নামকরণ


শেখ রেহানা 
১৫ আগস্ট নৃশংস ঘটনায় ঘাতকের বুলেটে মা-বাবা-ভাইসহ আত্মীয় স্বজনদের হারিয়ে আমরা শোক আর অশ্রুসহ বেদনার ভার বয়ে চলেছি। বাংলার মানুষের প্রিয় নেতা ছিলেন আমার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঘাতকের দল সেদিন বত্রিশ নাম্বারের বাড়িটি রক্তাক্ত করেছিল তাকে সপরিবারে হত্যা করে। এ বেদনা বড় কঠিন, বড় হৃদয়বিদারক। আমাদের একমাত্র সান্তনা বাংলাদেশের মানুষ, যারা আমার বাবার প্রিয় ছিলেন। যাদের সুখ-শান্তির জন্য তিনি সারাজীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন। জেল-নির্যাতন, মিথ্যা মামলা দিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহী আসামী করে ফাঁসির দন্ড পর্যন্ত তাঁকে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরও তাঁর লক্ষ্য থেকে তাকে বিচ্যুত করতে পারেনি। তাঁর জীবনের স্বপ্ন ছিল বাংলার মানুষ উন্নত জীবনের অধিকারী হবে। এ স্বপ্ন সফল করার প্রধান লক্ষ্য ছিল– বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাঙালির আত্মনির্ভরতা– যা তিনি আমাদের দিয়ে গেছেন।

বাংলার মানুষের মাঝে ফিরে আসতে পেরে আমরা মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি। শোককে হৃদয়ে ধারণ করেছি। মানুষের কল্যাণে আমার বড় বোন শেখ হাসিনা রাজনীতি করছেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনা করছেন। ২১ আগস্ট তিনিও গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। বাংলার মানুষের দোয়া-আশীর্বাদ-ভালোবাসা আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারছি। এটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশের মানুষ নানা প্রতিকূল অবস্থায়ও যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে ১৫ আগস্ট পালন করে থাকে। হত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তি দাবি করে। ঐ খুনীদের শাস্তি কার্যকর করতে মানুষ যে সহযোগিতা করেছে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে তা স্মরণ করি। শাস্তি কার্যকর হবার পর বাংলার ঘরে ঘরে মানুষ যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়েছে তার জন্য আমি বাংলার মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। দেশে-বিদেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক, বঙ্গবন্ধুর শুভ্যার্থী ও সচেতন মানুষ যারা আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমিও মনে করি, আমার বাবা-মা, ভাইদের জন্য দোয়া-দরুদ পড়ে এবং শ্রদ্ধা ভালোবাসা জানালেই তাদের আত্মার শান্তি কামনা করা হবে। আমরাও এর চেয়ে বেশি কিছু প্রত্যাশা রাখি না।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভান্যুধায়ীদের কাছে আমার একটি বিনীত আবেদন আছে। সম্প্রতি আমি লক্ষ্য করছি আমার বাবা-মা ও ভাইদের নামে বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তোলার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কোথাও বা স্বার্থান্বেষী কিছু লোক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে খালি জায়গা দখল করে তাদের নামে কোনো একটা সংগঠন গড়ে তুলছেন।

আমার আবেদনটি হল, আপনারা এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেবেন না। এটা আমাদের কাম্য নয়। যদি কোথাও তেমন নামকরণ করতেই হয় আমাদের অনুমতি নিতে হবে। এভাবে যত্রতত্র সংগঠন গড়ে তোলা, পরবর্তীকালে নাম মুছে ফেলা বা অকার্যকর করে রাখাটাও অবশ্যই সমীচিন নয়। আমরা সর্বাগ্রে মানুষের কল্যাণ কামনা করি। তাদের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য সমাজের সবারই কিছু না কিছু দায়িত্ব থাকে। এ দায়িত্বটুকু পালন করা আমাদের সকলের কর্তব্য। আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন, সাধ্য অনুযায়ী নিজের পরিবারে, পাড়া-প্রতিবেশি ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যারা সুবিধা বঞ্চিত-অসহায় তাদের কল্যাণে অবশ্যই কাজ করে যাবো। আমাদের সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় একদিন নিশ্চয় বাংলাদেশ স্বপ্ন-সম্ভবের দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে। বিশ্বে বাঙালি বীরের মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করবে।

আমি সবশেষে আবারও আপনাদের ও সরকারের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাবো, আসুন আমরা সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেই যে, আমরা এমন কিছু করবো না, যাতে আমাদের সামাজিক মর্যাদা ও মূল্যবোধ নষ্ট হয়। আশা করি, আমার এ অনুরোধটুকু আপানারা মনে রাখবেন। আমি তাহলেই আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো।

১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা রাজনীতি শেখ হাসিনা

শেখ রেহানা  বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন

SUMMARY

1286-1.png