‘স্বাধীনতার ঘোষক’ বিতর্কের স্থায়ী অবসান হোক


শেখ আদনান ফাহাদ
 
একজন বিদেশীর কাছে দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস উপস্থাপন করার দায়িত্ব একজন আওয়ামী লীগ সমর্থককে দিলে যেভাবে করবে, একজন বিএনপি বা জামাত সমর্থককে দিলে করবে অন্যভাবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল একটাই এবং এর ইতিহাসও একটা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আমাদের মধ্যে গণ্ডগোল আছে। এবং ইতিহাস বিতর্কের অন্যতম উপাদান হল স্বাধীনতার ঘোষণা বিতর্ক। ব্যক্তিগত ভাবে এ বিষয়ে বিতর্ক ও কোনো প্রকার তুলনামূলক আলোচনা করাকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পবিত্র স্মৃতির প্রতি অবমাননাকর বলে মনে করি, কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে ইতিহাসের এ মাহেন্দ্রক্ষণ নিয়ে কথা বলা ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।       

দেশের অন্যতম প্রধান ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলীয় প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করে এবং প্রচার করে বিএনপি। শুধু তাই নয়, জিয়াউর রহমানের বন্দনা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হেয় প্রতিপন্ন করে এমন সব কথা বলে যেগুলো কেউ বিশ্বাস করলে, ইতিহাস ও সভ্যতার প্রতি সবচেয়ে বড় অবিচার হয় বলে মনে করি। দেশের ২/৩ শতাংশ জামাত-পন্থী মানুষ জাতির পিতাকে সম্মান করবে না, পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার দুঃখে কাতর হবে, স্বাভাবিক। কিন্তু দেশের অন্যতম জনপ্রিয় দল বিএনপি যখন জামাতের পথে হাঁটে, পাকিস্তান যখন বিএনপির সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলে, তখন আতংকিত হতে হয়। 

‘স্বাধীনতার ঘোষক’ জাতীয় বিতর্কের স্থায়ী অবসান রাষ্ট্রীয়ভাবে করতে হবে। ২৭শে মার্চ জিয়াউর রহমানকে বাঙালি আর্মি অফিসার হিসেবে চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে আনা হয়। তিনি সেদিন সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন। একজন আর্মি অফিসার ঘোষণাপত্র পাঠ করলে মানুষ যুদ্ধের অনিবার্যতা এবং বাস্তবতা আরও গভীরভাবে অনুধাবন করবে, এ আশায় চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা মেজর জিয়াউর রহমানের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি নিধনে ব্যবহৃত হবে এমন অস্ত্রবোঝাই জাহাজ খালি করার কাজে চট্টগ্রাম অঞ্চলে অবস্থান করছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। সেখান থেকে তাকে এনে ঘোষণাপত্রটি পাঠ করিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।

জিয়াউর রহমান কর্তৃক ঘোষণাপত্র পাঠে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কতখানি বেগবান হয়েছিল সেটি পরিমাপ করা কঠিন, কিন্তু জিয়াউর রহমান কর্তৃক ঘোষণাপত্র পাঠ করাকে কেন্দ্র করে যে দীর্ঘমেয়াদী বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তার মূল্য বাঙালি জাতিকে দিতে হবে বহুদিন ধরে। দেশের মানুষের একটা অংশ জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে বিশ্বাস করেন এবং নিজেদের ছেলে-মেয়ে ও অনুসারীদের সে ইতিহাস বিশ্বাস করতে বাধ্য করেন। এভাবে দেশের মানুষের একটা অংশ জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জেনে বড় হচ্ছে। অথচ স্বাধীনতার ঘোষণা কে করতে পারেন, এ সংক্রান্ত কোনো একাডেমিক বা রাজনৈতিক ধারণা এদের নেই। ঘোষণাপত্রের পাঠক আর ঘোষকের মধ্যে কী পার্থক্য সেটি বোঝার মত ক্ষমতা আল্লাহ এদের দেয়নি। আর যারা রাজনীতি করেন, তারা বুঝেও না বোঝার ভান করেন এবং বিতর্ক উসকে দিয়ে রাজনৈতিক হীন স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা করেন। এবং এই ঘৃণ্য প্রক্রিয়ায় এরা সফল হয়েছেন। ইতিহাস বিকৃতির শিকার এই মানুষগুলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অপমানজনক, অশ্রাব্য কথা বলতেও দ্বিধা করে না। 

স্বাধীনতার আহ্বান বা ঘোষণা যে কেউ করতে পারে না। এটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। স্বাধীনতার ঘোষণা করতে পারেন, এমন একজন নেতা যিনি তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে একটি জাতির মুক্তির জন্য লড়াই করে আসছিলেন। মানুষও এমন একজন নেতার আহবানে সর্বস্ব নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে যিনি নিজের জীবনের সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে তাদের ভালোবাসা ও বিশ্বাস অর্জন করেছেন।অথচ জিয়াউর রহমানকে ২৭ শে মার্চের আগে আপামর জনসাধারণ দূরে থাক, দেশে রাজনীতিবিদরাও চিনতেন না। কীভাবে চিনবেন? জিয়াউর রহমান ছিলেন তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন সাধারণ মেজর।

