মোহাম্মাদ আনিসুর রহমান
ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে। বাংলার রাজনৈতিক বিকাশ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের নবজাগরণ, পাকিস্তান সরকারের অন্যায়-অবিচার, শোষণ থেকে মুক্তিকামী মানুষের মুক্তির পথ সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মকে জানার ও জানানোর, অধ্যয়নের ও গবেষণার দাবি রাখে। একটি সভ্য জাতিকে তার অতীত ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হয়, জানাতে হয়। তার ব্যত্যয় ঘটলে সমাজ ইতিহাস বিকৃত হয়। ফলে ইতিহাসের গতি প্রকৃতি পরিবর্তন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধনের মাধ্যমে দেশের ক্রান্তিকালের চরমতম শত্রু ও বিশ্বাসঘাতক হয়ে যায় নায়ক আর নায়কের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ঢেকে যায় ষড়যন্ত্রের মেঘে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ দীর্ঘ ২১ বছর বেশ তাৎপর্যসংখ্যক প্রজন্ম বাংলাদেশের বিকৃত ইতিহাস নিয়ে বেড়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে আগস্ট এক রকম, আর না থাকলে আগস্ট অন্য রকম। এটি সেই বিকৃত ইতিহাসেরই ফলশ্রুতি। ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ এবং ২১ আগস্ট, ২০০৪ একদিকে শোক অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের মোড়কে ঢাকা বেদনা ও হতাশার রক্তাক্ত ইতিহাসের অংশ।
দুই. ১৫ আগস্ট ১৯৭৫। শুক্রবার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ষড়যন্ত্রকারী ও বিপথগামী কালো ও খাকি পোশাকধারী বেশ কিছু সৈন্য চারটি দলে বিভক্ত হয়ে প্রথম দলটি বজলুল হুদা ও ফারুক রহমানের নেতৃত্বে বেঙ্গল ল্যান্সারের ফার্স্ট আর্মড ডিভিশন ও ৫৩৫ পদাতিক ডিভিশনের সমন্বিত সদস্যরা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়ি, দ্বিতীয় দলটি শেখ ফজলুল হক মনি’র ১৩/১ ধানমন্ডির বাড়ি এবং তৃতীয় দলটি হেয়ার রোডে সরকারের মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়িতে আক্রমণ করেন। নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা অপ্রত্যাশিত আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য শক্তিশালী চতুর্থ দলটি সাভারে পাঠানো হয়। মুহূর্তের মধ্যে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সবকিছু। বজলুল হুদা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা ফারুক রহমানকে বলে ওঠেন, ‘অল আর ফিনিশড’। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ লুটিয়ে পড়েছেন ঘাতকের বুলেটে ক্ষত বিক্ষত হয়ে। শিশু রাসেলকে বুলেটবিদ্ধ করার পূর্বে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে অনুমতি নেওয়া হয়। অন্যদিকে শেখ ফজলুল হক মনি ও তার স্ত্রী এবং আবদুর রব সেরনিয়াবাত বাড়িতে উপস্থিত সবাইকে নিয়ে লুটিয়ে পড়েছেন ঘাতকের গুলিতে জর্জরিত হয়ে। কি নিদারুন প্রতিদান বাঙালি জাতির! পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে সর্বস্ব হারানো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান। তাঁদের বাংলাদেশে ফিরে আসার ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
তিন. খন্দকার মোশতাকের নির্দেশে ফারুক রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে অভিযানের সার্বিক দায়িত্ব পরিচালনাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সামরিক কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বণ্টন করেন। শাহরিয়ার রশিদ বঙ্গভবনে এবং শরিফুল হক ডালিম ছিলেন বেতার কেন্দ্রের দায়িত্বে। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভার বাণিজ্য মন্ত্রী মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। খুনিদের বাঁচানোর জন্য ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর চক্রান্তকারী স্ব-ঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সবকিছুর বৈধতা দিয়ে খুনিদের রক্ষা করে তাদেরকে দায়মুক্তি দেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ দীর্ঘ ২১ বছর খুনীরা পুরস্কৃত হয়ে অট্টহাসি দিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে রাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গন। ১৯৭৬ সালের ৮ জুন ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার পুরষ্কার হিসাবে অভিযুক্ত হত্যাকারী ১২ জনকে বিশ্বের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। যেমন:
(১) শরিফুল হক ডালিম (চীন-প্রথম সচিব),
(২) আজিজ পাশা (আর্জেন্টিনা-প্রথম সচিব),
(৩) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (আলজেরিয়া-প্রথম সচিব),
