জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫) শেষবার ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লায় এলেও প্রথম কবে কুমিল্লায় এসেছিলেন তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। ১৯৪৯ সালে তৎকালীন ত্রিপুরার (কুমিল্লা) নবীনগরের কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের দ্বারোদঘাটন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সভায় ছাত্রনেতা হিসেবে বক্তব্য রাখতে এবং ১৯৫১ সালে কুমিল্লা শহরের দারোগাবাড়িতে বঙ্গবন্ধু প্রথম এসেছিলেন বলে জানা যায়। ১৯৪৯ সালে কৃষ্ণনগরে আসার বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে সবিস্তারে উল্লেখ থাকলেও দারোগাবাড়িতে আসার বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ১৯৫২ সালের ৮ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্নস্থানে সফররত আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম কুমিল্লা টাউন হলে ত্রিপুরা জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখেন। বিপ্লবী আলী তাহের মজুমদারের মতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়ে আনন্দভবনে হোটেল আরামবাগের উপর স্থাপিত ছাত্রলীগ কার্যালয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়।বর্তমান কুমিল্লায় প্রথম কবে জাতির জনক এসেছেন তার নির্দিষ্ট দিন তারিখের তথ্য প্রমাণ না থাকলেও কুমিল্লার সাথে তাঁর যে নিবিড় সম্পর্ক ছিল তার ব্যাপক ও যথার্থ প্রমাণ পাওয়া যায়। বঙ্গবন্ধু তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কুমিল্লায় পনেরটির বেশি বিশাল জনসভায় বক্তব্য দিয়েছেন। জীবনের একেবারে শেষ দিকে সাত মাস আগে কুমিল্লা সেনানিবাসে বাংলাদেশ সামরিক একাডেমির প্রথম ব্যাচের প্রশিণ শেষে সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তান গণ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ৪৪ দিন আগে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল কুমিল্লার লাকসামে এক জনসভায় বক্তৃতা করেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনের হাঙ্গামার মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার ১০ দিন পর এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। যদিও তাঁর জীবদ্দশায় ১৯৫৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা টাউন হল মাঠে তিনি প্রথম বিশাল জনসভায় বক্তব্য রাখেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। ১৯৫৫ সালের ২১ অক্টোবর পুনরায় আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর সেবারই তিনি প্রথম কুমিল্লায় আসেন। আওয়ামীলীগ আয়োজিত ঐ জনসভাটি ছিল সে সময়ে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় জনসভা। আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কুমিল্লায় প্রথম ও শেষ বিশাল জনসমুদ্রে বক্তব্য রাখেন ১৯৭২ সালের ৪ জুলাই। শহরে স্থান সংকুলান হবে না বলে জনসভাটি আয়োজন করা হয় কুমিল্লা শহরতলীর বিশাল খোলা মাঠ হাউজিং এস্টেট এলাকায় কেটিসিসিএ লিমিটেডের সামনে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেইসকোর্সের জনসভার পর এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসমুদ্র বলে কুমিল্লায় কথিত রয়েছে। প্রথম ও শেষ এই দুইটি বড় জনসভা ছাড়াও বঙ্গবন্ধু কুমিল্লা টাউন হল মাঠে আরো ছয়টি বিশাল জনসভায় বক্তব্য রাখেন, এর মধ্যে ১৯৬৬ সালের ২৯ এপ্রিল ৬ দফার পক্ষে জনসভা ও ১৯৭০ সালের ২৩ জানুয়ারির জনসভার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করার দাবি রাখে। স্বাধীনতার পর কুমিল্লা সেনানিবাসে সামরিক একাডেমির প্রথম ব্যাচের প্রশিণের উদ্বোধন ও সমাপনী অনুষ্ঠান ও কুমিল্লা পুলিশ লাইন্সের প্যারেডে অংশ নেয়া ছাড়াও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কুমিল্লায় শতাধিক ছোট বড় জনসভা, অগণিত পথসভায় বক্তব্য রাখেন। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে মুক্তি দেয়ার পর কুমিল্লা সফরকালে তাঁর অনেকগুলো পথসভা জনসভায় রূপ নেয়। পাকিস্তানের লাহোরে ৫ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি পেশ করার পর চট্টগ্রামে ঐতিহাসিক ছয় দফার জনসভার পর ঢাকা যাওয়ার পথে কুমিল্লার চৌয়ারাতে প্রথম ছয়দফার পক্ষে প্রচারণার অংশ হিসেবে পথসভায় বক্তব্য রাখেন। পথসভাটিতে এতো বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটে যে তা জনসভায় রূপ নেয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কুমিল্লায় সব মিলিয়ে কতবার এসেছেন তার পরিসংখ্যান দেয়াও কঠিন এবং অসম্ভব। কেননা ঢাকা থেকে সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম অঞ্চলে আসা যাওয়ার পথে প্রায়ই তিনি কুমিল্লায় অবস্থান করতেন। বিশেষ করে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে সে সময় তিনটি ফেরি থাকায় এবং রাত ১০টার পর ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় হলে তিনি কুমিল্লায় থেকে যেতেন। যদি তথ্য প্রমাণ দিয়ে বলতে হয় তাহলে বলা যায় অন্তত ৩৬ বার বঙ্গবন্ধু কুমিল্লায় এসেছিলেন। কত দিন ছিলেন সেটিও বলা মুশকিল। তবে সবচেয়ে বেশি দিন ছিলেন ১৯৫৮ সালের জানুয়ারি মাসে। সে সময় সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কোয়ালিশন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য ও শ্রম, কৃষি শিল্পোন্নয়ন, সমাজ কল্যাণ, পল্লী উন্নয়ন পরিকল্পনা ও দুর্নীতি দমন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করার পর প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দেখা দেয়ায় ত্রিপুরা তথা কুমিল্লার বুড়িচংয়ে উপ-নির্বাচন। এ নির্বাচনে ন্যাপের প্রার্থীকে পরাজিত করার পাশাপাশি আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে বিজয়ী করার ধ্যানজ্ঞানে নিবেদিত হন তিনি। কারণ ১৯৫৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কাগমারিতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগের সম্মেলনের পর মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আওয়ামীলীগ থেকে বেরিয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ গঠন করলে কুমিল্লার বুড়িচংয়ের বেশিরভাগ আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী ন্যাপে যোগ দেন। সে কারণে বঙ্গবন্ধু ১৯৫৮ সালের ৮ ও ২২ জানুয়ারি কুমিল্লায় আসেন। ৩০ জানুয়ারি উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, ফল ঘোষণা হয় ৫ ফেব্রুয়ারি। বঙ্গবন্ধুকে সে সময় বুড়িচংয়ে বেশি দিন অবস্থান করতে হয়েছিল। সে সময় বিশাল ব্যবধানে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আমীর হোসেন বিজয়ী হন। আওয়ামীলীগের প্রধান শহীদ সোহরাওয়ার্দী, পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খানও সে প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন। আর ন্যাপ প্রার্থী অধ্যাপক মফিজুল ইসলামের পক্ষে ন্যাপ নেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রচারে অংশ নেন। জাতীয় রাজনীতিতে এ নির্বাচন ছিল সবচেয়ে বেশি আলোচিত। বঙ্গবন্ধু বেশিরভাগ সময় উঠতেন কুমিল্লা শহরের রেইসকোর্সে ত্রিপুরা জেলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন যুগ্মআহবায়ক ও পরে কুমিল্লা জেলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আহমেদ আলীর গফুর ম্যানসনের বাসায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক তখন কুমিল্লা শহরের উপর দিয়েছিল। রাত্রি যাপনকালে তিনি কুমিল্লা পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান বিপ্লবী অতীন্দ্র মোহন রায় এবং ভাষা সংগ্রামের রূপকার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের সাথে সময় কাটাতেন। খাওয়া দাওয়ার সময় টাকি মাছের ভর্তা বেশি পছন্দ করতেন। টাকি মাছ না পাওয়া গেলে কৈ মাছ; ভেজে দেয়া হতো বঙ্গবন্ধুকে। এ প্রসঙ্গে প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা অ্যাডভোকেট আহমদ আলী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কতবার এসেছেন তার কোন সঠিক হিসাব নাই। রাখা সম্ভবও হয় নি।’
বঙ্গবন্ধুকে প্রথম হত্যা চেষ্টায় কুমিল্লার যুবক:
