বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক অধ্যাপক ডক্টর আনিসুজ্জামান। মহান ভাষা আন্দোলন, রবীন্দ্র উচ্ছেদবিরোধী আন্দোলন, রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী আন্দোলন এবং ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ১৯৭৫-এর আগস্ট, পরবর্তী বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলেছেন ভোরের কাগজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ভোরের কাগজের সিনিয়র রিপোর্টার ঝর্ণা মনি।
প্রশ্ন : বাঙালির শোকের মাস আগস্ট। কেমন ছিল পঁচাত্তরের সেই রক্তাক্ত আগস্ট মাস?
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান : পঁচাত্তরের ১৩ আগস্ট লন্ডন থেকে আমি সপরিবারে দেশে ফিরি। দেশে ফিরে আমি প্রথমে কারো সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারিনি। কারণ আমাদের টেলিফোন সংযোগটি বিচ্ছিন্ন ছিল। এরপর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই জাতির জীবনে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে যায়। ১৫ আগস্ট ভোরে বেতারে এই দুঃসংবাদ শুনে আমার আব্বা আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে জানালেন, বঙ্গবন্ধু খুন হয়েছেন। বেশ কিছুক্ষণ আমি স্তম্ভিত ছিলাম। এরপর আমি প্রথমেই গিয়েছিলাম ড. কামাল হোসেনের বাসভবনে। কামাল হোসেন তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ওই সময় তিনি যুগো¯øাভিয়ায় ছিলেন। তাই তার পরিবারের নিরাপত্তার কথা আমার প্রথম মনে হলো। কারণ আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছিল- বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলেছে, কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর একজন ঘনিষ্ঠ সহচর। তার অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের সদস্যদের জীবনও সংশয়ে রয়েছে হয়তো। এই ভেবেই আমি গিয়েছিলাম। অবশ্য সেখানে গিয়ে আমাকে কিছুই করতে হয়নি। কারণ এক আত্মীয় এসে তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। এরপর আমি আমাদের বাসা শাঁখারীবাজারে ফিরে যাই। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যাই। সর্বত্রই দেখলাম, এক গুমোট অবস্থা। মানুষ খুব ভীত, সন্ত্রস্ত হয়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেই আমার এক অনুজপ্রতিম সরকারি আমলার সঙ্গে দেখা হলো। তিনিও খুব বিচলিত। বাইরে অবস্থা দেখতে বেরিয়েছিলেন। একটা জিনিস খুব লক্ষ করছিলাম, আমরা যারা খুব বিচলিত, তারাও কিন্তু ঐক্যবদ্ধভাবে কিছু করার কথা ভাবতে পারছিলাম না। কেমন যেন সবকিছু পাল্টে গেছে। স্তম্ভিত, শোকাহত মানুষগুলো ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে। বাড়ি ফিরলাম। চুপ করেই কাটালাম পুরো দিন। এভাবেই শোকের দিনটি পার করলাম। এখন পেছন ফিরে মনে হয়, সে দিন আমাদের সবার উচিত ছিল রাজপথে নামা, প্রতিবাদ করা। যা আমরা করতে পারিনি। দু’এক জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে মিছিল হয়েছে, কিন্তু আমরা এক হয়ে সবাই রাস্তায় নামতে পারিনি। বরং আমাদের নাকের ডগায় বন্দুকের ভয় দেখিয়ে রাজপথের কোথাও কোথাও উল্লাস করেছে খুনি হায়েনার দল।
প্রশ্ন : আপনি বললেন, আজ পেছন ফিরে মনে হয়, সবার তখন রাজপথে নামা উচিত ছিল। তাহলে কেন জাতির পিতার হত্যার প্রতিবাদে সবাই রাজপথে নামেনি?
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান : তখন পরিস্থিতি আমাদের অনুক‚লে ছিল না। কেউ ভয়ে ভীত, কেউ শোকাহত আর কেউ বুঝে উঠতে পারছিলেন না কী করা উচিত। অন্যদিকে চারদিকে কারফিউয়ের মতো অবস্থা। টেলিফোন সংযোগ প্রায় বিচ্ছিন্নই বলা চলে। একেবারেই যে প্রতিবাদ হয়নি তাও নয়। কেউ কেউ প্রতিবাদ করেছেন। ছোট ছোট কিছু মিছিল হয়েছে তবে তা বড় কোনো ঝাঁকুনি তৈরি করতে পারেনি।
প্রশ্ন : ৩২ নম্বরের কী পরিস্থিতি ছিল? ৩২ নম্বরের আশপাশের মানুষদের অবস্থা কেমন ছিল? আপনি কি সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন?
