নুরুজ্জামান মানিক
বারবার আশাহত ও পরাজিত হতে হতে ’আশা এক প্রবঞ্চনা’তেই ঈমান এনেছিলাম । কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগষ্টে ত্রিবেনী আর পুজির নষ্ট সঙ্গমে কিংবা স্টেনগানের ব্রাশ ফায়ারে বঙ্গবন্ধু হত্যার [1] পর বহুল প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় [2] , যুদ্ধাপরাধী বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন [3] যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু [4],উচ্চ আদালত কর্তৃক সংবিধানের ৫ম সংশোধনী বাতিল [5] , রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত কর্তৃক সামরিক আদালতে লে. কর্নেল এম এ তাহেরের গোপন বিচার অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া রায় [6] ইত্যাদি ঘটনায় আবারও আশায় বুক বাধতে ইচ্ছা হচ্ছে । আমরা একইভাবে আশা করি খালেদ-হায়দার-হুদা-মঞ্জুর ও জিয়া হত্যারও বিচার হবে [7] । লুৎফা তাহেরের[8] মতো সালমা খালেদ[9]এর প্রত্যাশাও পূরন হবে ।
অভ্যূত্থানের বিচার হয়েছে কি ?
সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা ছিল মানবাতার ইতিহাসে একটি ঘৃণ্যতম অপরাধ । আদালতে প্রমানিত হয়েছে ,এটি ছিল একটি পুর্ব পরিকল্পিত হত্যাকান্ড যা আদতে ফৌজদারি অপরাধ এবং ফৌজদারি আইনমতে তাদের বিচার হয়েছে । ঐ একইদিন আরো কিছু হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় । সেগুলির মামলাও আদালতে বিচারাধীন । আশা করছি, যথাশীঘ্রই সেগুলির বিচার কার্য সমাধা হবে । কিন্তু প্রশ্ন হলো-যদি পলাতক খুনিদের ফাসি নিশ্চিত করা যায় এবং অন্যান্য মামলাগুলিও নিস্পত্তি হয় তবে কি ১৫ আগষ্ট ঘটনাবালীর পাঠ অনুসন্ধান ও গবেষণার পরিসমাপ্তি ঘটবে ? ১৫ আগষ্ট শুধু কি সপরিবারে স্বাধীনতার স্থপতি নিহত হয়েছিলেন ? নির্বাচিত ও বৈধ সরকার উৎখাতের মাধ্যমে অসাংবিধানিক মোশতাক সরকার কি ক্ষমতায় আসেনি ? শুধু তাই নয় রাষ্ট্রের নীতিমালারও কি পরিবর্তন সূচিত হয়নি ? হত্যার পরপরই খুনি ডালিমের ঘোষণায় কি আসেনি পরিবর্তিত রাষ্ট্রের নাম ? এরপর থেকে পেছনে যাবার পালা -পাকিস্তানী আদলে অগণতান্ত্রিক সামরিক জান্তার ক্ষমতায়নের ধারায় বাংলাদেশ হেটেছে নব্বই সাল অবধি । আগষ্ট অভ্যূত্থান পরবর্তি সরকারগুলি সম্পর্কে আমরা দীর্ঘদিন থেকেই যা বলে এসেছি -তা' আজ উচ্চ আদালতের রায়েও প্রতিষ্ঠিত । কিন্তু নির্বাচিত ও বৈধ সরকার উৎখাতের মাধ্যমে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় আসার বিচার কি হয়েছে ?
বাংলাদেশে একের পর ক্যু-কাউন্টার ক্যু ও বিদ্রোহ ঘটেছে এবং বিশেষত জিয়ার আমলে কথিত ক্যু ও বিদ্রোহ দমনের নামে ক্যাঙ্গারু কোর্ট মার্শালে বিচার (গণহত্যা) চালানো হয়েছে [12]। এসবের সূতিকাগার কিন্তু ঐ ১৫ আগষ্ট অভ্যূত্থান । অবশ্য, এর আগেও ক্যুর পরিকল্পনা ও উদ্যোগের কথা জানা যায় কিন্তু কার্য করার দিক থেকে ১৫ আগষ্টই ছিল প্রথম ক্যু । এই ক্যুর বিচার কি হয়েছে ?
অন্যদিকে জিয়া হত্যার বেলায় আমরা দেখেছি -হত্যার বিচার হয়নি বরং মূল হোতাকে আড়াল করতে মঞ্জুর -মতিকেই হত্যা করা হয়েছে কিন্তু বিচার হয়েছে ক্যু বা বিদ্রোহের । যে কারণে একাশিতে অনেক অফিসারকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে কিংবা জিয়ার আমলেও অনেক অফিসার ও সিপাহি ফাঁসিতে ঝুলেছেন সেই একই কারণে স্বয়ং জিয়াও কি ফেঁসে যান না ১৫ আগষ্টের ক্যুতে ? জিয়া হত্যার সাথে কতটা জড়িত কিংবা আদৌ জড়িত কিনা সেটা তর্ক ও প্রমাণসাপেক্ষ কিন্তু তিনি যে ঘটনা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন তা’ শুধু খুনি ফারুক[13]-রশীদ[14] ভাষ্যেই নয় , ১৫ আগষ্টে জিয়ার আচরণ ও কার্যকলাপেও পরিলক্ষিত হয় [15]। উল্লেখ্য, জিয়া সেনাবাহিনীতে থেকে যা করেছিলেন তার শাস্তি সামরিক আদালতে ভয়াবহ কিন্তু অন্য সিনিয়র কর্মকর্তা বিশেষত সফিউল্লাহ, খালেদ মোশাররফ ও শাফায়াত জামিলের ভুমিকা কি ছিল ?