বাঙালির একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শেখ মুজিব সেই ১৯৪৭ সালেই করতে চেয়েছিলেন। সে সময় পাকিস্তান-ভারতের সাম্প্রদায়িক ও ধনিক শ্রেণির যোগসাজশে তৎকালীন প্রগতিশীল সমাজের মুরুব্বীরা বাঙালির পৃথক রাষ্ট্র কায়েম করতে পারেন নি। শেখ মুজিব তখন কেবল ২৭ বছরের যুবক। অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সে ঘটনা প্রবাহ বর্ণনা করেছেন। পাকিস্তান আমলের শুরু থেকে বাঙালির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিটি আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমান শক্ত ভূমিকা রেখেছেন। প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়ে, দেশের মানুষের আকাংখা অনুযায়ী কাজ করে মানুষের ভালোবাসা অর্জন করে আওয়ামী লীগের প্রধান নেতা হওয়ার পাশাপাশি ক্রমশ বাঙালি জাতির নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়েছেন। পাকিস্তান আমলের ২৪ বছরের মধ্যে ১৪ বছর তিনি কারাভোগ করেছেন। পাকিস্তান আমলের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধু নিজেই যেন পূর্বপাকিস্তানের সরকারে পরিণত হয়েছিলেন।

১৯৭১ এর মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের আহবানে সাড়া দিয়ে প্রতিটি মুক্তিকামী বাঙালি সাড়া দিয়ে জাতীয় নেতার প্রতি তাদের আস্থার প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু ও তাঁর অনুসারীরা বহু আগে থেকে পরিকল্পনা করে এগুচ্ছিলেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এ প্রক্রিয়ার অন্যতম উদাহরণ। অন্যদিকে মাওলানা ভাসানীসহ অনেক বড় বড় নেতা ১৯৭০ এর নির্বাচনে অংশ না নেয়ার পক্ষে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু নির্বাচনে অংশ নিয়ে মুক্তি সংগ্রামের লড়াইকে যৌক্তিক করে তুলেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে প্রমাণ করেছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতার মালিক পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কর্তৃক ২৫শে মার্চ রাতে আক্রান্ত হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করে দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ তথা দেশবাসীর কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। ২৭ শে মার্চের সন্ধ্যায় দৃশ্যপটে আওয়ামী লীগের নেতাদের কল্যাণে দৃশ্যপটে আসেন জিয়াউর রহমান। এর আগে তাকে কেউ চিনত না।

জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার ছেলে লন্ডন প্রবাসী তারেক জিয়ার কয়েকটা ভাষণ ইউটিউবে শুনেছি। সেখানে তিনি বলেছেন, জিয়াউর রহমান নাকি ২৬ শে মার্চ তারিখেই স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন। মূলত জামায়েত নেতৃবৃন্দের প্রভাবে তারেক জিয়া ইতিহাস নিয়ে ভয়ংকর ইতিহাস বিকৃতি করে চলেছেন। কারণ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আমাদের মধ্যে যত বেশি মতানৈক্য থাকবে, তত ৭১ এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে সুবিধা হবে পাকিস্তানের।          

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক নানা ক্ষেত্রে নিয়মিত উন্নতি সাধন করছে। খেলাধুলায়ও ভালো করতে শুরু করেছে দেশটি। কিন্তু রাজনৈতিক নানা বিষয় নিয়ে বাঙালি জনগোষ্ঠীর অনৈক্য জাতি গঠনের কাজকে কঠিন করে তুলেছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে পরাজিত শক্তি ১৯৭৫ সালে আগস্ট মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নভেম্বর মাসে জাতীয় চারনেতার  হত্যার মধ্য দিয়ে পরাজিত শক্তি মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল গতিপথ থেকে হটিয়ে অন্ধকারের পথে নিয়ে যেতে চেয়েছিল এই স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা। মূলত পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উদ্ভব মেনে নিতে পারেনি যারা, তারাই বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডকে স্বাগত জানিয়েছিল। একজন ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হয়েও মেজর জেনারেল এই পুরো হত্যা প্রক্রিয়ার অন্যতম কুশীলব ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের তিনি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কর্নেল ফারুক আর কর্নেল শাহরিয়ার জিয়াউর রহমানের সাথে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা নিয়ে শলা-পরামর্শ করতে গেলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সিনিয়র অফিসার হয়ে সরাসরি এমন কাজে সম্পৃক্ত হতে পারি না, তোমরা জুনিয়র অফিসাররা করতে চাইলে, গো এহেড,’। সাংবাদিক এন্থনি মাস্কারেনহাস এর একটি ডকুমেন্টারিতে জিয়াউর রহমানের এই নির্দেশ বিষয়ে কর্নেল ফারুক ও শাহরিয়ায়ের স্বীকারোক্তিমূলক সাক্ষাৎকার রেকর্ড করা আছে।

জিয়াউর রহমান নিজে একজন ‘মুক্তিযোদ্ধা’ আর্মি অফিসার হলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করা অফিসারদের কতজনকে তার শাসনামলে হত্যা করা হয়েছে, এর কোনো হিসেব নেই। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের পুরো রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সুফল ভোগ করেছেন জিয়াউর রহমান;। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার করা যাবে না মর্মে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সরকারি বিভিন্ন দফতরে বড় বড় চাকরি দিয়েছেন, রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছেন। একজন ‘মুক্তিযোদ্ধার’ পক্ষে এই অপকর্মগুলো কী করে সম্ভব হয়েছিল?

