বঙ্গবন্ধু হত্যার রহস্য কি গোপনই রয়ে গেল!


জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলে এটা অবশ্যই বলতে হবে এটা কোনো নিছক প্রতিহিংসামূলক হত্যাকাণ্ড ছিল না। যদিও ওই হত্যাকাণ্ডের পর এরূপ একটা ধারণা গণমনে গেঁথে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। গল্পটা বোধহয় এরূপ ছিল- মেজর ডালিম, গাজী গোলাম মোস্তফা ও শেখ কামালের পারস্পরিক দ্ব›দ্ব ও সংঘাতের কারণে মেজর ডালিম এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে তার সামরিক বাহিনীর বন্ধুদের দিয়ে ওই বর্বর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে। অবশ্য এটাও প্রচার করা হয়েছিল, দুর্নীতি, ক্ষমতার লিপ্সা, অযোগ্যতা, অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতার কারণেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতার কেন্দ্র হত্যাকারীরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল। অনেক দেরিতে হলেও বাংলাদেশের সচেতন বুদ্ধিজীবী, গবেষক, ইতিহাসবিদ ও রাজনীতিবিদরা তাৎক্ষণিকভাবে ওই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে অভিমত ব্যক্ত না করলেও ধীরে ধীরে তারা সভা-সমিতি, আলোচনা ও লেখনীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রকৃত কারণ বিশ্লেষণ করতে আগ্রহী হন। আমার মনে হয়, বঙ্গবন্ধু হত্যা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ওপর যত কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক, গান, পুস্তক-পুস্তিকা প্রকাশিত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়া কেন বিশ্বের খুব কম নেতা সম্পর্কেই তাদের মৃত্যুর পর এত ধরনের প্রকাশনার বিকাশ ঘটেছে। বোধহয় কারণটা এমন যে, মহান নেতা ২৩ বছর নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম করে বাঙালি জাতিকে স্বাধীন করলেন, তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর স্বাধীন দেশ পরিচালনা করতে পেরেছিলেন। তারপর তাকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তাই স্বভাবতই এ প্রশ্ন উঠল কারা, কী কারণে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল?

এর উত্তর পেতে হলে যে কোনো সচেতন মানুষকে অতীত ইতিহাসের দ্বারস্থ হতে হবে। তাতে জানতে হবে কেন পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাত কোটি বাঙালি পাকিস্তানের নাগরিক হয়েও প্রথমে স্বায়ত্তশাসন, স্বাধীনতা ও পরে স্বাধীনতার সংগ্রামে লিপ্ত হলো। পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালির অবস্থান কি ছিল! বাংলাদেশের জনগণের ভোটেই তো পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। সেই জনগণ কেন ২৩ বছরের মাথায় সশস্ত্র সংগ্রাম করে পাকিস্তানিদের হটিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি করল, অর্থনৈতিক কারণ ছিল মুখ্য। ধর্মরাষ্ট্র পাকিস্তানে মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক ও হিন্দুদের ভারতের চর বলে পাকিস্তানি মিলিটারিরা মনে করত। পূর্ব বাংলাকে কলোনি হিসেবে শোষণ করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। কোরিয়ান যুদ্ধে মাত্র ছয় মাসে পূর্ব বাংলার পাট রপ্তানি করে পাকিস্তান ১৫৩ কোটি টাকা আয় করে। তার এক পয়সাও পূর্ব পাকিস্তানে ব্যয় করা হয়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্যের যে চিত্র টেলিভিশনের পর্দায় তুলে ধরেছেন এবং রাজশাহীর এ কে এম মজিবুরের ‘ফ্রেন্ডস নট ফোজ’ গ্রন্থটি যারা পড়েছেন, তারা জানেন বৈষ্যমের মাত্রা কী ছিল। তাই স্বায়ত্তশাসনের দাবি ছিল অত্যন্ত স্বাভাবিক দাবি। ভাষা আন্দোলনে যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে, তাই পরবর্তীতে স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। বঙ্গবন্ধু ছয়দফা ঘোষণা করে এই আন্দোলন আরো বেগবান করেন। ইস্পাত কঠিন ঐক্য করে বাংলার জনগণ ছয় দফার আন্দোলন ও ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাদের পর্যদুস্ত করে। জেনারেল আইয়ুব খান সরে যেতে বাধ্য হন ও ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় আসেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে প্রবল গণবিস্ফোরণের মুখে ইয়াহিয়া খান নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। ওই নির্বাচনকে বঙ্গবন্ধু ছয়দফাকে ম্যান্ডেট হিসেবে গ্রহণ করেন। নির্বাচনে ১৬৯টি আসনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর দল ১৬৭টি আসন লাভ করে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। পাকিস্তানি শাসকরা মনে করে বঙ্গবন্ধু ছয়দফার সঙ্গে আপস করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, বাংলার মানুষের অধিকার চাই’। তখন ভুট্টো ও তার সরকার পাকিস্তান রক্ষার স্বার্থে সর্বাত্মক যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে। শুরু হলো সৈন্য ও গোলাবারুদ পূর্ব বাংলায় আনা।

