মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু:
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে দ্বিমত পোষণ করা উচিত নয়। অতীতে এই মহান নেতাকে বিএনপি জামায়াত মিলিতভাবে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চক্রান্ত করেছে এবং এখনো করছে। কারণ তাদের পেছনে রয়েছে এক কালো ইতিহাস। নিজেদের ভয়ংকর রূপকে ঢাকার অপচেষ্টা করতে গিয়ে তারা ধর্মীয় বেশ ধরে ঘাপটি মেরে বসে আছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। ভন্ড ইসলাম প্রীতি রাজনীতির মাধ্যমে নুতন করে বাংলাদেশের রাজনীতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করছে বিএনপি জামায়াত। তারা বঙ্গবন্ধুকে ইসলাম বিরোধী বেক্তি হিসেবে দাড় করানোর অপচেষ্টা করে চলছে। অথচ স্বাধীন বাংলাদেশে ইসলামকে সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি স্বাধীনতার পর পরই রাশিয়াতে অনুষ্ঠিত তাবলীগে বাংলাদেশ থেকে জামাত প্রেরণের ব্যবস্থা করেছিলেন। ঢাকার কাকরাইলের মসজিদের জন্য জমি বরাদ্ধ করেছিলেন। বিশ্ব এজতেমার জন্য টঙ্গীতে সরকারি জায়গা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে পবিত্র হজ্জ পালনের জন্য বিমান ভাড়া করা সহ সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করেন। ঢাকার সোবানবাগ মসজিদের উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। পাকিস্থানে অনুষ্ঠিত ইসলামী সন্মেলনে যোগদান করে মুসলিম বিশ্বে ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। এমন একজন ইসলাম প্রিয় মহান বেক্তির বিরুদ্ধে বিএনপি জামায়াত মিথ্যা অপপ্রচার ছড়িয়ে জনগনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে তাদের সবচেয়ে বড় ভয় মুক্তিযুদ্ধের সত্য ও জীবন্ত ইতিহাস। যে ইতিহাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নেতৃত্ব ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। যে ইতিহাসের আদর্শ হলো একটি ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশ। যে ইতিহাসের সৃষ্টি হলো বাঙালি জাতীয়তাবাদ। যে ইতিহাসের সৃষ্টি হলো একটি শোষিতের গণতন্ত্র। যে ইতিহাসের সৃষ্টি হলো একটি সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মাঝে নেই। তার দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আজ আমরা যে কোনো রাজনৈতিক দল করি না কেন একটি বাস্তব সত্যকে আমাদের অবশ্যই গ্রহণ করে চলতে হবে, একটি সত্য ইতিহাসকে অবশ্যই আমাদের মানতে হবে। বঙ্গবন্ধু কোনো দলের নেতা নয়, কোনো দলীয় নেতা নয়। বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতীয় নেতা, জাতির পিতা, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্রষ্টা। ভারতে গান্ধী, পাকিস্থানে জিন্নাহ আর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু।
আজকাল বঙ্গবন্ধুকে আওয়ামী লীগের দলীয়করণ করা নিয়ে অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন। কিন্তু এখানে দলীয়করণের প্রশ্ন আসবে কেন? বঙ্গবন্ধুর ছবি, বঙ্গবন্ধুর কথা ও আদর্শ সব দলের মধ্যেই থাকা উচিত। আওয়ামী লীগ কি কখনো বলেছে যে বঙ্গবন্ধু শুধুই আওয়ামী লীগের? আওয়ামী লীগ কি কখনো বলেছে যে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল বঙ্গবন্ধুর ছবি বেবহার করতে পারবে না? আওয়ামী লীগ কি কখনো বলেছে যে বঙ্গবন্ধুকে আর কেউ জাতির পিতা বলে আখ্যায়িত করতে পারবে না? আওয়ামী লীগ কি কখনো বলেছে যে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস অন্যান্য আর কোনো রাজনৈতিক দল পালন করতে পারবে না? আজ যারা এসকল কথা বলছেন তারা পরোক্ষভাবে বঙ্গবন্ধুকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্যই বলছেন। তবে একমাত্র রাজনৈতিক দলের পোস্টার বা দলীয় সভা ছাড়া বেক্তিগত প্রচারে বঙ্গবন্ধুর ছবি বেবহার করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত তা নিয়ে সমালোচনা আসতে পারে।
আমি বেক্তিগতভাবে মনে করি যারা নির্বাচনী প্রচারে, সভা সমিতিতে, নিজের প্রচারে বঙ্গবন্ধুর ছবি বেবহার করেন তাদের এবেপারে সতর্ক হওয়া উচিত। বেক্তিগত প্রচারে বঙ্গবন্ধুর ছবি বেবহার সরকারকে বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হবে বলেই অনেকে মনে করেন। সরকার এবেপারে আইন করে যেখানে সেখানে বঙ্গবন্ধুর ছবি বেবহার নিষিদ্ধ করতে পারে। বঙ্গবন্ধুর ছবি সসন্মানে দেশের সব রাজনৈতিক দল তাদের প্রচারে বেবহার করতে পারবে কিন্তু কোনো বেক্তিগত প্রচারে নয়। জমি জায়্গা দখলদারিতে, দোকান পাঠ ঘরবাড়ি দখলে যারা আজ বঙ্গবন্ধুর ছবি টাঙ্গিয়ে বেবহার করছেন তাদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর বেবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এরা মূলতো বঙ্গবন্ধু ও তার প্রাণ প্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগকে তাদের বেক্তগত স্বার্থে বেবহার করছে।
বেশ কিছুদিন আগে আমি ঢাকার একটি অন লাইন পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর অজানা কথা নিয়ে লিখেছিলাম। লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পর দেশ বিদেশ থেকে বেশ কিছু বেক্তি ইমেইলে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তারা সকলেই এই মহান নেতার অজানা কথা জানতে পেরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আমি আগেও লিখেছি আবারও লিখছি যারা ৭২ থেকে ৭৫ পনরই আগস্ট পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আসে পাশে ছিলেন তাদের আলী মেহদী খানের কথা ভালো করেই মনে থাকার কথা। বিশেষ করে জাতির জনকের রাজনৈতিক সচিব, অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও প্রিয় বেক্তি তোফায়েল আহমেদ(বর্তমানে মন্ত্রী, তোফায়েল ভাই), বঙ্গবন্ধুর বেক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহমেদ (মহিউদ্দিন ভাই), বঙ্গবন্ধুর পি এ মহিতুল ইসলাম (মুহিত ভাই) ও বঙ্গবন্ধুর বেক্তিগত ড্রাইভার যার নাম আমার মনে নেই। ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ নুরুল ইসলাম নুরু ভাইয়ের সাথে বঙ্গবন্ধুর বাসায় কামাল ভাই ও শহীদ ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গিয়ে মুহিত ভাইয়ের সাথে আমার নিজেরও দেখা হয়েছে কয়েকবার। বঙ্গবন্ধুর বাসার নিচের তালায় হাতের বাম পাশ্বে একটি রুমে বসতেন তিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে তিনি রাজসাক্ষী হয়েছেন। ছাত্রলীগ সভাপতি শেখ শহীদুল ইসলাম ভাই তখন থাকতেন বঙ্গবন্ধুর বাসার নিচের তালার পেছনের বারান্দার একটি সিঙ্গেল রুমে। আর কামাল ভাইয়ের রুম ছিল তৃতীয় তালায়।
আমার বাবা আলী মেহদী খান ৭২ থেকে ৭৫ চৌদ্দই আগস্ট পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সিকিউরিটি অফিসার। প্রতিদিন সকালে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার থেকে প্রথমে রমনার গণভবনে ও পরবর্তিতে শেরে বাংলা নগরের গণভবনে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এইসময় বঙ্গবন্ধুর কালো মার্সেটিজের সামনের সিটে বসতেন বাবা। দিনের কর্মসূচি শেষে আবার রাতে বাসায় পৌছে দিতেন। বাকি সময়টা বাবার ডিউটি গণভবনে থাকতো। গাড়িতে বসে বঙ্গবন্ধু অনেক কিছুই খোলামেলা আলাপ করতেন। বঙ্গবন্ধুর গাড়ির বেক্তিগত ড্রাইভার ও বাবা ছিলেন সকল কথার স্বাক্ষী। বাবা আজ ইন্তেকাল করেছেন। তবে আমি জানিনা বঙ্গবন্ধুর সেই বেক্তিগত ড্রাইভার আজও জীবিত আছেন কি না। বাবা বেচে থাকতে তার কাছ থেকে শোনা কথা থেকেই আমার এই লেখা।
বঙ্গবন্ধুর অসীম স্মরণ শক্তি ছিল। একবার কাউকে দেখলে কোনদিন তাকে ভুলতে পারতেন না। একদিন গণভবনে নেতার সাথে দেখা করার জন্য একজন বৃদ্ধ ভদ্রলোক আসেন। তার পড়নে ছিল লুঙ্গি আর পাঞ্জাবী। গেটে পাহারারত পুলিশ বৃদ্ধ ভদ্রলোককে কিছুতেই গণ ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। এমন সময় বঙ্গবন্ধুকে সাথে নিয়ে বাবা গণভবনের গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছিলেন। বাবা তখন গাড়ির সামনের আসনে বসা। বৃদ্ধ ভদ্রলোকটিকে গেটের একপাশে অসহায়ের মত দাড়ানো অবস্থায় দেখে বঙ্গবন্ধু গাড়ি থামাতে বললেন। পরে তিনি নিজে গাড়ি থেকে নেমে ভদ্রলোককে বুকে জড়িয়ে ধরেন এবং নিজের পাশে বসিয়ে গণভবনের ভেতরে নিয়ে আসেন। গণভবনে রুমের ভেতরে কিছুক্ষণ আলাপ আলোচনার পর তারা দুইজন একসাথে বাহিরে আসলে বঙ্গবন্ধু উপস্থিত সকলকে বললেন, আপনারা যারা এই ভদ্রলোককে গণভবনের ভেতরে ঢুকতে বাধা দিয়েছেন তারা তার অতীত সম্পর্কে কিছুই জানেননা। আপনাদের জানার কথাও নয়। পাকিস্থানী পুলিশ যখন আমাকে গ্রেফতারের জন্য হন্য হন্য হয়ে সারা দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছিল তখন তিনি নিজের জীবনের বিনিময়ে আমাকে তার বাসায় আশ্রয় দিয়েছিলেন। আমি তার কাছে অনেক ঋণী। তার এই ভালবাসার কথা, তার এই উপকারের কথা আমি কোনদিন ভুলতে পারবো না। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় যে ঐ ভদ্রলোক কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কাছে কিছু চাইতে আসেননি, এসেছেন নেতার সাথে একবার দেখা করার জন্য। এই হলেন আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু।
বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল অসীম ভালবাসা। বঙ্গবন্ধু সবসময় বাংলাদেশ ও বাঙালির জীবন ধারাকে কিভাবে আরো উন্নত করা যায় তা নিয়ে ভাবতেন। বাঙালি জাতিকে বিশ্বে মাথা উচু করে দাড়ানোর স্বপ্ন দেখতেন বঙ্গবন্ধু। একদিন বঙ্গবন্ধু গাড়িতে বসে বললেন শুকনা মরিচের ঘাটতি বাংলাদেশে হবে কেন? মরিচতো আমাদের দেশে অধিক পরিমানে উত্পাদন হয়। আমাদের মরিচ নিশ্চই সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পাচার করা হচ্ছে। মরিচের তো এত ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। বঙ্গবন্ধু ঠিকই বলেছেন। এইসময় চোরাচালানিদের কারচুপিতে দেশে অতিরিক্তভাবে শুকনা মরিচের মুল্য বৃদ্ধি পায়। হটাত করে বাজার থেকে শুকনা মরিচ উধাও হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু রেগে উচ্চস্বরে বললেন, আমার কাছে যদি টাকা থাকতো তাহলে আমি পুরো বাংলাদেশ ভারত সীমান্তটাই উচ প্রাচীরে ঘেরা করে রাখতাম। তখন বাবা বললেন সার, চোরাচালানি মনে হয় নৌপথেও হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বললেন আমার নৌবাহিনীকে আরো শক্তিশালী করে সমুদ্র পথটাও বন্ধ করে দিতাম। আমি এত কষ্ট করে বিদেশ থেকে আমার বাঙালি ভাই বোনদের জন্য খাদ্য আমদানি করে নিয়ে আসি আর চোরেরা সব লুট করে ভারতে স্মাগলিং করছে। শুকনো মরিচের ঘাটতি বাংলাদেশে কেন হবে এটাই ছিল নেতার সবচেয়ে বড় প্রশ্ন? পরবর্তিতে অবস্থার উন্নতির জন্য বঙ্গবন্ধুর সরকার শুকনা মরিচ রেশনে দেওয়া শুরু করতে বাধ্য হয়েছিল। এর পর একদিন গাড়িতে বসেই বাবাকে জিজ্ঞাসা করলেন মেহদী সাহেব রেশনে কি এখন মরিচ দেওয়া হচ্ছে? বাবা বলেন জি সার।
বঙ্গবন্ধুর মতই অতি সাধারণ জীবন যাপন করতেন নেতার স্ত্রী আমাদের বঙ্গ মাতা। নেতার সংগ্রামী জীবনের প্রতিটি ইতিহাসের সাথে জড়িত বঙ্গ মাতা। সারা জীবন বঙ্গবন্ধুর পাশ্বে থেকে তিনিও সহ্য করেছেন অনেক দুক্ষ কষ্ট। বাংলাদেশের অনেক আন্দোলন, সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গ মাতা বেগম ফজিলতুন্নেসা মুজিবের অবদান ছিল অসামান্য।
বঙ্গবন্ধু পরিবারের আরেকটি ঘটনা। ঘটনাটা আমাদের বঙ্গ মাতাকে নিয়ে। বঙ্গবন্ধু তখন চিকিত্সার জন্য মস্কোতে অবস্থান করছিলেন। এইসময় বাবার ডিউটি পরে বঙ্গমাতার সাথে। বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুর জন্য দওয়া চাইতে সিলেটের হজরত শাহজালাল (রা:) মাজার জিয়ারতের স্বিদ্ধান্ত নিলেন। ঢাকা থেকে বিমানে করে বঙ্গমাতা এলেন সিলেটে। বঙ্গমাতার এই সিলেট সফরের সময় বাবা সাথে ছিলেন। হজরত শাহজালাল (রা:)মাজারের সিড়ি দিয়ে বঙ্গমাতা আস্থে আস্থে হেটে হেটে উপরে উঠছিলেন। সহজ সরল নেতার স্ত্রী আমাদের সকলের বঙ্গমাতা বাবাকে তখন বললেন, মেহদী সাহেব, আমার পেটে তখন জামাল, আপনাদের বঙ্গবন্ধুর নামে পুলিশী ওয়ারেন্ট। হন্য হন্য হয়ে পুলিশ তখন সারা বাংলাদেশে ওনাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। ঐসময় গভীর রাতের অন্ধকারে নৌকার বৈঠা চালিয়ে তিনি আমাকে হাসিনা ও কামালকে নিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রাম। এক ঘাট থেকে আরেক ঘাট। বেথায় আমি তখন খুব কষ্ট করছিলাম। কই তখনতো আমাদের কোনো নিরাপত্তা বাহিনী ছিল না। ওই দুর্যোগ বিপদে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেছেন। আর আজ আপনারা আমাদের নিরাপত্তা দিতে এসেছেন! মেহদী সাহেব, আল্লাহ যেদিন চাইবেন সেদিন আমাদের আর কেউ রক্ষা করতে পারবে না। সিকিউরিটি দিয়ে কি হবে? সর্ব শক্তিমান আল্লাহর প্রতি কি অসীম বিশ্বাস ও আস্থা আমাদের বঙ্গমাতার। বঙ্গমাতা সেদিন তার দুহাত তুলে হজরত শাহজালাল (রা) মাজারে জাতির জনকের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে মুনাজাত করেছিলেন। এর কয়দিন পরেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মস্কো থেকে সুস্থ হয়ে ঢাকায় ফিরে আসেন।
বাবা যেমন জাতির জনককে নিজের মন থেকে আপন করে নিয়েছিলেন ঠিক তেমনি আপন করে নিয়েছিলেন নেতাও। গণভবন থেকে কিংবা কথাও বের হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু বলতেন, মেহদী সাহেবের নামাজ পড়া হয়েছে নাকি? বঙ্গবন্ধু ভালো করেই জানতেন যে বাবা সব সময় নামাজ পড়তেন এবং সময় হাতে পেলেই ওজিফা পড়তেন। সম্ভবত ধর্মের প্রতি দুর্বলতার জন্যই বাবাকে নেতা দেখতেন একটু অন্যরকম। একদিনের ঘটনা। জাতির জনকের পিতা ও মাতা কিছু দিনের বেবধানে ইন্তেকাল করেন। পিতা মাতা দুজনের স্বল্প বেবধানে ইন্তেকালে বঙ্গবন্ধু এই সময় অত্যন্ত ভেঙ্গে পরেন। মির্তু সংবাদ শুনে বঙ্গবন্ধুর নিকটতম আত্বীয় স্বজনে ঘর ভরে যায়। এইসময় বাবা যখন অন্দর মহলে প্রবেশ করছিলেন তখন ভেতর থেকে পরিবারের একজন বলে উঠলেন, ঘরের ভেতরে আবার সিকিউরিটি অফিসার আসবে কেন? বঙ্গবন্ধুর কানে একথা গেলে তিনি ততক্ষনাত উচ্চস্বরে বলে উঠলেন, উনি শুধু সিকিউরিটি অফিসারই নন, উনি ভেতরে যাবেন, উনাকে ভেতরে আসতে দেও। অন্দর মহলে প্রবেশ করে বাবা ঘন্টার পর ঘন্টা বঙ্গবন্ধুর পিতার দেহের পাশে বসে পবিত্র কোরান তেলওয়াত করেন। অবশেষে টুঙ্গি পাড়ায় বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দুজনকে সমাধি দেওয়ার কাজটা বাবা নিজের হাতে সম্পন্ন করেছিলেন। এভাবেই একজন সাধারণ পুলিশ অফিসার হওয়া সত্তেও বঙ্গবন্ধুর বেবহার আর ভালবাসা বাবাকে ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সাথে একসময় ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তোলে। বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে অত্যন্ত ভালবাসতেন ও শ্রদ্ধা করতেন। মির্তুর পূর্ব পর্যন্ত সবসময় এই মহান নেতার জন্য আল্লাহর দরবারে দওয়া করেছেন আর ভোট দিয়ে গেছেন নৌকায়। আমার বাবা ২০০২ ইন্তেকাল করেছেন।
একদিন দুপুরে বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডিতে বাসার বারান্দায় একটি এজিচেয়ারে বসে তসবি পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন। এইসময় বঙ্গমাতা বাবাকে খাবারের জন্য বঙ্গবন্ধুকে ডেকে আনার কথা বলেন। বাবা বারান্দায় এসে দেখেন ক্লান্ত নেতা গভীরভাবে ঘুমিয়ে আছেন। এই অবস্থায় বঙ্গবন্ধুকে ডাকার সাহস বাবার হলো না। কি করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। সরাসরি না ডেকে তিনি একটু কাশি দিলেন। আর তাতেই নেতা জেগে উঠলেন। বাবা বঙ্গবন্ধুকে বললেন খাওয়ার জন্য আপনাকে ভেতরে যেতে বলেছেন। বঙ্গবন্ধু উঠে ভেতরে চলে গেলেন। বঙ্গবন্ধুর পড়নে তখন লুঙ্গি ও গেঞ্জি। কৌতুহলী বাবা এজিচেয়ারে বঙ্গবন্ধুর তসবিটি হাতে নিয়ে আশ্চর্য হলেন। আমরা সাধারণত যে তসবি পড়ে থাকি তার সংখা ১০০ হলেও বঙ্গবন্ধুর পড়া তসবির সংখা ছিল ১০০০, সুবহানআল্লাহ। বাঙালি জাতির নেতা বঙ্গবন্ধু কত ধর্মপ্রাণ ছিলেন একবার ভেবে দেখুন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন খাঁটি মুসলমান। তবে তিনি কখনই ধর্মকে সামনে টেনে আনতেন না। কারণ তিনি ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করতেন। তিনি বলতেন যার যার ধর্ম তার তার। চলবে
বাবার মুখে শোনা বঙ্গবন্ধুর অজানা কথা (২)
পরবর্তী অংশ: বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রীয় সফরে কুয়েত সহ মধ্য প্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ভ্রমনে যাওয়ার সময় বাবাকে সাথে নিয়েছিলেন। এইসময় বঙ্গবন্ধু কুয়েত, মিশর, ইরাক তিনটি দেশ একসাথে সফর করেছিলেন। কুয়েতে নেতার থাকার বেবস্থা করা হয়েছিল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে। এখানে একটি রুমে সোনায় মোরা দেওয়া পালংকে নেতার থাকার বেবস্থা করা হয়েছিল। সারা দিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে বঙ্গবন্ধু যখন বিছানায় এলিয়ে পরতেন তখন নেতার গায়ের বিভিন্ন স্থানে প্রচন্ড বেথা অনুভূত হতো। বঙ্গবন্ধুর বেক্তিগত নিরাপত্তা অফিসার মহিউদ্দিন ভাই(এখনো জীবিত)তখন নেতার হাত পা টিপে দিতেন। নেতার অত্যন্ত বিশস্থ ও কাছের মানুষ ছিলেন মহিউদ্দিন ভাই। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের সময় মঞ্চে নেতার পেছনে দাড়িয়ে ছিলেন তিনি। জানিনা বর্তমানে তিনি কোথায় কি অবস্থায় আছেন।
