শোকাবহ ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকের আচরণ ছিল রহস্যঘেরা আর কাপুরুষোচিত। ব্যতিক্রম ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ। কর্তব্যবোধ আর আত্মত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি।
কর্নেল জামিলের স্ত্রী আনজুমান আরা ২০১২ সালে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, সেদিন সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল বিপথগামী একদল সেনাসদস্য। বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে গিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। সোবহানবাগ মসজিদের কাছে পৌঁছালে তাঁর গাড়ি দাঁড় করানো হয়। তাঁকে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যেতে নিষেধ করা হয়। জামিল তা না শোনায় সেখানেই তাঁকে হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ২০ নম্বর সাক্ষী ছিলেন কর্নেল জামিলের গাড়িচালক আইনউদ্দিন। তাঁর চোখের সামনেই প্রাণ হারান কর্নেল জামিল। আইনউদ্দিনের সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, ভোর পাঁচটার দিকে তাঁর রুমের কলিং বেল বেজে ওঠে। ওই সময় অজু করছিলেন তিনি। বাসার সামনে গেলে কর্নেল জামিল ওপর থেকে দ্রুত গাড়ি তৈরি করতে এবং গণভবনে গিয়ে সব ফোর্সকে হাতিয়ার-গুলিসহ পাঁচ মিনিটের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যাওয়ার নির্দেশ দিতে বলেন। গণভবনে সৈনিকদের নির্দেশ জানিয়ে তিনি ফিরে এলে কর্নেল জামিল তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িতে রওনা হন। সোবহানবাগ মসজিদের কাছে পৌঁছালে দক্ষিণ দিক থেকে শোঁ শোঁ করে গুলি আসতে থাকে।
তখন আইনউদ্দিনকে প্রতিপক্ষের অবস্থান জেনে আসতে নির্দেশ দিয়ে কর্নেল জামিল গাড়িতেই বসে থাকেন। আইনউদ্দিন যখন দেয়াল ঘেঁষে ৩২ নম্বরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন পাঁচ-ছয়জন সেনাসদস্য দৌড়ে জামিলের গাড়ির দিকে যায়। কর্নেল জামিল দুই হাত উঠিয়ে তাদের কিছু বলার বা বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা গুলি করলে কর্নেল জামিল মাটিতে পড়ে যান।