ছাত্র লীগের সেসব কর্মী সিরাজুল আলম খানের প্রতি অনুগত ছিলেন,তাঁরা এ সময় সমাজতান্ত্রিক ধ্যান ধারণার সঙ্গে পরিচিত হতে থাকেন।কিন্তু মূল দর্শন ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ।অগ্নিযুগের বিপ্লবীরা তখন তাদের আদর্শ।বাঘা যতীন, সূর্য সেন, প্রীতিলতা,সুভাষ বোস তাদের আইডল।একই সময় চে গুয়েভারা,ফিদেল কাস্ত্রো তাঁদের মনোজগতে প্রচন্ড ঝাঁকুনি দিতে থাকেন।আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে বিভক্তির পর তখন যেসব রাজনৈতিক দল এ দেশে রুশ ও চীনা পার্টির লাইন অনুসরণ করত, সিরাজ গ্রুপের কর্মীরা তাদের ব্যাপারে ছিলেন নিরাসক্ত ও হতাশ।যেকোনো আন্দোলনে শ্রমিক-কৃষকের দাবি ও সর্বহারার আন্তর্জাতিকতা নিয়ে তাঁদের ভাবাবেগ ছিল না।একমাত্র লক্ষ্য ছিল পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন করা।
সিরাজ গ্রুপের সঙ্গে যাঁরা সংশ্লিষ্ট, তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক সাহিত্য পাঠের একটা অভ্যাস গড়ে উঠেছিল।অন্যান্য কমিউনিস্ট পার্টি বা গ্রুপের মতো তাঁরা কোনো নির্দিষ্ট বা নির্ধারিত দর্শনের অনুসারী ছিলেন।দলের মধ্যে স্বাধীন চিন্তা এবং ভিন্নমত পোষণ করার মতো অনুকূল পরিবেশ ছিল।একই বিষয় নিয়ে পাঁচ জন পাঁচ রকম মন্তব্য বা বিশ্লেষণ করলেও এ নিয়ে কোনো জোর-জবরদস্তি ছিল না।জিন্নাহ ও গান্ধীকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা চলত।সুভাষ বোসের প্রতি আলাদা পক্ষপাত ছিল।প্রথাগত কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর বলয়ের বাইরে গিয়ে একটা বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলার জন্য ফিদেল কাস্ত্রো ও চে গুয়েভারার প্রতি আলাদা রকমের সমীহ ছিল।
দলের মধ্যে শেখ মুজিবকে প্রায় দেবতার কাছাকাছি আসনে বসানো হয়েছিল।এর সঙ্গে সিরাজুল আলম খানেরও একটা বিপ্লবী ভাবমূর্তি তৈরি হচ্ছিলো ধীরে ধীরে।তিনি তাঁর অনুসারী ও ভক্তদের কাছে হয়ে উঠলেন ‘বাংলার কাস্ত্রো’।একবার এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ মুজিব সিরাজুল আলম খানকে দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘এই হলো আমার কাস্ত্রো ‘।
তথ্য সূত্র: জাসদের উত্থান পতন – অস্থির সময়ের রাজনীতি ( মহিউদ্দিন আহমদ )