সরকার এ বছরের শুরুর দিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার রায় কার্যকর করে। ২৭ জানুয়ারি গভীর রাতে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ৫ খুনির ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। বিশ্বের জঘন্যতম ও নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ৩৪ বছর পর বিচারের রায় কার্যকর করা হয়।
ঢাকা: সরকার এ বছরের শুরুর দিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার রায় কার্যকর করে। ২৭ জানুয়ারি গভীর রাতে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ৫ খুনির ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। বিশ্বের জঘন্যতম ও নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ৩৪ বছর পর বিচারের রায় কার্যকর করা হয়।
রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরপরই দেশে হত্যা, ক্যু এবং অবৈধ ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই বছরই ৩ নভেম্বর কারাগারেরর অভ্যন্তরে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহযোগী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে।
বঙ্গবন্ধুকে শুধু হত্যাই নয়, কুখ্যাত ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সংবিধানের চার মূলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্রকে পদদলিত করা হয়। সেই সঙ্গে সংবিধানকে ইচ্ছা মতো বার বার সংশোধন করা হয়।
প্রায় ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ইতিহাসের এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন করে। ২০০১ এ সরকার পরিবর্তন এবং বিএনপি-জামায়াত চার দলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর করা ঝুলে যায়। উচ্চ আদালতের বিচারপতি বিব্রতবোধ করাসহ বিভিন্ন কারণে আপিলের শুনানি স্থগিত থাকায় রায় কার্যকর হয়নি।
নানা টানাপোড়েন ও প্রতিকৃলতার কারণে ৯৬ সালে মামলা দায়ের করার পর এর বিচারকাজ শেষ করে রায় কার্যকর করতে সময় লাগে ১৩ বছর।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গিকার ছিলো ক্ষমতায় গেলে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর করার।
নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালের মধ্যে আসামিদের লিভ টু আপিলের শুনানি এবং সকল আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
সর্বশেষ ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ রায় পুর্নবিবেচনার শুনানি গ্রহণ শেষে আদেশ দিলে সব আবেদন খারিজ করা হয়।
এর মধ্য দিয়ে ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। যাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় তারা হলেন বজলুল হুদা, মুহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান একেএম মহিউদ্দিন (ল্যান্সার)।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরো ৬ খুনি এখনো বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর এবং ৫ খুনির ফাঁসি হওয়ায় সর্বস্তরের মানুষ, রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্বাগত জানায়।
বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের ফাঁসির মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয় অপরাধী যতই ক্ষমতাধর হোক না কেন কেউই আইনের উর্দ্ধে নয়, শাস্তি তাকে পেতেই হয়। হত্যা করে কেউই পার পেতে পারে না।