বঙ্গবন্ধু প্রচণ্ড গণআন্দোলনের মাধ্যমে জবাব দেয়ার লক্ষ্যে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলেন। মার্চের প্রথম থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত বিশ্বের বিস্ময় সেই অসহযোগ আন্দোলন পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রকে অস্তিত্বের সংকটে নিমজ্জিত করল। বঙ্গবন্ধু ডি ফ্যাক্টো বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে সরকার পরিচালনা করলেন। তার নির্দেশে স্কুল থেকে শুরু করে প্রধান বিচারপতির কার্যালয় পর্যন্ত চলতে থাকল। একমাত্র ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া গোটা পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানের পতাকা দেখা যায়নি। পাকিস্তানের নেতা আজগর খান করাচিতে গিয়ে বললেন, একমাত্র মুজিব ছাড়া আর কারো পক্ষে পাকিস্তান রক্ষা করা সম্ভব নয়। এদিকে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে মুক্তিযুদ্ধের প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা দিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তিনি আরো বললেন, যার যা কিছু আছে, ‘তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ”।

সত্য সত্যই তিনি তার প্রতিশ্রæতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। এই হচ্ছে খুব সংক্ষেপে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। এই ইতিহাসই বলে দেয় কারা, কেন, কি কারণে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে একাত্তরে কি সব বাঙালি এক হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে করেছিল। না, তা করেনি। মৌলবাদী, সা¤প্রদায়িক প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী যারা ধর্মরাষ্ট্র পাকিস্তানকে মনে-প্রাণে স্বদেশ ভূমি মনে করত, সেই জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী, মুসলিম লীগ প্রথম থেকে ভাষা আন্দোলন, স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছিল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের সাধের পাকিস্তান রক্ষার স্বার্থে হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে তারা কাজ করেছে। এরাই ৩০ লাখ বাঙালি হত্যার জন্য দায়ী। লাখ লাখ মা-বোনের ইজ্জত তাদের কারণে লুন্ঠিত হয়েছে। এরাই আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা, এরাই বাংলাদেশকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করেছে। যুদ্ধে পরাজিত হয়েও বিদেশে পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলে ওকালতি করে। স্বাধীন বাংলাদেশের জাতিসংঘের সদস্যপদ অর্জনে বিরোধিতা করে। মুসলিম দেশের সংগঠন ওআইসির সদস্যপদ লাভেও তারা শত্রুতা করে। এরাই যুদ্ধাপরাধী, এরাই দেশবিরোধী শক্তি। এরাই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশকে স্বীকার না করে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ দল গঠন করে সেই ১৯৭২-৭৩ সাল থেকেই সংগ্রাম শুরু করে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল এই তিন বছর জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় তারা সুকৌশলে তৎকালীন বিদ্যমান ২ লাখ মসজিদ মাদ্রাসাকে রাজনীতির ক্রিয়া-কর্ম হিসেবে ব্যবহার করেছে। ৪০ বছর পর আমাদের বোধোদয় হয়েছে, মসজিদের খুতবা কিভাবে পড়া হবে। খুতবার মাধ্যমে রাজনৈতিক অপপ্রচার চলছে কিনা। আমরা শুধু জামায়াতের চেয়ে অর্থ-সম্পদেই পিছিয়ে নেই, তাদের ক‚টকৌশলেও পিছিয়ে আছি। এমন অনেক মসজিদ আছে আওয়ামী লীগের এমপি তা নির্মাণ করেছেন কিন্তু নিয়ন্ত্রণভার জামায়াতের কাছে, জামায়াত ইমাম নিয়ন্ত্রণ করছে, মসজিদ কমিটি নিয়ন্ত্রণ করছে।

