স্মৃতিতে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট


কামাল উদ্দিন আহাম্মদ

১৯৫২ থেকে ১৯৭১। বাঙালির মুক্তির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অধিকার আদায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিশ্বের একমাত্র নেতা, দেশ স্বাধীন করার আগেই যাকে ৭ কোটি মানুষ বসিয়েছিল জাতির পিতার আসনে। বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন, তা থেকে এ দেশের মানুষকে বিচ্ছিন্ন করতেই ১৯৭৫ সালের 
১৫ আগস্টের হত্যাকা-
১৯৭৫ সাল। এইচএসসি পাস করে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। থাকতাম মানিকগঞ্জে মহকুমা পশুপালন কর্মকর্তা কাকা ডা. মিনহাজ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। দিনটি ছিল শুক্রবার। ১৫ আগস্ট। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম কাকার বিষণœ মুখ, প্রিয়জন হারানোর বেদনায় বিমর্ষ। তিনি কাঁদছেন আর রেডিওর সংবাদ শুনছেন। রেডিওতে ততক্ষণে মেজর ডালিমের কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে, ‘আমি মেজর ডালিম বলছিÑ শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে!’ বলে কী? এ-ও হতে পারে? পাকিস্তানি জালেমরা অনেক ষড়যন্ত্র করে, বিচারের নামে প্রহসন করে যাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করতে চেয়ে সফল হতে পারেনি, তারই স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছেÑ এটা বিশ্বাস হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শত্রুরা কোনো গোপন বেতার থেকে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। হ্যাঁ, প্রথম যখন শুনি বঙ্গবন্ধুর হত্যার কথা, তখন প্রাথমিকভাবে আমার মতো অনেকের এরকমই মনে হয়েছিল। কারণ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার খবর ছিল অবিশ্বাস্য। আকাশ ভেঙে মাটিতে পড়তে পারে; কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা কীভাবে সম্ভব হতে পারে! 
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি দেখেছি সংগ্রাম, দেখেছি হত্যা আর ধ্বংসযজ্ঞ, মনে আছে বাড়ি ছেড়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পের সঙ্গে থাকার দিনগুলোর কথা। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কত মিছিল কত মিটিং। ১৯৭১ সালে ছোট-বড় সবাই দেখেছে শেখ মুজিব আর নৌকার জয়জয়কার। এছাড়াও শুনেছিলাম বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। স্কুলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের র‌্যালিতে অংশগ্রহণ করে ‘জয় বাংলা’-‘জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে সেøাগান দিয়ে বড়দের কণ্ঠে কণ্ঠ মেলাতাম, মিছিল করতাম। আগস্ট ট্র্যাজেডির সকালবেলা বাড়িভরা মানুষ আর ভয় ভয় চোখে সবার চোখে জল দেখে নিজেও উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। কিংকর্তব্যবিমূঢ় মানুষ ছিল বিপন্ন ভারাক্রান্ত জনক হারানোর শোকের মাতমে স্তম্ভিত। 
১৫ আগস্ট ছিল আমাদের জাতির জন্য সত্যিই একটি বিয়োগান্ত ঘটনা। নৃশংস হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে আমাদের স্বাধীনতার বিজয়ের মূলে আঘাত করা হয়েছিল। একজন মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যক্ষ সহযোগী হিসেবে এ মৃত্যুকে কোনোভাবে মেনে নিতে পারছিলাম না। মানসিকভাবে আরেকটা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে লাগলাম। কোথাও কোথাও বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ হলেও তা আর বেশিদূর যেতে পারেনি। শেষ ভরসা ছিল সাভার রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্প। কিন্তু বিদ্রোহীদের অনুগতরা সাভার ক্যান্টনমেন্ট থেকে গিয়ে রক্ষীবাহিনীর সেনাদের অবরোধ করে ফেলেছিল। সেদিন বঙ্গবন্ধুকে কেউ মেরে ফেলতে পারেÑ সেটা যেমন ছিল ভাবনার বাইরে, তেমনি তাকে হত্যা করলে কী করণীয়, সেটাও যেন কারও ভাবনার মধ্যেই নেই। সেদিন আশা করেছিলাম অনেক নেতা প্রতিবাদ করবেন; কিন্তু ঘটনা ঘটল তার উল্টো। জাতীয় চার নেতা তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এএইচএম কামরুজ্জামান ও তোফায়েল আহমেদ, আবদুর রাজ্জাক ছাড়া অনেকেই মন্ত্রিসভায় শপথ নিয়েছিলেন। আসলেই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করে পাকিস্তানি মূল্যবোধ সম্পৃক্ত একটি দেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যা ওই ষড়যন্ত্রেরই অংশবিশেষ। ১৫ আগস্টের পরপরই স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ওপর, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ আর সংখ্যালঘুদের ওপর। নির্বিচারে হত্যা-ধর্ষণ-সংখ্যালঘু নির্যাতন শুরু হয় চোখের পলকে। বুঝে ওঠার আগেই প্রশাসনের সব ক্ষেত্র বদলে যায়। পাকিস্তানপন্থীরা শুরু করে স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের ওপর নির্মম অত্যাচার।