কবিতায় ৭ মার্চ


মিল্টন বিশ্বাস

আমাদের এই বহুধা বিভক্ত সমাজ-রাজনীতির আঙিনায় প্রাণের আনন্দদায়ক সংবাদ খুব বেশি আসে না। কারণ এই সমাজে বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস নিয়ে বিকৃত করার পাকিস্তানী চেতনাধারী লোকের সংখ্যা এখনও অনেক। তবু আন্তর্জাতিক খ্যাতি বয়ে এনেছে জাতির পিতার অবিস্মরণীয় ভাষণ। গত বছর (২০১৭) ৩১ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। যে তালিকার মাধ্যমে ইউনেস্কো বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে সেখানে বঙ্গবন্ধু এখন থেকে আরো ঔজ্জ্বল্য নিয়ে মূর্ত থাকবেন। আসলে বিশ্ব ঐতিহ্য ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার একটি আন্তর্জাতিক তালিকাই মূলত মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড। এর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন অংশের ঘটনার সংরক্ষণ ও সবার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে ইউনেস্কো। এই তালিকায় ঠাঁই পেতে হলে পর্যাপ্ত গ্রহণযোগ্যতা ও ঐতিহাসিকভাবে প্রভাব থাকতে হয়। চলতি বছর ২৪ থেকে ২৭ অক্টোবর বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসে আন্তর্জাতিক এডভাইজরি কমিটি। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় ৭ মার্চের ভাষণকে অন্তর্ভুক্ত করার। এখন পর্যন্ত সারাবিশ্বের মোট ৪২৭টি নথি মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ডে যুক্ত হয়েছে। অবশ্য এর আগে ঔধশড়ন ঋ. ঋরবষফ সম্পাদিত ‘ডব ঝযধষষ ঋরমযঃ ড়হ ঃযব ইবধপযবং : ঞযব ঝঢ়ববপযবং ঃযধঃ ওহংঢ়রৎবফ ঐরংঃড়ৎু’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইতিহাসের অন্যতম ভাষণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। খ্রীস্টপূর্ব ৪৩১ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ইতিহাস সৃষ্টিকারী ভাষণগুলোর মধ্যে ৭ মার্চ যেমন শিল্প-সাহিত্যে অভিব্যক্ত হয়েছে তেমনি আলোড়ন সৃষ্টি করে চলেছে বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে।

বঙ্গবন্ধুর শাশ্বত উপস্থিতি বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে কবিদের কবিতার চরণে চরণে। কারণ তাঁর মৃত্যু তাঁকে আর ভুলতে দেয়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর যখন এদেশে ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দ ছিল প্রায় নিষিদ্ধ, তখন সামরিক শাসনের ভ্রƒকুটিকে তুচ্ছ করে বঙ্গবন্ধুর কথা প্রকাশ্যে শিল্প-সাহিত্যে উচ্চারিত হয়। ১৯৭১ সালের সেদিন রেসকোর্স ময়দান ও বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৭ মার্চের ভাষণটিকে কেন্দ্র করে নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’ কবিতার পঙ্ক্তিমালায় যথার্থই উপস্থাপিত হয়েছে- ‘লাখ লাখ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে/ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে।’ দশ লাখেরও বেশি মানুষের সেই সমাবেশ মানব সভ্যতার ইতিহাসের বিরল ঘটনা। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে জয়ী হয়ে দীর্ঘদিনের শোষণ বঞ্চনা থেকে বঙ্গবন্ধু যখন জনগণের মুক্তির স্বপ্নে বিভোর ঠিক তখনই পাকিস্তানী শাসকচক্র ষড়যন্ত্র করে ১ মার্চ ঘোষণা দিয়ে ৩ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে। নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তর করলে ভুট্টোদের বঙ্গবন্ধুর কর্তৃত্ব মেনে নিতে হতো। সেটা না মানার জন্যই পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা ভুট্টো বলেছিল তাদের দল বাদ দিয়ে অধিবেশন বসলে পেশোয়ার থেকে করাচী পর্যন্ত জীবনযাত্রা নীরব নিথর করে দেয়া হবে। ইয়াহিয়া তার হুমকির কাছে মাথা নত করে। আর তার ঘোষণার পরে বাংলাদেশ অগ্নিগর্ভ উত্তাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ‘জাগো জাগো বাঙালী জাগো’, ‘পদ্মা- মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’, ‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধরো সোনার বাংলা মুক্ত করো’, ‘পি-ি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘পাঞ্জাব না বাংলা, বাংলা বাংলা’, ‘ভুট্টোর মুখে লাথি মারো বাংলাদেশ স্বাধীন করো’- এসব স্লোগান কণ্ঠে নিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশ তখন মিছিলের সমুদ্র। বঙ্গবন্ধু জানান বিনা চ্যালেঞ্জে তিনি কোন কিছুই ছাড়বেন না। ছয়দফার প্রশ্নে আপস না করারও ঘোষণা আসে। ১ থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল চলতে থাকে। ছাত্রলীগ আর ডাকসুর সমন্বয়ে ‘স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। চলমান অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। গণজাগরণের এই পরিস্থিতিতে ৭ মার্চ ছিল স্মরণীয় দিন। ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যে কলকাতার অধুনালুপ্ত দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার এককালের সম্পাদক বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় দেখেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং উপমহাদেশের দুটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ধারার দর্শনের প্রভাব অর্থাৎ গান্ধীজির নিরস্ত্র নৈতিক যুদ্ধের আহ্বান এবং নেতাজী সুভাষচন্দ্রের সশস্ত্র সংগ্রামের রাজনৈতিক দর্শন। এছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তী ধাপেরও নির্দেশ রয়েছে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণে। উপরন্তু ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বাক্যটি সারা দুনিয়ার নির্যাতিত মানুষের কাছে মুক্তিমন্ত্রতুল্য। খ্যাতিমান গবেষকের মন্তব্য, ‘বাঙালীর মুক্তির সনদ ছিল এই ভাষণটি। এই দিনই রাষ্ট্রের ভিত্তি তৈরি হয়ে যায়। পাকিস্তানকে বাঙালীরা প্রত্যাখ্যান করে।’