ওই সময়ে গ্রামের ১০টি মসজিদের খুতবা যদি গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়, তাহলে বোঝা যাবে আজকের জঙ্গিবাদের উৎস কোথায়। কোথায় গেল পাকিস্তানিদের ফেলে রাখা অস্ত্র ও গোলাবারুদ। সবই তো জামায়াত-শিবিরের হাতে। এখনো অনেক সীমান্তে, দূরপল্লীতে মর্টার শেল পাওয়া যায়। লাখ লাখ গুলি মাটির নিচে পাওয়া যায়। পুঁতে রাখা গ্রেনেডও পাওয়া যায়। ঘনবসতি দেশে গোপন সশস্ত্র তৎপরতা সহজ নয়। তাই তারা বিশেষ অঞ্চল বেছে নিয়ে সুদীর্ঘ দিন ধরে সশস্ত্র প্রস্তুতি নিয়েছে। জঙ্গিবাদ আকাশ থেকে পড়েনি। আজকের আমাদের পত্রপত্রিকা ও প্রচারমাধ্যম লিখছে জঙ্গিরা মৃত্যুর আগে নিশ্চিত বেহেশতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেই জীবন দিতে প্রস্তুত। একবার কি আমরা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গংদের শীতকালীন লাখ লাখ বক্তব্য স্ক্যান করেছি। এসব তো পুরনো কথা। মহান পবিত্র আল কুরআনে উল্লেখ আছে, যদি একজন নিরীহ মানুষকে বিনা কারণে হত্যা করা হয়, তাহলে তা সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করার শামিল। আর জঙ্গিরা বলছে, জিহাদ করে স্বর্র্গ অর্জন করা সম্ভব। ওদের কথা- নিরীহ মানুষ হত্যাই জিহাদ। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন, আমি সব মানুষকে একগোষ্ঠীভুক্ত করতে পারতাম। তিনি তা করেননি। তার ব্যাখ্যা পবিত্র কুরআনে দেয়া হয়েছে। সেদিকে জঙ্গিরা কর্ণপাত করে না। ওদের কাছে মওদুদীবাদ কুরআন থেকেও বেশি গুরুত্ববহ।

একদিকে মৌলবাদীরা তিন যুগ ধরে ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে শান্তির ধর্ম ইসলামকে সহিংসতার ধর্মে রূপান্তরিত করেছে, অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা বলে আমরা যারা দাবি করি তারা বাঙালি জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা দিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে একটা বই কি আমরা ছাত্রদের তুলে দিতে পেরেছি। আমরা শুধু ক্ষমতা ও উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। অবশ্যই আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেছি। কিন্তু স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হতে পারে, তা কি আমরা সঠিক বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পেরেছি! এ ব্যর্থতা সব সরকারের। স্বাধীনতার পক্ষের সব দলের। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের। বেশি ব্যর্থতা আওয়ামী লীগের। কেননা, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, আর এই দলের প্রধান জাতির জনক। এর দায় আমরা এড়াতে পারি না।