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান : ৩২ নম্বর তখন আর্মির দখলে। কাউকেই যেতে দিচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল মৃতপুরী। চারপাশের মানুষরা ভয়ে ভীত। শুনেছি আশপাশের অনেক বাড়ির মানুষই নিজের নিরাপত্তার জন্য অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন।
প্রশ্ন : ১৫ আগস্টের পরের দিনগুলো কেমন ছিল?
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান : জাতির জন্য খুব দুর্ভাগ্যজনক দিন হচ্ছে ১৫ আগস্ট। এরপরেই শুরু হলো জাতির ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। সাধারণ মানুষদের দিন কাটছিল অত্যন্ত অস্থিরতার মধ্যে। খুব ভয়ঙ্কর ছিল ওই দিনগুলো। কারণ কখন কী হচ্ছে বা ঘটতে যাচ্ছে- কেউ তা অনুধাবন করতে পারছিল না। অন্যদিকে বঙ্গভবনে একটা রাজনৈতিক পরিবর্তন হতে শুরু হলো। ১৫ নভেম্বরের পরে মানুষ আবার নতুন করে শোকাহত হলো কলঙ্কময় জেলহত্যায়। দিশাহারা জাতি। সেনাবাহিনীর মধ্যেই অভ্যুত্থান হলো। সেই অভ্যুত্থান আবার ব্যর্থ হলো। এতে নিহত হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশাররফ, নুরুল হুদা, এ টি এম হায়দার। ৭ নভেম্বর আবার পাল্টা ক্যু করে কর্নেল তাহের জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধানের পদ ফিরিয়ে দিলেন। মোশতাককে সরিয়ে দিয়ে বিচারপতি সায়েম তখন দেশের প্রেসিডেন্ট। এরপর সামরিক শাসন প্রবর্তিত হলো। আবার গণতন্ত্রের জন্য মানুষকে দিনের পর দিন আন্দোলন করতে হলো। বাংলাদেশ তখন এক ঘন আঁধারে নিমজ্জিত।
প্রশ্ন : ১৫ আগস্টের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে কারা কারা জড়িত বলে আপনি বিশ্বাস করেন?
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান : ষড়যন্ত্র তো ছিল দেশের বাইরে। ষড়যন্ত্র ছাড়া এত বড় ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটানো সম্ভব ছিল না। হতে পারতও না। ষড়যন্ত্রে কারা লিপ্ত ছিলেন এই বিষয়ে এখনো সম্পূর্ণ চিত্র আমাদের কাছে নেই। তবে এটা স্পষ্ট যে, কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা এবং সামরিক বাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটিয়েছেন। এটুকু আজ দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে, জেনারেল জিয়াউর রহমান জানতেন এরকম ভয়ঙ্কর একটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু তিনি এটা বাধা দেয়ার চেষ্টা করেননি। আর পরবর্তীকালে দেখা গেছে, খুনিদের দায়মুক্তি দেয়া হলো যা বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্যতম অধ্যাদেশ এবং দুজন ছাড়া (তারা নাকি নিতে চায়নি!) বাকি সব খুনিকে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায়, হত্যাকারী এবং হত্যাকাণ্ডের সম্পৃক্তদের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কর্নেল তাহেরের ভূমিকা নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রয়েছে। কেউ মনে করেন, ৭ নভেম্বর কর্নেল তাহের যেভাবে জিয়াকে মুক্ত করলেন এবং সেনাপ্রধানের পদ ফিরিয়ে দিলেন, এর মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা ফের নতুন করে দাঁড়ানোর জায়গা পেল। আবার কেউ কেউ মনে করেন, কর্নেল তাহের বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন না, তবে তিনি যেটা করেছিলেন সেটা জিয়াউর রহমানের পক্ষে বা সামরিক শাসকদের ক্ষমতা পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়েছিল। পরে তো সেই জিয়াউর রহমানই কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে খন্দকার মোশতাকের যে সরাসরি হাত ছিল, তার অনেক প্রমাণ আছে। বঙ্গবন্ধুর চার সহযোগীকে হত্যার পেছনেও ছিল খন্দকার মোশতাক। কারাগারে সাধারণত কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। আর গভীর রাতে অস্ত্র হাতে একদল গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সহযোগী জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে খুন করা- এই দায়ও মোশতাকেরই। কারণ তার নির্দেশ ছাড়া এটি সম্ভব নয়। আর সমস্ত ব্যাপারই যে বাংলাদেশ বিরোধী, এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। তারা তাদেরই হত্যা করেছে যারা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামরুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকেও তারা বাঁচতে দেয়নি। নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। তবে আমি মনে করি, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে ৪২ বছর ধরে যাদের নাম উচ্চারিত হচ্ছে, এরা ছাড়াও কলঙ্কিত এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে আরো ষড়যন্ত্রকারী রয়েছেন, যাদের আমরা এখনো চিহ্নিত করতে পারিনি।
প্রশ্ন : হত্যার পেছনের আন্তর্জাতিক শক্তি কারা বলে আপনি মনে করেন?
