আসাম থেকে আগত মজলুম নেতা মোওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালের ২৩জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়।টাঙ্গাইলের যুবনেতা শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং শেখ মুজিব ও খন্দকার মোশতাক যুগ্ন সম্পাদক নিযুক্ত হন।পরবর্তীতে শামসুল হকের মস্তিস্ক বিকৃতি ঘটলে ১৯৫৩ সালে ভাসানী শেখ মুজিবকে অস্থায়ী সম্পাদকের দায়িত্ব প্রদান করেন।
দিনাজপুর ও রাজশাহীতে ছাত্র আন্দোলন , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিম্নতম কর্মচারী ধর্মঘট এবং ৪৮-এর প্রথম ভাষা আন্দোলনে উপর্যপুরি কারাবরণ ছাড়াও শেখ মুজিবের সাংগঠনিক ক্ষমতা দেখে ভাসানী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।মুজিব ও মোশতাকের বিরোধের প্রথম সূত্রপাত হয়।
১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার নির্বাচনে হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়।যুক্তফ্রন্টের পক্ষে দাউদকান্দি থেকে একজনকে নমিনেশন দেওয়া হয়।দাউদকান্দি মোশতাকের নির্বাচনী এলাকা।এই এলাকা থেকে মোশতাক যুক্তফ্রন্টের নমিনেশন না পেলে তার রাজনৈতিক জীবনের অগ্রগতি রুদ্ধ হয়ে যাবে।আর আওয়ামী লীগ পার্টিতে শেখ মুজিব তার প্রতিদ্বন্দীকে সাইজ করতে সক্ষম হবেন।
মোশতাক দাউদকান্দিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন।জয়লাভ করে মোশতাক কৃষক শ্রমিক পার্টিতে যোগ দেন এবং এক সময় এই পার্টির চিফ হুইফ পদে অধিষ্ঠিত হন।১৯৬৪ সালে মোশতাক আবার আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
মোশতাক পুনরায় আওয়ামী লীগে যোগ দিলেও শেখ মুজিব তার এই পুরোনো সহকর্মীকে সৈয়দ নজরুল,তাজউদ্দীন,মনসুর আলী ও কামরুজ্জামানের ওপর স্থান দিতে পারেননি।পার্টি লাইন আপে মোশতাকের স্থান ছিল ৫ নম্বরে।মোশতাক মনঃক্ষুন্ন হলেন।
মোশতাক শেখ মুজিবের চেয়ে বয়সে বড় এবং একজন প্রতিষ্ঠিত এডভোকেট ছিলেন।আওয়ামী লীগের জন্মের সময় দুজনে যুগ্ন সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু রাজনীতির উত্থান-পতনে মুজিবের দুঃসাহসিকতা, জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক ক্ষমতার দরুন মুজিবের নেতৃত্ব প্রশ্নাতীত হয়ে দাঁড়ায়।আর মোশতাক এতগুলো বছর পরে আবার আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে জুনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদ মেনে নিতে বাধ্য হলেন।তবে তিনি পার্টিতে নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে উপদল গঠন করেন।
এটাই মুজিব-মোশতাক বিরোধের ইতিবৃত্ত।মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিব নগরে এর জের অব্যাহত থাকে এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এর প্রতিফলন ঘটে।
তথ্য সূত্র: আমি বিজয় দেখেছি ( এম আর আখতার মুকুল )