আমীরুল ইসলামের গদ্য
ঘুম ভাঙলো খুব সকালে। বাবা তাড়া দিলেন। তাড়াতাড়ি জামা পরে নাও। মা আমাকে আজ লাল-সবুজ জামা পরিয়ে দিলেন। টেলিভিশনে তখন প্রভাতি অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। আজ জাতীয় শিশু দিবস। আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। বলছিলাম ১৭ই মার্চের কথা। সেদিন বাবা বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের মহান নেতা। বঙ্গবন্ধু না জন্মগ্রহণ করলে আমরা কোনোদিন বাংলাদেশ পেতাম না। আমরা স্বাধীনতা পেতাম না।
বাবা এসব কথা খুব জোরকণ্ঠে বলেছিলেন। তার কণ্ঠ তখন কাঁপতে থাকে। আমি বাবার সব কথা বুঝতেও পারি না। আমি অনুভব করি। বঙ্গবন্ধু একজন বিশাল ব্যক্তি। তার ছবি আমার চোখের সামনে ভাসতে থাকে। ভারী ফ্রেমের চশমা। চোখ থেকে যেন আলো ঠিকরে বের হচ্ছে। ছবিটার দিকে তাকালেই আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। বাবা বাসায় বাঁধাই করা একটা বড় ছবি ড্রইংরুমে রেখেছেন। আমি ঘুরেফিরে ছবিটার দিকে বারবার যাই। আর টের পেতে থাকি- ছবি থেকে যেন বঙ্গবন্ধু বের হয়ে আসছেন। আর আমাকে বলছেন কিহে... তুমি তো রাসেলের বয়সী। কোন ইশকুলে পড়ো? লেখাপড়া ভালো মতো করবে। বড় হতে হবে। তোমাদের হাতেই এই দেশ। এই দেশের উন্নয়ন। আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা তো তোমরাই তৈরি করবে। এই দেশ গড়ে তুলতে তোমাদের বড় হতে হবে। তাই এখন দরকার, মন দিয়ে লেখাপড়া।
আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। এমনই মুগ্ধ যে, প্রতিদিন একবার হলেও আমি ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকি। বঙ্গবন্ধু এখনও অনেক কথা বলেন। আজ ইশকুলে অনুষ্ঠান। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠান। সকাল থেকে অনুষ্ঠান। প্রথমে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক কবিতা পাঠ। তারপর গান আর মুক্তিযুদ্ধের গান। দুপুরে পোলাও-মাংস। ছেলেমেয়েরা হৈচৈ করে খেলো। বিকেলে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গল্প বলা; অতিথি হিসেবে এসেছিলেন ড. আনিসুজ্জামান এবং ড. মুনতাসীর মামুন।
এই দুই ব্যক্তি অসাধারণভাবে বঙ্গবন্ধু জীবনের গল্প বললেন। কতো কষ্টই না বঙ্গবন্ধু করেছেন! জেল খেটেছেন দীর্ঘদিন। কারাগারের অন্ধকারে দিন কেটেছে তার। কোনোদিন ক্ষমতাসীনদের কাছে আপস করেননি। দেশের মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। বাংলাদেশের সাড়ে ষোল কোটি মানুষের পিতা তিনি। সবার সুখ-অসুবিধা নিয়ে তিনি ভাবতেন। বাংলার মানুষের মুক্তি চাই। আর নয় পরাধীনতা। তাই তিনি সমগ্র জীবনজুড়ে আন্দোলন করেছিলেন। ছয় দফা আন্দোলন। সত্তরের নির্বাচন। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন। কোনোদিন তাকে কেউ দমাতে পারেনি। মহান বঙ্গবন্ধু। চিরন্তন বঙ্গবন্ধু। বাঙালির বন্ধু তিনি। শোষিত-নির্যাতিত মানুষের বন্ধু তিনি।
... এ রকম সুন্দর সুন্দর কথা বললেন বক্তারা। ড. আনিসুজ্জামান স্যারের মৃদু কণ্ঠের বক্তৃতা আমাকে ভীষণ আলোড়িত করলো। আমিও বঙ্গবন্ধু হবো- এমন স্বপ্ন নিয়ে সেদিন সারাদিন কাটলো। আজ বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী। আজও মনে পড়ছে ১৭ মার্চের কথা। আজও আমি বঙ্গবন্ধু হওয়ার স্বপ্ন দেখি। হ