মেহেরুন্নেছা মেরী
১৭ মার্চ জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। এই দিনে ফরিদপুর জেলার তদানীন্তন গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নে জন্ম নেন হাজার বছরের এই শ্রেষ্ঠ বাঙালি । চার কন্যা ও দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। তার বড় বোন ফাতেমা বেগম, মেঝ বোন আছিয়া বেগম, সেজ বোন হেলেন এবং ছোট বোন লাইলি। সবার ছোট ভাই শেখ আবু নাসের।
১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গীমা ডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জে মাথুয়া নাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন।
তাঁর ডাক নাম ছিল খোকা। বাবা শেখ লুৎফর রহমান আদর করে তার নাম রেখেছিলেন খোকা। খোকার মনটা ছিল আকাশের মতো উদার। তখনকার দিনে স্কুলে তার অনেক গরিব বন্ধু ছিল যারা ভালো করে পেটপুরে খেতে পারতো না খোকা ওই শিশুদের বাড়িতে নিয়ে আসতেন। মাকে বলে দুধ ভাত খেতে দিতেন।
দুঃখী মানুষ দেখলে খোকার চোখে জল আসতো। দুঃখী মানুষের দুঃখ ঘোচাবার জন্য ব্যাকুল হতেন শিশু মুজিব। মাকে এটা সেটা বলে তাদেরকে টাকা পয়সা জোগাড় করে দিতেন। একবার এক গরিব বন্ধূকে নিজের ছাতা দিয়ে দিলেন। বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরলে মা বকুনি দিলে বলেন, ‘মা, ও তো গরিব ছাতা নেই আমাদের তো অনেক আছে মা’।
মা নির্বাক হয়ে শুনতেন শিশু মুজিবের কথা। মৃদু হেসে ছেলেকে বুকে টেনে নিতেন।
নিজের জামা-কাপড় এমন কি পড়ার বইও বিলিয়ে দিয়ে একদিন চাদর গায়ে দিয়ে ঘরে ফিরলেন শিশু মুজিব। কৈশোরেও শেখ মুজিব ছিলেন দয়ালু, পরোপকারী, নীতি-আদর্শ মেনে চলা এক অগ্নিকিশোর। তিনি ১৯৩৯ সালে অষ্টম শ্রেণিতে থাকাকালীন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক মিশনারি স্কুল পরিদর্শনে গেলে তাঁর পথ আগলে দাঁড়ালেন কিছু কিশোর। ছিপছিপে গড়নের কিশোর মুজিবের নেতৃত্বে জানালেন তাদের স্কুলের সমস্যার কথা। এ কে ফজলুল হক সাহেব অবাক হয়ে যান এই বিস্ময় বালকের সাহস দেখে। তাৎক্ষনিক নির্দেশে সমাধান করেন তাদের দাবি। তখন অনেকে আন্দাজ করতে পেরেছিলেন এই ছেলে একদিন অনেক বড় হবে।