 
৭ মার্চ নিয়ে রচিত হয়েছে অনেকগুলো কবিতা। ‘রাজনীতির কবি’ বঙ্গবন্ধু’র ৭ মার্চের ভাষণই একটি মহাকবিতা। পাকিস্তানের অপশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর জ্বালাময়ী ভাষণ জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছে বার বার, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা, ৬৯-এর গণআন্দোলন সংঘটিত হয় তাঁর নেতৃত্বে। ৭১-এর প্রথম মাস জানুয়ারি থেকে তিনি মুক্তিকামী মানুষের শৃঙ্খল মোচনের শপথে উদ্দীপিত করেন সাধারণ মানুষকে- রাজনৈতিক কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা এবং বুদ্ধিজীবী মহলের প্রত্যেককে; কবি-শিল্পী-সাহিত্যিক নির্বিশেষ। বাঙালীর নিজের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে চিনতে শেখা তাঁর মাধ্যমেই। ৭ মার্চে ভাষণের আগে ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া হয়েছিল। এসবই আছে কবিতার মধ্যে। বঙ্গবন্ধুর আত্মদানকে অর্থবহ করার জন্যই এই কবিতাবলি। তাঁর রক্তের ঋণ শোধ হবে না কিন্তু তার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় জেগে থাকবে এসব কবিতার মধ্য দিয়ে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় লিখিত জসীম উদ্দীনের ‘বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক কবিতায় এই ঐতিহাসিক ভাষণের কথা বলা হয়েছে। বিশেষত বঙ্গবন্ধুর একাত্তরের মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া অসহযোগ আন্দোলনের বিষয়টিকে কবি তুলে ধরেছেন দীর্ঘ কবিতাটির একটি অংশে-

তোমার হুকুমে রেল-জাহাজের চাকা যে চলেনি আর

হাইকোর্টের বন্ধ দরজা খুলিবে সাধ্য কার!

. . . . . . . . .

