদি সত্যিকার মানবতায় বিশ^াস করত তাহলে কীভাবে এই কিলারদের তারা আশ্রয় দেয়? তবে হ্যাঁ, এ জন্য আমাদের কোনো উদ্যোগ নেই, তা কিন্তু নয়। আমাদের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাদের অনুরোধ করেছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জীবনেও অনেক ঝুঁকি রয়েছে। তিনি অনেক ঝুঁকি নিয়ে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর হত্যকারীদের বিচার করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। তাদের রায় কার্যকর হয়েছে। কাজেই তারা এখনো চাইবে তাকে হত্যা করতে। দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে শেখ হাসিনা সেই মৌলবাদ অপশক্তির সঙ্গে আপস করেননি। দেশকে তিনি যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সেই জন্য আমরা সব সময় বলি, শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ নেতা না থাকলে দেশ পিছিয়ে যায়। এটা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে আমরা দেখেছি। এখনো ওই কিলাররা সক্রিয়। আর বিএনপি হচ্ছে তাদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়। ২১ আগস্টের মতো নারকীয় ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এই অপশক্তির টার্গেট হচ্ছে এখন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকে টার্গেট করে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। কারণ দেশটাকে যেন তারা পাকিস্তানের ধারায় ফিরিয়ে আনতে পারে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির যেন উত্থান ঘটে। তখন ডান-বাম সব শক্তি এক হয়ে গিয়েছিল। আবারো কিন্তু তারা এক হয়ে গেছে। তবে আমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরাও আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। কোনো অপশক্তিকে আমরা ভয় পাই না।
আর তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে বলব, বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। তাকে বুঝতে হবে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং বঙ্গবন্ধুর কারা জীবনের ইতিহাস পড়তে হবে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ অবিচ্ছিন্ন। তাঁর সংগ্রামী জীবনটাই ছিল বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্য। নতুন প্রজন্মকে মনে রাখতে হবে, দেশ স্বাধীন হয়েছে বিধায় তরুণ প্রজন্ম নতুনভাবে জীবন গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছে। তাদের মনে রাখতে হবে পরাধীন দেশে থেকে কিন্তু কোনো ব্যক্তি প্রতিভা প্রকাশের কোনো সুযোগ পায় না। দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। প্রতিভা বিকাশের সুযোগ থাকে না। এই সুযোগের জন্য একটা দেশ স্বাধীন হতে হবে। সেই পরিবেশ থাকতে হবে। বাংলাদেশে কিন্তু এটি সৃষ্টি করে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর দল আওয়ামী লীগ সেই পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। আমরা যখন পরাধীন ছিলাম, তখন কিন্তু আমাদের শিক্ষা-দীক্ষা, প্রতিভা, যোগ্যতার কোনো কমতি ছিল না। তারপরও এসব কিছুর মূল্যায়ন ছিল না। আমরা ছিলাম অবহেলিত নাগরিক। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবন দিয়ে, সংগ্রাম দিয়ে, লড়াই করে সেটা করে গেছেন। কাজেই বঙ্গবন্ধুকে জানতে ও বুঝতে পারলে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম সৃষ্টি হবে।
মোহাম্মদ নাসিম : আওয়ামী লীগ নেতা, সংসদ সদস্য, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
অনুলিখন : ঝর্ণা মনি ও মুহাম্মদ রুহুল আমিন