অভ্যূত্থানের সময় শেখ মুজিবের ফোন পেয়েও সেনাপ্রধান সফিউল্লাহর কোন এ্যাকশন না নেয়া,অধিনস্ত রশিদের কাছে বঙ্গবন্ধুহত্যার কথা শুনেও শাফায়াতের কোন এ্যাকশন না নেয়া বা রশীদকে গ্রেফতার না করা, ফারুকের ট্যাংকগুলোতে খালেদের আর্ম এনিমেশনের ব্যবস্থা নেয়া কিংবা রক্ষীবাহিনীকে আত্মসমর্পনের নির্দেশ সর্বোপরি জুনিয়ারদের বিরুদ্ধে তাদের কারো কোনো ভূ্মিকা গ্রহন না করা তাদের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে । লে কর্নেল এম এ হামিদ এর মতে , ১৫ আগষ্টের চরম মুহুর্তে জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশাররফ ,শাফায়াত জামিল এই তিনজনের ভূমিকাই ছিল রহস্যজনক । (16) বিধায়, সেই সময় সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা সেনাপ্রধান জেনারেল সফিউল্লাহ, ডেপুটি চিফ জেনারেল জিয়াউর রহমান, সিজিএস খালেদ মোশাররফ ও ৪৬ ব্রিগেড কমান্ডার সাফায়াত জামিলের ভূমিকার ব্যাপারে শেখ সেলিমের প্রশ্ন ও তাদের কোর্ট মার্শালে বিচারের দাবিকে আমলে নেয়া দরকার (17) । এককভাবে শুধু জিয়ার নাম নেয়াকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও অসততা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না ।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড তদন্তে কমিশন গঠন করা হোক
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে রয়েছে অনেক ষড়যন্ত্র, অনেক নেপথ্য নায়ক । ফৌজদারি আইনে শুধু হত্যার বিচারই হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের পূর্বাপর প্রেক্ষাপট ও কারণ বিশ্লেষণ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের শনাক্ত করে বিস্তৃত দলিল প্রকাশে এখনও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , পাকিস্তান, ভারত ও চীনের ভূমিকা খতিয়ে দেখা দরকার । বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে বাংলাদেশের পাকিস্তানপন্থী ও চীনপন্থি বামদের কোনো ভূমিকা ছিল কি-না সেটাও ভেবে দেখা দরকার। ১৫ আগস্টের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখাও জরুরি । বাংলাদেশের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই'র ভূমিকাও খতিয়ে দেখা দরকার ( ১৫ আগস্টের পরপরই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকি দালাল এবিএস সফদারকে ডিজি হিসেবে নিয়োগ দেন মোশতাক ! এটা কি কোন কাজের পুরষ্কার? ) বঙ্গবন্ধু হত্যার আদ্যোপান্ত তদন্তে একটি কমিশন গঠন জরুরি। তাই আমাদের দাবি , বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড তদন্তে কমিশন গঠন করা হোক । বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, জেল হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তী সময়ে সব হত্যাকাণ্ডসহ ২১ আগস্টের গ্রেনেড হত্যাকাণ্ডকে সঠিক বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রতিটি ঘটনায় তদন্ত কমিশন গঠন করে সঠিক বিচার করতে হবে। এগুলো করা গেলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। গণতন্ত্র সুসংহত হবে।
’৭৫ সালের ঘাত -সংঘাতময় সময়ে গুজব রটনা আর মিথ্যা প্রচারনার প্রধান ভাষ্যকারের কথা
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য , মার্কিন দলিল কিংবা দেশে বিদেশের নানা লেখা থেকে আজ অনেক কিছুই জানা যাচ্ছে - বের হয়ে আসছে ষড়যন্ত্রের নানা হদিস কিন্তু পচাত্তরের আগষ্টে রাজধানী ঢাকা কিন্তু ছিল গুজব আর মিথ্যা প্রপাগান্ডার নগরী । ১৫ আগষ্টের অভ্যূত্থানের সময় যে ভাষ্যটি গুজবের চেয়েও শক্তিশালীভাবে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল, যে বিবরণ সে সময় প্রকাশিত হয়েছিল সেটাই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিরাট ধাপ্পা । ভাষ্যটি এমন -মেজর রশিদ মেজর ফারুক ও মেজর ডালিমের নেতৃত্বে মাত্র ছয়জন জুনিয়র অফিসার তিন’শ লোক সঙ্গে নিয়ে শেখ মুজিবকে ক্ষমতাচ্যুত করে । অভ্যুথানের কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছিল , শেখ মুজিব ও তার সহযোগীদের ওপর কিছু অফিসারের ব্যক্তিগত ক্ষোভ এবং মুজিব প্রশাসনের ব্যাপক দূর্নীতি থেকে সৃষ্ট জনমানসের হতাশাই মুজিবের পতন ডেকে এনেছিল এবং অভ্যুত্থানকে করে তুলেছিল অবশ্যম্ভাবি ।