তোমার হুকুমে তুচ্ছ করিয়া শাসন-ত্রাসন ভয়,

আমরা বাঙালি মৃত্যুর পথে চলেছি আনিতে জয়। (কবিতায় বঙ্গবন্ধু, ২০১২:৪৫)

কবি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের গুণাবলীর প্রশংসা করেছেন। তাঁর আপসহীন অবস্থান ও মানুষের আস্থা-ভরসার নেতা হিসেবে মুক্তিসংগ্রামে বিজয়ের চিত্রও তুলে ধরেছেন তিনি। ৭ মার্চের ভাষণই মানুষকে নতুন এক স্বপ্নে আন্দোলিত করে। জাগরণ ও শিহরণে উদ্দীপিত মানুষ মুক্তির স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে উৎসাহী হয়। জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান বঙ্গবন্ধু। নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’, ওমর আলীর ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, সানাউল হকের ‘সাতই মার্চ একাত্তর’, আল মাহমুদের ‘নিশিডাক’ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকেন্দ্রিক কবিতা। নির্মলেন্দুর কবিতার একটি অংশ-

শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে

রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে

অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।

তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,


 
হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার

সকল দুয়ার খোলা। কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী?

গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি;

‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,

এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।(কাব্যসমগ্র-১, ২০১১: ৩৭৬)

কবির বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে ৭ মার্চের ভাষণই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। ১৫ আগস্টের পরে জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে গণ্য করার প্রচেষ্টা নিরর্থক - এই কবিতাই তার সাক্ষ্য। আল মাহমুদের কবিতার অংশ বিশেষ-

তাঁর আহ্বান ছিল নিশিডাকের শিস্ তোলা তীব্র বাঁশির মতো।

প্রতিটি মানুষের রক্তবাহী শিরায় কাঁপন ধরিয়ে দিয়ে তা বাজত

. . . সে যখন বলল, ‘ভাইসব’।

অমনি অরণ্যের এলোমেলো গাছেরাও সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে গেল

সে যখন ডাকলো, ‘ভাইয়েরা আমার’. . .

অসীম সাহার কবিতায় এভাবে প্রকাশিত ৭ মার্চ-

তুমি হাত উত্তোলিত করলেই

হিমালয় মাথা নিচু করে তোমার পায়ের কাছে এসে

আনত প্রজার মতো জানায় কুর্নিশ।

এছাড়া শামসুল আলমের ‘এবারের সংগ্রাম. . . স্বাধীনতার সংগ্রাম’, তাহমীদুল ইসলামের ‘সমুদ্রের অর্কেস্ট্রা : ৭ মার্চ ১৯৭১ খ্রীস্টাব্দ’ প্রভৃতি কবিতা একই প্রসঙ্গে রচিত। শামসুল আলমের কবিতায় ৭ মার্চের ভাষণকে ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

‘স্বাধীনতার কবি’ শামসুর রাহমানের একাধিক কবিতায় বঙ্গবন্ধু রূপক-প্রতীকে আবার কখনও সরাসরি আত্মপ্রকাশ করেছে। ‘ধন্য সেই পুরুষ’, ‘যাঁর মাথায় ইতিহাসের জ্যোতির্বলয়’, ‘ইলেকট্রার গান’, ‘তোমারই পদধ্বনি’ প্রধান কবিতা। ‘ইলেকট্রার গান’ বেশ ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত বাঙলাদেশের সঙ্গে: ‘বিদেশী মাটিতে ঝরেনি রক্ত; নিজ বাসভূমে,/নিজবাসগৃহে নিরস্ত্র তাঁকে সহসা হেনেছে ওরা।’Ñ স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে পঁচাত্তরের হত্যাকা-কে। কিন্তু কবিতাটি আদ্যন্ত গীতিময়, জাতিসত্তার বাণীবহ মহাকাব্যিক চারিত্র এর নয়।’ তবে এ কবিতায় এ্যাগামেননের (বঙ্গবন্ধু) হত্যাকা-ের পর নিহত পিতার জন্য কন্যা ইলেকট্রার(শেখ হাসিনা) শোক সার্বজনীন হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধুর জন্য হাহাকার ব্যক্ত হয়েছে। এ কবিতায় বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়াকে নিয়তি বলে ধরে নিতে দেখা যায়। শোকে কবি লুকিয়ে বিলাপ করেন, তাতে মন সান্ত¦না মানে না। হত্যাকারীরা নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ায় আর কবির ওপর চোখ রাখে। তবুও কবি অন্তরে শোক লালন করে যাবেন। ‘ধন্য সেই পুরুষ’ কবিতায় উন্মোচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর মহিমা। তাঁর নেতৃত্ব ও মানুষের জন্য ব্রতের সমুজ্জ্বল চিত্রণ এখানে অনন্য। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত এই কবিতাটি আমার মতে শামসুর রাহমানের শ্রেষ্ঠ কবিতা। কবির বিভিন্ন কবিতার কিছু কিছু অংশ-


