“আমরা মৃত্যুকে করেছি জয়”


৬মার্চ ১৯৭১, সাপ্তাহিক স্বরাজ পত্রিকায় প্রদেশব্যাপী আন্দোলনের উপর প্রকাশিত প্রতিবেদন–

পহেলা মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী ঢাকা নগরী ভয়াল ও ভয়ঙ্কর রূপ পরিগ্রহ করলো। প্রথমে শত শত পরে হাজার হাজার বঙ্গসন্তান ঢাকার পথে পথে বেরিয়ে পড়লো। অফিস, আদালত, স্কুল-কলেজ, বাজার-হাট সব কিছুই বন্ধ হয়ে গেলো।

শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করলেন দু’দিন ব্যাপী হরতাল। সন্ধ্যায় ঢাকা নগরীতে সন্ধ্যা আইন জারি করা হলো। রাতের অন্ধকার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো সংঘর্ষ। শত-সহস্র ঢাকাবাসী সন্ধ্যা আইন ভঙ্গ করে প্রকাশ্য রাজপথে বেরিয়ে এলো। ঢাকা নগরী রক্তাক্ত হলো।

মানুষের বুক ঝাঁঝরা হয়ে গেলো। কিন্তু অধিকার সচেতন বাঙালীকে নিশ্চুপ করা সম্ভব হলো না। ফার্মগেট, রাজারবাগ, রামপুরা, গভর্নর ভবনের সম্মুখে, নবাবপুর, সদরঘাট, নিউমার্কেট প্রভৃতি এলাকায় হাজার হাজার বীর বাঙালী বুলেটের মুখোমুখি হলো। ঢাকায় ২৬জন নিহত হলো।

চট্টগ্রামের দেওয়ানহাট, রেলওয়ে কলোনি, টাইগারপাস্ মানুষের রক্তে পিচ্ছিল হয়ে উঠলো। একদিনে নিহতের সংখ্যা ৯৭-এ দাঁড়ালো। চট্টগ্রাম হাসপাতালের মর্গ লাশে ভরপুর হয়ে গেলো। তবু নতুন শপথে বলীয়ান চট্টবাসী বার বার মৃত্যুর গহবরে হানা দিলো। নিহতের সংখ্যা ১২০-এ উপনীত হলো।

খুলনায় প্রতিবাদ শোভাযাত্রার উপর বর্বরোচিত আক্রমণ হলো। ন’জন নিহত হলো। পরদিন সশস্ত্র বাহিনী গুলিবর্ষণ করে যশোরে এক বৃদ্ধাকে হত্যা করলো। উত্তর রংপুর থেকে বিলম্বে খবর এলো সেখানে ন’জন শহীদের অমৃত-সুধা পান করেছে। বজ্র থেকে ধ্বনি নিয়ে সেখানকার নিরন্ন আর ভুখা মানুষ বুলন্দ কণ্ঠে আওয়াজ তুললো:”আমরা মৃত্যুকে করেছি জয়।” [সংক্ষেপ]

[ তথ্য সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র ]

SUMMARY

1511-1.png