কুইয়েতে রাষ্ট্রীয় ভবনে নেতাকে বিছানায় এভাবে হাত পা টিপতে দেখে কুয়েতী নিরাপত্তাদের একজন বাবাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ওনার শরীর কি খারাপ? বাবা বললেন, না খারাপ হবে কেন? তবে বিভিন্ন সময় পাকিস্থানের কারাগারে থাকাকালীন তার উপর নানাভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এই কারণে ওনার শরীরে মাঝে মধ্যে বেথা অনুভূত করে। তাই ওনার বেক্তিগত নিরাপত্তা অফিসার ওনাকে মেসেজ করে দিচ্ছেন।
এইসময় নামাজ পড়ার সময় হলে বাবা আকারে ইঙ্গিতে তাদের বূঝাতে চাইলেন পবিত্র কাবা শরিফ কোন দিকে। সৈনিকরা বাবার কথা বুঝতে পারছিল না। উপায় না দেখে বাবা আল্লাহ আকবর, আল্লাহ আকবর তাকবির পড়া শুরু করে দিলে অন্যান্য সিকিউরিটিরা এসে বাবাকে চুম খেতে শুরু করে, আর বলতে থাকে মুসলমান মুসলমান। ততক্ষনাত তারা বাবাকে কাবা শরীফের মুখ দেখিয়ে দেয়। বাবার নামাজ পড়া শেষ হলে বাবা একজন অফিসারকে জিগ্গেস করলেন, তোমরা এমন করলে কেন? বেপার কি? উত্তরে কুয়েতি অফিসার ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে বললেন একাত্তর সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পাকিস্থান থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ হিন্দু দেশ হয়ে গেছে। ওখানে মুসলমানদের মেরে ফেলা হয়েছে। আর যারা আছে তাদের অবস্থাও নাকি খুবই খারাপ। বাবাকে মুসলমান দেখে তাই তারা আশ্চর্য হয়েছে।
বাবা অবাক হয়ে গেলেন তাদের কথা শুনে। বাবা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, কে বলেছে আপনাদের এসকল কথা। কোথা থেকে শুনেছেন আপনারা এসকল মিথ্যা কথা`? সিকিউরিটিরা বললো, আমরা রেডিওতে শুনেছি। পরে জানা গেল পাকিস্থানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর মিডিয়া ও জামায়েত নেতা গোলাম আজম সারা মুসলিম বিশ্বে অপপ্রচার করেছে বাংলাদেশ এখন নাকি একটা হিন্দুদের দেশ হয়ে গেছে। ওখানে প্রায় সকল মুসলমানদের মেরে ফেলা হয়েছে ও হচ্ছে। মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কিছুই শুনলেন বাবা তাদের মুখে।
তারপর বাবা বললেন, আপনারা মিথ্যা অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন। আপনারা যা শুনেছেন সবই মিথ্যা কথা। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে বলা হয় সিটি অফ মস্ক। এখানে প্রতিটি কদমে কদমে রয়েছে মসজিদ। আপনারা পাকিস্থান ও তাদের সহযোগিতাকারী বাঙালি দালালদের দাড়া মিথ্যার শিকার হয়েছেন। বাবা বললেন বাংলাদেশের নাম গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হলেও এদেশে শতকরা আশি ভাগ মানুষ মুসলমান। আমরা এখানে যারা এসেছি সকলেই মুসলমান।
পরে শোনা গেল বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর জামায়াত নেতা গোলাম আজমকে পাকিস্থান সরকার সৌদি আরবে প্রেরণ করেছিল সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালনোর জন্য। গোলাম আজম সৌদিতে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এধরনের অপপ্রচার চালিয়ে গিয়েছিলেন। পাকিস্থান ও গোলাম আজমের এই অপপ্রচারে সকল মুসলিম দেশ কর্ণপাত না করলেও সৌদি আরব বঙ্গবন্ধু সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তারা স্বীকৃতি দিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোস্তাক সরকারকে। এই গোলাম আজমকে জেনারেল জিয়াউর রহমান পরবর্তিতে বাংলাদেশে আসার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু প্রতিদিন সকালে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার রোডের বাসভবন থেকে বের হয়ে মিরপুর রোড ধরে শেরে বাংলা নগর গণভবনে যেতেন। বাবা তখন নেতার গাড়ির সামনের আসনে বসতেন। একদিন সকালে গণভবনে যাওয়ার পথে সোবানবাগ মসজিদ ক্রস করার সময় বঙ্গবন্ধু বাবাকে বললেন, এই মসজিদটির এত করুন অবস্থা কেন? আপনি একটু খোজ নিয়ে আমাকে জানাবেন। বাবা যেন আকাশে চাদ পেলেন। কারণ এই মসজিদে তিনি নিজেও নামাজ পড়েন। আমরা তখন থাকতাম সোবানবাগ সরকারী কলোনিতে। আমরা ছাড়াও এই সময় এই কলোনিতে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোটো বোনের জামাই সৈয়দ সৈয়দউদ্দিন। এই সৈয়দ সৈয়দউদ্দিনের মেয়ে রোজির সাথেই বিয়ে হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় পুত্র লে: শেখ জামালের। তিনি তখন ছিলেন জন প্রশাসন মন্ত্রনালয়ের যুগ্ন সচিব।
বঙ্গবন্ধুর কথা অনুযায়ী বাবা পরবর্তিতে সোবানবাগ মসজিদ কমিটির তত্কালীন সেক্রেটারি বাবার ঘনিষ্ট বন্ধু শ্রদ্ধেও সহিদুল হক চাচার সাথে যোগাযোগ করেন। বাবা ও সহিদুল হক চাচা খুবই ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন। তিনি তখন এ জি বিতে চাকুরী করতেন ও বাস করতেন ঠিক সোবানবাগ মসজিদের উল্টোদিকের একটি গলিতে। বাবা সহিদুল হক চাচার সাথে কথা বলে মসজিদের সকল সমস্যার কথা জেনে নিলেন । পরে একদিন বঙ্গবন্ধুকে সোবানবাগ মসজিদের অবস্থা জানালে বঙ্গবন্ধু ততক্ষনাত মসজিদ উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দের নির্দেশ দিয়েছিলেন। আজ যারা এই মসজিদে দৈনন্দিন নামাজ পড়েন এবং মসজিদ কমিটির তত্তাবদায়ক জানিনা নেতার এই অবদানের কথা তাদের কারো জানা আছে কি না।
আজকের সোবানবাগ মসজিদের যে উন্নতি দেখছেন তার শুরুটা ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অনুদান। মাঝখানে একবার দেশে গিয়ে সোবানবাগ মসজিদ দেখে আমিতো অবাক। চিনতেই পারেনি। এই কি সেই মসজিদ যার অবস্থা ৭৪ সালে ছিল ভাঙ্গা দেয়াল আর পুরানো টিনের চাল। আজ কত বড় উন্নতি হয়েছে মসজিদটির। মসজিদ ঘিরে কয়েকটি দোকানও খোলা হয়েছে দেখলাম। দু:সময়ে সোবানবাগ মসজিদের করুন অবস্থা থেকে উন্নতির পথে নিয়ে আসতে আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে শূণ্য ভূমিতে পা রেখেছিলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। শূন্য থেকে বিত্ত গড়ে তুলার স্বপ্ন নিয়ে সংগ্রামে নেমেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশের চারিদিকে তখন শুধু হাহাকার আর যুদ্ধবিদ্ধস্ত ধ্বংসের নিদর্শণ। যেদিকেই চোখ যায় শুধু নাই নাই আর নাই। এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে বাঙালি জাতিকে রক্ষার করার লক্ষে বঙ্গবন্ধু বিশ্বের দরবারে সাহায্যের হাত বাড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর আহবানে সমাজতান্ত্রিক দেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসতে থাকে সাহায্য। কিন্তু জাতির এতই দুর্ভাগ্য যে সেই সাহায্যের অনেকাংশ গরীবের ঘরে না গিয়ে উঠেছিল আওয়ামী লীগ নামধারী কিছু সংখ্যক সুযোগ সন্ধানী ও সুবিধাবাদীদের হাতে। দুর্নীতিপরায়ন এসকল ব্যক্তিরা বিদেশী সাহায্য কালোবাজারে বিক্রয় করে রাতারাতি বনে যায় বিত্তশালী। তাই একদিন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন আমার কম্বল আমি পায়নি। কোথায় গেল আমার কম্বল? আমি এত কষ্ট করে বিদেশ থেকে আমার দেশের মানুষকে রক্ষার জন্য ভিক্ষা করে সাহায্য নিয়ে আসি আর সেই সাহায্য চোরেরা সব চুরি করে নিয়ে যায়|
এই চোরেরা অন্য কেউ ছিল না, ছিল আওয়ামী লীগের ভেতরে থাকা দুর্নীতিবাজ ও সুবিধাবাদী ব্যক্তি।
দেশের এমনি এক দুরবস্থার সময় একদিন তৃণমূল থেকে একজন আওয়ামী লীগ নেতা ঢাকায় গণভবনে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে এলে বঙ্গবন্ধু তাকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার জন্য তার রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদকে (তোফায়েল ভাই) নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পরবর্তীতে সেই তৃণমূলের নেতার কাছে আর্থিক সাহায্য প্রেরণ করা হয়। কয়েক মাস পরে সেই নেতা বঙ্গবন্ধুর কাছে দেখা করে সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে এলে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ নেতাকে প্রেরণ করা অর্থ পেয়েছেন কি না জিজ্ঞাসা করলে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে পাওয়া অংকের কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু তা শুনে রেগে গিয়ে চিৎকার করে তোফায়েল আহমেদকে ডাকলেন। নেতার ডাক শুনে দৌড়ে কাছে এলেন তোফায়েল আহমেদ। বঙ্গবন্ধু তখন বললেন আমার গণভবন থেকে তৃণমূলে যেতে যদি অর্থের অংকের পরিমাণ এভাবে উধাও হয়ে যায় তাহলে দেশের অন্য জায়গার অবস্থাটা কি হতে পারে? এভাবে দেশ চলবে কি করে? কার এতবড় সাহস হলো এখান থেকে অর্থ মেরে খাওয়ার? জানি না পরবর্তীতে আসল চোর ধরা পরেছিল কি না!