(৪) বজলুল হুদা (পাকিস্তান-দ্বিতীয় সচিব),
(৫) শাহরিয়ার রশিদ (ইন্দোনেশিয়া-দ্বিতীয় সচিব),
(৬) রাশেদ চৌধুরী (সৌদি আরব- দ্বিতীয় সচিব),
(৭) নূর চৌধুরী (ইরান-দ্বিতীয় সচিব),
(৮) শরিফুল হোসেন (কুয়েত-দ্বিতীয় সচিব),
(৯) কিসমত হাশেম (আবুধাবি-তৃতীয় সচিব),
(১০) খায়রুজ্জামান (মিসর-তৃতীয় সচিব),
(১১) নাজমুল হোসেন (কানাডা-তৃতীয় সচিব),
(১২) আবদুল মাজেদ (সেনেগাল-তৃতীয় সচিব) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। খুনী ফারুক রহমান এবং আবদুর রশীদ চাকরির প্রস্তাব গ্রহণে অসম্মতি জানান।
চার. ১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধের বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরের মত খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতার মসনদ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। মাত্র ৮৩ দিনের স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান ‘জয়বাংলা’র পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ চালু করেন, এবং ‘বাংলাদেশ বেতার’ এর নামকরণ করেন ‘রেডিও বাংলাদেশ’। তার সময়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীন জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মনসুর আলী ও এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান নির্মমভাবে নিহত হন। ১৯৭৫ সালের ৫ নভেম্বর তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। ভেঙে যায় তার বিশ্বাসঘাতকতায় তৈরি বালির বাঁধ। রাষ্ট্রপতি হিসাবে বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম (৬ নভেম্বর, ১৯৭৭- ২১ এপ্রিল ১৯৭৭) পর্যন্ত দায়িত্ব পালন শেষে ক্ষমতার পালা বদলে ক্যুর মাধ্যমে মসনদে আসেন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান। তিনি ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সামরিক আইনের অধীনে পাতানো দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ আসন পেয়ে দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি একাত্তরে রাজাকার, আলবদর, আলশামস সৃষ্টি করে যারা মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে এদেশে গণহত্যা চালিয়েছিল, সেই যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে, সরকারে ও বিদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পুনর্বাসন করেন। তাছাড়াও তিনি প্রায় ১১ বছরের ('৭৫ থেকে '৮৬ সাল) প্রতিরাতে দেশে কারফিউ জারি করেন, ১৯টি ক্যুর মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর প্রায় আড়াই হাজার অফিসার ও সৈনিককে গুলি অথবা ফাঁসি দিয়ে এবং একটি ক্যু'তেই বিমান বাহিনীর ৬৬০ জন অফিসারকে হত্যা করেন। অত:পর, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সহ চার বছরে সামরিক আইনের আওতায় সব অধ্যাদেশ, ঘোষণাকে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আইনি বৈধতার মোড়কে ঢেকে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরকে আখ্যায়িত করেন ‘সূর্যসন্তান’ হিসাবে!
পাঁচ. ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছরের সংগ্রামের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার আইনি বাঁধা অপসারণের জন্য ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ (রহিতকরণ) বিল’ সপ্তম সংসদে উত্থাপন করা হয়। ১২ নভেম্বর, ১৯৯৬ আইনটি সংসদে পাস হয় এবং ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর এটি পরিপূর্ণভাবে আইনে পরিণত হয়। ফলে মোশতাকের জারিকৃত এবং জিয়াউর রহমানের সময় বৈধতা পাওয়া ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বিলুপ্ত হয়। শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার কাজ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে খুনিদের রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে ২৮ জানুয়ারির প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত পাঁচ খুনি ফারুক রহমান, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি) ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (ল্যান্সার) ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। পলাতক অবস্থায় ২০০১ সালে আজিজ পাশা জিম্বাবুয়েতে মৃত্যুবরণ (স্বাভাবিক) করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পলাতক ছয় খুনিদের মধ্যে চারজন শরিফুল হক ডালিম (স্পেন), নুর চৌধুরী (কানাডা), রাশেদ চৌধুরী (যুক্তরাষ্ট্র), ও মোসলেম উদ্দিনের (জার্মানি) অবস্থানের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেলেও অন্য দুই খুনি খন্দকার আবদুর রশিদ ও আবদুল মাজেদের ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য নেই। উল্লেখ্য যে, আসামিরা সবাই সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা।