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান : আন্তর্জাতিক শক্তি তখন অনেক বেশি সক্রিয় ছিল। আমেরিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতা মানতে পারেনি। চীন পারেনি। পাকিস্তানের ভুট্টো বললেন, তিনি ইসলামিক রিপাবলিকান বাংলাদেশ হলে বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন। বাংলাদেশে আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের চলাফেরা থেকেও সন্দেহ হয় যে এই ঘটনার পেছনে তাদেরও হাত ছিল। মার্কিন গোপন নথিপত্র আরো প্রকাশিত হলে আমরা জানতে পারব এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে আরো কারা কারা জড়িত ছিল। এখন যেমন জানা যাচ্ছে পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জড়িত ছিল। তবে এটা ঠিক বঙ্গবন্ধুর প্রতি পররাষ্ট্র সচিব হেনরি কিসিঞ্জারের ব্যক্তিগত ক্ষোভ ছিল। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিক্সনও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি খুবই বিক্ষুব্ধ ছিলেন। কাজেই মার্কিন ভূমিকা থাকা খুবই স্বাভাবিক। এত বড় একটি ঘটনা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুতেই সম্ভব নয়।
প্রশ্ন : তৎকালীন সেনাপ্রধান এবং বিমানবাহিনীর প্রধানের ভূমিকাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান : আমার ধারণা, ওই অবস্থায় তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহ, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার পরিস্থিতির শিকার ছিলেন। বিমানবাহিনীর তো কিছুই করার ছিল না। আর সেনাবাহিনী যেটুকু করতে পারত তা হয়নি কারণ সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাকে এমনভাবে ঘিরে রাখা হয়েছিল যাতে তিনি কোনো কিছু করতে না পারেন। আর হত্যাকাণ্ডের পর তো তাকে সেনাপ্রধান থেকে সরিয়ে দিয়ে জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করা হয়েছিল যেন তিনি কোনো পাল্টা অ্যাকশনে না যেতে পারেন। এছাড়া তাকে বিচ্ছিন্ন রাখার জন্য রাষ্ট্রদূত করে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। এ নিয়ে জেনারেল সফিউল্লাহর আত্মপক্ষ সমর্থনের বেশ কিছু বক্তৃতা রয়েছে। এসব বক্তৃতায় তিনি বিষয়টি ক্লিয়ার করেছেন। কেন তিনি ওই সময় কিছু করতে পারেননি এটি বলার চেষ্টা করেছেন। তিনি অনেক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘ওই সময় আমি নিজের প্রাণ দিতে পারতাম, এছাড়া আর কিছুই করতে পারতাম না।’ সত্যি অর্থে ১৫ আগস্টের ভয়াবহতা অনেকেই বিমূঢ় করে দিয়েছিল। আর যেহেতু সেনাবাহিনীর মধ্য থেকেই ঘটনাটি ঘটেছে, তাই কে কাকে বিশ্বাস করবেন, এটি তারা বুঝে উঠতে পারছিলেন না।
প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর শিক্ষক সমাজের অবস্থান কী ছিল?
