আমার গায়ের কাপড়টি শেখ মুজিবকে দেখাবেন


৩নং সেক্টর ও “এস” ফোর্সের অধিনায়ক মেজর জেনারেল (অবঃ) শফিউল্লাহ। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে তাঁর স্মরণীয় একটি ঘটনা ———–

৭১-এর এপ্রিল মাসে আমার সেক্টরে আসে দৌলামিয়া। বাড়ি কুমিল্লার শালদা নদীর পাড়ে। আমি তাকে আমার সেক্টরে ট্রেনিং গ্রহণের সুযোগ দেই। ট্রেনিং-এর পরে তাকে একটি ফোর্সের সঙ্গে সিলেটে পাঠাই একটি এম্বুশ অপারেশনে। পরিকল্পনা ছিল রাতে টার্গেট স্থানের আশেপাশে অবস্থান করে ভোরে এম্বুশ করবে। কিন্তু ঐ রাতে সম্ভবত চা বাগানের কুলিদের সঙ্গে মদ খেয়ে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দৌলামিয়া তার গ্রুপের লোকদের উপরই অস্ত্র ব্যবহারে উদ্যত হয়। পরে কমান্ডার মতিন কৌশলে নিরস্ত্র করে তাকে বেঁধে নিয়ে আসে আমার কাছে।

আমি তাকে রাগ করে আমার সেক্টরে এলাকার বাইরে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেই। তখন কান্না জুড়ে দিয়ে দৌলামিয়া বলল, “আমাকে আর একবার সুযোগ দেন স্যার। এরপর ভুল হইলে আমারে মাইরা ফালাইয়েন”। পরে অন্য একজন কমান্ডার লেঃ মোরশেদের সঙ্গে দৌলামিয়াকে হরসপুর-মনতলাতে পাঠাই।

২১শে জুন হরসপুর-মনতলাতে শুরু হয় ভয়ংকর যুদ্ধ। পাকিস্তানের প্রায় ৪ব্যাটেলিয়ন সৈন্য ৩দিক দিয়ে আমাদের অবস্থানের উপর আক্রমণ শুরু করে। হেলিকপ্টার থেকে সৈন্য নেমে আমাদের একটি কোম্পানিকে ঘিরে ফেলে। ঐ কোম্পানিকে উদ্ধার করতে আমি কিছু সৈন্য নিয়ে কাউন্টার এট্যাক করি। তখন ডান দিক থেকে একটি মেশিনগান অনবরত আমাকে সাপোর্ট দিতে থাকে। বলা যায় ঐ মেশিনগানের সাপোর্টেই এট্যাক সফল হয় এবং কোম্পানিটি রক্ষা পায়।

গোলাগুলি থামলে ঐ মেশিনগানের অবস্থানে গিয়ে দেখতে পায় দৌলামিয়া তখনও গুলি ছুঁড়ে যাচ্ছে। সে দু’পায়ে গুলি বিদ্ধ এবং গুলি লেগে পেটের একটি অংশ বেরিয়ে যাওয়ায় তা সে বাম হাত দিয়ে চেপে রেখেছে এবং ডান হাত তখনও মেশিনগানে। তার গায়ের কাপড় সম্পূর্ণ রক্তে লাল।

আমাকে দেখেই কেঁদে উঠল দৌলামিয়া। বলল, “স্যার, আপনি যে আমাকে যুদ্ধ করার সুযোগ দিয়েছেন এজন্য আমি আপনার কাছে ঋণী। এই যে আমার কাপড়টি আছে, এটি শেখ মুজিবকে দেখবেন। তিনি বলেছিলেন, তোমার রক্ত দেওয়ার জন্য তৈয়ার হও।” স্যার আমি রক্ত দিয়েছি, আমার তো মৃত্যু হচ্ছে। আমার মৃত্যুর পর আমার লাশ যেন কবর দেয়া হয় বাংলাদেশের মাটিতে।

তখনি একটা জীপে তুলে আহত দৌলামিয়াকে নিয়ে গেলাম আগরতলা হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসার পর দৌলামিয়া সুস্থ হয়ে উঠেছিল।

[ তথ্য সূত্র: সেক্টর কমান্ডাররা বলেছেন মুক্তিযুদ্ধের স্মরণীয় ঘটনা – শাহরিয়ার কবির সম্পাদিত ]

SUMMARY

1514-1.png