বিদেশী সাংবাদিক গোষ্ঠীর সবাই এই ভাষ্যটি গ্রহণ করে । এন্থনী মাসকারেনহাসও পরে ফারুক-রশীদের সাক্ষাতকার নিতে আগ্রহী হন । লিফশুলজও শুরুতে এই ভাষ্যেই ঈমান আনেন (পরে অবশ্য মুজিব হত্যায় সিআইএ কানেকশন আবিষ্কারে উদ্যোগী হন )। বস্তুত ,বঙ্গবন্ধু হত্যার পরপরই বিদেশী সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয় । তথাপি ২০ আগষ্ট কয়েকজন সাংবাদিক ব্যাংকক হয়ে ঢাকায় ঢুকে পড়েন কিন্তু ২২ তারিখেই তাদেরকে বহিষ্কার করা হয় । ঢাকায় অবস্থানের পুরো সময়টা তাদের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অন্তরীণ রাখা হয় । সে সময় বিদেশী সংবাদ মাধ্যমগুলোর কাছে অভ্যথানের যাবতীয় তথ্যের সূত্র হয়ে দাড়ান তৎকালিন বিবিসি ও রয়টারের বাংলাদেশ প্রতিনিধি সাংবাদিক আতিকুল আলম । [18] মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তান রেডিওতে কাজ করতেন এবং মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কাজে লিপ্ত ছিলেন । যুদ্ধের পর বেশ কিছুদিন তাকে জেলখানায় আটক রাখা হয় । পরে শেখ মুজিবের আদেশে তাকে ছেড়ে দেয়া হয় । [19] নভেম্বরের চার ও পাঁচ তারিখে এই সাংবাদিক ঢাকায় কুটনীতিকে মহলে ঘুরে ঘুরে দাবি করেন যে তার কাছে কারান্তরীণ বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা ও মুজিব মন্ত্রীসভার প্রাক্তন সদস্য তাজউদ্দিন আহমদ-এর লেখা একটি চিঠি রয়েছে। ভারতীয় হাই-কমিশনার সমর সেনকে লেখা কথিত এই চিঠিতে অভ্যূত্থানের প্ল্যান ও প্রস্তুতির পূর্ণ বিবরণ লেখা ছিল। বিদেশি কুটনীতিকদের তিনি বোঝান যে, এই অভ্যূত্থানের উদ্দেশ্য ছিল ‘ভারতপন্থী তাজউদ্দিন আহমেদকে জেল থেকে বের করে এনে ক্ষমতায় বসানো। আলমের দেখানো এই চিঠির ফলে কূটনীতিক মহলে রটে যায় যে খালেদের অভ্যূত্থানের পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দাদের হাত রয়েছে। তার সহযোগী সাংবাদিক বন্ধুদের মতে এ ধরনের কোন চিঠির অস্তিত্বই ছিল না, পুরো ব্যাপারটাই একটা বাজে প্রচারণা মাত্র। [20] ইনি ’৭৫ এর নভেম্বরে লন্ডন পালিয়ে যান । জাসদ তাকে নাকি নির্যাতনের হুমকি দিয়েছিল । পরে হুমকিদাতারা যখন গ্রেফতার হন এবং তাহেরের অভ্যূত্থান সম্পুর্নভাবে বানচাল হয়ে যায় তখন তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন । সে সময় তিনি জিয়ার সামরিক শাসনের প্রকাশ্য সমর্থক হয়ে উঠেন । '৭৭ সালে জিয়ার বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীতে বিদ্রোহ দেখা দিলে বিদ্রোহীদের উপর নেমে আসে চরম নির্যাতন । ২৭ অক্টোবর দি ফাইনেন্সিয়াল টাইমস জানায় ১০০০ জনেরও বেশি প্রধানত সিপাহি বিশেষ সামরিক আদলতে বিচারের প্রতীক্ষায় আছে । অক্টোবরের পর ৬০০ জনের মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়-এই খবর জানা যায় '৭৮ সালের ৫ মার্চ প্রকাশিত দি সানডে টাইমস থেকে । এই সাংবাদিক সাহেব সশস্ত্রবাহিনীতে পাইকারী মৃত্যুদন্ডদানের পরেও শাসকদের হয়ে প্রকাশ্যে ওকালতি করেন । রবিবাসরিয় হলিডেতে ( ৩০ অক্টোবর'৭৭) ইনি এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে পথভ্রস্টদের প্রতি সহানুভুতির জন্য গাল দেন । তিনি এই গণমৃত্যুদন্ডদানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রশ্ন করেন,"বাংলাদেশের কি করা উচিত ছিল ? এদের এমনি এমনি ছেড়ে দেবে যাতে পরে আরো শক্তি নিয়ে ওরা আক্রমন করতে পারে ?" বিবিসির এই সংবাদদাতা জিয়াকে রাজনীতিতে যোগদানের আহ্বান জানান হলিডের নিবন্ধের শেষে । ১৯৭৯ এর মার্চের দিকে জিয়ার সামরিক সরকারের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয় । তিনি প্রকাশ্যে দি গার্ডিয়ানের এক নিবন্ধে (১ মার্চ ’৭৯) অভিযোগ করেন, ১৯৭৯ এর ১৮ ফেব্রুয়ারী যে সংসদীয় নির্বাচন হয় তাতে জিয়া ব্যাপক কারুচুপির আশয় নিয়েছেন ।
