‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’
উল্লিখিত শব্দমালা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত নোটবুকের অংশ, যা অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে প্রকাশিত।
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ অবিচ্ছেদ্য ইতিহাস। দেশ এবং দেশের মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা কিংবদন্তির মতো প্রবাহমান অনন্ত ভবিষ্যতে। বঙ্গবন্ধু অপার এক বিস্ময়ের নাম। বঙ্গবন্ধু সৃষ্টির অনন্য উপহার। আমরা বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে দেখতে পাই, এক উদ্যমী কিশোর, সাহসী যুবক, দৃঢ়চেতা বিচক্ষণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে। যার চিন্তার বৃহৎ অংশজুড়েই সাধারণ মানুষের জন্য কল্যাণ ভাবনা। এই কল্যাণ ভাবনা থেকেই তিনি উপলব্ধি করেন মানুষের সংকট এবং সংকটের গভীরতা। খোঁজেন মুক্তির উপায়। তার অন্তরের বিশ্বাসকে তিনি প্রকাশ করেন গভীর উপলব্ধিবোধ থেকে। তরুণ বয়সে তার সেই উপলব্ধি, ‘যে কোনো মহৎ কাজ করতে হলে ত্যাগ ও সাধনার প্রয়োজন। যারা ত্যাগ করতে প্রস্তুত না তারা জীবনে কোনো ভালো কাজ করতে পারেনি- এ আমার বিশ্বাস ছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, এ দেশে রাজনীতি করতে হলে ত্যাগের প্রয়োজন আছে এবং আমাদের ত্যাগ করতে হবে পাকিস্তানের জনগণকে সুখী করতে হলে’। (সূত্র : অসমাপ্ত আত্মজীবনী)।
বঙ্গবন্ধুর উপলব্ধিতে অত্যন্ত স্বচ্ছ মানুষের মনোজগৎ। তাদের মানসিকতা, আচার-আচরণ। তরুণ বয়সে মানুষকে ভালোবেসে, তাদের কষ্ট দূর করতে, মানুষকে সুখী করার চিন্তায় তিনি যে লক্ষ্য স্থির করেছিলেন সেই লক্ষ্যে স্থির ছিলেন প্রতি মুহূর্তে। নিজের জীবনকে তিনি অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছিলেন মানুষের জন্য। তাই তো তিনি অকপটে বলতে পারেন, ‘আমরা এ দেশের শাসক নই, আমরা এ দেশের সেবক- এ কথা মনে রাখতে হবে। জনগণের সেবার জন্যই আমরা নির্বাচিত হয়েছি এবং তাদের সেবাতেই আমাদের আত্মনিয়োগ করতে হবে’। (সূত্র : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জীবন ও রাজনীতি)
বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস এবং এর রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান ছিল বঙ্গবন্ধুর। দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল উদার এক কল্যাণ রাষ্ট্রের স্বপ্নের আলো জ্বালিয়ে ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই আলোর মর্মবাণী যেমন অতীতে ছিল এদেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের কেন্দ্রস্থল, তেমনি সেই আলো আগামীরও পথ নির্দেশক।
তিনি আমাদের সবাইকে স্বাধীন বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক হিসেবে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার মর্যাদা দিয়ে গেছেন। শ্রদ্ধাভরে আরো স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদাৎ বরণকারী সবাইকে।
স্মরণের অমরতায় জড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর উদাত্তকণ্ঠের আহ্বান, যা পথনির্দেশ করে ভবিষ্যতের। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। বাঙালি জাতি যে প্রাণ, যে অনুপ্রেরণা নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছিল সে প্রাণ, সেই অনুপ্রেরণার মতবাদ নিয়ে অগ্রসর হতে হবে, দেশের দুঃখী মানুষকে মুক্তি দেয়ার জন্য, তাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। এ জন্য যারা যেখানে আছেন, যারা দেশকে ভালোবাসেন, সবাইকে আমি আহ্বান করব, আসুন দেশ গড়ি। আসুন দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাই। আসুন দেশের মানুষের দুঃখ দূর করি’। (সূত্র : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জীবন ও রাজনীতি)।