১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আওয়ামীলীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করতে পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্রে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন চরম সংকটের মুখে তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার চেষ্টা চালায় কুমিল্লার লাকসামের দুর্লভপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফা ওরফে কবীর নামে এক যুবক। তার বাবার নাম সিদ্দিকুর রহমান। ১৯৭১ সালের ৮ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গবন্ধুর ঢাকার বাড়িতে ব্যক্তিগত কথা আছে বলে বার বার বাড়িতে প্রবেশের চেষ্টা করে। কবীর জোর করে ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে আটক করে। তার কাছে একটি ছুরি পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে সেই যুবক জানায় ‘শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করাই ছিল তার উদ্দেশ্য।’ যুবকটি আরো জানায় যে, একটি সুসংগঠিত দল তাকে এই কাজে নিয়োগ করেছে এবং এই দলের লোকেরা তাকে প্রশিক্ষণও দিয়েছে। আটক করার পর যুবক গোলাম মোস্তফা শরীফকে ঢাকার পুলিশ সুপার ই. এ. চৌধুরীর কাছে সোপর্দ করা হয়। এ ব্যাপারে একটি মামলাও দায়ের করা হয়। হত্যা চেষ্টার খবর দেশব্যাপি ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। খবরটি বিবিসিতেও প্রচারিত হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু বার্ডে:
১৯৭৫ সালের মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য বিভিন্ন জায়গায় মিলিত হয় খুনিরা। এর মধ্যে প্রথম গোপন বৈঠক করে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে যা কুমিল্লার বার্ড নামে সর্বাধিক পরিচিত। খুনিরা মিলিত হয় পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম বিশ^াসঘাতক, প্রতারক ও ভ- খোন্দকার মোশতাক আহমদের কুমিল্লার দাউদকান্দির দশপাড়ার বাসায়। তাছাড়া কুমিল্লার চান্দিনার লে. কর্নেল অব. আবদুর রশিদ খোন্দকারের ঢাকার বাসায়ও বৈঠক করে ঘাতকরা। ঘাতকরা বৈঠক করে জেনারেল জিয়াউর রহমানের সাথেও। ধুরন্ধর খোন্দকার মোশতাক আহমদকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব খুব বিশ^াস করতেন। যে কারণে বঙ্গবন্ধুর বড় দুই ছেলে শেখ কামাল ও শেখ জামালের বিয়েতে খোন্দকার মোশতাক হয়েছিল উকিল বাবা। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার শুনানিতে সরকারি এটর্নি জেনারেল মাহাবুবে আলম প্রশ্ন রেখে বলেন-‘কত বড় বিশ^াসঘাতক হলে এ মোশতাকই পাঁচ মাস পর বিপথগামী সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করতে পারে? কর্নেল রশিদ ও ফারুক আত্মস্বীকৃত খুনি। তাদের সাক্ষাতকার আছে। সানডে টাইমসে ছাপা হয়েছে। তাছাড়া কর্নেল রশিদ ও ফারুক হাইকোর্টে একটি রিটে খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সাক্ষী ছিলেন কুমিল্লা জেলা আওয়ামীলীগের প্রাক্তন সভাপতি অধ্যাপক খোরশেদ আলম। তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। মামলার সাক্ষ্যে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে ১৯৭৪ সনের বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা হয়। খাদ্যশস্য বিনষ্ট হয়। খাদ্যাভাব দেখা দেয়ার উপক্রম হয়। তখন কুমিল্লায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বার্ডে বন্যা উত্তর কর্মসূচি নেয়া হয়। মাহবুব আলম চাষী বার্ড- এর পরিচালক হিসেবে ছিল। খন্দকার মোশতাক সাহেব তাকে এই পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। সেই বন্যা উত্তর কর্মসূচি রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পায় এবং সেই কর্মসূচি স্বনির্ভর বাংলাদেশ কর্মসূচি হিসেবে চালু হয়। আমি এই স্বনির্ভর কর্মসূচি কমিটির একজন সহ-সভাপতি ছিলাম। এই কর্মসূচির মিটিং বার্ড- এ হত। ১৯৭৫ সনের মার্চের শেষের দিকে কুমিল্লা বার্ডে খোন্দকার মোশতাক এবং মাহবুব আলম চাষীর উদ্যোগে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্মেলন হয়। সেই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খোন্দকার মোশতাক, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, মাহবুব আলম চাষী এবং আমি নিজেসহ আরো অনেকে। সেই সম্মেলন তিন দিন চলে। দ্বিতীয় দিনের বিকালে বার্ডের রেস্ট হাউজের লাউঞ্জে বসে তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, দুইজন এমপি, আমি নিজে বসিয়া চা-পান করেছিলাম। তখন দেখলাম একটি আর্মি জিপে করে সিভিল ড্রেসে খন্দকার মোশতাক সাহেবের আত্মীয় মেজর খোন্দকার আঃ রশীদ এবং আরো একজন সামরিক অফিসার (বিএআরডি) রেস্ট হাউসে মোশতাক সাহেবের কক্ষে যান। মাহবুব আলম চাষী তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে নিয়ে ঐ কক্ষে যান। সেখানে প্রায় ৩০/৪০ মিনিট কাটান। তারপর মাগরিবের আগে ঐ সামরিক অফিসাররা চলে যান। ১৯৭৫ সালের মে/জুন মাসে খোন্দকার মোশতাকের গ্রামের বাড়ি এলাকায় একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট দেয়া হয়। ঐ টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় মোশতাক সাহেবের আমন্ত্রণে শিক্ষামন্ত্রী ইউসুফ আলী, চিফ-হুইপ শাহ মোয়াজ্জেম, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, আলী আশরাফ এমপি এবং আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম। খেলা শেষে মোশতাক সাহেবের বাড়িতে চা-চক্রে যোগদান করি। চা-পানের সময় খন্দকার মোশতাক, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, শাহ মোয়াজ্জেম, বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন পলিসি ও কর্মসূচির সমালোচনা করেন। সেই সমালোচনায় শাহ মোয়াজ্জেমকে অত্যন্ত উৎসাহী এবং সোচ্চার দেখা গেল। মাঝে মাঝে বিভিন্ন সময়ে খন্দকার মোশতাককে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন পলিসির ব্যাপারে বিদ্বেষমূলকভাবে কটাক্ষ করতে দেখা যায়। তারপর ঐ সনের জুন/জুলাইতে দাউদকান্দি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সম্মেলন হয়। সেই সম্মেলনে মোশতাক সাহেব, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর এবং আমি নিজে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। আলী আশরাফ এমপিও উপস্থিত ছিলেন। পরে মাহবুব আলম চাষীও আসেন। সেই সম্মেলন চলাকালে আর্মির জিপে মেজর খন্দকার আবদুর রশীদ, মেজর ফারুক, মেজর শাহরিয়ার এবং আরো কয়েকজন সামরিক অফিসার আসেন। সম্মেলন শেষে খোন্দকার মোশতাক, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, মাহবুব আলম চাষী, মেজর রশীদ, মেজর ফারুক, মেজর শাহরিয়ার খন্দকার মোশতাকের বাড়িতে চলে যান। আমি সেখান থেকে কুমিল্লা চলে যাই।’ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামিদের বক্তব্য এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের রায়েও বেরিয়ে আসে কুমিল্লার বার্ডে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্র শুরুর কথা। ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে ষড়যন্ত্র ছিল। এই ষড়যন্ত্রশুরু হয় ১৯৭৫ সালের প্রথম দিকে। ওই বছরের মার্চে কুমিল্লার বার্ডের রেষ্ট হাউসে। এখানে তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক আহমদের সঙ্গে কর্নেল সৈয়দ ফারুক ও কর্নেল খোন্দকার আবদুর রশিদসহ বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা গোপন বৈঠক করেন। ঐ বৈঠকে তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুর ও সাবেক সচিব মাহাবুব আলম চাষী উপস্থিত ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় কুমিল্লার দাউদকান্দির দশপাড়ায় ও ৫৪ আগামসি লেনে খোন্দকার মোশতাক আহমদের বাসভবনে, গাজীপুরের সালনায়, লে. কর্নেল আবদুর রশিদের ক্যান্টনমেন্টের বাসায় এবং লে. কর্নেল শাহরিয়ার রশীদের ক্যান্টনমেন্টের বাসায় একাধিক বৈঠক হয়। সেই সব বৈঠকের পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাতে ক্যান্টনমেন্টের বালুরঘাটে সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করেন কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান। ওই বক্তব্যের পরই বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করার জন্য ট্যাঙ্কসহ সেনা সদস্যদের পাঠানো হয়।’বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক রায়ে উল্লেখ করেন-‘বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এটা প্রমাণ করেন যে, ১৯৭৫ সালের জুন/জুলাই মাসে দাউদকান্দিতে পরিবার পরিকল্পনার একটি সেমিনার শেষে খোন্দকার মোশতাকের সাথে কর্নেল রশিদ ও কর্নেল ফারুকের বৈঠক হয়। এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব মাহবুবুল আলম চাষী। ওই বৈঠকেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ব্যাপারে ষড়যন্ত্র চূড়ান্ত হয়। এরপর আরও একাধিক বৈঠক হয়। এসব ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই খোন্দকার মোশতাক ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রেডিওতে আসেন এবং জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।’ রায়ের কর্নেল ফারুক রহমান, লে. কর্নেল অব. শাহরিয়ার রশিদ খান ও মহিউদ্দিন আহমেদের জবানবন্দি উল্লেখ করে বলা হয়, ‘মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন। ১৫ আগস্টের আগেই মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ও খোন্দকার মোশতাক আহমদের সাথে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে কর্নেল অব সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল অব. খোন্দকার আবদুর রশিদ ও মেজর অব. ডালিমের সাথে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। জিয়াউর রহমান ও খোন্দকার মোশতাকের সাথে তারা যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। কর্নেল রশিদকে পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বিশেষ করে খোন্দকার মোশতাকের সাথে যোগাযোগের দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৫ আগস্টের পর বিএনপি নেতা সাইফুর রহমানের বাসায় একটি বৈঠক হয়। এ বৈঠকে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনা প্রধান এবং সাইফুর রহমান ও কর্নেল অব. আবদুর রশিদকে মন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবেই জিয়াউর রহমানকে সেনা প্রধান করা হলেও কর্নেল রশিদকে মন্ত্রী করা হয় নি।’ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপিত মো: তফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের ৫ সদস্যের বিশেষ বেঞ্চে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার শুনানিতে অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘কর্নেল অব. সৈয়দ ফারুক রহমান ও কর্নেল অব. খোন্দকার আবদুর রশীদের নেতৃত্বে পার্টি গঠন করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। ১৯৮০ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এই ফ্রিডমপার্টির চেয়ারম্যান কর্নেল অব. সৈয়দ ফারুক রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। মেজর অব. বজলুল হুদা এই ফ্রিডমপার্টির সেক্রেটারি হয়েছেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে কর্নেল অব. খোন্দকার আবদুর রশিদ কুমিল্লার চান্দিনা আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ওই সংসদে তাকে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত করা হয়।
কলঙ্কের চিহ্ন কুমিল্লার তিনটি বাড়ি:
বাঙালি জাতির ইতিহাসে কলঙ্কের চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কুমিল্লার তিনটি বাড়ি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনিরা থাকতেন এই বাড়িগুলোতে। কুমিল্লার দাউদকান্দির দশপাড়ায় খোন্দকার মোশতাক আহমদের বাড়ি, চান্দিনার ছয়ঘড়িয়ায় কর্নেল আবদুর রশিদ খোন্দকারের বাড়ি আর মেজর শরিফুল হক ডালিম কুমিল্লা শহরের অশোকতলার যে বাড়িতে থাকতো সেই বাড়ি। খোন্দকার মোশতাক আহমেদ মারা গেলেও কর্নেল আবদুর রশিদ খোন্দকার আর মেজর শরিফুল হক ডালিম কোথায় আছে তা জানে না সরকারও। কিন্ত তাদের বসবাসের এই বাড়িগুলোতে সেই সব খুনিরা বা তাদের উত্তরাধিকাররা না থাকলেও বাড়িগুলো বহন করছে অভিশাপের চিহ্ন। কুমিল্লাকে কলঙ্কিত করা এসব বাড়িগুলোকে লক্ষ্য করে মানুষ এখনো ঘৃণা জানায়। ঘৃণা জানিয়ে কুমিল্লার মানুষ জাতির জনক হত্যার কলঙ্ক যেন মোচন করতে চায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত সাবেক রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাক আহমেদের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দির সুন্দলপুরের দশপাড়ায়। চারদিকে দেয়াল ঘেরা বিশাল ঐ বাড়িতে দোতলা একটি বিল্ডিং রয়েছে। রয়েছে একটি মসজিদ ও পারিবারিক কবরস্থান। কবরস্থানের কবরগুলোতে সাইনবোর্ডে নাম পরিচয় থাকলেও মোশতাক আহমেদের কবরে কোন সাইনবোর্ড নেই। সেটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বাঁশ দিয়ে ঘেরা ঐ কবরের বেড়িতে রঙ করা আছে।