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান : আমি তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলাম। দেশের শিক্ষক সমাজ তখন বিভক্ত ছিল। বিশেষ করে চতুর্থ সংশোধনী নিয়ে শিক্ষক সমাজের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি ছিল। এছাড়া বাকশাল একটি প্রভাব ফেলেছিল। এসব কারণে শিক্ষক সমাজের বড় অংশ এই হত্যাকাণ্ডের পর ভেঙে পড়লেও প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেননি। আর কোনো কোনো শিক্ষকরা ছিলেন দর্শকমাত্র।
প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধুর একমাত্র স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ে তোলা। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ৪২ বছর পর কতটুকু এগিয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ?
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান : চার দশক অনেক সময়। দীর্ঘ ৪২ বছরে বিশ্ব অনেক কিছু উলট-পালট হয়ে গেছে। কাজেই বঙ্গবন্ধু যা ভেবেছিলেন, তা অনুসরণ করা অনেক কঠিন। কিন্তু এটা ঠিক বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ একটা স্বাবলম্বী রাষ্ট্র হোক, পরনির্ভরশীলতা থাকবে না, প্রতিটি মানুষ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করবে- সেটা আমরা এখনো পুরোপুরি করতে পারিনি সত্য। তবে ৪২ বছরে আমাদের অর্থনীতি অনেক এগিয়েছে। প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে। আরো অনেক কিছু করার বাকি রয়েছে। আমাদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে হবে। আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়িত হলেই দেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে। সমৃদ্ধি লাভ করবে। সুশাসন থাকবে। আমাদের এটি অর্জন করতে হবে। কারণ বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার শুরু হয়। এরই চরম পরিণতি জঙ্গিবাদ। জঙ্গিবাদের মূল খুঁজতে হলে আমাদের ওখানেই ফিরে যেতে হবে যখন রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে সম্পৃক্ত করা হয়। আজকে আমরা যা দেখছি তা সংবিধান থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বাদ দেয়ার ফল। তবে এটা ঠিক যে, এদের পেছনে আন্তর্জাতিক শক্তি ও ষড়যন্ত্র রয়েছে। না হলে এরা এতদূর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করতে পারত না। অবশ্য বাংলাদেশ সরকার যেভাবে কঠোর হাতে জঙ্গি দমনের চেষ্টা করছে, এতে জঙ্গিবাদের শেকড় গজানো সম্ভব নয়।
প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এখন ক্ষমতাসীন, যিনি আপনার একজন প্রিয় শিক্ষার্থীও। শেখ হাসিনা কি তার বাবার স্বপ্ন পূরণের পথেই চলছেন?
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান : বঙ্গবন্ধু যেভাবে হেঁটেছেন, উনি হয়তো সেভাবে হাঁটছেন না, কিন্তু এ কথা ঠিক যে, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না এলে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং রায় কার্যকর করতে পারতাম না। সপরিবারে জাতির পিতার হত্যাকারীদের ফাঁসিতে ঝুলাতে পারতাম না। পিতৃহন্তারকের কলঙ্ক থেকে জাতি মুক্তি পেত না। এছাড়া জঙ্গিবাদ দমনে শেখ হাসিনা যেভাবে জিরো টলারেন্স দেখিয়ে যাচ্ছেন- এটি অসম সাহসিকতার পরিচয়। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এসব সম্ভব হয়েছে। অন্যথায় এসব ভাবা আমাদের জন্য সোনার পাথর বাটির মতোই অলীক স্বপ্ন হিসেবেই থাকত।
প্রশ্ন : তরুণ প্রজন্মের প্রতি আপনার কী আশীর্বাদ থাকবে?
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান : তরুণ প্রজন্মের প্রতি আমার দুটি কথা বলার আছে। প্রথম কথা হচ্ছে- ইতিহাসের সত্যতা আগে জানতে হবে। দুই- মুক্তিযুদ্ধের যে লক্ষ্য ও আদর্শ ছিল, সেই লক্ষ্য এবং আদর্শ ধারণ করেই তাদের কাজ করতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে। কোনো দলীয় পর্যায়ে কাজ করার আহ্বান আমি তাদের জানাচ্ছি না, শুধু এটুকুই আমার আহ্বান- বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তারা যেন দেশকে শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে, এই উদ্দেশ্যে তারা কাজ করে যাবে।