তবে একথা সত্য যে সেদিন আওয়ামী লীগের ভেতরে থাকা কিছু সংখ্যক দুর্নীতিবাজরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ কেউ করেছে ক্ষমতার অপব্যবহার আর সন্ত্রাসী। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে ঢাকার রমনার বটমূলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত এক সভায় তখন আওয়ামী লীগের ভেতরে থাকা দুর্নীতিবাজদের একটি নামের তালিকা প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধুকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানানো হয়েছিল। আজকের ছাত্রলীগের কাছ থেকে কি আমরা এধরনের একটা কিছু আশা করতে পারি না? চলবে
বাবার মুখে শোনা বঙ্গবন্ধুর অজানা কথা (৩ )
পরবর্তী অংশ: চুয়াত্তের ষোলই ডিসেম্বর রাতে মতিঝিল বাংলাদেশ বেঙ্কের সামনে বঙ্গবন্ধুর জৈষ্ঠ পুত্র ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ কামাল ভাই পুলিশের গুলিতে আহত হন। তার সথে সেদিন আরো যারা আহত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে যাদের নাম আমার মনে পরে তারা হলেন বরকত ভাই, মনির ভাই, শাহান মামা ও টুকু ভাই। এই দুর্ঘটনার খবর সাথে সাথে সারা দেশে ছড়িয়ে পরে। পরবর্তিতে এই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিলকে তাল বানিয়ে দুষ্ট লোকেরা কামাল ভাইকে জড়িয়ে নানা অপপ্রচার চালায়। জাসদ ছাত্রলীগ এবেপারে বিশেষ ভুমিকা রাখে। আজও মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি এই অপপ্রচার শেখ কামাল ভাইয়ের বিরুদ্ধে চালিয়ে যাচ্ছে।
ঐসময় জাসদ ছাত্রলীগের সাথেই মূলত আমাদের মুখোমুখী লড়াই হতো বেশি। ঢাকা শহরের প্রতিটি কলেজ নির্বাচনে তাদের সাথে ছিল আমাদের প্রতিদন্ধিতা। এই কারণে জাসদ ছাত্রলীগ সবসময় কামাল ভাইয়ের পেছনে লেগে থাকতো ও নানা অপপ্রচার চালাতো। যেহেতু কামাল ভাই ছিলেন আমাদের (ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ) সকলের নেতা।
এই ঘটনার দুদিন পর জাসদ ছাত্রলীগ ঢাকা শহরের গ্রীন রোডের রাস্তার দুপাশের দেয়ালে এই বলে চিকা মেরেছিল যে, শেখ কামাল গুলি খাইলো, বেঙ্ক লুট বন্ধ হইলো। অথচ বাস্তব ছিল অন্য।বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল ভাই সেদিন পুলিশ সার্জেন্ট কিবরিয়ার একটি মারাত্মক ভুলের কারণে গুরুত্বর আহত হয়েছিলেন।
যারা সেদিন কামাল ভাইয়ের নামে এধরনের অপপ্রচার চালিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করেছিল আজকে এদের অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত হয়ে বড় বড় পদ নিয়ে বসে আছেন, মন্ত্রিও হয়েছেন। অথচ ঐসময় তারাই ছিলেন বঙ্গবন্ধু সরকারের সবচেয়ে বেশি সমালোচক । এদের অনেকে ঐ সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সন্মন্ধেও নানা সমালোচনা করতে গিয়ে অনেক কটু কথা বলতেন। আজকের রাজনীতিতে এরা এখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী সৈনিক হয়ে আওয়ামী লীগে স্থান করে নিয়েছেন। তাদের এসকল অপপ্প্রচার বঙ্গবন্ধুর কানেও আসতো।
এদেরই অপপ্রচারে প্রভাবিত হয়ে বঙ্গবন্ধু একদিন সিদ্ধান্ত নিলেন কামাল ভাইকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য। কারণ আওয়ামী লীগের ভেতরে থাকা সুযোগ সন্ধানী ও দুষ্ট লোকেদের কেউ কেউ এসকল অপপ্রচার বঙ্গবন্ধুর কানে দেয়। বঙ্গবন্ধু একসময় এসকল কথায় কিছুটা প্রভাবিত হন এবং কামাল ভাইকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার চিন্তা করলেন। আমরা মহানগর ছাত্র লীগ থেকে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। বাসায় আমি বাবাকে বললাম, আজ আমরা বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে যাব। বাবা বললেন, আমি জানি। কারণ প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে হলে অনেক আগে থেকেই অনুমতি নিতে হয়। আমাদের এই অনুমতি পাওয়ার কথা বাবা আগে থেকেই জানতেন।
ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ থেকে আমরা কয়জন ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ নুরুল ইসলাম নুরু ভাইয়ের নেতৃত্বে এবেপারে প্রতিবাদ জানাতে বঙ্গবন্ধুর বাসায় গিয়ে হাজির হলাম। বঙ্গবন্ধু আমাদের নগর পাল হিসেবে সন্মোধন করতেন। বললেন নগর পালেরা এসেছে।
কামাল ভাইকে বিদেশে পাঠাবেন বলে বঙ্গবন্ধু ইতিমধ্যে মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলেন। এখানে এসে দেখি বাবা ও তোফায়েল ভাইও দাড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর পেছনে। তোফায়েল ভাই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বিশ্বস্থ লোক। তাছাড়া ঐসময় ছাত্র লীগের উপরও তোফায়েল ভাইয়ের প্রভাব ছিল যথেষ্ট। আমরা বঙ্গবন্ধুকে বললাম, কামাল ভাই আমাদের নেতা। ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ কামাল ভাইয়ের নিজের হাতে গড়া সংগঠন। কামাল ভাই বিহীন ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ অচল। তাছাড়া কামাল ভাই সম্পর্কে আপনি যা জানতে পেরেছেন তার কোনো সততা নেই, প্রমান নেই। এগুলো শুধু জাসদের অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়। সিটি ছাত্রলীগের প্রাণ আমাদের কামাল ভাই।
জাতির পিতার কাছে সেদিন অনেক আবদার করাতে তিনি আমাদের দাবি মেনে নিয়েছিলেন। কামাল ভাইকে তিনি আর বিদেশে প্রেরণ করেননি। কামাল ভাই আমাদের মাঝেই রয়ে গেলেন। বাসায় এসে পরে বাবা আমাকে বললেন বঙ্গবন্ধু আমাদের যাওয়ার পরে নাকি বলেছিলেন আমি সবই জানি। পচাত্তরের ১৫ আগস্টের পরবর্তীতে আমার বার বার মনে হয়েছে, সেদিন যদি কামাল ভাইকে বঙ্গবন্ধু বিদেশ পাঠাতেন তাহলে হয়তো আজ তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানার মতই আমাদের মধ্যে বেচে থাকতেন।
বঙ্গবন্ধুর পেছনে চশমা পরে বাবা
স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু ফিরে আসার পর সবসময় ঈদের নামাজ পড়ার জন্য যেতেন ঢাকার ধানমন্ডি ময়দানে। এমনি এক ঈদে জাতির পিতা ঈদের জামাতে নামাজ পড়তে আসলেন পল্টন ময়দানে। ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার রোড থেকে বঙ্গবন্ধু তার কালো মারসেটিজ গাড়িতে চড়ে পল্টন ময়দানের উদ্দেশে রওয়ানা হলেন। নেতার গাড়ির সামনের আসনে বাবা ছিলেন।
ধানমন্ডি ময়দানে এসে নামাজের কাতারে দাড়াতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু তার সকল সিকিউরিট অফিসারদের ধমক দিয়ে বললেন, আপনারা এখানে কেন? আপনারা আমার পাশে দাড়িয়ে আছেন কেন? নামাজ পড়তে কি নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে? আমি সাধারণ মানুষের সাথে নামাজ পড়তে চাই। আপনারা এখান থেকে সরে যান। বঙ্গবন্ধুর ধমক খেয়ে তার নিরাপত্তা বাহিনী সরে দাড়ালেও পরে ঠিকই নেতার আসে পাশেই তারা বসে পরে। তবে তিনি নামাজে যে কাতারে দাড়িয়েছিলেন সেই কাতারে আর কেউ দাড়াতে সাহস করেনি। বঙ্গবন্ধু ধমক খেয়েও নিরাপত্তা বাহিনী তার দায়িত্ব পালন ঠিকই করেছে। তবে অন্যভাবে, যেভাবে করা প্রয়োজন ছিল সেভাবে নয়। এই সময় বঙ্গবন্ধুর সাথে নেতার কনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেলও ছিল।
আজকের গণভবনে যেখানে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রয়েছেন সেখানের চারিদিকে যে বড় বড় ডাব গাছ দেখছেন সেই ডাবের চাড়া গুলো লাগিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বাঙালি জাতির এই নেতা গাছকে খুব ভালো বাসতেন। বাবার মুখে শুনেছি সময় পেলে গণভবনের ভেতরে গাছের পরিচর্যা নিজ হাতেই করতে ভালো বাসতেন বঙ্গবন্ধু। সময় হলে মাঝে মধ্যে পায়ে হেটে হেটে বাগান ঘুরে বেড়াতেন, গাছের যত্ন করতেন। কখনো কখনো নিজের হাতে গাছের চাড়াতে পানিও দিয়েছেন এই মহান নেতা।
বঙ্গবন্ধু যখন প্রধানমন্ত্রী তখন তার শুভাকাংখীরা অনেকেই বলেছেন নেতাকে গণভবনে এসে থাকার জন্য। কিন্তু নেতা তাদের কোথায় কর্ণপাত করেননি। বাঙালির প্রতি ছিল তার অঘাত বিশ্বাস। তিনি বলতেন পাকিস্থানের জেলে থাকাকালীন ফাসির নির্দেশ থেকে যখন আমাকে আল্লাহ রক্ষা করে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে নিয়ে এসেছেন সেখানে আমাকে আর কে মারবে। আমি বাঙালি, আমি বাঙালিদের জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত আছি। বাঙালিরা আমাকে কখনো মারবে না। বাঙালি জাতির প্রতি কি অসাধারণ বিশ্বাস নেতার। কিন্তু সবচেয়ে বড় দু:ক্ষ ও কষ্ট হলো পাকিস্থানীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার সাহস না করলেও বাঙালি হয়ে আমরা বাঙালি জাতির পিতাকে হত্যা করলাম। এর চেয়ে বড় কলংক আর কি হতে পারে। বিশ্বাস ঘাতকেরা আবারও প্রমান করলো মীরজাফরের রক্ত এখনো আমাদের শরীরে বহমান।
আমরা তখন থাকতাম কলাবাগান ফাস্টলেন। এখান থেকেই বাবাকে প্রতিদিন যেতে হতো ৩২ নাম্বার বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে। সময়টা খুব সম্ভবত ৭২ সালের শেষের দিকের একটি ঘটনা। বঙ্গবন্ধুকে তার কালো মারসেটিজ গাড়িতে করে বাবা তখন রমনার গণভবনে নিয়ে যেতেন। বঙ্গবন্ধু তখনও শেরেবাংলা নগরের গণভবনে যাননি। ঐসময় বঙ্গবন্ধু অফিস করতেন রমনার গণভবনে।
একদিন রমনার গণভবনে যাওয়ার পথে হটাত করেই বঙ্গবন্ধু বাবাকে জিগ্যেস করলেন, মেহদী সাহেব আপনার ছেলে মেয়ে কয়জন? বাবা বললেন আটজন। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল আপনি থাকেন কোথায়? কলাবাগানে সার। কয় রুমের বাসা? এটা কি কোনো সরকারী বাসা? না সার, একটা প্রাইভেট বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। ছোটো ছোটো তিনটি রুম সার। আপনি আট ছেলে মেয়ে নিয়ে এত কষ্টে আছেন অথচ আমাকে কোনো দিন বলেননি কেন? মাত্র তিন রুমের বাসায় ১০ জন মানুষ থাকে কি করে?