আবারও জিয়া :
শাসক জিয়ার ব্যাপারে উপসংহার টানা যতটা সহজ পচাত্তরের ঘাত সংঘাতময় সময়ের মেজর জেনারেল জিয়ার মূল্যায়ন ততটাই কঠিন । জিয়াকে কোনো এক পক্ষের লোক প্রমান আরো কঠিন । আমাদের বুদ্ধিজীবিদের যে কমন চরিত্র তৎকালিন জিয়ার আচরনেও তা’ দেখা যায় ।’৭৫ সালের ঘাত -সংঘাতময় সময়ে জিয়াকে লরেনস লিফসুলজও এক দূর্বোধ্য চরিত্র বলেছেন [21]। ১৫ আগস্ট'৭৫ তারিখের আগ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন বঙ্গবন্ধু (আর তার বাকশাল ) । ফারুক -রশিদ-ডালিমের ক্যুর ফলে তিনি সপরিবারে নিহত হন । ক্ষমতায় আসেন মূ্ল কুচক্রী খন্দকার মোশতাক । ৩ নভেম্বর'৭৫ খালেদ-শাফায়াত জামিলের পাল্টা ক্যুর ফলে জিয়া নজরবন্দী হন, ফারুক-রশিদ চক্র দেশছাড়া হন এবং খন্দকার মোশতাকও অপাসারিত হন (৬ তারিখে ) । ৭ তারিখে কর্ণেল তাহেরের আরেক পাল্টা ক্যুতে খালেদ নিহত হন । ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন জিয়াউর রহমান । তাহের প্রতারিত হন ,পরে জিয়ার আদেশে তার ফাঁসি হয় । অতএব আমরা দেখছি ,১৯৭৫ সালে ঘাত-সংঘাতময় সময়ে মোট চারটি গ্রুপ ক্রিয়াশীল ছিলঃ
১। বঙ্গবন্ধু আর তার বাকশাল ।
২। মোশতাক-ফারুক -রশিদ গ্রুপ।
৩। খালেদ-শাফায়াত জামিল গ্রুপ ।
৪। কর্ণেল তাহেরে আর তার বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ও গণবাহিনী ।
এখন আপনারাই বলুন , কোন ব্যক্তি যদি উপরের সবগুলি গ্রুপের সাথেই সম্পর্ক রাখেন তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত টানা আসান কিনা ? একদিকে বাকশালের সদস্য হবার আবেদন করছেন অন্যদিকে জাসদ ও তাহেরের সাথে সম্পর্ক রাখছেন ! মোশতাক সরকারে সেনাপ্রধান হয়েছেন আবার ফারুক-রশীদের বিরুদ্ধে শাফায়াত জামিলকে উস্কিয়েছেন ? লে.কর্নেল এম এ হামিদ বলেন-”১৫ আগস্ট ঘটনার পর জিয়ার সঙ্গে টেনিস কোর্টে আমার প্রায়ই দেখা হত । আমি তাকে সেনানিবাসে আসন্ন ঝড়ের সংকেত উপলদ্ধি করতে বারবার অনুরোধ জানাই । জবাবে সে বলতো হামিদ “ওয়েট এন্ড সি ” । এক মাঘে শীত যায় না । আমি তখন তার এসব কথার মাথামুন্ডু বুঝতে পারিনি । তাকে আবার অফিসে গিয়ে একই সতর্ক বানী উচ্চারণ করলে জিয়া ঘাড় কাত করে অবহেলা ভরে মুচকি হেসে একই জবাব দেয় । এতে আমি বিব্রত হই । জিয়া এ সময় দুকূ্ল রক্ষা করে চলছিলেন । একদিকে ফারুক-রশিদের পিঠ চাপড়াতেন অপরদিকে শাফায়াত জামিলের কাঁধে হাত রাখতেন ।” [22] শাফায়াত জামিলের বর্ণনায়ও এর সত্যতা মিলে ।[23] তবে, এটা বলা যায়-জিয়া উচ্চাভিলাসি সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন । সুবিধাবাদি ও সুযোগসন্ধানী ছিলেন এবং যখন সময় এসেছে তখন তার পূর্ণ ফায়দা নিয়েছেন ।
"হত্যাই খুলে দেয় হত্যার দরজা " এই অমোঘ সংলাপ শেক্সপিয়ার লিখেছিলেন চারশত বছর আগে তার ম্যাকবেথ নাটকের জন্য । একথা সত্য ফলেছিল এদেশের ইতিহাসেও । জিয়া হত্যাকারিদের বিচার তো দূর কি বাত বরং বিচারের পথই রুদ্ধ করেন [24]। জিয়া পাওয়ারে আসার ৬ মাসের মাথায় (এপ্রিল ১৯৭৬) তাকে উৎখাতের লক্ষ্যে ফারুক-রশীদ গং ঢাকায় এসে ক্যুর চেষ্টা চালান । [25] যে জিয়া তাহেরের প্রতি কোন দয়া দেখাননি তিনিই হাতেনাতে প্রমাণ পেয়েও এদের শুধু ছেড়ে দিলেন না, খুনি মেজরদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকুরির ব্যবস্থাও করলেন ! অবশ্য , বরাবরের মত সিপাহীদের কপালে ফাঁসিই জুটে । খুনি মেজররা তবুও জিয়ার বিরুদ্ধে পরবর্তীতেও একাধিক ক্যুর চেষ্টা চালান । যা হোক,হত্যার রাজনীতি যে ভাল নয় তা' স্বয়ং জিয়া নিজের জীবন দিয়ে প্রমান করেন ৩০মে ১৯৮১ তারিখে ।[26]
মুজিবামলের মূল্যায়ন
দাবি করছি না , শেখ মুজিব শতভাগ সফল ও সুশাসক ছিলেন বরং তার শাসনামলে বিশেষত রক্ষীবাহিনী নিয়ে অনেক পাড় আওয়ামী লীগারকেও সমালোচনা করতে দেখেছি । স্তাবকতা ও নিন্দা চর্চার বাইরে এসে মুজিবামল ও শাসক শেখ মুজিবের মূল্যায়ন করার মত সেয়ানা কি আমরা আজো হয়েছি ? মিথ ও গুজব প্রিয় বাঙ্গালীর কি আগ্রহ আছে অনুসন্ধান ও গবেষণায় ?
