মো. জাহানুর ইসলাম
স্বাধীন ভূখণ্ডে বসবাস করতে কে না চায়! বাংলাদেশে বসবাসকারী মানুষেরাও এর ব্যতিক্রম ছিল না। অনেকে অনেক আগে থেকেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। শুধু যে স্বপ্ন দেখতেন তা নয়, সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে চেষ্টাও করেছিলেন কিন্তু বাস্তবে সেই স্বপ্নের রূপ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কিছু নেই। আন্তরিকতা ও একাগ্রতা থাকলেই সবকিছু খুব সহজেই জয় করা সম্ভব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই বাঙালি জাতির দীর্ঘদিনের লালিত সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পেয়েছিল। একমাত্র বঙ্গবন্ধুই পেরেছিলেন বাঙালি জাতির জন্য একটি স্বাধীন ভৌগোলিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। তাইতো তিনি আজও বেঁচে আছেন বাঙালি জাতির প্রত্যেকটি মানুষের হূদয়ে। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন তিনি থাকবেন চির অম্লান, তাঁর কোনো মৃত্যু নেই। মরেও বেঁচে আছেন প্রতিটি মুহূর্তে। ধন্য আজ বাঙালি জাতি, তারা বঙ্গবন্ধুকে বক্ষে ধারণ করেছিল বলে।
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’-১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণেই বাঙালি জাতি পেয়ে গিয়েছিল স্বাধীনতা ও গেরিলা যুদ্ধের দিক-নির্দেশনা। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণে বাঙালিরা আসন্ন মুক্তির আনন্দে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। আন্দোলন জোরালো করে এগিয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত মুক্তির লক্ষ্যে। শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মাসে বিজয় অর্জিত হয়। ৭ মার্চ দেওয়া সেই ঐতিহাসিক ভাষণ এখন বিশ্বের ইতিহাসে এক অনন্য ভাষণ। এ ভাষণেই রয়েছে বহুমাত্রিক বিশেষত্ব।
শেখ মুজিব ছিলেন বিরাট হূদয়ের মানুষ। তাঁর অপার ভালোবাসা ছিল বাংলার দুঃখী মানুষের জন্য। সেই সঙ্গে সবার প্রতি ছিল তার সমান দৃষ্টিভঙ্গি। তাঁর মন ছিল ভালোবাসা, স্নেহ, মমতায় ভরা। মানুষকে কি করে ভালোবাসতে হয় বঙ্গবন্ধু তা খুব ভালো করেই জানতেন। তিনি প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছিলেন বাংলাদেশকে, ভালোবেসেছিলেন এদেশের মাটি ও মানুষকে। ক্ষমার অযোগ্য কোনো অপরাধ করেও কেউ তাঁর সামনে দাঁড়ালে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিতেন। তাঁর এই গুণগুলো শেখার কোনো বিষয় নয়, এগুলো অর্জন করে নিতে হয়। হূদয়ে ধারণ করতে হয়। তাঁর জীবনে জনগণই ছিলেন অন্তঃপ্রাণ। মানুষের দুঃখে তাঁর মন কাঁদত। বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফুটাবেন, সোনার বাংলা গড়বেন এটাই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র ব্রত। বাঙালি জাতিকে তিনি দিয়েছেন স্বাধীনতা। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামে তিনি বিশ্বে এক রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন। বাংলার মানুষের মুক্তির এই মহানায়ক স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষে জাতির পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন নিশ্চিত করছিলেন তখনই ঘাতকের নির্মম বুলেট তাঁকে জনগণের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। বাঙালি জাতির ললাটে চিরদিনের জন্য কলঙ্কের তিলক এঁকে দিয়েছেন খুনিরা। যে কলঙ্কের ভার এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন গোটা বাঙালি জাতি।