সত্তি কথা হলো এইসময় আমরা আট ভাই বোন এত কষ্টের মধ্যে থাকলেও বাবা কোনদিন বঙ্গবন্ধুর কাছে সরকারী বাসার জন্য আবদার করেননি। অথচ আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু নিজে থেকেই একদিন জিগ্যেস করলেন বাবাকে। পুলিশের একজন সাধারণ ডি এস পি কেমনভাবে আছেন তার পরিবার নিয়ে সে খবরও রাখতে আগ্রহী আমাদের নেতা বঙ্গবন্ধু। একজন মহান নেতা বলেই হয়তো বঙ্গবন্ধু সেদিন বুঝতে পেরেছিলেন আমাদের কষ্টের কথা। পাঠক একটু লক্ষ্য করুন, দেশের সর্বময় ক্ষমতাধারী প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করেই জানতে চেয়েছেন একজন ডি এস পি র পারিবারিক অবস্থানের কথা। একেই বলে নেতা।
সেদিন বঙ্গবন্ধু গণভবনে এসে প্রথমেই ডাক দিলেন তার রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ ভাইকে। তোফায়েল ভাই বঙ্গবন্ধুর সামনে এলে তিনি বললেন, মেহদী সাহেব তার আট সন্তান নিয়ে এত কষ্ট করছেন। তুমি তাড়াতাড়ি দেখো ওনার জন্য কোনো সরকারী বাসা পাওয়া যায় কি না। তোফায়েল ভাই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে খুব শীঘ্রই আমাদের জন্য সরকারী বাসার বেবস্থা করলেন। পরবর্তিতে আমরা কলাবাগান থেকে এসে উঠলাম সোবানবাগ কলোনির একটি বাসায়। এই বাসা থেকেই ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাত্রি পর্যন্ত বাবা বঙ্গবন্ধুর সিকিউরিটি অফিসার হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে সকালে নিয়ে গিয়েছেন শেরে বাংলা নগর গণভবন ও সন্ধা শেষে আবার ফিরে এসেছেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে।
স্বাধীনতার পর ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু বাংলার মাটিতে পা রেখে প্রথমেই মদ বিক্রয় ও পান করা নিষিদ্ধ করেছিলেন। আমার মনে পরে ঐসময় তরুণ তরুনীরা মদ না পেয়ে ভিন্ন পন্থায় নেশা করার চেষ্টা করেছে। এদের কেউ কেউ ঢাকার হাই কোর্টের মাজার কিংবা পরিবাগের মাজারে এসে তখন গাজা সেবন করে নেশা করতেন। অনেকের সাথী ছিল মৃতসঞ্জীবনী। শুধুমাত্র বিদেশীদের জন্য ঢাকা কন্টিনেন্টাল হোটেলে মদ বিক্রয় হতো তখন। মদ নিষিদ্ধ করাতে ভারত থেকে চোরা পথে বাংলাদেশে নানাধরনের নেশা জাতীয় তরল পদার্থ স্মাগলিং করা হতো। একজন মুসলমান হিসেবে বঙ্গবন্ধু তার এই মহান দায়িত্ব পালন করেছিলেন সেদিন। এই সময় রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে কখনো মদ পরিবেশন করা হতো না। সম্ভবত এখনো এই নিয়ম প্রযোজ্য আছে।
তবে বঙ্গবন্ধু মদ বিক্রয় ও পান করা নিষিদ্ধ করলেও তার দলের অনেকে পর্দার আড়ালে মদ পান করতেন। একদিন তার মন্ত্রী পরিষদের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীকে(এখানে নাম প্রকাশ করা হলো না) নেশা অবস্থায় দেখে বঙ্গবন্ধু সরাসরি তাকে নাম ধরে বললেন, ….. Can you see me ? মন্ত্রী মহোদয় তখন একটু বেশি খেয়ে ফেলেছিলেন যার কারণে নেতার চোখে ধরা পরে যান। বলতে বাধা নেই ঐসময় শুধু মন্ত্রীরাই নয় আওয়ামী লীগ যুবলীগ এমনকি ছাত্রলীগের কেউ কেউ গোপনে মদ পান করেছেন। অথচ আমাদের নেতা বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন খাটি মুসলমান যিনি কখনই মদ স্পর্শ করেননি।
একদিন গণভবনের বারান্দায় একটি চেয়ারে বসেছিলেন বাবা। এমন সময় যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন প্রভাবশালী নেতা (এখানে নাম উল্লেখ করা হলো না)বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে এলেন। তিনি আগে থেকেই বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করার সময় নিয়েছিলেন। যুবলীগ নেতা বঙ্গবন্ধুর রুমের ভেতরে ঢুকলে বাবা দরজা বন্ধ করে দেন। বাহির থেকে সব কথা পরিষ্কারভাবে শুনা না গেলেও কিছু কিছু কথা বাবা শুনতে পারছিলেন। বঙ্গবন্ধু প্রচন্ড রেগে বার বার ধমক দিচ্ছেলেন সেই নেতাকে। একসময় যুবলীগ নেতার কন্ঠে কান্নার শব্দ শুনা গেল। বাবা বললেন সম্ভবত যুবলীগ নেতা তখন বঙ্গবন্ধুর পা ধরে কেদে কেদে বার বার মাফ করে দেওয়ার জন্য বলছিলেন। তিনি আর এধরনের কাজ করবেন না বলে বার বার বলছিলেন। অনেকক্ষণ পর যখন যুবলীগ নেতা রুমের ভেতর থেকে বের হয়ে এলেন তখন বাবা পরিষ্কারভাবে দেখলেন তার দুই চোখ চোখের পানিতে লাল হয়ে আছে।
পাঠক এখন শুনুন আসল ঘটনাটা কি। কেন সেদিন বঙ্গবন্ধু ঐ যুবলীগ নেতার উপর রেগে গিয়েছিলেন? কেন তাকে প্রচন্ডভাবে উচ্চস্বরে ধমক দিয়েছিলেন? এই নেতা একসময় লন্ডন সফরে এসেছিলেন। এখানে এসে তিনি সরকারের টাকা খরচ করে মদের বিল পরিশোদ করেন। লন্ডন বাংলাদেশ হাই কমিশনের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় হয়ে রিপোর্টি বঙ্গবন্ধুর কাছে আসে। আর এজন্যই বঙ্গবন্ধু যুবলীগ নেতাকে গণভবনে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তখন নাকি এতই রেগেছিলেন যে তাকে তার রাজনৈতিক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথাও বলেছিলেন।
পচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর দীর্ঘ ২১ বত্সর দেশের ক্ষমতায় যারা ছিলেন তারাই পরবর্তিতে বাংলাদেশে মদ বিক্রয়ের লাইসেন্স আইনগতভাবে বরাদ্ধ করেছেন। আর এখনতো দেশেই তৈরী হয় মদ। সেদিন একজন দেশে থেকে এসে বললেন বাংলাদেশে এখন শহর থেকে গ্রামে নাকি টাইগার মার্কা বিয়ারের ছোড়াছড়ি। হায়রে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর মত একজন খাটি মুসলমানকে নিয়ে আজ ধর্মান্ধরা করছে সমালোচনা ! ধর্মের নামে আসছে বিএনপি জামায়াত শিবির থেকে আক্রমন ! আর কতদিন চলবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এই মিথ্যার রাজনীতি? চলবে
বাবার মুখে শোনা বঙ্গবন্ধুর অজানা কথা (৪)
বঙ্গবন্ধুর পেছনে চশমা পরে বাবা
RELATED POSTS
স্বজনের কাছে স্বজনের ফিরে আসার দিন
May 16, 2019
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলচ্চিত্রের শুটিং নভেম্বরে শুরু
May 7, 2019
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অসাম্প্রদায়িক চেতনা
May 5, 2019
পরবর্তী অংশ: ৭৩-৭৪ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মনিরুল হক চৌধুরী ও শফিউল আলম প্রধান। মনি ভাই এখন বিএনপি ও প্রধান ভাই করেন জাগপা। এই দুই ছাত্র নেতার নেতৃত্বে একদিন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি গণভবনে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে যায়। ইতিমধ্যে আমি ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হই। কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে সেদিন আমারও গণভবনে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল।
গণভবনে প্রবেশ করে আমরা সকলেই বারান্দা ঘেসে ঘাসে বসে পরলাম। কিছুক্ষণ পর বঙ্গবন্ধু বারান্দায় একটি চেয়ারে এসে বসলেন এবং আমাদের সাথে নানা আলোচনায় অংশগ্রহন করেন। এইসময় নেতা আমাদের নানা উপদেশ দিলেন। বঙ্গবন্ধু যখন আমাদের সাথে কথা বলছিলেন তখন নেতার পেছনে দাড়িয়ে ছিলেন রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল ভাই, বাবা সহ আরো কয়েকজন বেক্তি।
কথা বলার এক ফাকে বঙ্গবন্ধু তোফায়েল ভাইকে উদ্দেশ করে বললেন, তোফায়েল দুইটা ফুল নিয়ে আসো। তোফায়েল ভাই বারান্দার পাশ ঘেষে ফুটে উঠা গোলাপ গাছ থেকে দুটো ফুল এনে বঙ্গবন্ধুর হাতে দিলেন। বঙ্গবন্ধু টকটকে লাল গোলাপটি দিলেন শফিউল আলম প্রধান ভাইয়ের হাতে আর গোলাপী রঙের ফুলটি দিলেন মনিরুল হক চৌধুরী ভাইয়ে হাতে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এখানেই হয়তো আমাদের ইশারায় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শফিউল আলম প্রধান ভাইয়ের অতিবিপ্লবী বক্তব্য সম্পর্কে। হয়তো আমাদের পরোক্ষভাবে সাবধানও করেছিলেন। একে অনেকটা সতর্ক থাকার নির্দেশ বলা যেতে পারে।
পরবর্তিতে প্রধান ভাইয়ের রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু কেন জানিনা তবুও কখনো তাকে আমরা সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখেনি। তাছাড়া কামাল ভাই প্রধান ভাইকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসতেন। ফলে আমরা যারা কামাল ভাইয়ের কাছাকাছি ছিলাম তারা প্রধান ভাইয়ের প্রতি সব সময় অন্ধের মত দৃঢ় সমর্থন দিয়েছি। তাকে কখনো সন্দেহের চোখে দেখিনি। করেছি বিশ্বাস।
আমরা চলে যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নিয়ে তোফায়েল ভাইয়ের সাথে অনেক কথা বলেন বলে বাবা জানান। তবে কি কথা হয়েছে বাবা তা শুনতে পারেননি। ঐসময় ছাত্র লীগের উপর তোফায়েল ভাই ও রাজ্জাক ভাইয়ের প্রভাব ছিল অনেক। পাঠক আমার লেখার অনেক জায়গায় আজকের মন্ত্রী পরিষদের সদস্য তোফায়েল ভাইয়ের নাম বার বার আসার কারণ তিনি ছিলেন জাতির জনকের অত্যন্ত কাছের লোক। বঙ্গবন্ধুর অসীম স্নেহ ভালবাসা ছিল তোফায়েল ভাইর প্রতি। তাই হয়তো অনেক সময় বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে গিয়ে তোফায়েল ভাই আবেগে কেদে ফেলেন।
প্রধান ভাই সম্পর্কে যে কথা বলছিলাম। এই প্রধান ভাইয়ের সাথে দেখা করতে তত্কালীন ঢাকা সিটির এস পি মাহবুব ভাইয়ের কাছ থেকে পাশ নিয়ে আমি ও ঢাকা মহানগর ছাত্র লীগের সভাপতি নুরু ভাই যখন ঢাকা জজ কোর্টে তার সাথে দেখা করতে যাই তখন দেখতে পেলাম তার সম্পূর্ণ আরেক চেহারা। ছাত্র হত্যার আসামী হিসেবে তখন তার বিচার চলছিল। বাবা মুসলিম লীগ নেতা গমির উদ্দিন প্রধান তার পক্ষে লড়াই করছিলেন। বিরতির সময় কথা বলতে গেলে তার মুখে এই প্রথম শুনতে পেলাম বঙ্গবন্ধুর পরিবর্তে নেতাকে শেখ মুজিব বলে সন্মোধন করতে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু ও তার সরকার সম্পর্কে বেশ কিছু কটু কথা বললেন প্রধান ভাই। আমার তখন সেই বঙ্গবন্ধুর দেওয়া লাল গোলাপের কথা বার বার মনে হচ্ছিলো। শফিউল আলম প্রধান ভাই কি তাহলে সত্যি সত্যি ছাত্র লীগের ভেতরে একজন অনুপ্রবেশকারী ছিলেন?
১৪ আগস্ট বৃস্পতিবার, ১৯৭৫ সাল। বিকেলের দিকে শেরে বাংলা নগর গণভবনের বাগানে হাটছিলেন বঙ্গবন্ধু। তখন প্রায় সন্ধা হয় হয়। এইসময় এলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুর। বঙ্গবন্ধু তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে সাংবাদিক ঠাকুর বলে সন্মোধন করতেন। শুধু তাই নয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে তাহের উদ্দিন ঠাকুর তার রাজনৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে খুব স্নেহ ও বিশ্বাস করতেন। এই কারণেই তার মন্ত্রী সভায় তাকে বানিয়েছিলেন তথ্য ও বেতার প্রতি মন্ত্রী।
ঐ দিন বঙ্গবন্ধু বাগানে হেটে হেটে তাহের উদ্দিন ঠাকুরের সাথে কথা বলছিলেন আর গাছের চাড়ায় নিজ হাতে পানি দিচ্ছিলেন। বাবা দূর থেকে সবকিছুই অবলক্ষন করছিলেন। সেদিন তাদের মধ্যে কি কথা হয়েছে বাবা দূর থেকে কিছুই শুনতে পাননি। তবে পরবর্তীতে যখন জানতে পারলেন এই তাহেরউদ্দিন ঠাকুর জাতির জনকের হত্যার সাথে জড়িত তখন বাবা অবাক হয়েছিলেন বৈকি। কি সাংঘাতিক মানুষ এই তাহেরউদ্দিন ঠাকুর। সবকিছু পরিকল্পনা করে মির্তুর আগের দিন সন্ধায় এসে নেতার সাথে শেষ দেখা করে গেল। হায়রে মীরজাফর, যে নেতার হাতে রাজনৈতিক শিক্ষা সেই নেতাকেই হত্যা করার পরিকল্পনা। বঙ্গবন্ধু তাকে আদর করে ডাকতেন সাংবাদিক ঠাকুর আসলে তার নাম হওয়া উচিত সাংঘাতিক ঠাকুর।
১৪ আগস্ট রাতে গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধুর কালো মার্সিডিজ গাড়িতে করে বাবা শেষবারের নেতাকে তার ৩২ নাম্বার বাসায় পৌছে দিয়েছিলেন। পরদিন শুক্রবার বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যাবেন। সকালে এসে বাবার বঙ্গবন্ধুকে ইউনিভার্সিটিতে নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা আর হলো না।
১৫ আগস্ট শুক্রবার খুব ভোরে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে বিশ্বাসঘাতক বাঙালির হাতেই প্রাণ দিতে হলো। গুলিবিদ্ধ বঙ্গবন্ধুর লাশ পরেছিল তার বাসগৃহের সিড়িতে। হাজার বছরের বাঙালির ইতিহাসের সবচেয়ে কলংকিত দিন ১৫ আগস্ট। এইদিন মানুষ রুপি একদল নরপশু নিষ্ঠূরভাবে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুকে। শুধু তাই নয় পবিত্র সংবিধান পরিবর্তন করে পরবর্তিতে এমন ধারা তাতে যুক্ত করা হয় যেখানে বলা হয় এসকল হত্যাকারীদের বিচার করা যাবে না বলে। খন্দকার মোস্তাক, জেনারেল জিয়া, জেনারেল এরশাদ ও বেগম খালেদা জিয়া এই আইনকে পুজি করে দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করে দেশ শাসন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিদেশে বাংলাদেশ দুতাবাসে চাকুরী দিয়ে রক্ষা করেছিলেন। কিন্তু কেন ?