জামাত-বিএনপিসহ মুজিব বিরোধীরা গত ৩৬বছর ধরে একই কলের গান বাজাচ্ছে । মজার ব্যাপার হল- এদের প্রচারণার সপক্ষে অদ্যাবধি কোনো প্রমান পাওয়া যায়নি ? শেখ কামাল মেজর ডালিমের বৌকে অপহরণ ও রেপ করেন , শেখ কামাল ব্যাংক ডাকাতি করেন ইত্যাদি প্রচারণা আজো চলছে । অথচ স্বয়ং খুনি মেজর ডালিম (পরে লে. কর্নেল) এর লিখিত গ্রন্থ "যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি" অনুসারে ঘটনার সাথে শেখ কামাল জড়িত নন বরং বিরোধ হয় গাজী গোলাম মোস্তফার সাথে। অধিকন্তু শেখ কামালের সাথে ডালিমের অত্যন্ত বন্ধুত্বপুর্ন সম্পর্ক ছিল [27]। এবার আসা যাক ব্যাংক ডাকাতি প্রসঙ্গে । বলা হয়, ডাকাতি করতে গিয়ে শেখ কামাল গুলি খেয়ে আহত হয়েছিলেন। ১৬ ই ডিসেম্বর সকালে জাসদ তাদের মিটিং থেকে প্রথম প্রচার করে "শেখ কামাল দলবল নিয়ে ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে গুলি বিদ্ধ হয়"। আসলে যেটি ছিল পুলিশের সাথে নিছক একটা ভুল বুঝাবুঝি ।[28] তাছাড়া , এটি যে বানোয়াট ও মিথ্যা তার চাক্ষুস সাক্ষী এই সাবেক জোট সরকারের মন্ত্রী বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান টুকু কারন সেদিন কামালের গাড়িতে তিনিও ছিলেন।[29] বলা হয় ক্রসফায়ারে কমরেড সিরাজ শিকদার নিহত হবার পরদিন সংসদে দাড়িয়ে নাকি বঙ্গবন্ধু দম্ভভরে বলেছেন : কোথায় আজ সিরাজ শিকদার ! অথচ, নথিপত্র বলছে সংসদ বসেছে ২৫ জানুয়ারি [30] আর সিরাজ নিহত হন ২ জানুয়ারি [31] ! মুজিবামলকে বাকশালি আমল হিসেবে প্রচার করা হয় (বাকশাল ভাল কি মন্দ ছিল সেই তর্কে যাচ্ছি না ) অথচ বাকশালের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার কথা ছিল ১৫ আগষ্ট ঢাবি সমাবর্তনে আর কার্যকর হবার কথা সেপ্টেম্বর থেকে !
মুজিবামলে ৩০ হাজার জাসদ কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে (বিএনপির সাংসদ এ্যানীর দাবি ৪০,০০০ ) -এই অভিযোগ নতুন কিছু নয় । কোনো fraction বা পৌনঃপুনিক ফিগার নয় , একেবারে round figure-৩০,০০০/৪০,০০০ ! এটা কি সত্য ইতিহাস নাকি মিথ? কোন্ গবেষণার রেফারেন্সে এই দাবি ? এই সংখ্যা সর্বনিম্ন ৩০ হাজার ধরে হিসেব করলেও দেশের ৪৬৪টি থানা এলাকার প্রত্যেকটিতে গড়ে ৬৫ জন করে, ৬০ হাজার হলে ১৩০ জন আর ১,৩০,০০০ হলে ২৮০ জন নিহতের তথ্য থাকার কথা। তাছাড়া রক্ষীবাহিনীর ১৬ হাজার সদস্য মাত্র দুই বছরের মাথায় প্রত্যেকে গড়ে ২ জন করে জাসদকর্মী হত্যা করার কথা এবং জাসদের প্রতিষ্ঠার এক বছর বাদ দিলে বাদবাকি দু’বছর অর্থাৎ ৭৩০ দিনে ৩০,০০০ কর্মী হত্যা মানে প্রতিদিন ৪১ জন করে হত্যা করার তথ্য মিলে যা সে সময়ের দেশি-বিদেশি কোনও মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়নি এমনকি জাসদের নিজেদের মুখপত্র গণকণ্ঠেও নাই। ঘটনার পরম্পরা বাদে হঠাৎ করেই একদিন লেখা হলো, রক্ষীবাহিনী তাদের ৩০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে।[32] আর এই তথ্য লুফে নিলেন মুজিব বিরোধী জামাত -বিএনপি ঘরানার রাজনৈতিক , দালাল বুদ্ধিজীবি আর কলামিষ্টগণ । যাচাই বাছাইয়ের কি দরকার ? মিথ আর গুজবপ্রিয় বাঙ্গালী তো এতেই সন্তষ্ট !!
