হক, সোহরাওয়াদী ও হাশেমের উত্তরসূরী শেখ মুজিব। হকের কাছ থেকে মুজিব শুধু যে দলীয় সংগঠক এবং যোগাযোগের সূত্র লাভ করেছিলেন তা নয়, ১৯৪০ সালের পাকিস্তান প্রস্তাব, যাতে দুটি মুসলমান রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছিল তার স্মৃতিও পেয়েছিলেন।
সোহরাওয়ার্দীর কাছ থেকে পেয়েছিলেন ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির বোধ। মুজিব তার নিজের অতীত থেকে পেয়েছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী কর্মকান্ডের স্মৃতি, যার মধ্যে ছিল কারাবাসের ঘটনা, আর ছিল কলকাতাস্থ বন্ধুদের সঙ্গে একরাশ যোগাযোগ। মুজিবের কর্মকান্ডের দিকে তাকালে কখনো কখনো মনে হবে, তিনি যতটা না বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী ছিলেন, তার চেয়ে বেশি ছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদী।
বস্তুত শেখ মুজিব এমন এক জাতীয়তাবাদী, সমাজতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরেপেক্ষ ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করেন যার উৎস সন্ধানে গেলে সুভাষ বসুর কাছে গিয়ে পৌঁছুতে হয়। তিনি কখনোই ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানে বিশ্বাস করতেন না, যেমন করতেন সোহরাওয়ার্দী। তাঁর ব্যক্তিত্বই তাঁকে তার যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছিল। রাজনীতিতে তিনি ছিলেন ধূমকেতুর মতো। তিনি মুখের কথার মানুষ ছিলেন, লিখিত কথার নন। মানুষের নাম ও চেহারা মনে রাখার ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। তাঁর রাজনৈতিক বক্তব্য চয়ন ছিল এমন যা পূর্ব বাংলার ব্যবসায়ী শ্রেণী ও মহাজন – যাদের অনেকেই ছিল হিন্দু – তাদের মধ্যে ব্যাপক আবেদন সৃষ্টি করত।
বস্তুত তিনি ছিলেন এক স্বজ্ঞাত শক্তি, যাঁর ব্যক্তিত্ব এবং কর্মকান্ড বাংলাদেশ মানসের গভীরতম প্রদেশকে অনুপ্রাণিত করেছিল। স্বাধীনতার জন্য তাঁর আকাঙ্খা যতটা তাঁর বৌদ্ধিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচ্ছুরিত হয়েছে ঠিক ততটাই বিচ্ছুরিত হয়েছে তাঁর জনগণের ভেতর থেকে। তিনি ছিলেন এক নৌকা, যাতে চেপে জনগণের আকাঙ্খা বয়ে যেতে পারত।
[
তথ্য সূত্র:- বাংলাদেশ: জলে যার প্রতিবিম্ব – জেমস জে. নোভাক
অনুবাদ: রাহাত খান
]