এখন তো পরিষ্কার বঙ্গবন্ধুকে কারা কী কারণে হত্যা করতে পারে। বঙ্গবন্ধুর বড় অপরাধ কেন তিনি বাংলাদেশ স্বাধীন করলেন। তার চেয়ে বড় অপরাধ কেন তিনি সার্বিক মুক্তির কর্মসূচির ঘোষণা এবং কেন তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পট সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে মহান মুক্তিযুদ্ধের কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ গঠন করার উদ্যোগ নিলেন। ১৯৭৫-এর প্রতিবিপ্লবই বলে দেয় বিশেষ করে ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫ এই ২১ বছর বাংলাদেশের সংবিধান, রাষ্ট্রীয় পরিচালনা নীতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ-সংস্কৃতিতে যে পরিবর্তনের ধারা প্রতিবিপ্লবের নেতা জিয়া সংঘটিত করেছেন, তা-ই বলে দেয় কারা কী জন্য বঙ্গন্ধুকে হত্যা করেছিল। এগুলো দেশীয় ষড়যন্ত্র। আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যারা সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির স্বার্থে বাংলাদেশের জন্মের বিরোধিতা করেছিল অথবা তাদের বিশ্বায়নের স্বার্থে স্বাধীন বাংলাদেশ মেনে নিতে পারেননি, তারা যে পেছনে থেকে ১৫ই আগস্ট সংঘটিত করেছিল, তা অনেকেই জানা। মার্কিন মুল্লুকে পৃথিবীর গণতান্ত্রিক দেশে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা নিরাপদে জীবনযাপন করছে। অথচ পৃথিবীর বৃহৎ গণতন্ত্রের দাবিদার আমেরিকাতে যে দলই রাষ্ট্রক্ষমতায় আসুক, তাদের নীতি খুনিদের রক্ষায় তৎপর। অনেকেই বলেন, তদন্ত শুরু করা দরকার। খুনিদের তো প্রায়ই বিচার হয়েছে। পেছনে কারা জানা যায়নি। একেবারে জানা যায়নি এ কথাও ঠিক নয়। স্বাধীন বাংলাদেশের তো এই বিষয়ে অসুবিধা আছে। মাঝে মাঝে অস্তিত্বের সংকট ও পরনির্ভরশীলতা এমন মাত্রাই পৌঁছে যায়, যে স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের বিকশিত হতে বাধা সৃষ্টি করে। তাই সব জেনে-শুনে না জানার ভান করে যারা তারা আমাদের প্রকৃত মিত্র নয়, অথচ বড় পিঁড়িটা তাদের জন্য এগিয়ে দিতে হয়। অবশ্য ওই বাস্তবতা বোধ হয় এখন আর নেই। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় অর্থনীতি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আর্থিক সব সূচক ধনাত্মক। বড় কথা, আমরা এখন বিশ্ববিবেচনার গণ্ডিতে আছি। হিসাববিহীন কোনো খাতায় আমাদের অবস্থান নেই।

শোনা যায়, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ তাদের গোয়েন্দা তৎপরতার কোনো দলিল ধ্বংস করে না। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মার্কিন সরকারপ্রধান ইচ্ছা করলেই সঠিক তথ্য ন্যায় বিচারের স্বার্থে বিশ্ববাসীকে অবহিত করতে পারেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হয়েছে, আমরা যারা বঙ্গবন্ধুকে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বলি তারা অবশ্যই চাই, শুধু খুনিরা নয়, খুনিদের যারা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পেছন থেকে ইন্ধন যুগিয়েছে, তাদের পরিচয় যেন বাঙালি একদিন জানতে সক্ষম হয়। বিশ্ববাসীও যেন সেদিকে দৃষ্টি দিতে কুণ্ঠাবোধ না করে। তবে এ কথাও ঠিক শুধু বিদেশিরাই ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি, খুনি মোশতাক বঙ্গবন্ধুর সহযোগী ছিল, মেজর জিয়া মুক্তিযুদ্ধের খাতায় নাম লেখান। এরূপ অনেকেই আছেন যারা এখন নড়েচড়ে বসেছেন, কিছু কথাবার্তা বলেন। কিন্তু ১৯৭৫-এর পর তাদের চলাফেরা ছিল পৃথিবীর বড় বড় রাজধানীতে বেশ কয়েক বছর ধরে। আজ তারা সাইবেরিয়ান ডাকস্- আসেন, চলে যান। কিন্তু ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ সালে এ দেশের মানুষ দেখতে পেরেছে ওইসব আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান ব্যারিস্টার বঙ্গবন্ধু হত্যার পর নীরব ছিলেন, তারা কাদের তুষ্ট করতেন? গণতন্ত্রের ধ্বজা নিয়ে তারা মাঠে নামতে কি একটু লজ্জাবোধ করেন না? অনেক সময় দেখা যায় অনাহ‚ত অবস্থায় মঞ্চে এসে বসেন, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের স্মৃতিচারণ করতে। কিন্তু ওদের বিবেক তো ভালো করেই জানে, ওদের সঙ্গে পরামর্শ করেই তো এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল।

ডা. এস এ মালেক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট।

SUMMARY

1403-1.jpg