তবে এটা সত্য যে , মুজিবামলে ‘সারাদেশে মরেছে এবং মেরেছে জাসদ’ [33] কিন্তু কার্যত জাসদ নির্মূল অভিযান যে চালানো হয় জিয়ার সামরিক শাসনামলে এই সত্য এরা চেপে রাখেন । আর দেশব্যাপী জাসদ নির্মুল অভিযাননের বর্ণনা পাওয়া যায় লরেন্স লিফসুলজের অসমাপ্ত বিপ্লবে – “মাত্র এক সপ্তাহ পর তেইশে নভেম্বর জিয়া প্রতি অভ্যুত্থান ঘটালেন। স্পিনোলা হয়েছিলেন ব্যর্থ, জিয়া সেখানে হলেন সফল নায়ক। সেনাবাহিনীকে বাদ দিয়ে পুলিশবাহিনীর ওপর মূলত ভিত্তি করেই জিয়া জাসদ নেতৃত্বের পুনঃআটকাদেশ জারি করলেন। তেইশে নভেম্বরের রাত্রিতে জলিল, রব আর ইনুকে হঠাৎ করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন আধাসামরিক বাহিনীর লোকেরা তাহেরকে গ্রেফতার করে। তাহেরের গ্রেফতারের দুদিন পর জাসদের চারজন সমর্থক যার মধ্যে দুজন ছিলেন তাহেরের ছোটভাই ভারতীয় হাইকমিশনে সমর সেনকে জিম্মি করবার প্রচেষ্টা চালায়। হাই কমিশনে ঢোকার মুখে সমর সেনকে জড়িয়ে ধরা হয়। সামনে দাঁড়ানো হাই কমিশনারের দেহরক্ষীদের প্রতি অপহরণকারীরা চিৎকার করে বলে গুলি কর না, ইনি আমাদের জিম্মি। কিন্তু দেহরক্ষীরা হালকা মেশিনগানের গুলি ছুঁড়ে হাই কমিশনারকে আহত করে, আর দুজন অপহরণকারীকে সাথে সাথে হত্যা করে। এদের মধ্যে একজন ছিলেন তাহেরের ভাই। অপহরণকারী একটিও গুলি ছোড়েনি বেঁচে যাওয়া দুজন অপহরণকারী পুলিশের নিকট বলেন যে, তাঁরা শুধু তাহের জলিল, রব ইনু আর অন্যান্য জাসদ নেতৃবৃন্দের মুক্তির আশায়ই সমর সেনকে জিম্মি করতে চেয়েছিল সম্পূর্ণ নিজেদের বুদ্ধিতেই তারা এই কাজ করে, পার্টি সিদ্ধান্ত কোনোভাবে একে প্রভাবিত করেনি, তবে তারা বিশ্বাস করত জিয়া সাতই নভেম্বরের বিপ্লবের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে আর সেটাই ছিল এই রেডের মূল কারণ। সারাদেশব্যাপী জাসদের ওপর ব্যাপক দমন শুরু হয় জেলাসমূহে পুলিশের টানাজালে আটকা পড়ে স্থানীয় ছাত্র ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা। ঢাকার জারি হয় কড়া কারফিউ আর বিভিনড়ব অঞ্চল কডন করে পুলিশ পার্টি সদস্যদের উদ্দেশ্যে বাড়ি বাড়ি তল−াশি চালাতে থাকে এইসব গ্রেফতারের পর দেশের বিভিন্ন সেনাছাউনিতে বেশ বড় রকমের গোলমালের খবর পাওয়া যায়। খোদ ঢাকায় দুটি বিক্ষুব্ধ ব্যাটালিয়নকে অস্ত্র ত্যাগ করাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়, অন্যদিকে বগুড়া, কুমিল্লা আর রংপুর থেকেও শত শত সৈনিকের ডিটেনশনের খবর পাওয়া যায়। ডিসেম্বরের প্রম দিকে চট্টগ্রামের নৌসেনা ছাউনিতে নতুন করে বিদ্রোহ দেখা দেয়, পরের বছর মার্চের দিকে আবারো চট্টগ্রাম ব্রিগেডের সেনা
ইউনিটগুলোর মধ্যে গোলমান দানা বেঁধে উঠে। সামরিক আইন কর্তৃপক্ষ এই পরিস্থিতিতে প্রবলভাবে রাজনৈতিক মনোভাবাপনড়ব সেনাবাহিনীর বাইরে একটি নির্ভরযোগ্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনী গড়ার দিকে মনোযোগ দেন। জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকের এক সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়োজিত সচিব সালাউদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধানে একটি পুলিশ কমব্যাট ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। এই সালাউদ্দিন আহমেদ আয়ুব খানের আমলে পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিচালনার দায়িত্ব ছিলেন বলা বাহুল্য ইতিমধ্যে তিনি পুরোপুরি পুনর্বাসিত হয়েছেন।[34] এই যে রক্ষী বাহিনী ধাচের সাড়ে ১২ হাজার সদস্যের পুলিশ বাহিনী, সে সম্পর্কে একই বইয়ে সিবিএস নিউজের পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিনিধির এক প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে : ‘নভেম্বরের বিদ্রোহের ফলে সেনাবাহিনীর বিভিনড়ব ব্যক্তিত্বের আনুগত্যের সম্বন্ধে সন্দেহ দেখা দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জিয়া বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীকে নতুন করে সাজানোর কাজে লেগেছেন। সৃষ্টি হয়েছে ১২,৫০০ জনের অভিজাত ও বিশেষ এক পুলিশ বাহিনী। উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিরা সারাদেশ থেকে এসে ঢাকায় জিয়ার সাথে মিলিত হবার পর সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশ বাহিনীকে নতুনরূপে সংগঠিত করে একটি কার্যকর বাহিনীতে পরিণত করার লক্ষ্যে এই বাহিনী গঠন করার প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয়া হয়। যদিও পুলিশ বাহিনীর পুনসংগঠনিকীকরণের ভেতরের খবরগুলো এখনো অজানা, ঢাকার লোকদের বিশ্বাস, যেহেতু সেনাবাহিনীর ওপর ভরসা ছিল না তাই পুলিশ বাহিনীর অনুগত্যকে পুরোপুরি নিশ্চিত করার জন্য জিয়া এই বাহিনীকে পুনর্গঠন করেন। একই কারণে নতুন বিশেষ অপারেশন ইউনিটসমূহ যেগুলি সেনাবাহিনীর অধীন থাকার কথা সেগুলিকে পুলিশের নিয়ন্ত্রণভুক্ত করা হয়েছে। ১২,৫০০ জনের এই নতুন বাহিনীকে পাঁচ ভাগ করে প্রতি ভাগে ২,৫০০ জনের সশস্ত্র ব্যাটালিয়ন তৈরি করা হয়েছে। সংখ্যায় এটা পূর্বের মন্দভাগ্য রক্ষীবাহিনীর প্রায় সমান। সরকার বলেছেন, এই স্পেশাল অপারেশনাল ইউনিটের কাজ হবে বিশেষ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া, বিশেষত ‘যেখানে আধুনিক অস্ত্রের ব্যবহার রয়েছে।’ তবে অনেকেরই আশাংকা নতুন এই বাহিনী কাজে-কর্মে রক্ষীবাহিনীর নতুন সংস্করণ ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশেষ অভিযান, ঝাটিকা আক্রমণ প্রভৃতি যে সব তৎপরতার জন্য সুনির্দিষ্ট দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ দরকার সেসব বিশেষ কাজে এই বাহিনী নিয়োজিত হবে। দেশের কোথাও এদের কোনো ঘাঁটি না থাকলেও এরা সব সময়েই ‘পূর্ণ সমরসজ্জায়’ বাংলাদেশের যেকোনো স্থানে অভিযান চালাতে প্রস্তুত থাকবে। মনে হচ্ছে বামপন্থী জাসদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান অভিযান চালাতে ঠিক এই জিনিসই সরকারের দরকার ছিল। ভারতীয় হাই কমিশনারকে অপহরণের ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর থেকেই সরকারের এই দমননীতি বিশাল আকার নেয়। ইতোমধ্যেই তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকায় পাওয়া প্রতিবেদনে বোঝা যায় যে নিয়মিতভাবেই বন্দুক যুদ্ধ, ধাওয়াবাজি, আর ধরপাকড় চলছে। ডিসেম্বরে ঢাকার সংবাদপত্রগুলোতে ‘প্রচুর পরিমাণে অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র’, ও প্রায় এক হাজার ‘দুস্কৃতিকারী’, (জাসদ কর্র্মীদের জন্য ব্যবহৃত সরকারি বিশেষণ) ধরা পড়ার খবর প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের পূর্ব ও
উত্তরাঞ্চলে রিলিফ কাজে নিয়োজিত পশ্চিমারা খবর দিচ্ছেন যে জাসদ কর্মীদের আতড়বীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদেরকে আটক করা হচ্ছে। তাদের প্রতি নিপীড়নও ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।’[35] অধিকন্তু, জিয়া জাসদ সমথর্ক (বা যাদের সমথর্ক সন্দেহ করা হয়েছে ) সিপাহিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন ক্যাঙ্গারু কোর্ট মার্শাল করে । "Hang them by the neck till they are dead" -General Ziaur Rahman. [36]
মিথ আর মিথ্যা প্রপাগান্ডার কিছু তুলে ধরা হয়েছে উপরে ।প্রায় নিয়মিতই এসব প্রচারণা চলত তৎকালিন দৈনিক গণকণ্ঠ , দৈনিক হক কথা , রবীবাসরীয় হলিডে ইত্যাদিতে । তবে, মুজিব সরকার বিরোধী সমালোচনায় (বানোয়াট প্রচারনাসহ)চ্যাম্পিয়ন দৈনিক গণকণ্ঠ ।জাসদের মুখপাত্র হিসেবে এটি পরিচিত । এ থেকে অনেকে ভূ্লবশত মনে করেন "জাসদ" গঠনের পর তার "মুখপাত্র" হিসেবে "দৈনিক গণকণ্ঠ" প্রকাশিত হয়েছিল । কিন্তু আসলে দৈনিক গণকণ্ঠ প্রকাশিত হয়েছিল জাসদের গঠনের (৩১ অক্টোবর '৭২) অনেক আগে।তাহলে প্রশ্ন আসে কবে ? আশ্চর্যজনক হলেও সত্য , দৈনিক গণকণ্ঠ প্রকাশিত হয়েছিল সেদিন যেদিন বংবন্ধু পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ঢাকায় পৌছেন অর্থাৎ ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখে ! [37]
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র' সৃষ্ট মুজিববাহিনী অন্যতম অধিনায়ক সিরাজুল আলম খানের পরামর্শে মুজিব বাহিনীর আফতাব আহমদের নির্বাহী পরিচালনায় আর কবি আল মাহমুদের সম্পাদনায় দৈনিক গণকণ্ঠ প্রকাশিত হয় । প্রকাশক ছিলেন মার্শাল মনি । বংবন্ধু ফিরে আসার দিনই (শাসন কাজ শুরুই করেননি , ভাল -মন্দ দুর কি বাত ) তার বিরুদ্ধাচরন করার জন্য সিরাজুল আলম খানরা দৈনিক গণকণ্ঠ প্রকাশ করেছিলেন কার স্বার্থে ? কাদের পরামর্শে ?