বিশ্বের কোনো সভ্য দেশে এমনকি অর্ধ সভ্য দেশেও এমন ঘটনার দৃষ্টান্ত বিরল। শেষ পর্যন্ত জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন করে ইতিহাসের এই কলংক থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করেছেন।
হঠাত করেই কারণবসত লেখাটা আমাকে শেষ করতে হয়েছিল। এজন্য আমি দুক্ষিত। পরে চিন্তা করে দেখলাম বাবার কাছ থেকে জানা আরো কয়েকটি ঘটনা এখানে লেখার প্রয়োজন রয়েছে। আগামী প্রজন্মের জানা উচিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কত বড় মাপের নেতা ছিলেন। যাকে সেদিন মাত্র তিন বত্সর সাত মাস ৫ দিনের মাথায় স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখার পর হত্যা করা হয়েছিল।
মেজর ডালিম যিনি জাতির পিতাকে হত্যা করার পর রেডিওতে এই সংবাদ গর্বে ঘোষণা করেছিলেন তাকে বঙ্গবন্ধু বেক্তিগতভাবে খুব স্নেহ করতেন। বঙ্গবন্ধুর বাসায় তার আসা যাওয়া ছিল। বঙ্গবন্ধুর জৈষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল ভাইয়ের সাথেও তার মধুর সম্পর্ক ছিল।
একদিন মেজর ডালিম তার স্ত্রী(খুব উগ্র পোশাক পরে)একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে আসেন। এখানে গাজী গোলাম মোস্তফার ছেলে ডালিমের স্লিপ্লেজ ব্লাউজ পরা স্ত্রীকে উত্তক্ত ও অশালীন বেবহার করে। পরে মেজর ডালিম সেখান থেকে সরাসরি কেন্টনমেন্টে গিয়ে সেনাবাহিনীর নিয়ম কানুন না মেনে কিছু সংখ্যক সৈনিককে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে গাজী গোলাম মোস্তফার ছেলেকে মারধর করেন এবং এলাকায় এক ত্রাস ও আতংকের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন।
পরের দিন সেনা বাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ ও সহ প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর বাসায় আসেন। এইসময় বাবাও ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বাসায়।
৩২ নাম্বার রোডের বঙ্গবন্ধুর বাসার ড্রইং রুমে বসে এই দুই সেনা কর্ম কর্তা বঙ্গবন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এখানে একটা বিষয় বলা প্রয়োজন, বঙ্গবন্ধুর বাসার সিড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে অন্দরমহলে যাওয়া নিরাপত্তা অফিসারদের অনুমতি না থাকলেও বাবাকে জাতির জনক সেই অনুমতি দিয়েছিলেন। বাবা উপরে গিয়ে সামরিক কর্মকর্তাদের আসার সংবাদটা বঙ্গবন্ধুকে জানালেন।
বঙ্গবন্ধু কিছুক্ষণ পর নিচে নেমে এলে জেনারেল শফিউল্লাহ ও জেনারেল জিয়া দুজনই নেতাকে সেলুট দিয়ে দাড়িয়ে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু নিজে চেয়ারে বসলেও তারা তখনও দাড়িয়ে ছিলেন। তারপর নেতা তাদের বসতে বললে দুজনই নেতার খুব কাছেই এসে বসলেন।
আলোচনাকালে এখানে তারা ঘটনার জন্য গাজী গোলাম মোস্তফার ছেলের বিচার চাইলেন বঙ্গবন্ধুর কাছে। অথচ সেনা বাহিনীর নিয়ম কানুন ভঙ্গের কারণে ডালিমের বেপারে কোনো শাস্তির কথা তারা বললেন না। দুইজনই গাজী গোলাম মোস্তফার ছেলেকে এই ঘটনার জন্য দোষারোপ করে এককভাবে শাস্তি চাইলেন।
মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ সুইডেনে রাষ্ট্রদূত থাকাকালীন আমি তার একটি সাক্ষাত্কার নিয়েছিলাম। তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন, (টেপ রেকর্ডারে টেপ করা ইন্টারবিউটি এখনো আমার কাছে আছে) আমি ও জিয়া বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়ে এই ঘটনার জন্য গাজীর ছেলের বিচার করার জন্য আবেদন জানাই। সাথে ঘটে যাওয়া সম্পূর্ণ ঘটনাটা তুলে ধরি। বঙ্গবন্ধু আমাদের কথা গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনলেন এবং বললেন ডালিমের ওখানে আর্মি ট্রুপ্স নিয়ে যাওয়া কি ঠিক হয়েছে? আমি তখন বললাম, না সেটা সে ভুল করেছে। জিয়া তখন চুপ করে বসে ছিল।
দুই সেনা প্রধানের সাথে যখন বঙ্গবন্ধু একান্তে কথা বলছিলেন তখন ড্রইং রুমের ভেতরে আর কোনো চতুর্থ বেক্তি ছিলেন না। দরজা ছিল সম্পূর্ণ বন্ধ। বাবা তখন বাহিরে বারান্দায় দাড়িয়ে অন্যান্যদের সাথে কথা বলছিলেন। কিছুক্ষণ পর শফিউল্লাহ ও জিয়া বঙ্গবন্ধুর বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলেন। শফিউল্লাহ তার ইন্টারভিউতে বলেন, পরদিন দেখা গেল আর্মি রুল রেগুলেশন ভঙ্গের কারণে মেজর ডালিমকে সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বাবা আমাকে বললেন বঙ্গবন্ধু ঠিকই বিচার করেছেন। সেনাবাহিনীকে বেক্তিগত কাজে ডালিম এখানে বেবহার করেছে যা আইনত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। গাজী সাহেবের ছেলে যদি এখানে কোনো দোষ করে থাকে সেজন্য তাকে পুলিশের সাহায্য নেওয়া উচিত ছিল।
পাঠক জানিনা মেজর ডালিম এখনো বেচে আছেন না মরে গেছেন। তবে শুনেছি তিনি বিদেশে কথাও লুকিয়ে আছেন। তিনি যদি বেচে থাকেন তাহলে তিনিই বলতে পারবেন এভাবে সেনাবাহিনীকে বেক্তিগত কাজে বেবহার করে তিনি অন্যায় করেছেন, কি করেননি? তবে তার স্ত্রীর উগ্র পোশাক পরিধানের জন্য গাজী গোলাম মোস্তফার ছেলে যদি সত্যি সত্যি কোনো অপরাধ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই আমরা তার বিচার আইনসন্মতভাবে দাবি করতে পারি। তবে এভাবে নয় যেভাবে মেজর ডালিম করেছেন। চলবে
বাবার মুখে শোনা বঙ্গবন্ধুর অজানা কথা (৫)
একেবারে পেছনের লাইনে চশমা পরে বাবা
পরবর্তী অংশ: রমনার গণভবনে একদিন এক বয়স্ক মহিলা (বুড়ি) গেটে এসে বললেন তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে আগ্রহী। বাবা তখন গণভবনের বারান্দায় দাড়িয়ে। বঙ্গবন্ধু এইসময় বারান্দায় বসে একজন অতিথির সাথে কথা বলছিলেন। নেতার দৃষ্টি হটাত করেই গেটের দিকে পড়লে তিনি বাবাকে বললেন গেটে গিয়ে খবর নিতে সেই মহিলা আসলে কি চায়। বাবা সবকিছু অবহিত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে এসে জানালে তিনি বয়স্ক ঐ মহিলাকে ভেতরে নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দেন।
মহিলা ভেতরে এসে বারান্দায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বঙ্গবন্ধুর পাশে এসে বসেন। তাদের দুজনের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ কথা বার্তা হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু বাবাকে ডেকে বললেন এই মহিলার জন্য এককালীন পাচ হাজার টাকা রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে সাহায্য এবং মাসিক ভাতার বেবস্থা যেন মহিলার জন্য করা হয়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মত বাবা সবকিছুর বেবস্থা করলেও পুরো পাচ হাজার টাকা বৃদ্ধ মহিলাকে সরাসরি হাতে না দিয়ে সে বেপারে সেই জেলার ডিসিকে কিছু কিছু করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কারণ ঐ সময় পাচ হাজার টাকার মুল্য ছিল অনেক। তবে গণভবন থেকে পরে তিনি মহিলাকে গাড়িতে করে আমাদের বাসায়(সোবানবাগ কলোনি)এনে খাওয়া দাওয়া করিয়ে একটি নুতন শাড়ি কিনে দিলেন এবং হাতে কিছু টাকা দিয়ে বললেন গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে। শুধু তাই নয় মহিলাকে মাসে মাসে একটা অংকের সাহায্য সরকার থেকে দেওয়া হবে বলেও অবহিত করেন।
পাঠক এখন আসি আসল কোথায়। কে এই বৃদ্ধ মহিলা? কেন বঙ্গবন্ধু তার প্রতি এতটা দয়া করলেন? শুনুন তাহলে বঙ্গবন্ধুর নিজের মুখের কথা। “ আমি একসময় যখন গ্রেফতারের কারণে গোপনে লুকিয়ে ছিলাম। ঐসময় এই মহিলা তার বাড়িতে আমাকে আশ্রয় দেয়। পুলিশ আমার খোজে মহিলার বাড়িতে এলে আমি এখানে নেই বলে উনি বলেন। ইতিমধ্যে একজন পুলিশের দৃষ্টি ঘরের ভেতরে বিছানার দিকে গেলে তিনি বলেন আমি জোরে কাতর হওয়া তার অসুস্থ স্বামী। তাই তিনি আমাকে লেপে মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে রেখেছেন। পুলিশ মহিলার কোথায় বিশ্বাস করে ওখান থেকে চলে যায় “।
এতদিন পর তিনি এখন আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন। তবে তার আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ হওয়া সত্তেও তিনি আমার কাছে কোনো সাহায্য চাননি। আমাকে শুধু একবার কাছাকাছি দেখতে এসেছেন। পাঠক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দয়া মায়া ও স্মরণ শক্তির কথা একবার ভেবে দেখুন। একথা আমি আগেও লিখেছি। আমাদের এই নেতাকে অসীম স্মরণ শক্তি দিয়েছেন মহান আল্লাহ। এই হলেন আমাদের বাঙালি জাতির নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যাকে আমরা হারিয়েছি কয়েকজন বাঙালি বিশ্বাসঘাতকের নির্মমতার মধ্য দিয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শুক্রবার আনুমানিক সকাল পাচটার দিকে।
বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করার পর তার ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের বাসভবনটি সবসময় পুলিশ পাহারায় রাখা হয়েছিল। এই সময় জেনারেল জিয়া পুলিশের আই জি কে নির্দেশ দিলেন বঙ্গবন্ধুর বাসায় তল্লাশি করার জন্য। নির্দেশ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর বাসায় পুলিশের এক তল্লাশি চালনা হয়। তল্লাশিকালে পুলিশ বঙ্গবন্ধুর বাসা থেকে অনেক মূল্যবান জিনিষ ও গুরত্বপূর্ণ কাগজপত্র সরিয়ে ফেলে। বঙ্গবন্ধুকে বাঙালির কাছে নিচু করার জন্য জিয়া এখানে একটি কৌশল বেবহার করেন। তার এই পরিকল্পনা মোতাবেক মিডিয়ায় ফলাও করে প্রকাশ করা হলো পুলিশের তল্লাশিকালে শেখ মুজিবের বাড়িতে এক বিরাট পরিমান মূল্যের সোনাদানা পাওয়া গিয়েছে। অর্থাত বঙ্গবন্ধু বিপুল পরিমানের সোনাদানার ও সম্পত্তির মালিক ছিলেন। এধরনের সংবাদ প্রকাশ করার পেছনে চতুর জিয়া মূলত জাতির জনককে দেশের মানুষের কাছে খাটো করতে চেয়েছিলেন। এর পেছনে রয়েছে একটি বিশেষ কারণ। সেই কারনটাই আমি এখন পাঠকের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
৭৪ সালে বন্যার কারণে দেশে চরম খাদ্য অভাব দেখা দেয়। এই সময় বঙ্গবন্ধু বিয়ের অনুষ্ঠানে সকল প্রকার বিলাসিতা পরিহার করার জন্য জনগনের কাছে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন সোনাদানার গলার মালা পরিহার করে বেলি ফুলের মালা পরে বিয়ে করার জন্য। বঙ্গবন্ধুর এই কথা শুনে অনেক মহিলাই ঐ সময় সোনার হারের পরিবর্তে বেলিফুলের মালা পরে বিয়ে করেছিলেন।
এদের মধ্যে একজন ছিলেন অভিনেতা মরহুম হুমায়ুন ফরীদির স্ত্রী। তার স্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কথামত বেলিফুলের মালা পরে হুমায়ুন ফরীদির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। পরবর্তিতে তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। মরহুম হুমায়ুন ফরীদির সাবেক এই স্ত্রী সম্প্রতি সরকারের একজন উর্ধতন অফিসার হিসেবে সম্ভবত অবসর গ্রহণ করেছেন। কিংবা এখনো চাকুরিতে আছেন। ভদ্রমহিলার বর্তমান স্বামী একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিব। জিয়ার এই অপপ্রচারের প্রথম স্বীকার হয়েছিলেন এই ভদ্রমহিলা। তিনি কোনো কিছু যাচাই বাছাই না করেই মিডিয়ায় বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে প্রচার করলেন অনেকটা এইভাবে, এই সেই শেখ মুজিব যিনি আমাদের বলেন বেলি ফুলের মালা পরে বিয়ে করার জন্য আর তারই বাড়িতে পাওয়া যায় বরি বরি সোনা? সাথে আরো কিছু কিছু কথা তিনি বলেছিলেন যা আমার মনে পরছে না। ওই সময়ের দৈনিক পত্রিকাগুলো বের করলে আরো অনেক তথ্য বের হয়ে আসবে। সেদিন বঙ্গবন্ধুকে জনগনের কাছে ছোটো করার জন্য চতুর জিয়া যে ষড়যন্ত্র করেছিলেন তার সফলতা দেখে হয়তো তিনি বাকা চোখে হাসছিলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কখনো এধরনের বেক্তি ছিলেন না। তিনি কামাল ভাই ও জামালের বিয়ে দিয়েছিলেন অত্যন্ত সাধারনভাবে। আমি বেক্তিগতভাবে শেরেবাংলা নগরে অনুষ্ঠিত এই বিয়ের রিসিপশন পার্টিতে উপস্থিত ছিলাম। সাধারণত বিয়ের অনুষ্ঠানে যে খাওয়া পরিবেশন করা হয় তা না করে এই বিয়েতে অতিথিদের জন্য তিনি মাংসের ঝোল আর পরোটা খাওয়ার বেবস্থা করেছিলেন। কোনো বিলাসবহুল খাবার নয়। শুধু তাই নয় খরচের কথা ভেবে তিনি দুই ছেলের রিসিপশন অনুষ্ঠান করেছিলেন একইদিন একইসাথে। অন্যদিকে কাউকে বিয়েতে কোন ধরনের উপহার আনতেও তিনি নিষেধ করেছিলেন। সুন্দর্যের কারণে খুব অল্প মূল্যের সোনার হার ছিল সেদিন সুলতানা কামাল ও রোজী জামালের গলায়। পাঠক এই হলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
পাঠক শুরুতেই যে কথা বছিলাম, আসলেই কি বঙ্গবন্ধুর বাসায় বরি বরি সোনা দানা পাওয়া গিয়েছিল সেদিন? এবেপারে বাবার মুখে সোনা আসল বিষয়টি আমি আপনাদের কাছে তুলে ধরছি। অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর বাসায় পুলিশের তল্লাশিকালে সোনা পাওয়া গিয়েছে। কথাটা একেবারে মিথ্যা নয়। কিন্তু চতুর জিয়া আসল সত্যকে গোপন রেখে শুধুমাত্র সোনা পাওয়ার পরিমানটি মিডিয়ায় প্রকাশ করেছিলেন। এখন প্রশ্ন হলো কথা থেকে এলো এই সোনা?
বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় জেলায় সফরকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ থেকে অনেক সময় তাকে সোনার নৌকা উপহার দেওয়া হয়। এছাড়াও বিভিন্ন দেশ সফরকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নেতাকে বেক্তিগতভাবে যে উপহার দেওয়া হয়েছে এসকল উপহারের সমষ্টিগত সোনার সংবাদ জিয়া প্রকাশ করেছিলেন। সংবাদটির আসল সত্য প্রকাশ না করে জিয়া এখানে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করলেন। বললেন, যে শেখ মুজিব বলে মেয়েদের বেলি ফুলের মালা পরে বিয়ে করার জন্য, দেখুন সেই মুজিবের বাসায় আজ পাওয়া যায় বরি বরি সোনা। মানুষ তাহলে বঙ্গবন্ধুকে দেখবে অন্যভাবে এবং বাস্তবে হয়েছেও তাই। সম্ভবত মানুষও তা বিশ্বাস করেছিল। তাই হয়তো হুমায়ুন ফরীদির সাবেক স্ত্রী বঙ্গবন্ধুকে অপমান করে মিডিয়ায় কথা বলেছিলেন। চলবে
বাবার মুখে শোনা বঙ্গবন্ধুর অজানা কথা (৬)
পরবর্তী অংশ: বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর জেনারেল জিয়াকে সেনাবাহিনীর প্রধান না করে জেনারেল শফিউল্লাহকে কেন করা হলো এই বিষয়টি নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলে থাকেন। কারণ সিনিয়ার হিসেবে জেনারেল জিয়ার সেনা বাহিনীর প্রধান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাকে না করে করা হয়েছে শফিউল্লাহকে। কথাটা মিথ্যা নয়। তবে কেন তাকে ঐসময় সিনিয়ার হওয়া সত্বেও সেনাবাহিনীর প্রধান বানানো হয়নি সে কথা আজ অনেকেরই অজানা। বিষয়টি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে একটি অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করা হয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তব কি ছিল? আপনারা হয়তো বলবেন আমি কি করে জানলাম। আমিতো আর সেনাবাহিনীর কেউ নয়। কথাটা ঠিক। পাঠক,বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আজ পর্যন্ত আমি যা লিখেছি তার প্রমান সরূপ অনেকের নাম আমি উল্লেখ করেছি। তারা এখনো জীবিত আছেন। এটাই হলো আমার লেখার সবচেয়ে বড় প্রমান। এখন আসি আসল কোথায়।
বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর জেনারেল জিয়াকে সেনাবাহিনীর প্রধান না করে জেনারেল শফিউল্লাহকে কেন করা হলো? কারণ সিনিয়ার হিসেবে জেনারেল জিয়ার সেনা বাহিনীর প্রধান হওয়ার কথা। কিন্তু তাকে না করে করা হয়েছে শফিউল্লাহকে। জেনারেল জিয়াকে না করার আসল কারণ কি ছিল?
বঙ্গবন্ধু দেশের প্রধান হলেও তিনি কখনো সেনাবাহিনী নিয়ে মাথা ঘামাতেন না। অনেকে বলেন শুরুতেই যদি বঙ্গবন্ধু সেনাবাহিনীর দিকে ঠিকমত নজর দিতেন তাহলে কখনই তাকে এভাবে জীবন দিতে হতোনা। বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ। সেনাবাহিনীতে কাকে কি করা হবে বিষয়টি সম্পূর্ণ সেনাবাহিনীর বলে তিনি মনে করতেন। এজন্যই সম্ভবত তার মন্ত্রী পরিষদে প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব তিনি জেনারেল ওসমানীর উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। কারণ জেনারেল ওসমানীকে তিনি অত্যন্ত বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা করতেন। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জেনারেল ওসমানী।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জিয়া ও শফিউল্লাহ দুইজনই মেজর হিসেবে এস ফোর্স ও জেড ফোর্সে সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। দুজনেই ছিলেন তখন মেজর। মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন জেনারেল ওসমানী। কিন্তু স্বাধীনতার পর তিনি আর তার এই দায়িত্বে না থাকার কথা বঙ্গবন্ধুকে জানান। এইসময় তিনি রাজনীতিতে ফিরে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন। পাঠক ৭০ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিদন্দিতা করে কর্নেল (অব:)ওসমানী জয়লাভ করেছিলেন অর্থাত তখন তিনি ছিলেন পাকিস্থান জাতীয় সংসদের একজন এমপি। পরবর্তিতে যুদ্ধকালীন মুজিব নগর সরকার তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে জেনারেল পদে উন্নীত করে।
জেনারেল সফিউল্লহার সাথে লেখক
বঙ্গবন্ধু তখন কেবলমাত্র বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। যুদ্ধকালীন সেনা অফিসারদের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি ততটা অবগত ছিলেন না। ঐ সময় কার কি ভূমিকা ছিল বঙ্গবন্ধুর তা জানা ছিল না। কারণ তিনি ছিলেন তখন পাকিস্থান কারাগারে বন্ধি। তাই তিনি সেনাবাহিনী প্রধান নিযুক্ত করার এই বিশেষ দায়িত্ব জেনারেল ওসমানীর উপরেই ছেড়ে দিয়েছিলেন। এখন শুনুন পরবর্তী অংশ। বর্তমানে সেক্টর কমান্ডার ফোরামের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রথম সেনা বাহিনী প্রধান জেনারেল সফিউল্লাহর ভাষায়। তিনি সুইডেনে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকালে আমাকে এক সাক্ষাতকারে তিনি এই কথাগুলো বলেছিলেন।
অনেকে বলেন জিয়া নাকি খুব উচ্চাকাংখী ও ক্ষমতা লোভী ছিলেন এবেপারে আপনার মন্তব্য কি?