জিয়াউর রহমানকে বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা বলে দাবি করে এবং আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে আওয়ামী লীগের বর্তমান শাসনামলে খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার জিয়াউর রহমানকে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা’ বলে উল্লেখ করেছন। দেশব্যাপী সমালোচনা শুরু হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার বক্তব্যের ইন্টারেস্টিং ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের আমলের প্রথম দুই বছর দেশে গণতন্ত্র ছিল না, পরে তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাই তাকে তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা বলে ঠিক কাজ করেছেন।

জাতির পিতা হত্যায় জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততা এবং তার দ্বারা বঙ্গবন্ধুর খুনি ও স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসনের কলঙ্কজনক ইতিহাস মানুষকে ভুলিয়ে দিতেই ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র’ টাইপ পরিভাষা দেশীয় রাজনীতির শব্দকোষে আমদানি করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের সাথে জিয়াউর রহমানের সখ্যতার ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রেখেছেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও। দীর্ঘদিন থেকে বিএনপির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দোসরের ভূমিকা পালন করছে জামাত।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে বিএনপি এবং এ দিলের সকলে মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় করিয়ে দেয়। একজন মুক্তিযোদ্ধার দলের বন্ধু কীভাবে জামায়েত হয়, সেটিও আমাদের বোধগম্য নয়। প্রকৃত অর্থে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামাতের সাথে বিএনপির বর্তমানে আদর্শিক তেমন কোনো পার্থক্য নেই। জামায়েত ১৭ এপ্রিল, মুজিবনগর দিবস পালন করে না, বিএনপিও করেনা। চক্ষুলজ্জার খাতিরে বিএনপি ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর পালন করে, কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে না।

বিএনপি-জামায়েত যেন নতুন করে ইতিহাস নির্মাণ করতে চাইছে। অথচ কোন ঘটনা বা দুর্ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস একটাই থাকা বাঞ্ছনীয়। জাতির পিতা ও স্বাধীনতার ঘোষণা প্রশ্নে কোনোভাবেই দ্বিমত থাকা উচিত নয়। আওয়ামী লীগ গত ৮ বছর ধরে ক্ষমতায়। অর্থনৈতিক প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু জাতি গঠনের কাজে আরও সফল হওয়া জরুরি ছিল দলটির। জিয়াউর রহমান যদি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার হয়ে থাকেন তাহলে সেটি শ্রদ্ধার সাথে উল্লেখ করতে হবে। জিয়াউর রহমান যে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের পাঠক মাত্র, ঘোষক নন, সেটিও সংবাদে, নাটকে, কবিতা, গল্প, উপন্যাসে, সিনেমায় উপস্থাপনসহ সমাজের বিশ্বাসযোগ্য মানুষদের মুখ দিয়ে বলাতে হবে। জিয়াউর রহমান যে সমস্ত রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন করেছিলেন, তার উপর  টাকা খরচ করে ডকুমেন্টারি বানাতে হবে। কেউ যদি ইতিহাস বিকৃতি করে তাহলে তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

এদেশের নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। জিয়াউর রহমান ও তাঁর ‘ফিলসফি’কে কেন্দ্র করে একটি দল রাজনীতি করতেই পারে, রাষ্ট্র ক্ষমতায়ও আসতে পারে। কিন্তু জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলা বন্ধ করতে হবে। আইন এবং গবেষণা, উভয় পথেই এটি করতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আহবায়ক ও ঘোষক ছিলেন, এই সত্য জেনে ও মেনেই এদেশে সবাইকে রাজনীতি করতে হবে।

সবাই একদিন সমানভাবে অনুভব করবে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মানেই বাংলাদেশ কিংবা বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। দেশের মৃত কিংবা জীবিত অন্য কোনো মানুষের নাম বঙ্গবন্ধুর সমান মর্যাদা নিয়ে উচ্চারিত হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। আপনি আওয়ামী লীগ সাপোর্ট করবেন; না করবেন না, আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রশ্নে কোনো ধরনের ইতিহাস বিকৃতি ও বেয়াদবি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না, এমন একটা বাস্তবতা সৃষ্টি করা সরকারের এবং সকলের দায়িত্ব। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় সরকারের বড় বড় আমলাদের ও প্রতিটি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর যে পরিমাণ সৎ ও উদ্যোগী হওয়া দরকার, তারা কি সেটা করে দেখাচ্ছেন?

SUMMARY

1288-1.jpg