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মাত্র ৩-৪ দিন পর দেখেছি সর্বত্র নামকরা রাজাকারদের উত্থান, দেখেছি তাদের আক্রমণে কী করে নির্যাতিত হয়েছিল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকরা। মনে আছে এখনও, হোমনা থানার আওয়ামী লীগ নেতা দক্ষিণ ইউনিয়নের তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ও নিলখী ইউনিয়নের ভাইস চেয়ারম্যান রুক্কু মিয়াকে হত্যা করা হয়েছিল। এটা শুধু একটি এলাকার কথা তুলে ধরলাম। এভাবে সারা দেশে আতঙ্ক সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করার জন্য খুনিরা মেতে উঠেছিল, যা বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ চলছিল। তাদের নির্যাতনের ভয়ে এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছিল। তাদের অপরাধ ছিল তারা মুক্তিযোদ্ধা। দেখেছিলাম কী করে রাতারাতি ভারতবিদ্বেষী উসকানিমূলক কর্মকা-, ভারতীয় কোনো পণ্যের জন্য স্থানীয় হিন্দুদের বাসাবাড়িতে তল্লাশির নামে নির্যাতন চলে। 
নিজের অজান্তেই ১৫ আগস্টের ইতিহাসের ভয়াবহ কলঙ্কিত সেই ভোর আমার বিবেককে দংশিত করেছিল। আমার যৌবনের দুঃসহ স্মৃতি আমাকে পীড়িত করে আমার মনে যে ক্ষত হয়েছিল, তা থেকেই আমাকে ধাবিত করেছিল সেদিনের সে শোককে শক্তি হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যেতে। ফলে ক্রমান্বয়ে সত্যিকারের বঙ্গবন্ধুপ্রেমিক হয়ে ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে শিক্ষক রাজনীতিতে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলার কারণে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। নানা অত্যাচার-হয়রানির শিকার হয়েও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিন্দু পরিমাণ বিচ্যুত হইনি।
বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেলের কণ্ঠে বাঁচার আকুতি পত্রিকায় পড়ে আমি কতবার যে কেঁদেছি, সে বেদনাবিধুর কথাগুলো মনে পড়লেই আপ্লুত হয়ে যাই। কী বীভৎসতা! প্রথম তলার সিঁড়ির মাঝখানে নিথর পড়ে আছে ঘাতকের বুলেটে ঝাঁজরা হওয়া চেক লুঙ্গি-সাদা পাঞ্জাবি পরা স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর লাশ। তলপেট ও বুক ছিল বুলেটে ঝাঁজরা। নিথর দেহের পাশেই তার ভাঙা চশমা ও অতিপ্রিয় তামাকের পাইপটি। অভ্যর্থনা কক্ষে শেখ কামাল, টেলিফোন অপারেটর, মূল বেডরুমের সামনে বেগম মুজিব, বেডরুমে সুলতানা কামাল, শেখ জামাল, রোজী জামাল, নিচতলার সিঁড়িসংলগ্ন বাথরুমে শেখ নাসের এবং মূল বেডরুমে দুই ভাবীর ঠিক মাঝখানে বুলেটে ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলের লাশ। শিশু রাসেলের রক্তভেজা লাশ দেখে খুনিদের প্রতি চরম ঘৃণা-ধিক্কার জানানোর ভাষা পায় না মানবতাবাদী বিশ্বের কোনো মানুষ। সেদিন ওই ঘাতকরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে হত্যার এক জঘন্য উল্লাসে মেতে উঠেছিল। হত্যা করেছিল বিভিন্ন ঘরে ও একাধিক বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার এবং নিকটাত্মীয়সহ মোট ২৬ জনকে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান। তাদের বাংলাদেশে ফিরে আসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।
খুনিদের বাঁচানোর জন্য ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেন। ‘দি বাংলাদেশ গেজেট, পাবলিশড বাই অথরিটি’ লেখা অধ্যাদেশটিতে খন্দকার মোশতাকের স্বাক্ষর আছে। মোশতাকের স্বাক্ষরের পর আধ্যাদেশে তৎকালীন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএইচ রহমানের স্বাক্ষর আছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেন। এরপর ক্ষমতায় আসেন সামরিক শাসক মেজর জিয়া। সেদিন জিয়াউর রহমান ঘোষণা করেছিলেন, ৩ মাসের মধ্যে ব্যারাকে ফিরে যাবেন; কিন্তু এটি বাস্তবে হয়নি। তিনি হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপতি হন, যা ছিল একটি প্রহসনের নির্বাচন। ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশসহ ৪ বছরে সামরিক আইনের আওতায় সব অধ্যাদেশ, ঘোষণাকে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আইনি বৈধতা দেন। এভাবেই মোশতাক-জিয়া-খালেদা গং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষা করার ষোলোকলা পূর্ণ করেন। শুধু তাদের রক্ষা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা ওই খুনি চক্রদের অনেককে ভালোভবে পুরস্কৃত করেছিলেন; দিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে গুরুত্বপূর্ণ পদ, কূটনীতিক পদ, মন্ত্রিত্ব, দেশদ্রোহী গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব।
দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত করে। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর নিম্ন আদালত বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় ঘোষণা করে ১৫ জন সাবেক সেনা সদস্যের মৃত্যুদ-াদেশ দেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল উচ্চ আদালত ১২ জনের মৃত্যুদ- অনুমোদন করেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৫ বছরেও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের আপিল শুনানির ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা আদালতে ওঠে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হলে সে চূড়ান্ত বিচারের কাজটি শুরু হয়। বিচার শেষে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি কারাগারে আটক ৫ খুনি লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমদ, লে. কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর (অব.) বজলুল হুদা এবং মেজর (অব.) একেএম মহিউদ্দিন আহমেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। আর যাদের এখনও ফাঁসি কার্যকর হয়নি, তাদের দেশে ফেরত এনে অবিলম্বে রায় কার্যকর এ সরকারকেই করতে হবে। তা না হলে এ নিয়ে আর একটি ইনডেমনিটি হতে পারে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা ওদের ফাঁসির রায় বাস্তবায়ন চাই। সঙ্গে সঙ্গে এই শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে ওই অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করার শপথ নিতে হবে আজই।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট শুধু শেখ মুজিবের দেহকেই বুলেটবিদ্ধ করা হয়নি, আঘাত করা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর। তাদের লক্ষ্য ছিল শুধু বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করাই নয়, বরং মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বাংলাদেশটাকেই ধ্বংস করে দেয়া। তাই তো ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় একই বছরের ৩ নভেম্বর কারা-অভ্যন্তরে হত্যা করা হলো বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর চার জাতীয় নেতাকেও। ’৭১-এর পরাজিত শক্তির প্রতিশোধ গ্রহণের যে প্রক্রিয়া সে সময় অঙ্কুরিত হয়েছিল, তারই একটি ভয়ংকর পরিণতি ঘটে ১৫ আগস্টে। ঘাতকরা স্বাধীন রাষ্ট্রের অগ্রযাত্রা স্থবির করে দিয়েছিল। দেশের স্বাধীনতার চেতনাকে গলা টিপে উত্থান ঘটে মৌলবাদের তথা পাকিস্তানবাদের। রাতারাতি বাংলাদেশ বেতার হয়ে যায় রেডিও বাংলাদেশ, জয় বাংলা হয়ে যায় পাকিস্তাান জিন্দাবাদ অনুকরণে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’। ১৫ আগস্টের দোসররা এখনও সক্রিয়। আজ জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ও তার পুরো পরিবার এখনও সেই ১৫ আগস্টের দোসরদের কাছ থেকে নিয়মিত হত্যার হুমকি পাচ্ছেন। শুধু একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলাই নয়, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২১ বার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছিলÑ কখনও নিজ বাসভবনে, কখনও জনসভায় আবার কখনও তার গাড়িবহরে। এভাবেই বিভিন্ন সময় নানাভাবে শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল ঘাতকচক্র। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমত ও জনগণের আশীর্বাদে এখনও তিনি বহাল তবিয়তে দেশ ও জনগণের সেবা করে চলেছেন।
১৯৫২ থেকে ১৯৭১। বাঙালির মুক্তির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অধিকার আদায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিশ্বের একমাত্র নেতা, দেশ স্বাধীন করার আগেই যাকে ৭ কোটি মানুষ বসিয়েছিল জাতির পিতার আসনে। বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন, তা থেকে এ দেশের মানুষকে বিচ্ছিন্ন করতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকা-। জাতির জনককে যারা হত্যা করেছিল জাতি ঘৃণাভরে তাদের প্রত্যাখ্যান করছে।
আমি এখনও স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে পাই, আমার গ্রামের বাড়িতে তিনি গেছেন, আমাদের ঘরে খাবার খেয়েছেন, সবার খোঁজখবর নিয়েছেন। তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গ্রেফতার করে, তার আগে স্বপ্নে দেখতে পাই বঙ্গবন্ধু নজরবন্দি, আমাকে বলেন তুই আমার কাছে কাছে থাক, আরও স্বপ্নে দেখেছিলাম শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হবে। ১৫ দিন পরই তা ঘটেছিল। এ স্বপ্নের কথা আমার সহকর্মী প্রফেসর মোঃ শাদাত উল্লা, প্রফেসর ড. মো. হযরত আলী ও প্রফেসর ড. মো. নূরুল ইসলামকে বলেছিলাম। 
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হবে এবং দেশপ্রেম ও সততা দিয়ে সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে অবদান রাখবে। নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বানÑ সত্যকে জান, সত্য পথে চল, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তার সুযোগ্য কন্যা কৃষকরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করতে ব্রতী হও। হ 

প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ
ভাইস চ্যান্সেলর
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

SUMMARY

1478-1.jpg