কথাটা একেবারে অসত্য নয়। ৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধে জিয়া এক সময় জেনারেল ওসমানীকে কমান্ডিং চিফ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চিন্তা করেন। এবেপারে তিনি আমাকে বলেন, জেনারেল ওসমানী বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। সুতরাং ইয়ংদের মাঝ থেকে দায়িত্ব নিতে হবে। আমি এই প্রস্তাবের প্রতিবাদ করি এবং এবেপারে আমার সাথে তাকে আর কোনো কথা না বলার জন্য বলি। এমন আরো অনেক ঘটনাই আছে যা প্রমান করে তিনি একজন উচ্চাকাংখী ও ক্ষমতা লোভী বেক্তি ছিলেন।
আপনাকে কেন সেনা বাহিনীর প্রধান বানানো হলো ?
তা আমি বলতে পারব না। তবে আমাকে যেদিন নাকি জেনারেল ওসমানী দায়িত্বভার নেওয়ার জন্য ডেকেছিলেন সেদিন আমি বলেছিলাম, আমি কেন অন্যেরা কোথায়? তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন অন্যেরা কারা? আমি বললাম, কর্নেল রেজা কোথায়? তিনি বললেন কর্নেল রেজা রিজাইন করেছেন। তারপর বললাম, সি আর দত্তর কথা। তখন তিনি বললেন, ডু ইউ থিঙ্ক হি ইজ কেপেবল? এর কোনো উত্তর না দিয়ে আমি জিয়ার কথা বললাম। উনি তখন রেগে গিয়ে বললেন ইউ আর আরগুইং? গেট আউট ফ্রম মাই অফিস। আমি তখন অফিস থেকে বেরিয়ে গিয়ে জেনারেল রবের সাথে আলাপ করি। তখন তিনি আমাকে বললেন এটা রাজনৈতিন সিদ্ধান্ত। তখন আমি বললাম তিনি নিজেওতো থাকতে পারতেন। জেনারেল রব বললেন ৭ এপ্রিল ওসমানী সাহেব সামরিক বাহিনী ছেড়ে জাতীয় সংসদে যোগ দিচ্ছেন।
জিয়ার এই উচ্চআকাংখা ও ক্ষমতা লোভের কথাটা মুজিব নগর সরকারের জানা ছিল বলেই তাকে না বানিয়ে শফিউল্লাহকে সেনাবাহিনী প্রধান বানানো হয়েছিল। অনেকে বলেন ঐ সময় জিয়াকে সেনাবাহিনী প্রধান বানানো হলে তিনি অনেক আগেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে বসতেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু জিয়াকে কখনই সন্দেহ করেননি। অন্যান্য মুক্তিযুদ্ধা সামরিক অফিসারদের মত তাকেও ভালবাসতেন। তাই জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে ১৯৭২ সালের জুন মাসে কুমিল্লার একটি বিগ্রেডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে তাকে ব্রিগেডিয়ার পদে উন্নীত করে একই বছরের শেষের দিকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করা হয়। এত কিছু পাওয়ার পরও জিয়া স্থির থাকতে পারেননি। তাই ক্ষমতা লোভী অসন্তষ্ট জিয়া ভেতরে ভেতরে সেনা বাহিনীতে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। যার বহি:প্রকাশ আমরা দেখতে পেলাম ১৫ আগস্ট ১৯৭৫
বাংলাদেশের নাম গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার হলেও এদেশে প্রায় ৮২% মুসলমান বসবাস করে। তবুও সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশের নাম ইসলামিক প্রজাতন্ত্র না রেখে রাখা হয়েছে গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু বলতেন নাম দিয়ে কি আসে যায়। আমার কর্ম আমাকে প্রমান করবে আমি একজন মুসলমান। বিশ্বে অনেক দেশ আছে যাদের নাম ইসলামিক রেখে সেখানে চলে সকল ইসলাম বিরোধী কাজ। বঙ্গবন্ধুর আশেপাশে যারা সবসময় থাকতেন তাদের নিয়ে অবসরে তিনি নানা কথা বলতেন। এসকল বেক্তিদের তিনি কখনো নিচু মনে দেখতেন না। সকলকে অত্যন্ত আপন করে নিতেন।
আমার বাবা জীবনে কোনদিন রাজনীতি করেননি। তবে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে তিনি তার মহিমায় এতই ভক্ত হয়েছিলেন যে ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে গেছেন। বাকশাল গঠনের পর বঙ্গবন্ধু একসময় বাবাকে মৌলভীবাজারের গভর্নর হওয়ার জন্য বললে বাবা নেতার কাছে আবদার করে সেদিন বলেছিলেন, সার আমার চাকুরী জীবনের বাকি সময়টা আমি আপনার পাশে থাকতে চাই। বঙ্গবন্ধু বাবার কথা সেদিন গ্রহণ করেছিলেন। বাবা ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট সন্ধা রাতে বঙ্গবন্ধুকে শেরেবাংলা নগর গণভবন থেকে ৩২ নাম্বার ধানমন্ডিতে নেতার বাসায় পৌছে দিয়েছিলেন। জাতির জনকের সাথে এটাই ছিল বাবার শেষ দেখা।
যে কথা শুরুতেই বলছিলাম। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের নাম ইসলামিক রিপাবলিক না রেখে রেখেছেন পিপলস রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ। পাঠক এবেপারে আমি আমার লেখায় একজন মুসলমান হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নানা পদক্ষেপের কথা আগেই উল্লেখ করেছি। আজ আমি সেদিকে না গিয়ে ১৯৭৪ সালের একটি ঘটনার কথা এখানে উল্লেখ করতে চাই।
ফেবরুয়ারী ১৯৭৪ সালে পাকিস্থানের লাহোরে অনুষ্ঠিত হয় ইসলামিক সন্মেলন। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে তখনও অনেক মুসলিম দেশ স্বীকৃতি দেয়নি। ঠিক এই সময় পাকিস্থানে অনুষ্ঠিত ইসলামিক সন্মেলনে যোগদান করাটা বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত গুরত্ব মনে করলেন। পাকিস্থানের সাথে আমাদের সম্পর্ক তখন খুব ভালো থাকার কথা নয়। জুলফিকার আলী ভুট্টো তখন পাকিস্থানের প্রেসিডেন্ট। মুসলিম বিশ্বের সাথে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলার লক্ষে বঙ্গবন্ধু এই সন্মেলনে যোগদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। মিডিয়ায় বঙ্গবন্ধুর পাকিস্থান সফর নিয়ে ইতিমধ্যে নানা সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকে।
বঙ্গবন্ধু গাড়িতে বসে কোথায় কোথায় তার পাকিস্থান সফরের কথা উল্লেখ করলেন। বললেন পাকিস্থানে অনুষ্ঠিত ইসলামিক সন্মেলনে যাওয়ার কথা। তবে বাবা বললেন যাওয়া আর না যাওয়া নিয়ে বঙ্গবন্ধু কোনো কারণে একটু চিন্তিত ছিলেন বলে মনে হলো। একদিন গণভবনে বঙ্গবন্ধুর লাল টেলিফোনে সরাসরি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে যোগাযোগ হলে তিনি কথা প্রসঙ্গে তার পাকিস্থান সফরের কথা সরাসরি জানিয়ে দিলেন। অপরদিক থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী কি বলছিলেন শুনা না গেলেও অনুমান করা গিয়েছিল সম্ভবত বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্থানে না যাওয়ার কথাই বলছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে কোনদিন মাথা নত করেননি। তার রাজনৈতিক ইতিহাস আমাদের বার বার প্রমান দিয়েছে। ঐ সময় বঙ্গবন্ধুর রুমে ছিলেন একজন সিএসপি অফিসার যার নামটা বাবা আমাকে বললেও এই মুহুর্তে আমার মনে নেই। এছাড়াও আরো দুই একজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তারা আজ বেচে থাকলে ঘটনাটা আরো ভালোভাবে বলতে পারবেন।
বাবা সহ সেখানে উপস্থিত থাকা সকলেই ইন্দিরা গান্ধীর সাথে পাকিস্থানের সফর নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কথা বলার স্টাইল স্বচক্ষে দেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনচেতা মন সেদিন প্রমান করেছে একটি স্বাধীন দেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কারো কাছে মাথা নত করার মত রাজনৈতিক নেতা নয়। তিনি টেলিফোন রেখে দিয়ে ইংরেজি ভাষায় সেই অফিসারকে তার পাকিস্থান সফরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানালেন। বাঙালি জাতির নেতা এইসময় কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পরেন। তখন তিনি রেগে গিয়ে এও বলেছিলেন, আমি কোথায় যাব আর না যাব সেই সিদ্ধান্ত নিব আমি নিজে, অন্য কেউ নয়। শেষে বঙ্গবন্ধু পাকিস্থানে অনুষ্ঠিত ইসলামিক সন্মেলনে যোগদান করেছিলেন। সবচেয়ে মজার বেপার হলো বিমান থেকে বঙ্গবন্ধু পাকিস্থানের মাটিতে নামলে তাকে গার্ড অফ অনার দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন টিক্কা খান। এই টিক্কা খান একসময় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের আসমান ও মাটিকে এক করে দেওয়ার হুঙ্কার দিয়েছিলেন। পরবর্তিতে বাঙালি হত্যার কাজ পরিচালনাও করেছিলেন। পাঠক আল্লাহর কি খেলা দেখুন আজ সেই টিক্কা খান সেলুট দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্থানের মাটিতে স্বাগত জানালো।
পাঠক আমার এই লেখা পরে আপনারা হয়তো ভাববেন আমি আওয়ামী লীগ করি। তবে বাস্তব হলো আমি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত কিছুই করি না। আমি সুইডেনে মূলধারার রাজনীতির সাথে জড়িত। ১৯৮৯ সালের পর থেকে বাংলাদেশী রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে নিজেকে সুইডেনের মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় রেখেছি। ২০০২-২০০৬ স্টকহলম সিটি কাউন্সিল ও ২০০৬-২০১০ গ্রেটার স্টকহলম এসেম্বলিতে নির্বাচিত কাউন্সিলারের দায়িত্ব পালন করেছি। ২০১০ সুইডিশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নমিনেশন নিয়ে নির্বাচন করে জয়লাভ করতে পারিনি। বর্তমানে ফুলটাইম সুইডিশ ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতির সাথে জড়িত। সুইডিশ পোস্টাল ট্রেড ইউনিয়ন স্টকহলম অরসটা পোস্ট টার্মিনাল ক্লাবের একজন নির্বাচিত সহ সভাপতি এবং সুইডিশ লেফট পার্টি স্টকহলম হেসেলবি ভেলেংবি ব্রাঞ্চের সভাপতি। অর্থাত আমি নিজেকে সুইডেনের মূলধারার রাজনীতির সাথে জড়িত রেখেছি, বাংলাদেশী রাজনীতি নয়।
গত ২৬ বত্সর থেকে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। বিদেশে আমি মূলধারার রাজনীতি করাকে গুরত্ব দিয়ে থাকি। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। সুতরাং আমার আকাংখা দেশটা যেন মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে সামনে নিয়ে এগিয়ে চলে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সন্মানিত স্থানে রেখে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে যেন আগামী প্রজন্মের কাছে বার বার বিকৃত করা না হয়। বিদেশে মূলধারার রাজনীতি করলেও জন্মভূমির রাজনীতি নিয়েও চিন্তা ভাবনা করি বলেই দেশের পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করি। আমার এই লেখার প্রধান কারণ নুতন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অনেক অজানা কথা তুলে ধরা। লেখাটি পড়ার জন্য আমি আপনাদের সকলকে আমার অন্তর থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।