জাতির জনক মুজিব


মোহিত চৌধুরী
জাতির জনক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কেন হত্যা করা হয়েছে।
এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর,
বাংলার কোন লেখক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী
নিরপেক্ষ চিন্তার আলোকে বিশ্লেষণ করেননি।
উপরোক্ত সমগ্রের,
ধমনী-শিরায় সুবিধাবাদের পাপ।
প্রগতিশীল বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী মননে,
গভীরভাবে আলোড়িত একটি প্রশ্ন কেন মুজিব হত্যা?
সা¤প্রদায়িক দ্বি-জাতিত্তত্বের ভিত্তিতে, সা¤প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি।
তদানিন্তন পূর্বপাকিস্তানী সংখ্যাগরিষ্ঠ, 
বাঙ্গালী মুসলমানের জন্যই।
পাকিস্থান রাষ্ট্র গঠনে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।
সহ¯্র বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্তির প্রদীপ্ত শপথ উল্লাসে..!
বাঙ্গালী স্বপ্ন দেখেছিল, চিরশোষিতের সমাজে সমতার অর্থনীতি।
রাজনীতি, সমাজনীতি, ধর্মনীতি, 
শ্রেনী বৈষম্যহীন অসা¤প্রদায়িক চেতনার সমাজ-সাংস্কৃতিক মুক্তি।
নবরাষ্ট্র পাকিস্তানের বুর্জোয়া শোষক শ্রেণী
কিছুতেই বাঙ্গালীদের ন্যায্য দাবী মেনে নিতে পারেনি। 
ফলশ্রæতিতে বাঙ্গালী প্রতিবাদ মুখর হয়ে ওঠলো।
পাকিস্তানী শোষকের নির্মম অত্যাচার-নির্যাতনের করুন রক্তাক্ত ইতিহাস। 
বাঙ্গালীর মূমুর্ষ নর-নারীর আর্তনাদের ইতিহাস, বিবর্তিত রক্তের স্রোতধারায়।
বাঙ্গালী স্বাধীন পাকিস্তানের মৃত্তিকায়,
পুনরায় রক্ত দিল রক্তগঙ্গায়।
৫২-তে, ৫৪-তে, ৫৮-তে, ৬২-তে, ৬৬-তে, ৬৯-তে, ৭০-রে,
পরবর্তীতে ৭১- এর মহান মুক্তিযুদ্ধে।
বস্তুত, গণমুখী নেতৃত্ব প্রদানের জন্য, 
রাজনৈতিক মহাপ্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্বক্রম
শ্রদ্ধেয় শেরেবাংলা এ,কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী,
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীসহ নেতৃবৃন্দ,
বার্ধক্য ও মৃত্যুবরন করায় বাঙ্গালীর জাতীয় জীবনে নেতৃত্বের সংকটে।
অন্যতম বিশ্বসেরা পাকিস্তানী সেনা শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে,
স্বাধীন পাকিস্তানের মৃত্তিকায় বিদ্রোহ করা, 
এ কেবল বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের জন্যই সম্ভব।
উল্লেখিত নেতৃবৃন্দের রাজনৈতিক সাহচার্য, গভীরতম দেশপ্রেম, 
বাংলা ও বাঙ্গালীর প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা, বাগ্মীতা, সাহস, আত্মত্যাগ, আপোসহীনতা, 
ন্যায়পরায়নতা, ব্যক্তিগত পড়াশোনা, মুজিব সমকালীন বিশ্ব রাজনীতি বোঝা,
এটি মুজিব চরিত্রের অনন্য বৈশিষ্ট্য।
এ জন্যই মুজিব চরিত্রটি ভাষা আন্দোলনের অগ্রদূত, ছয়দফার উপস্থাপক, 
গণআন্দোলনের প্রাণশক্তি, শৃঙ্খলিত জাতির মুক্তিদূত, 
শোষিত বঞ্চিত বাঙ্গালীর মূর্ত প্রতীক, মহান স্বাধীনতার ঘোষক।
বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, অগ্রগামী মহাপুরুষ, 
পুরুষ উত্তম আন্দোলন সংগ্রামের,অবিনাশী অক্ষয় প্রেরণা।
অখন্ড পাকিস্তান থেকে খন্ডিত স্বাধীন বাংলাদেশ, 
দ্বিজাতিত্তত্ব থেকে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ, 
স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। 
স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অনুসৃত নীতিসমুহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। 
পাকিস্তান ও তার দোসররা একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও সা¤্রাজ্যবাদ শক্তি
স্বাধীন বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেনি।
প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী বাঙ্গালীর এই নেতা সমকালীন, 
সমগ্র নেতৃত্বকে পেছনে ফেলে একচ্ছত্রভাবে জাতীয় নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হওয়া, 
সবচেয়ে বেশী মৃত্যুর বিনিময়ে আন্তর্জাতিক সাড়াজাগানো মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে,
তৃতীয় বিশ্বের নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের কন্ঠস্বরে পরিণত হওয়া।
বঙ্গবন্ধুর এই সুউচ্চ শিখর জনপ্রিয়তায় ত্রয়ী চক্র পাকিস্তান ও 
একাত্তরের পরাজিত শক্তি সা¤্রাজ্যবাদ শক্তি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে,
বঙ্গবন্ধু ও তার সরকারকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে,
দেশের অভ্যন্তরে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে, স্মাগলিং, চোরাচালান, খাদ্যগুদাম লুট,
রাতারাতি নব্যধনিক শ্রেণীর সৃষ্টি, যুবকদের হাতে অস্ত্র,
ধর্মব্যবসায়ী মৌলবাদীদের উদ্দাম নৃত্য ছন্দ, মধ্যস্বত্বভোগী, 
সা¤্রাজ্যবাদের লগ্নীকৃত অর্থ ও চারিদিকে পরাজিত শক্তির শত্রুজাল।
পাকিস্তানীরা এমনিতেই বাংলাদেশটিকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে,
বঙ্গবন্ধু গভীরতম মননে ভাবলেন বাংলা ও বাঙ্গালীকে বাঁচাবার কথা,
এই বিশৃঙ্খল নৈরাজ্য থেকে চির অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, 
শোষিতের সমাজ ব্যবস্থার জন্য, দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিলেন তিনি।
সাম্রাজ্যবাদ শক্তির নিকট তিনি মাথা নোয়াবার নন, 
ত্রয়ী শক্তির স্বার্থের পথে যেন বঙ্গবন্ধুই সবচেয়ে বড় বাঁধা। 
অতঃপর, ত্রয়ী শক্তির প্রত্যক্ষ ব্যবস্থাপনায় দেশীয় এজেন্টদের মাধ্যমে. 
বঙ্গভবনের পরিবর্তে নিজ বাস ভবন ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরে,
শাহাদাৎ বরণ করেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, 
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

(প্রবাসী মননের যত কথা) ফ্লোরেন্স,ইটালী।
রবিবার প্রথম প্রহর।
১২আগস্ট ১৮ইং।

SUMMARY

1258-B3.jpg