দানবের বিমূঢতা কি পারে সত্যের আলো নিভাতে ? আকাঁশে যতই মেঘ থাক , সূর্য উঠবেই । সত্যের আলোয় উদভাসিত হোক ইতিহাস ।
রেফারেনস:
1.স্বাধীনতা যুদ্ধের অপর নায়কেরা // নুরুজ্জামান মানিক ,শুদ্ধস্বর ,একুশে বইমেলা ২০০৯ ; http://www.somewhereinblog.net/blog/nuruzzamanmanik/28994069
2.http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-04-07/news/20377
3.http://www.bbc.co.uk/bengali/news/2010/03/100325_tribunal.shtml
4.http://www.bdnews24.com/bangla/details.php?cid=2&id=130179&hb=top
5.http://www.dw-world.de/dw/article/0,,5203790,00.html
6.http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-03-22/news/140632
7.http://www.somewhereinblog.net/blog/nuruzzamanmanik/29349199
8.http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-03-23/news/140884
9. http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/nuruzzamanmanik_1300945273_1-Salma_Khaled.jpg
10.http://www.samakal.com.bd/details.php?news=13&view=archiev&y=2010&m=01&d=28&action=main&menu_type=&option=single&news_id=43549&pub_no=232&type=
11.http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-08-15/news/86738
12.http://www.youtube.com/watch?v=UEc2Ex-3-is&feature=related
13.World in Action ,ITV , Granda Television , August 1976 ; http://www.youtube.com/watch?v=l292yT1FHDo
14.http://shadakalo.blogspot.com/2007/11/col-rashids-interview.html
15.Additional Paper Books of Death Reference No. 30 of 1998 (Arising out of Sessions Case No. 319 of 1997) Judgement Passed by Mr. Kazi Golam Rasul District & Sessions Judge, Dhaka
16. তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা, লে. কর্নেল এম এ হামিদ, মোহনা প্রকাশনী, ১৯৯৫
17.http://www.amadershomoy.com/content/2009/08/23/news0648.htm
18.মুজিব হত্যায় সিআইএ, দেলোয়ার হোসেন ,এশিয়া পাবলিকেশন ,১৯৯৬
19.বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড, ফ্যাক্টস এন্ড ডকুমেন্টস,অধ্যাপক আবু সাইয়িদ , পৃ ১২২
20.Bangladesh: The Unfinished Revolution by Lawrence Lifschultz, London: Zed Press, 1979
21.http://www.col-taher.com/writting_others1.html
22.ভোরেরকাগজ, ৫ নভে ২০০৬
23.একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর, কর্নেল শাফায়াত জামিল, সাহিত্য প্রকাশ, এপ্রিল ২০০০
24.http://en.wikipedia.org/wiki/Indemnity_Act
25.Bangladesh: A Legacy of Blood, by Anthony Mascarenhas, Hodder and Stoughton, 1986
26.http://www.somewhereinblog.net/blog/nuruzzamanmanik/29165859
28. যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি , লে.কর্নেল (অব) শরিফুল হক ডালিম; লে কর্নেল এম এ হামিদ, প্রাগুক্ত ।
29.Anthony Mascarenhas, ibid
30.http://www.freeimagehosting.net/uploads/865af9f10f.gif ; http://www.esnips.com/doc/98ee06f0-39f4-44f1-b02e-3d08110a7375/sheikh-kamal-bank-robbery
31.http://omipial.amarblog.com/posts/113689
32.http://nation.ittefaq.com/issues/2008/01/09/all0729.htm
33.http://motiurrahman.amarblog.com//posts/109186/
34.কামরুদ্দীন আহমদ, স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয় এবং অতঃপর , নওরোজ কিতাবিস্তান ,১৯৮২ ।
35.Bangladesh: The Unfinished Revolution by Lawrence Lifschultz, London: Zed Press, 1979
36.Dacca’s Strongman Consoidates. Far Eastern Economic Review. 16 January,
37.Anthony Mascarenhas, ibid
38.আল মাহমুদ, বিচুর্ণ আয়নায় কবির মুখ, পৃ• ১২৬; চাড়ুলিয়া, পৃ• ২০১