ছয়. ২১ আগস্ট ২০০৪। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ও রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ঘটে যায় আরেকটি বৃহত্তম নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। সমাবেশের প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে বিকেল পাঁচটায় পৌছানোর পর অস্থায়ী ট্রাকমঞ্চে ২০ মিনিটের বক্তব্য শেষে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দিয়ে মঞ্চ থেকে নিচে নেমে আসতে থাকেন। ঠিক এমন সময় শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে একের পর এক প্রায় ১২-১৩টি গ্রেনেডের বিস্ফোরণে মুহূর্তেই সমাবেশস্থল পরিণত হয় ভয়ঙ্কর মৃত্যুপুরীতে। হামলায় আওয়ামী লীগের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতাকর্মী নিহত হন এবং শেখ হাসিনাসহ শত শত নেতাকর্মী আহত হন। মঞ্চে থাকা মেয়র মোহাম্মদ হানিফসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীরা মানববর্ম তৈরি করে শেখ হাসিনাকে জীবিত উদ্ধার করলেও গ্রেনেডের স্প্রিন্টারের আঘাতে ও প্রচণ্ড শব্দে তাঁর শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা এখনো রয়ে গেছে। প্রহসনের বিচারের নামে জজমিয়া নাটক মঞ্চস্থ হয়।
সাত. সিআইডি ২০১১ সালের ৩ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র জমা দেয়। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের এবং তত্কালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলার মামলায় মুফতি হান্নানের ফাঁসি হয়েছে। এছাড়া জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু কারাগারে রয়েছেন। বাকীরা জামিনে ও পলাতক রয়েছেন। এর আগেও জঙ্গিনেতা মুফতি হান্নান এর মূল পরিকল্পনায় ২০ জুলাই, ২০০০ (গোপালগঞ্জ), ৩০ মে ২০০১ (খুলনা), ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০০১ (সিলেট)-এ শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যার চেষ্টা করা হয়।
আট. অধিকাংশ মানুষের চিরাচরিত স্বভাব হলো যাকে উপকার করা হয়, সে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ না হয়ে উপকারকারীর বড় ক্ষতির কারণ হয়ে কৃতঘ্ন’র পরিচয় দেয়। সেই পরিচয় দিয়েছেন ক্ষমতার মোহে অন্ধ বেঈমান ও মোনাফেক খুনী মোশতাক, বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরকে ‘সূর্যসন্তান’ আখ্যায়িতকারী জিয়াউর রহমান এবং ১৫ আগস্টে মিথ্যা জন্মদিনের নামে প্রতিহিংসার কেক কেটে আনন্দ-উল্লাস করা বেগম খালেদা জিয়া। একইভাবে মুক্তিযুদ্ধে পায়ে গুলিবিদ্ধ শমশের মবিন চৌধুরীকে জার্মানি থেকে চিকিৎসা করিয়ে এনে সুস্থ হওয়ার পর অযোগ্যতা বিবেচনায় না নিয়ে বঙ্গবন্ধু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি দিয়েছিলেন। অথচ প্রতিদানে তিনি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন।
অকুতোভয় ও আপোষহীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের যে বিশাল হৃদয়ের বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কিছু করার সাহস করেনি, সেই কাজটি অনায়াসে করেছে বাঙালি জাতির কিছু চরিত্রহীন পশু মনোবৃত্তির অমানুষেরা। আগস্ট মাসে (১৫ আগস্ট, ১৯৭৫) একদিকে যেমন বেদনার ইতিহাস রচিত হয়েছে, তেমনি এই আগস্ট মাসেই (২১ আগস্ট, ২০০৪) রচিত হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের ইতিহাস। এমন আগস্ট আর আমরা চাইনা। আমরা চাইনা আর কোন প্রজন্ম বিকৃত ইতিহাস নিয়ে বড় হোক। বিচার হোক সকল বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের। কেননা ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। এখনো টকশোতে বেশ কিছু রাজনীতিবিদ বিকৃত ইতিহাসের সুরেই কথা বলেন। রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হতেই পারে। কিন্তু ইতিহাসের বিকৃতি সাধন কাম্য নয়। বর্তমান প্রজন্মকে ও রাজনীতিবিদদের সঠিক ইতিহাসের চর্চা করা দরকার। কেননা বিকৃত ইতিহাসে দেশ ও দেশের মানুষ বিপথগামী ও পথভ্রষ্ট হয়। শিক্ষার্থীরা ইতিহাস না জানলে শিক্ষা অসম্পূর্ণ হয়, আর রাজনীতিবিদরা ইতিহাস না জানলে রাজনৈতিক জীবন অশুদ্ধ হয়।
লেখক: মোহাম্মাদ আনিসুর রহমান পি.এইচ.ডি গবেষক, জেঝিয়াং ইউনিভার্সিটি, চীন এবং শিক্ষক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বশেমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জ।