 
ক) ধন্য সেই পুরুষ, যার নামের ওপর পতাকার মতো

দুলতে থাকে স্বাধীনতা,

ধন্য সেই পুরুষ, যার নামের ওপর ঝরে

মুক্তিযোদ্ধাদের জয়ধ্বনি।(ধন্য সেই পুরুষ, কবিতায় বঙ্গবন্ধু, ২০১২: ৯৮)

খ) যতদিন আমি এই পৃথিবীর প্রত্যহ ভোরে

মেলব দুচোখ, দেখব নিয়ত রৌদ্র-ছায়ার খেলা,

যতদিন পাব বাতাসের চুমো, দেখব তরুণ

হরিণের লাফ, ততদিন আমি লালন করব শোক।

. . . . . . . . .

নিহত জনক, এ্যাগামেমনন, কবরে শায়িত আজ।(ইলেকট্রার গান, কবিতাসমগ্র-১, ২০০৮: ৪৭৫)

গ) তারই কি আশ্চর্য প্রতিদান

যিশুর ধরনে পেয়ে গেলে তুমি। তবে ইতিহাস

চিরকাল মিথ্যার কুহক ছিঁড়ে গাইব সত্যের জয়গান। (যাঁর মাথায় ইতিহাসের জ্যোতির্বলয়, কবিতায় বঙ্গবন্ধু, ২০১২ : ১০০)

কবিতাকে শেখ মুজিবের সূর্যমুখী ভাষণের মতো বলেছেন কবি। মুজিবের নাম জুঁয়ের মতো, কৃষকের সানকিতে ফোটার কথাও বলেছেন তিনি। অন্যদিকে শামসুর রাহমানের মতো যিশুর প্রতীকটি মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতায়ও উচ্চারিত হয়েছে-

ফুরাবে না গঙ্গাধারা, ফুরাবে না বঙ্গভাষী কবিদের নিব

ফুরাবে না এই রক্ত, পিতা, তুমি যিসাস মুজিব।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত কবিতায় পিতৃ-ইমেজ ব্যবহার সম্পর্কে কবীর চৌধুরী বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন কবিতায় এসেছেন তখন স্বাভাবিকভাবেই জনক বা পিতার অনুষঙ্গ বার বার কবিদের লেখায় ব্যবহৃত হয়েছে। পিতার ইমেজ সহজভাবে কবিদের লেখনীতে উঠে এসেছে, যেমনভাবে জাতির জনকের শিরোপা তার মাথায় কৃতজ্ঞ জাতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরিয়ে দিয়েছে।’ পিতৃইমেজ আছে মহাদেব সাহার ‘তোমার হত্যাকারী’ এবং শিহাব সরকারের ‘পিতা’ কবিতায়। শোকাভিভূত কবিদের চেতনায় এভাবেই পিতৃহত্যার প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে ওঠে। এজন্য আসাদ চৌধুরী ‘এ কেমন জন্মদিনে’ বলেন -

যে ঘাতক তোমার সুবিশাল ছায়াতলে

থেকে কেড়ে নিলো তোমার নিশ্বাসÑ

শিশুঘাতী, নারীঘাতী ঘাতকেরে যে করিবে ক্ষমা

তার ক্ষমা নাইÑ

আমরণ অনুগত,

তোমারই অবাধ্য হবে আজ,


 
পিতা, অনুমতি দাও।(বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত পদাবলী, ২০১০: ৬৪)

বস্তুত বাংলাদেশের কবিতায় ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিফলনের কারণ হলো- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বীর, শ্রেষ্ঠ বাঙালী, মহানায়ক, মহামানব হিসেবে চিরস্মরণীয় একটি নাম। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণেই জেগে উঠেছিল পুরো জাতি। এই ভাষণে স্বাধীনতার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করতে প্রস্তুত হয় বাঙালীরা। মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই ভাষণ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, আগামীতেও যুগিয়ে চলবে। কবিতায় উচ্চারিত পঙ্ক্তিগুলো সে কথায় বলে।

SUMMARY

1223-B1.jpg