১৯৬০-এর দশকে শেখ মুজিব বারবার পাকিস্তানিদের কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। কারণ স্পষ্টতই তিনি ছিলেন পাকিস্তানিদের দুশ্চিন্তার কারণ। তিনি এমনভাবে জনগণের কথা বলতে শুরু করেন, যেমনভাবে সোহরাওয়ার্দী বা হক বলেননি। মুজিব জনগণের বঞ্চনার কথা, ক্ষোভের কথা, তুলে ধরেন – বিশেষ করে শহর-গঞ্জের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কথা, যারা ছিল আওয়ামী লীগের মেরুদন্ড।
মুজিব কথা বলতেন সাধারণ মানুষের ভাষায়। তিনি সাম্প্রদায়িকতার গন্ডি ছাড়িয়ে বর্ণ, গোত্র ও ভাষাভিত্তিক ভ্রাতৃবোধের দিকে এগিয়ে যান। এভাবে হিন্দু ও মুসলমানেরা আওয়ামী লীগের পতাকা তলে কাজ করে। উপর থেকে যদিও মনে হত ধর্ম নিরেপেক্ষতাবাদ ও সমাজতন্ত্রের বোধ তাদের একত্র করেছে, কিন্তু আরো গভীরে ছিল সহদোরের ঐক্য।
মুজিবের রীতি ছিল কঠোর পরিশ্রম। অক্লান্তভাবে তিনি জেলায় জেলায়, মহকুমায় মহকুমায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে মাঠের পর মাঠ হেঁটে মানুষের সঙ্গে মিশেছেন, মানুষের সংগঠিত করেছেন, তাদের চা, ভাত, ডাল, লবণ ভাগ করে খেয়েছেন। নাম মনে রেখেছেন, তাদের সঙ্গে মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন। ফসলের মাঠে প্রখর রোদে ঘর্মাক্ত হয়েছেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় গেছেন, কেউ মারা গেলে শেষকৃত্যানুষ্ঠানে কেঁদেছেন এবং কুলখানিতে উপস্থিত থেকেছেন।
মুজিব অন্যের আবেগ অনুভূতির সঙ্গে একাত্ন হতেন আন্তরিকতার সঙ্গে, আচরণ করতেন সহানুভূতির সঙ্গে এবং হাত বাড়িয়ে যা স্পর্শ করতেন তা গলফ ক্লাব বা ক্লাবের চেয়ার নয়, জনগণের ঘর্মাক্ত ধূলিমলিন হাত।
জনগণের প্রতিক্রিয়া নির্ভুলভাবে আন্দাজ করার অতিমানবীয় ক্ষমতা ছিল তাঁর। জনগণ কি বিশ্বাস করে, কি চায় তা তিনি জানতেন, কারণ তিনি শুধু যে তাদের বোধগম্য ভাষায় সব কিছু ব্যাখ্যা করতেন তা নয়, ব্যাখ্যা করতেন এমনভাবে যাতে তা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। তিনি যেমন জনগণের সঙ্গে সততার সাথে কথা বলতেন তেমনি জনগণও বলত তাঁর সাথে।
[ তথ্য সূত্র: বাংলাদেশ : জলে যার প্রতিবিম্ব – জেমস জে. নোভাক
রাহাত খান সম্পাদিত বঙ্গানুবাদ ]