দোতলা ঐ বাড়ির নিচতলায় মসজিদের ইমাম ও মাজারের একজন খাদেম ছাড়া সেখানে এখন তাদের কেউ থাকে না। খোন্দকার মোশতাক আহমেদের এক ছেলে খোন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ আমেরিকায় এবং মেয়ে খোন্দকার শিরিন সুলতানা এবং ডা. খোন্দকার নাজনিন সুলতানা লন্ডনে থাকেন। তাদের পরিবারের সদস্যরা মাঝে মধ্যে দশপাড়ায় সেই বাড়িতে আসেন। দোতলা বাড়িটির পাশেই রয়েছে দশপাড়া হযরত কবির উদ্দিন সিনিয়র কামিল মাদ্রাসা। আত্মস্বীকৃত খুনি মোশতাক ১৯৯৫ সালে মারা যান।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার আরেক আত্মস্বীকৃত খুনি লে. কর্নেল অব. আবদুর রশিদ খোন্দকারের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ছয়ঘড়িয়া গ্রামের বাড়িটি এখন জনশূন্য। তার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সরকারের পক্ষে কুমিল্লা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাসানুজ্জামান কল্লোলের নির্দেশে এবং চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উপস্থিতিতে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত পলাতক আসামি রশিদের বাড়িসহ ৬ দশমিক ১২ একর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ৬টি সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়েছে চান্দিনা থানা পুলিশ। এর মধ্যে তার বাবার আব্দুল করিমের সম্পত্তিও রয়েছে।আবদুর রশিদ খোন্দকারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জনশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনির একতলা বাড়িটি। এই বাড়িসহ ছয়ঘরিয়া-করতলা-পানিপাড়া ও থানগাঁও মৌজার ৬ দশমিক ১২ একর সম্পত্তিতে ‘তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি সরকারের বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি, ওই সম্পত্তিতে জনসাধারণের ‘প্রবেশ নিষেধ’ লেখা সম্বলিত সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে।এক সময় এই বাড়িটি পাহারা দিতেন কেয়ারটেকার অব: সার্জেন্ট সাইফুল। এক এগারোর পটপরিবর্তনের সময় থেকে তার মেয়ে মেহনাজ রশিদ খোন্দকার ছাড়া এই বাড়িতে তার পরিবারের আর কেউ আসতো না। মেহনাজ রশিদ একেরপর এক মোবাইল এর সিম পরিবর্তন করতো। কেয়ারটেকার সাইফুল বাসভবনের পাশে অবস্থিত একতলা বিল্ডিং এ সপরিবারে বসবাস করতেন। তিনি ছিলেন ৩ হাজার টাকায় মাসিক বেতনভুক্ত কর্মচারী।জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর সে সময়ে বিএনপি ও এরশাদ সরকারের সময় স্বাধীনভাবে এই বাড়িতে বসবাস করলেও ১৯৯৬ সনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ তথা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করার পরপরই দেশত্যাগ করে আবদুর রশিদ খোন্দকার। এর আগে ১৯৯৬ এর ১৫ ফেব্রুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচনে অংশ নিয়ে আবদুর রশিদ খোন্দকার সংসদ সদস্য হয়েছিলো। ১৯৯৬ এ দেশ ত্যাগ করে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি আবদুর রশিদ খোন্দকার আর দেশে আসতে পারেনি।
তবে কর্নেল রশিদের কন্যা মেহনাজ রশিদ খোন্দকার বিদেশ থেকে বাংলাদেশে এসে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ছয়ঘরিয়ার বাজেয়াপ্ত করা সেই বাড়িতে ওঠেছিল। দীর্ঘদিন এই বাড়িতে থেকেছে এবং মাঝে মধ্যে ঢাকার বাড়িতে থাকতো। পরবর্তী সময়ে বাড়িটিতে আর্ক কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার লিখে সাইনবোর্ড টানিয়ে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে তার দখলে রেখেছিল এবং বিভিন্ন মাধ্যমে লোকবল তৈরি করে ২০০৮ এর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চান্দিনা আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে এলাকাছাড়া হয় সে। পরে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যায় মেহনাজ। এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার সাথে তার ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ উঠে। কুমিল্লার প্রাক্তন জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জামান কল্লোল জানান, আবদুর রশিদ খোন্দকারের ঐ সব সম্পত্তি এখন সরকারের বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি, ওই সম্পত্তিতে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ কথা লিখে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে ঐ সম্পত্তি জনকল্যাণে ব্যবহৃত হবে। অপরদিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার আরেক আত্মস্বীকৃত খুনি লে. কর্নেল অব. শরিফুল হক ডালিম তার বাবার চাকরির সুবাদে কুমিল্লায় পড়াশুনা করতো। সে ছিলো কুমিল্লা জিলা স্কুল এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্র। তার বাবা কুমিল্লা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ছিলেন।
সে কারণে তারা থাকতেন কুমিল্লা শহরের অশোকতলা চৌমুহনীর ১৪৯ নম্বর দোতলা সরকারি রিক্ইুজিশনের বাড়িটিতে। তারপর সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার পর সে ছিলো কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে। অশোকতলার সে বাড়িটি দেখলে এখনো কুমিল্লার মানুষের মনে পড়ে যায় সেই ধিক্কৃত লে. কর্নেল অব. শরিফুল হক ডালিম ওরফে মেজর ডালিমের কথা। অশোকতলার ঐ দোতলা বাড়িতে স্বাধীনতার পর উপর তলায় মৎস্য কর্মকর্তা এবং নিচতলায় খাদ্য কর্মকর্তা থাকতেন। এখন সেখানে থাকে কুমিল্লার বিশিষ্ট শিল্পী প্রয়াত নাসির আহমেদ এর পরিবার।সঙ্গীত শিল্পী পল্লব জানান, ১৯৮৫ সাল থেকে তারা বাড়িটি লিজ নিয়ে সেখানে থাকেন। এর আগে সরকারি কর্মকর্তারাই থাকতেন।কুমিল্লার এই তিনটি বাড়ি এখন ইতিহাসের ঘৃণিত সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আছে অভিশাপের বোঝা নিয়ে। বাড়িগুলো দেখে কুমিল্লার মানুষ ঘৃণা প্রকাশ করে।
কুমিল্লা বিমান বন্দর পুনরায় চালু করেন বঙ্গবন্ধু :
১৯৪০-৪১ সালে বিশ্বযুদ্ধের সময় জমি অধিগ্রহণ করে কুমিল্লা বিমান বন্দর নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। কার্যাদেশে কাগজপত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভারত সরকারের গণপূর্ত বিভাগ বিমান বন্দর নির্মাণের নিমিত্তে বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের জন্য ঠিকাদারদের কার্যাদেশ প্রদান করেন। বলা যেতে পারে ঐ সময়ে বিমান বন্দর নির্মিত হয়। ১৯৪৩ সালের ১৫ জানুয়ারি (কলকাতা গেজেট নং-৩৬০ডিফে) থেকে ত্রিপুরায় জননিরাপত্তা ও সরবরাহ যথাযথ রাখার জন্য জমি অধিগ্রহণ করাসহ বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ত্রিপুরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ.বি. স্কট এ আদেশ জারি করেন। ১৯৪৩ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৪৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত কুমিল্লার ময়নামতিতে ১৪ আর্মির কমা- পোস্ট দায়িত্বরত ছিলেন এবং কুমিল্লা বিমানবন্দর বিমান ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখানে ৩ শ’ যুদ্ধ বিমান, ৫০টি বোমারু বিমান ছিল বলে কথিত রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয় পাওয়ার পর কুমিল্লা বিমান বন্দর পরিত্যক্ত ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রচেষ্টায় ১৯৭২ সালের ৭ মার্চ অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান সার্ভিস চালু হয়। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধে ব্যবহৃত একটি পুরনো ডাকোটা, ডিসি-৩ বিমান দিয়ে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ বিমানের সার্ভিস। ৭ মার্চ থেকে কুমিল্লা-ঢাকা, কুমিল্লা- চট্টগ্রাম রুটে বিমান সার্ভিস চালু হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কুমিল্লায় আগমন নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়–ন সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক আবুল কাশেম হৃদয়ের গবেষণা গ্রন্থ ‘কুমিল্লায় বঙ্গবন্ধু’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫) শেষবার ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লায় এলেও প্রথম কবে কুমিল্লায় এসেছিলেন তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। ১৯৪৯ সালে তৎকালীন ত্রিপুরার (কুমিল্লা) নব...